ভয়াবহ অভিজ্ঞতার কথা জানালেন গোলাম মাওলা রনি
গোলাম মাওলা রনি - ছবি : সংগ্রহ
দশ বছর বয়স পর্যন্ত আমার জীবনের বড় আফসোস ছিল কোনো চোর-ডাকাত কিংবা অন্য কোনো দাগী আসামি চাক্ষুষ দেখতে না পারার ব্যর্থতা। কারণ ওইসব অপকর্ম আমাদের গ্রামে যেমন কোনো দিন হয়নি, তেমনি ওইসব চরিত্রের লোকজনও আমাদের সমাজে ছিল না। শৈশব ও কৈশোরে শিল্প-সাহিত্য ও সঙ্গীতের অনেক ভালো ভালো শব্দ শুনেছি কিন্তু ধর্ষক-পতিতা, বাটপার প্রভৃতি মন্দ শব্দ দ্বারা আক্রান্ত হইনি। ফলে পরিণত বয়সে এসেও চোর-ডাকাত সম্পর্কে নিজের কৌতূহল একটুও কমেনি, বরং বেড়েছে। কারণ আজকের চোর-ডাকাত কিংবা অন্য কোনো দাগী আসামি সনাতন পদ্ধতিতে তাদের অপরাধ করে না। নতুন পদ্ধতিতে কিছু মানুষ কুকর্ম করে এবং জনসমাজে সাধুবেশে ঘুরে বেড়ায়। আবার কিছু মানুষ রয়েছেন, যাদের বিরুদ্ধে এন্তার অভিযোগ রয়েছে, কিন্তু আদতে তারা হয়তো কোনো কালে মন্দকাজের ধারেকাছেও যাননি।
আজকের লেখায় যে ভয়ঙ্কর আসামির কথা বলব, তাকে বাংলাদেশের বেশির ভাগ সচেতন মানুষ কমবেশি চেনেন। সরকারি খাতায়, আদালতের নথিপত্রে এবং তার প্রতিদ্বন্দ্বীদের মন-মস্তিষ্কে এবং কলিজার মধ্যখানে তিনি ততটাই ভয়ঙ্কর আসামি হিসেবে দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন, যার সাথে মুম্বাই অপরাধ জগতের মুকুটহীন সম্রাট হাজী মাস্তান, দাউদ ইব্রাহিম অথবা ছোটা শাকিল কিংবা রাজনের সাথে তুলনা করা যেতে পারে। আমাদের দেশের এক সময়ের পাসপাত্তু, গালকাটা কামাল, বাস্টার্ড সেলিম বা টোকাই সাগর অথবা সন্ত্রাসী জিসানের সাথে আজকের শিরোনামের ব্যক্তির কোনো তুলনা চলে না। কারণ ওইসব ছিঁচকে-পুঁচকে আসামি দু-চারটি মামলা খেয়ে ইঁদুরের মতো দেশ ছেড়ে পালিয়েছিল, নতুবা পুলিশের ভয়ে দেশের মধ্যে গা-ঢাকা দিয়ে হারিয়ে গিয়েছিল। কিন্তু আমার আলোচ্য আসামি এমনটি করেননি। প্রায় শ’ দুয়েক মামলা-মোকদ্দমা নিয়ে বীরদর্পে ঘুরে বেড়াচ্ছেন এবং রবিন হুড-দস্যু পাঞ্জা প্রমুখের মতো জনগণের ভালোবাসায় সিক্ত হয়ে প্রতিপক্ষের শরীর-মনে ‘আজাইরা কচুজাত চুলকানি’ সৃষ্টি করে চলেছেন।
