১০০ কোটি ডলারের অস্ত্র বিক্রি করবে পাকিস্তান!
খালিদ ট্যাঙ্ক - ছবি : সংগৃহীত
চীন ও যুক্তরাষ্ট্র থেকে প্রধান অস্ত্র আমদানিকারক হিসেবে পরিচিত পাকিস্তান তার অস্ত্র রফতানি ব্যাপকভাবে বাড়াতে যাচ্ছে। তারা প্রতি বছর এক বিলিয়ন ডলার মূল্যের প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম বিক্রির লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে।
পাকিস্তান সরকারের এক সিনিয়র কর্মকর্তা নিক্কিই এশিয়ান রিভিউকে বলেন যে জুন পর্যন্ত অর্থবছরে পাকিস্তানের অস্ত্র রফতানি ২১০ মিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে গেছে। দুই বছর আগের চেয়ে এই রফতানি ১০০ মিলিয়ন ডলার বেড়েছে।
আরেক অফিসার বলেন, ৫ বছর আগে পাকিস্তানের অস্ত্র রফতানি ছিল ৬০ মিলিয়ন ডলার।
পরিচয় প্রকাশ না করার শর্তে ওই কর্মকর্তারা বলেন, ঊর্ধ্বমুখী এই ধারা অস্ত্রে আত্মনির্ভরতার জন্য পাকিস্তানের ব্যাপকতর উদ্যাগই প্রতিফলিত হয়েছে। তারা অবশ্য, এ ব্যাপারে বিস্তারিত কিছু বলতে অস্বীকৃতি জানান।
পাকিস্তানি কর্মকর্তারা সাধারণভাবে জাতীয় প্রতিরক্ষা বা অস্ত্র ও রফতানির গন্তব্য সম্পর্কে কোনো তথ্য দিতে চান না।
পাকিস্তানের অস্ত্র উৎপাদনে চীন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। চীন ও পাকিস্তান মিলে জেএফ-১৭ থান্ডার জঙ্গি বিমান উৎপাদন করে।
পাকিস্তান সামরিক বাহিনীর সাবেক কমান্ডার ও প্রতিরক্ষা বিশ্লেষক লে. জেনারেল (অব.) তালাত মাসুদ বলেন, জেএফ-১৭ পাকিস্তানের আত্মনির্ভরতার ভিত্তি তৈরী করেছে।
পাকিস্তানকে ট্যাঙ্ক তৈরীতেও সহায়তা করেছে চীন। এছাড়া জেএফ-১৭ প্রকল্পের মাধ্যমে পাকস্তিানের বিমান বাহিনীকেও সহায়তা করেছ চীন। পাকিস্তান নৌবাহিনী তার রণতরী ও সাবমেরিন নির্মাণেও চীনের কাছ থেকে সাহায্য পেয়েছে।
তিনি বলেন, এখন পাকিস্তান রফতানি বাজার ধরতে চায়।
আগামী বছরগুলোর জন্য পাকিস্তানের নির্দিষ্ট অস্ত্র রফতানির টার্গেট নেই। তবে শেষ পর্যন্ত ইসলামাবাদ ১০০ কোটি ডলারের রফতানি টার্গেট হাসিল করতে চাচ্ছে।
পাকিস্তান ২০১৬ সালে ১৬টি জেএফ-১৭ জঙ্গি বিমান বিক্রি করতে মিয়ানমারের সাথে চুক্তি করেছিল। তবে এর মূল্য প্রকাশ করা হয়নি। অবশ্য কর্মকর্তারা ব্যক্তিগতভাবে জানিয়েছেন, খুচরা যন্ত্রাংশসহ এর দাম ছিল ৪০০ মিলিয়ন ডলার।
নাইজেরিয়ার কাছেও তিনটি জেএফ-১৭এস বিক্রি করেছে পাকিস্তান।
পাকিস্তান ২০১৭ সালে আরেকটি প্রতিরক্ষা চুক্তি করেছিল। তারা তুরস্কের কাছে ৫২টি সুপার মুশশাক প্রশিক্ষণ বিমান বিক্রির জন্য চুক্তি করে। এক বছর পর আঙ্কারা এক হাজারটি পিকে-৮৩ সাধারণ ব্যবহৃত বোমা কিনতে রাজি হয়।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, চীনা সহায়তায় পাকিস্তান তার অস্ত্র উৎপাদনের সামর্থ্য বাড়িয়েছে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, পাকিস্তান ধীরে ধীরে কেবল ছোট অস্ত্র নির্মাণের সামর্থ্য কাটিয়ে ওঠছে। তিনি বলেন, আমরা এখন বড় অস্ত্রের দিকে যাচ্ছি।
ইসলামাবাদের কায়েদে আযম বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক নাজির হোসাইন বলেন, যুক্তরাষ্ট্র ও পাশ্চাত্যের দেশগুলো অস্ত্র বাজারে প্রাধান্য বিস্তার করে থাকলেও পাকিস্তান তার অস্ত্র রফতানি ব্যাপকভাবে বাড়ানোর সম্ভাবনা সৃষ্টি করেছে।
তিনি বলেন, অবশ্য, এই বাজারে পাকিস্তানের প্রবেশের সুযোগ থাকবে সীমিত। আফ্রিকার মতো যেসব দেশের বাজেট স্বল্প, সেসব দেশই হবে পাকিস্তানের টার্গেট।
পাকিস্তান চলতি গ্রীস্মে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) সাথে নতুন একটি ঋণচুক্তি সই করেছে। এই চুক্তির শর্ত অনুযায়ী, পাকিস্তানকে সামরিক ব্যয় হ্রাস করতে হবে। হোসাইন বলেন, এ ধরনের বাজেটগত চাপ থাকায় পাকিস্তানের পক্ষে ঋণ চুক্তির মাধ্যমে অস্ত্র ব্যবসায় নামা কঠিন হবে।
অস্ত্র নির্মাণ অভিজ্ঞতার সাথে সম্পৃক্ত অন্যান্য সূত্র জানিয়েছে, পাকিস্তান তার প্রয়াস অব্যাহত রাখার মাধ্যমে একটি ক্রেতা ভিত্তি গড়ে তুলতে পারে।
পাকিস্তান নৌবাহিনীর এক সাবেক অ্যাডমিরাল নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, আমরা চীনের কাছে আটটি সাবমেরিনের অর্ডার দিয়েছি এ কারণে যে চীন এই খাতে উন্নতি করেছে এবং তাদের আইটেমগুলোর দাম পাশ্চাত্যের চেয়ে প্রায় অর্ধেক।
তিনি বলেন, পাকিস্তানের মতো নতুন উৎপাদনকারীর কাছ থেকে আরো সস্তায় অস্ত্র কেনার বিষয়টি অনুধাবন করতে আরো সময় লাগবে।
তিনি বলেন, তবে শেষ পর্যন্ত নতুন ক্রেতারা আমাদের পণ্য দেখবে।
নিক্কিই এশিয়ান রিভিউ