মুরসির মৃত্যুকে হত্যাকাণ্ড ঘোষণা, ফেঁসে যেতে পারেন সিসি!
মুরসির মৃত্যুকে হত্যাকাণ্ড ঘোষণা, ফেঁসে যেতে পারেন সিসি! - ছবি : সংগৃহীত
জাতিসঙ্ঘের বিশেষজ্ঞদের একটি স্বাধীন প্যানেল বলেছে, জুনে মিসরের সাবেক প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুরসির মৃত্যু ‘রাষ্ট্র অনুমোদিত বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড’ হতে পারে। এই অভিমতের ফলে প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ আল-সিসির নেতৃত্বাধীন মিসরের বর্তমান সরকার বেশ বেকায়দায় পড়ে যেতে পারে বলে ধারনা করা হচ্ছে। মুরসির পরিবার এবং মুসলিম ব্রাদারহুড অনেক আগে থেকেই বলে আসছিল যে তার মৃত্যু স্বাভাবিক ছিল না।
জাতিসঙ্ঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার অফিসের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘মুরসিকে এমন পরিস্থিতিতে রাখা হয়েছিল যাকে কেবল নিষ্ঠুর হিসেবে বর্ণনা করা যেতে পারে, বিশেষত তোরা কারাগার কমপ্লেক্সে তার পাঁচ বছরের বন্দিদশায়। এই পরিস্থিতি সহ্য করার পরে তার মৃত্যু রাষ্ট্র অনুমোদিত বিচারবহির্ভূত হত্যা বলে বিবেচিত হতে পারে।’
মিসরের প্রথম গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট মুরসি ছয় বছরের নির্জন কারাবাসের পর ১৭ জুন বিচার চলাকালে আদালত কক্ষে পড়ে মারা গিয়েছিলেন। ১৭ জুন রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনের খবরে বলা হয়, ‘আদালতের এজলাসে হঠাৎ পড়ে গিয়ে’ মুরসির মৃত্যু হয়েছে।
এর আগে ৭ মে মুরসি আদালতে নিজের জীবন নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন। বলেছিলেন, তার জীবন হুমকির মুখে। আইনজীবী ও পর্যবেক্ষকরা মিসরের সাবেক প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুরসির মৃত্যুকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও পরিকল্পিত বলে অভিযোগ করেছেন। পরিবার ও বন্ধুদের দাবি, মিসরের ক্ষমতাচ্যুত প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুরসি মৃত্যুর দিনে আদালত কক্ষে ২০ মিনিট অজ্ঞান অবস্থায় পড়ে ছিলেন। সে সময় মিসরের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত প্রেসিডেন্টকে প্রাথমিক চিকিৎসাও দেয়া হয়নি।
এক বছর ক্ষমতায় থাকার পর ২০১৩ সালে সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে তাকে ক্ষমতাচ্যুত করেছিলেন বর্তমান প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ আল-সিসি। মুরসি বর্তমানে নিষিদ্ধ ঘোষিত মুসলিম ব্রাদারহুডের নেতা ছিলেন।
দীর্ঘ দিন থেকে উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, কিডনি ও লিভারজনিত রোগে ভুগছিলেন মুরসি। কিন্তু কারাবন্দী এ রাজনীতিককে যথাযথ চিকিৎসা নিতে না দিয়ে তাকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেয়া হয়। আইনজীবীদের সাথে তাকে দেখা করতেও দেয়া হয়নি। ছয় বছর দিনে ২৩ ঘণ্টা নির্জন কারাগারই ছিল তার ঠিকানা। দিনে শুধু একবার এক ঘণ্টা হাঁটাহাঁটির সুযোগ দেয়া হতো তাকে। ছয় বছরে মাত্র তিনবার পরিবারের সদস্যদের সাথে সাক্ষাতের সুযোগ পান মুরসি। শেষ দেখা হয়েছিল ২০১৮ সালে।
মানবাধিকার সংগঠনগুলো বলে আসছিল যে, মুরসির সাথে কারাগারে অশোভন আচরণ ও নির্যাতন করা হচ্ছে। তাকে জেলখানায় নিঃসঙ্গ রাখা হয়েছে। তার ওপর পর্যায়ক্রমে দুর্ব্যবহার করা হয়েছে। মুরসির মৃত্যুর দায় এখন মিসর সরকারকে নিতে হবে। কারণ তারা তার উপযুক্ত মেডিক্যাল সেবা ও কারাগারে বন্দীর মৌলিক অধিকার দিতে ব্যর্থ হয়েছে। অনেকটা বিনা চিকিৎসা ও অবহেলায় তার মৃত্যু হয়েছে।
সূত্র : আলজাজিরা ও দ্য ইনডিপেনডেন্ট