বহু দিনের কৌতূহল ছিল এ যুগের সে রবিন হুডের সাথে পরিচিত হওয়ার। দুই হাজার তেরো সালে হঠাৎ করেই আমার জীবনে সেই সুযোগ এসেছিল একটি অযাচিত দুর্ঘটনার কারণে। বাংলাদেশের কিংবদন্তির সৎ, সাধু ও সজ্জন বলে টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া পর্যন্ত বিস্তীর্ণ এলাকার গণমানুষের শ্রদ্ধা-ভালোবাসা ও দোয়ার কিম্ভূত প্রতীক বলে সর্বজনস্বীকৃত একজন লোকের কারণে যখন জেলে গিয়েছিলাম, তখন সেই রবিন হুড আমার স্ত্রীকে ফোন করে নানা সান্ত্বনার বাণী শুনিয়ে তাকে ভরসা দিয়েছিলেন। সুতরাং আমি জেল থেকে বের হয়ে এই রবিনহুডকে ফোন করলাম এবং কিছুক্ষণ কথা বলার পর আমাদের মধ্যে বেশ ভাব হয়ে গেল। তিনি আমার চেয়ে বয়সে খানিকটা বড় হওয়া সত্ত্বেও আমাদের মধ্যে দিন দিন বন্ধুত্ব বৃদ্ধি পেতে থাকল। সময় সুযোগ পেলেই তার কুকর্মের খোঁজখবর নিতাম এবং ওইসব কর্ম তিনি কিভাবে করতেন, তা জানার চেষ্টা করতাম। তিনি আমার উৎসাহ দেখে সম্ভবত মজা পেতেন এবং সে কারণে তিনি আমাকে তার অপরাধস্থলে নিয়ে যাওয়ার প্রস্তাব করতেই একবাক্যে রাজি হয়ে গেলাম।
ঘটনার দিন আমি সকাল ৭টায় রবিন হুড এবং তার সঙ্গী-সাথীদের সাথে মিলিত হলাম এবং বারো ঘণ্টার রোমাঞ্চকর ভ্রমণের পর সন্ধ্যা ৭টায় ঢাকায় ফিরে এসেছিলাম। রবিন হুড আমাকে আনন্দ দেয়ার জন্য সুন্দর একখানা ময়ূরপঙ্খী জাহাজের ব্যবস্থা করলেন; সারা দিনের আহার-বিনোদন এবং বিশ্রামের চমৎকার আয়োজন করলেন; যা দেখে আমার মন খুশিতে নেচে উঠল। আমি তার সঙ্গী-সাথীদের সাথে আড্ডা দিতে দিতে বুড়িগঙ্গা পেরিয়ে মেঘনায় গিয়ে পৌঁছে গেলাম এবং এক সময় সুবিখ্যাত চাঁদপুর নৌবন্দরে পৌঁছে রবিন হুডের কর্মস্থলের দিকে রওনা হই। আমার যাত্রাপথে রবিন হুডের বন্ধুসুলভ আচরণ, তার স্ত্রীর অতুলনীয় মেহমানদারি এবং তার বন্ধুদের আন্তরিকতা ও সম্মান প্রদর্শনের কারণে জিজ্ঞাসাই করতে পারলাম না- কেন আপনি ৭০ বছর বয়সী বৃদ্ধাকে প্রকাশ্যে নির্মমভাবে ধর্ষণ করেছেন। তা-ও সেই দরিদ্র বৃদ্ধার ধনাঢ্য ও দুর্ধর্ষ বৃদ্ধ প্রেমিকের সামনে। অথবা কেন রবিনহুডগিরির আড়ালে চুরি-ডাকাতি-ছিনতাই, জবরদখল, চাঁদাবাজি, হত্যাচেষ্টা, গুম প্রচেষ্টা, জুলুম-অত্যাচার থেকে শুরু করে নামকরা এক বৃদ্ধকে প্রকাশ্যে বলাৎকারের হুমকি-ধমকি দিয়ে মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছেন, যে কারণে আপনার বিরুদ্ধে একটার পর একটা ফৌজদারি মামলা হয়েছে!
