একসাথে পড়াশোনা একসাথে মৃত্যু : যে ঘটনা কাঁপিয়ে দিয়েছে সবাইকে
একসাথে পড়াশোনা একসাথে মৃত্যু : যে ঘটনা কাঁপিয়ে দিয়েছে সবাইকে - ছবি : সংগৃহীত
একজনের নাম ইফতেখার আহমেদ ওয়াজিদ, অন্য জনের নাম মো: সোহায়ের। দু’জনেরই বয়স ১২ বছর। পড়াশোনা করত একই স্কুলে একই ক্লাসে। দু’জনেই বাবুরাইল বেপারীপাড়া এলাকার সানরাইজ মডেল স্কুলের ষষ্ঠ শ্রেণীর ছাত্র। খুনসটি আর মেধার দিক থেকে কেউ কারোর চেয়ে কম ছিল না। ষষ্ঠ শ্রেণীতে মেধা তালিকায় ওয়াজিদ সপ্তম আর সোহায়ের ছিল অষ্টম। ভাগ্যের কী নির্মম পরিহাস, পড়াশোনা থেকে শুরু করে সবকিছু একসাথে করত। শেষ পর্যন্ত মৃত্যুটাও একইসাথে ঘটেছে। ঘটনার দিন এক সাথেই কুরআন শরিফ পড়তে গিয়েছে তারা। মৃত্যুর পর কাশিপুর কবরস্থানে দু’জনকে পাশাপাশি কবর দেয়া হয়।
নারায়ণগঞ্জের বাবুরাইলে চতুর্থতলা ভবনধসের ঘটনায় দুই খালাতো ভাইয়ের একসাথে মৃত্যুর ঘটনা শিক্ষক ও সহপাঠী আত্মীয়স্বজনদের মধ্যে এখন আলোচনার বিষয়।
গত ৩ নভেম্বর নারায়ণগঞ্জ শহরের বাবুরাইল এলাকায় নির্মাণাধীন চারতলা একটি ভবন ধসে পড়ে। ওই সময় সোহায়ের মারা যায় আর নিখোঁজ হয় ওয়াজিদ। নিখোঁজ ইফতেখার আহমেদ ওয়াজিদের লাশ প্রায় সাড়ে ৪৭ ঘণ্টা পর ৫ নভেম্বর বিকেলে ভবনের নিচতলায় একটি দেয়ালে চাপাপড়া অবস্থায় উদ্ধার করা হয়।
চার বছর আগে সৌদি আরবে মারা যান সোহায়েরের বাবা শাহাব উদ্দিন। পরে তার মা রোজিয়া বেগম ছেলে সোহায়েরকে লালন পালন করতে থাকেন। আর রোজিয়া আরেক বোন কাকলীর ছেলে হলো ওয়াজিদ। ঘটনার দিন খালা রুনার কাছে আরবি পড়তে যায় দু’জন। সেখানে ভবনধসের ঘটনায় মারা যায় তারা।
নিহত ওয়াজিদের চাচা সাইফুল ইসলাম বলেন, তারা দুই ভাই একই স্কুলে ও একই শ্রেণীতে পড়ালেখা করত। সব সময় একসাথে থাকত। একইসাথে খেলাধুলা করত। ঘটনার দিন বিকেলে দুই ভাই একসাথে আরবি পড়তে এসেছিল।
সানরাইজ স্কুলের প্রধান শিক্ষক এস এম মহাসিন বলেন, দুইজন ছাত্র হিসেবে ভালো ছিল। ওয়াজিদের রেজাল্ট সোহায়ের তুলনায় ভালো ছিল। ওয়াজিদ পড়াশোনায় ভালো হওয়ার পাশাপাশি বেশ নম্র ও ভদ্র ছিল। আর সোহায়ের খুব চঞ্চল ও ডানপিটে ছিল। খেলাধুলা নিয়ে বেশ ব্যস্ত থাকত সোহায়ের। চলতি বছরে ষষ্ঠ শ্রেণীর অর্ধবার্ষিকী পরীক্ষায় সোহায়ের ৪৪৯ নম্বর পেয়েছে। আর ওয়াজিদ ৪৭৩ নম্বর পেয়ে চতুর্থ।
গণিত শিক্ষক কেয়া আক্তার জানান, ওরা দুই ভাই সব সময় বাম পাশের দ্বিতীয় বেঞ্চে একসাথে বসত। সোহায়ের ওয়াজিদকে খোঁচা দিয়ে সব সময় ঝগড়া করত। তখন ওয়াজিদ শিক্ষকদের কাছে নালিশ করত। তখন দু’জনকে আলাদা করে দিতাম। কিন্তু চলে গেলে দু’জনে ফের এক বেঞ্চে এক সাথে বসত। স্কুলে আসত এক সাথে বাড়িতে যেত একসাথে। সবকিছুই এক সাথে করত।
নারায়ণগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট রেহেনা আক্তার বলেন, জেলা প্রশাসকের নির্দেশে আমাকে প্রধান করে সাত সদস্যের তদন্ত কমিটি করা হয়। এতে রয়েছেন পুলিশ সুপারের প্রতিনিধি, সিভিল সার্জনের প্রতিনিধি, ফায়ার সার্ভিস প্রতিনিধি, রাজউক প্রতিনিধি, সদর ইউএনও ও জেলা প্রকৌশলী সদর। ৮ নভেম্বরের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেয়ার জন্য বলা হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, ইতোমধ্যে কমিটির সদস্যরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন ও সভা করেছেন। এর মধ্যে ভবন কোড মানা হয়েছে কি না, ভবনের জায়গার মালিকানা সংক্রান্ত তথ্যসহ বেশ কিছু বিষয়ে পর্যালোচনা করা হচ্ছে। তদন্তের অগ্রগতি অনেক ভালো। আশা করছি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে পারব।