৪ কারণে আমেরিকাকে হারাতে যাচ্ছে তালেবান
৪ কারণে আমেরিকাকে হারাতে যাচ্ছে তালেবান - ৪ কারণে আমেরিকাকে হারাতে যাচ্ছে তালেবান
আফগানিস্তানে মার্কিন হামলার সমর্থক হিসেবে আমি আশা করেছিলাম যে তালেবান আতঙ্ক থেকে আফগানিস্তানকে মুক্ত করার পাশাপাশি আমরা আফগানরা আমাদের অর্থনীতিকে চাঙ্গা করার সুযোগ পাব, অবকাঠামো নির্মাণ করতে পারব, জীবনযাত্রার মান উন্নত করতে পারব, যুদ্ধবাজদের দিন শেষ করতে পারব, দায়মুক্তির সংস্কৃতির অবসান ঘটাতে পারব।
কিছু গুরুত্বপূর্ণ (যদিও ঠুনকো) অর্জন সত্ত্বেও সার্বিকভাবে আফগানিস্তানে আমেরিকান উপস্থিতি থেকে যেভাবে উপকৃত হওয়ার কথা ছিল তা হয়নি। এর কারণ হলো আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ও একইভাবে আফগানদের সম্মিলিত অযোগ্যতা ও দায়িত্বহীনতা। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ও দুর্নীতিবাজ আফগানেরা ঠিকাদার ও উপ-ঠিকাদারদের মাধ্যমে মার্কিন করদাতাদের বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার ব্যয় করেছে। আর তাতে করে তালেবান বিদ্রোহীরা উজ্জীবিত হতে সহায়তা পেয়েছে।
নতুন করে সুসংগঠিত হওয়ার মাধ্যমে ২০০৬ সাল নাগাদ যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে পূর্ণ মাত্রায় বিদ্রোহ শুরু করে দেয় তালেবান। বিদ্রোহের গতি বাড়ার সাথে সাথে দুটি উদ্বেগজনক ঘটনা ঘটে। ২০১০ সাল নাগাদ যুক্তরাষ্ট্র সৈন্য বাড়ায়, কিন্তু তালেবান প্রতিরোধের অবসান ঘটাতে পারেনি। দ্বিতীয়ত, তালেবান আক্রমণগুলো হয় আরো বেশি প্রাণঘাতী। কোনো পক্ষই জয়ী হতে না পারায় ‘অচলাবস্থা’ নামের একটি পরিভাষা চাপিয়ে দেয়া হয় আফগান যুদ্ধের ওপর। আর এটি ১৯৮০-এর দশকে মুজাহিদিন গেরিলাদের পরাজিত করতে সোভিয়েত ইউনিয়নের ব্যর্থ প্রয়াসের কথাই স্মরণ করিয়ে দেয়। তালেবানকে পরাজিত করতে ব্যর্থ হওয়াটা যুক্তরাষ্ট্র ও তার আফগান মিত্রদের কাছে ইতিবাচক ছিল না।
অচলাবস্থা বজায় থাকলেও তালেবান কিন্তু বড় ধরনের অগ্রগতি হাসিলের দ্বারপ্রান্তে রয়েছে। শিগগিরই যে আবার যুক্তরাষ্ট্র-তালেবান শান্তি আলোচনা শুরু হবে তা নিশ্চিত। আর কোনো বিকল্পই যুক্তরাষ্ট্রের হাতে নেই। কারণ তারা যুদ্ধক্ষেত্রে তালেবানকে হারাতে পারবে না, এটা তারা জানে। নিজে চারটি কারণ দেয়া হলো, যেগুলোর কারণে মার্কিন প্রত্যাহারের পর তালেবানকেই আফগান জাতি গ্রহণ করে নেবে।
প্রথমত, ১৯৮০-এর দশকের আফগান মুজাহিদদের চেয়ে তালেবান খুব বেশি ভিন্ন নয়। তালেবানের মতো মুজাহিদরাও কট্টর দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করত। তাদের হামলাতেও বেসামরিক লোকজন নিহত হতো।
সোভিয়েত সৈন্যদের বিদায়টি আফগানরা গর্বের বিষয় হিসেবে গ্রহণ করে নিয়েছে। আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সৈন্যদের প্রত্যাহারের পরও বিষয়টি এমন হতে পারে। সবাই মিলে তালেবানকে মুক্তির দূত হিসেবে গ্রহণ করে নিতে পারে।
দ্বিতীয়ত, আফগানিস্তানের গ্রাম এলাকাগুলোতেই যুক্তরাষ্ট্র ও আফগান সরকারি বাহিনী সবচেয়ে বেশি বোমা ফেলেছে। একদিকে সেখানে তেমন কোনো অবকাঠামো নির্মিত হয়নি, অন্যদিকে নির্বিচারে হামলা চালানোর কারণে বিপুল প্রাণহানি ঘটেছে। এতে করে মার্কিন ও আফগান সরকারি বাহিনীর বিরুদ্ধে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। আর তালেবান অর্জন করেছে সহানুভূতি। ফলে মার্কিন বাহিনীর সরে যাওয়াকে আফগান গ্রামবাসীরা উদযাপন করতেই পারে।
তৃতীয়ত, গত দুই শ’ বছরে আফগান ইতিহাসে দেখা যায়, কোনো হানাদার বাহিনী যখন হটে যায়, তখন আফগানরা তাদের দেশবাসী আফগানদের প্রতিই সমর্থন প্রদান করে। ঊনিশ শতকে ব্রিটিশদের পরাজিত হওয়ার সময়ও এমনটা দেখা গেছে। বর্তমানের অচলাবস্থা যত বেশি স্থায়ী হবে, তালেবানের প্রতি সাধারণ আফগানের সহানুভূতি তত বাড়তে থাকবে। মনে রাখতে হবে, তালেবান আর সাধারণ আফগানরা একই ধর্ম ও সংস্কৃতির অনুসারী, যা বিদেশী সৈন্যদের মতো নয়।
চতুর্থ ও শেষ বিষয় হলো, বর্তমান আফগান প্রজন্ম হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়ছে। এই হতাশা যত বাড়বে, তালেবানের প্রতি সমর্থনও তত বৃদ্ধি পাবে। সাধারণ মানুষ তত বেশি করে তালেবানের সাথে নিজেদের সম্পৃক্ত করে নেবে।
এসব কারণে আমরা যারা শুরুতে আফগানিস্তানে যুক্তরাষ্ট্রকে স্বাগত জানিয়েছিলাম, তাদের উপস্থিতিকে সমর্থন করেছিলাম, তারা হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েছি। কারণ আফগান পুনঃগঠন অনেকটাই অসমাপ্ত থেকে গেছে। তালেবানকে হটানোর ১৮ বছর পর তারা এমনকি আগের চেয়েও বেশি শক্তি নিয়ে ফিরে এসেছে। তারা এখন আর নিঃসঙ্গ নয় বা পুরোপুরি পাকিস্তানের ওপর নির্ভরশীল নয়। আরো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, তারা অনন্যসাধারণ কিছু প্রাপ্তির দ্বারপ্রান্তে রয়েছে। আর তা হলো : আফগানিস্তান থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রত্যাহারের চুক্তি।
ন্যাশনাল ইন্টারেস্ট