আমি আমার মনের মধ্যে লুক্কায়িত প্রশ্নগুলো কথিত ভয়ঙ্কর আসামি এবং রবিন হুডের বেশধারী লোকটিকে জিজ্ঞেস করতে পারলাম না বটে; তবে আমার বুদ্ধিশুদ্ধি এবং জ্ঞানগরিমার সর্বোচ্চ স্তর ব্যবহার করে তাকে খুব ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করতে শুরু করে দিই। অপরাধ বিজ্ঞানের একজন ছাত্র হিসেবে জানি, প্রত্যেক অপরাধীর শরীরের গঠনের মধ্যে তার অপরাধ কর্মের নিদর্শন থাকে। অপরাধীর চোখ, ঠোঁট, জিহ্বা, হাত-পায়ের আঙুল-নখ, কোমর তথা জঙ্ঘা, মুখমণ্ডল, চোখের ভুরু, চুল, গণ্ডদেশ ও কণ্ঠস্বর। পেটের আকৃতি এবং খাদ্য গ্রহণের ঢংচং এবং পরিপাকতন্ত্রের রসায়ন এবং বায়ু নিঃসরণের গতিপ্রকৃতি দেখে অপরাধীর ধরন-প্রকৃতি শনাক্ত করা সম্ভব।
এ ছাড়া অপরাধীর কথাবার্তা, হাসি-তামাশা, অঙ্গভঙ্গি এবং পোশাক-পরিচ্ছদের মধ্যেও তার কুকর্মের বহু আলামত দেখা যায়। সুতরাং আমি চেষ্টা করতে থাকি, রবিন হুডের মধ্যে লুকিয়ে থাকা ভয়ঙ্কর অপরাধগুলোর দলিলদস্তাবেজ বের করে আনার জন্য। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত কোনো কিছুরই হদিস করতে না পেরে উদাস দৃষ্টিতে মেঘনার নীলজলের দিকে তাকিয়ে রইলাম।
রবিনহুড আমার উদাসীনতা দেখে সেদিন কী বুঝেছিলেন, তা বলতে পারব না। কিন্তু কেন জানি, হঠাৎ খুব আবেগপ্রবণ হয়ে পড়লেন। আমার কাঁধে হাত রেখে তিনি মেঘনার বুকে ভাসমান জেলে নৌকাগুলোর দিকে অঙ্গুলি নির্দেশ করে হঠাৎ কেমন যেন একধরনের বোহেমিয়ান নস্টালজিয়াতে আক্রান্ত হলেন। তার ভাবসাব দেখে মনে হচ্ছিল- হয়তো তিনি এখনই ময়ূরপঙ্খী জাহাজ থেকে লাফিয়ে পড়বেন এবং জেলে নৌকা আক্রমণ করে দরিদ্র জেলেদের সর্বস্ব লুট করবেন। আমি রবিন হুডের ভাবসাব দেখে রীতিমতো ভড়কে গেলাম। কারণ, তিনি যদি এবার জেলে নৌকায় হামলা চালিয়ে জেলেদের নৌকা-জাল-মাছ লুট শুরু করেন; তাহলে তার সহযোগী হিসেবে পুলিশের খাতায় চোর-ডাকাত হিসেবে আমার নামটিও হয়তো নথিভুক্ত হয়ে পড়বে। তার উত্তেজনার কারণ জিজ্ঞেস করতেই তিনি ইলিশ শিকার এবং ইলিশ জেলেদের সম্পর্কে বিরাট এক মহাকাব্য বর্ণনা করতে শুরু করলেন, যা শোনার পর আমি রীতিমতো তাজ্জব বনে যাই।
তিনি বলতে আরম্ভ করলেন, বাংলাদেশে ইলিশের প্রজনন মওসুম নির্ধারণ এবং সেই প্রজনন মওসুমে জেলেদের মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা জারি এবং এর বাস্তবায়ন তিনি করেছিলেন। দেশ-বিদেশের মৎস্য গবেষকদের সাহায্য সহযোগিতা নিয়ে তিনি বহু চেষ্টা করে ইলিশের প্রজনন মওসুম, প্রজনন ক্ষেত্র এবং মা ইলিশদের অভয়ারণ্য সৃষ্টির জন্য করণীয় নির্ধারণ করেছিলেন। ক্ষমতাসীন সরকার এবং প্রশাসন যন্ত্রকে বহু চেষ্টা-তদবির করে তিনি রাজি করিয়েছিলেন ইতিহাসবিখ্যাত ইলিশের উন্নয়ন, সংরক্ষণ, প্রজনন, বংশবৃদ্ধি এবং উৎপাদন বৃদ্ধির প্রকল্পটি চালু করার জন্য। এই কাজ করতে গিয়ে তিনি কিভাবে প্রতি পদে পদে বাধা-বিপত্তি, ক্ষোভ-বিক্ষোভ এবং শারীরিক-আর্থিক ও মানসিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছিলেন, তা বলতে গিয়ে তিনি ক্ষণে ক্ষণে আবেগপ্রবণ হয়ে পড়ছিলেন। কথার ফাঁকে তিনি জানালেন, বাংলাদেশ এখনো নির্ভুলভাবে জানে না, মওসুমের কোন দিনগুলোতে মা ইলিশ ডিম ত্যাগ করে। তিনি যেভাবে শুরু করেছিলেন, অর্থাৎ ফিফটি পার্সেন্ট গবেষণালব্ধ জ্ঞান এবং ফিফটি পার্সেন্ট আন্দাজ মার্কা জ্ঞানের সমন্বয়ে মামলেট-জাতীয় প্রকল্পের অধীন একটি সময় নির্ধারণ করা এবং সেই সময়ে ইলিশ ধরা বন্ধ রাখা; ঠিক সেভাবেই আজো চলছে। তবে পরিস্থিতি তার আমলের তুলনায় খারাপভাবে এগোচ্ছে এই কারণে যে, মন্ত্রিপর্যায়ের কেউ তার মতো শতভাগ সদিচ্ছা-আগ্রহ, আন্তরিকতা এবং দেশপ্রেম নিয়ে প্রকল্পটির তদারকি করছেন না।
রবিনহুড যখন ক্ষমতা-বিত্ত-বৈভবের তুঙ্গে ছিলেন, তখন তিনি দেশ, জাতি, সমাজ, সংসার, প্রকৃতি ও পরিবেশ নিয়ে অনেক কিছু ভাবতেন। চাঁদপুরের মানুষ হিসেবে তার ভাবনায় দুটো সমস্যা সব সময় তাকে পীড়া দিত। প্রথম সমস্যা ছিল চাঁদপুর নদী বন্দরের মোহনায় প্রতি বছর অসংখ্য নৌ-দুর্ঘটনা এবং শত শত মানুষের প্রাণহানি।
মেঘনার ডাকাতিয়া নামক স্থানটি পাড়ি দিয়ে ঢাকা থেকে দক্ষিণাঞ্চল অথবা দক্ষিণাঞ্চল থেকে ঢাকাগামী ছোট-বড় শত শত লঞ্চ যেভাবে চাঁদপুর নৌবন্দরের চ্যানেলে ঢুকত তাতে চ্যানেলের বেসিন বা মোহনায় মারাত্মক ঘূর্ণনমূলক স্রোত সৃষ্টি হতো। ফলে ওই স্থানে অনেক লঞ্চ ডুবে যেত। শত শত বছর ধরে সমস্যাটি চলে আসছিল এবং সরকারি কর্তৃপক্ষ, লঞ্চ মালিক এবং জনগণ মনে করত, সমস্যাটি প্রাকৃতিক। সুতরাং একমাত্র আল্লাহ তায়ালা ছাড়া চাঁদপুরের নৌ-দুর্ঘটনা কেউ রোধ করতে পারবে না। এ জন্য বিভিন্ন ধর্ম মতের মানুষ চাঁদপুরের বিপজ্জনক সেই মোহনা পাড়ি দেয়ার সময় যার যার মতো করে মন্ত্র-তন্ত্র, দোয়া-দরুদ এবং নামাজ-কালাম পড়া শুরু করতেন।
