নতুন রণতরী সংগ্রহ মিয়ানমারের। টার্গেট কে?

মোহাম্মদ রুবায়েত রহমান | Nov 11, 2019 08:44 am
এমএন মোয়াত্তমা

এমএন মোয়াত্তমা - ছবি : সংগৃহীত

 

সেপ্টেম্বরে মিয়ানমারের নৌবাহিনী নীরবে নতুন মাইলফলক সৃষ্টি করেছে এমএন মোয়াত্তমা নামে একটি ল্যান্ডিং প্লাটফর্ম ডক (এলপিডি) জাহাজ লাভ করে। ভারতের কাছ থেকে কিলো-ক্লাস সাবমেরিন কেনার সময় যেভাবে আলোচনা হয়েছিল, এবার দক্ষিণ কোরিয়ার কাছ থেকে এমএন মোয়াত্তমা নির্মাণ ও সরবরাহ লাভ করার বিষয়টি নজর এড়িয়ে যায়।

মধ্যম আকারের, উন্মুক্ত ডেকের এলডিডি জাহাজটির মাধ্যমে লোকচক্ষুর অগোচরে মিয়ানমার উভচর নৌসামর্থ্যের নতুন ধাপে প্রবেশ করল।

দক্ষিণ কোরিয়ার ডাসান শিপবিল্ডিং অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং এমএন মোয়াত্তমার নক্সা করে। ডিজেলচালিত এই জাহাজটি গুরুত্বপূর্ণ সময়ে বেশ সক্ষমতা প্রদর্শন করার উপযুক্ত। প্রায় ১২৫ মিটার লম্বা সেমি-স্টিলথ প্রযুক্তির মাকাসার ক্লাস ল্যান্ডিং ডকশিপটি ৩৫ জন সৈন্যকে বহন করতে পারবে। তাছাড়া এতে দুটি এমআই-১৭ মিডিয়াম হেলিকপ্টারও ধারণ করতে পারবে। এছাড়া এর মাধ্যমে ট্যাঙ্ক ও ট্রাকও পরিবহন করা যাবে। ফলে এর মাধ্যমে মিয়ানমার দ্রুততার সাথে তার বাহিনীকে উপকূলীয় অভিযানে সামিল করতে পারবে। উপকূলীয় এলাকা বা দ্বীপে সামরিক কার্যক্রমে জাহাজটি বিশেষ ভূমিকা পালন করতে পারবে।

ল্যান্ডিং প্লাটফর্ম ডকের (এলপিডি) মতো উভচর জাহাজগুলো একইসাথে নানা ধরনের কাজের জন্য সুপরিচিত। যুদ্ধের সময় এলডিডি ব্যবহৃত হয় বিপজ্জনক পরিস্থিতিতে সাগরে সামরিক বাহিনী প্রবেশ করাতে বা প্রত্যাহার করতে। এতে থাকা হালকা অবতরণ যান ও হেলিকপ্টারগুলো এ কাজেই লাগে। আর উপকূলীয় এলাকা ও দ্বীপগুলোতে সামরিক কার্যক্রম চালানোর জন্য এলডিডি প্রয়োজনীয় লজিস্টিক সাপোর্ট দিতে পারে সৈন্য অবতরণ করিয়ে। শান্তিকালে এসব জাহাজ লাগে ত্রাণ কার্যক্রমে সহায়তা করতে।
গত কয়েক দশকে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলো ল্যান্ডিং প্লাটফর্ম ডক সংগ্রহে বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে। এই ক্লাবে মিয়ানমার সদ্য প্রবেশ করল।

সদ্য নির্মিত এলডিডি এমএন মোয়াত্তামা কেন মিয়ানমারের জন্য গুরুত্বপূর্ণ?
মিয়ানমার তার সামুদ্রিক এলাকার নিরাপত্তা নিশ্চিত করার বিষয়টির ওপর আরো জোর দিতে শুরু করেছে। এই লক্ষ্যেই তারা এ ধরনের জাহাজ কেনার ওপর গুরুত্বারোপ করেছে।

এর চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, মিয়ানমার সামরিক বাহিনীর থিঙ্ক ট্যাঙ্ক সমুদ্রসীমায় রক্ষায় ভূরাজনৈতিক কৌশলের ওপর গুরুত্বারোপ করতে শুরু করেছে। এই লক্ষ্যের দিকেই এমএন মোয়াত্তামা একটি গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি। মিয়ানমার যে এখন তাদের সমুদ্র নিরাপত্তার দিকে জোর দিয়েছে, এই জাহাজটি সংগ্রহ তার প্রমাণ।
অবশ্য একটি সাবমেরিন ও একটি উভচর যান সংগ্রহ করেই খুবই সংক্ষিপ্ত সময়ের মধ্যে মিয়ানমার নৌবাহিনীর সামর্থ্য বিপুলভাবে বেড়ে গেছে, তা মনে করা ঠিক হবে না। মিয়ানমার নৌবাহিনী এসব অত্যাধুনিক নৌসামগ্রী কিভাবে পরিচালনা করে, তাও দেখার বিষয়। কারণ এ ধরনের উভচর যান, কিংবা সাবমেরিন পরিচালনার কোনো অভিজ্ঞতা মিয়ানমারের নেই। অথচ বঙ্গোপসাগরের গভীর অংশে কার্যক্রম পরিচালনা করতে হলে এসন রণতরীকে বেশ দক্ষতার সাথে কাজে লাগাতে হবে। আবার রক্ষণাবেক্ষণের যেকোনো ধরনের ত্রুটি মিয়ানমারের নৌবাহিনীর আধুনিকায়ন প্রয়াস মারাত্মকভাবে কমিয়ে দেবে।

শেষ কথা হলো, নৌবাহিনী আধুনিকায়নের একটি গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জ হলো জোরালো নৌপ্রতিরক্ষানীতি ছাড়া যেকোনো ধরনের নৌসম্পদের প্রবর্তন কোনো কাজেই লাগবে না।
বর্তমানে এসব প্রশ্নের জবাব তেমন স্পষ্ট নয়। এসব নীতিগত চ্যালেঞ্জ আগামী দিনগুলোতে মিয়ানমার নৌবাহিনীর জন্য নিশ্চিতভাবেই বড় প্রশ্ন হয়ে দেখা দেবে।

দি ডিপ্লোম্যাট


 

ko cuce /div>

দৈনিক নয়াদিগন্তের মাসিক প্রকাশনা

সম্পাদক: আলমগীর মহিউদ্দিন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সালাহউদ্দিন বাবর
বার্তা সম্পাদক: মাসুমুর রহমান খলিলী


Email: online@dailynayadiganta.com

যোগাযোগ

১ আর. কে মিশন রোড, (মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন), ঢাকা-১২০৩।  ফোন: ৫৭১৬৫২৬১-৯

Follow Us