আজকের আলোচ্য রবিনহুড ব্যক্তিগত জীবনে অত্যন্ত ধার্মিক ও খোদাভীরু মানুষ। কিন্তু তিনি চাঁদপুরের দুর্ঘটনার জন্য কেবল খোদাকে দায়ী করতে পারলেন না। কারণ, যেসব সমস্যা মানুষ কর্তৃক সৃষ্ট, সেসব সমস্যার জন্য খোদাকে দায়ী করা অথবা মনুষ্যসৃষ্ট সমস্যার দায় খোদার ওপর চাপানো বিরাট অপরাধ। সুতরাং তিনি তার পরিচিত রিভার সার্ফোলজি বিশেষজ্ঞদের চাঁদপুর নিয়ে এলেন। নিজে সরেজমিন উপস্থিত থেকে বোঝার চেষ্টা করলেন, চাঁদপুর নৌবন্দরের মোহনায় কেন ঘূর্ণন সৃষ্টি হয় এবং তা কখন প্রবল আকার ধারণ করে। তিনি লক্ষ করলেন, বর্ষা মওসুমে জোয়ারের সময় যখন প্রবলবেগে মেঘনার পানি চাঁদপুর চ্যানেলে ঢুকতে থাকে, তখন যদি দশ-বারোটি দৈত্যাকার লঞ্চ পরস্পরের সাথে পাল্লা দিয়ে একটির আগে অন্যটি বন্দর চ্যানেলে ঢোকার চেষ্টা করে; তবে চ্যানেল মুখের স্রোতে বাধাপ্রাপ্ত হয়ে গতি হারিয়ে ফেলে এবং প্রবল ঘূর্ণন সৃষ্টি করে। সেই ঘূর্ণনের কবলে পড়ে নৌযানগুলো ডুবে যায়। রবিন হুড যখন সমস্যা বুঝতে পারলেন, তখনই তার মাথা থেকে ঝটপট সমাধানও বের হয়ে এলো। তিনি গ্রিক বিজ্ঞানী আর্কিমিডিসের মতো ‘ইউরেকা ইউরেকা’ ধ্বনি তুলে যখন তার পরিকল্পনার কথা চাঁদপুর নৌবন্দর সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের জানালেন, তখন সবাই একবাক্যে সর্বশক্তি দিয়ে তার বিরোধিতা আরম্ভ করলেন।
আজকের নিবন্ধের ভয়ঙ্কর আসামি যাকে রবিন হুড নাম দিয়েছি তার কতগুলো মৌলিক সমস্যা রয়েছে। এমনিতেই তিনি রাগচণ্ডাল স্বভাবের সরল সোজা মানুষ- তার ওপর, তার ঘাড়ের সবগুলো রগই বাঁকা এবং ত্যাড়া। কাজেই তিনি কারো তোয়াক্কা না করে চাঁদপুরের শত শত বছরের পুরনো নদীবন্দরটি চ্যানেলের ভেতর থেকে বের করে নদীর মোহনায় নিয়ে এলেন, যা বর্তমানেও একই স্থানে রয়েছে। ফলে তার সেদিনের সেই একরোখা সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের পর থেকে আজ অবধি চাঁদপুর মোহনায় কোনো নৌ-দুর্ঘটনা ঘটেনি। একইভাবে ইলিশের প্রজনন মওসুমে ইলিশ ধরা বন্ধ করার যে সিদ্ধান্ত তিনি নিয়েছিলেন, যার বিরুদ্ধে লক্ষাধিক জেলে- হাজার হাজার মাছ ব্যবসায়ী এবং তার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে তিনি কিভাবে সামাল দিয়েছিলেন; সে কথা তিনি যখন শুরু করতে যাবেন, ঠিক সেই সময়ে মিসেস রবিনহুড সেখানে এসে অদ্ভুত কিছু কথা বলে আমাদের আলোচনার মোড় ঘুরিয়ে দিলেন।
মিসেস জানালেন, জনাব রবিনহুড সব সময় মৃত্যুকে প্রচণ্ড ভয় পান। জীবনের অপরিহার্য নিয়তি মৃত্যুকে কিভাবে আলিঙ্গনে করবেন এবং কিভাবে কবরে একাকী থাকবেন, তা নিয়ে রবিনহুডের দুশ্চিন্তার অন্ত নেই। তিনি নিজের জন্য একটি কবরস্থান বানিয়েছেন এবং সেই কবরস্থানটিতে বাহারি লাইট স্থাপন করেছেন, যা সন্ধ্যার পরে যখন আলোকময় হয়, তখন তিনি সেখানে গিয়ে উদাস হয়ে ভাবতে থাকেন- কবরের ভেতরে ঘুটঘুটে অন্ধকার- ওখানে তিনি কিরূপে থাকবেন? তিনি অন্ধকারকে প্রচণ্ড ভয় পান; আর ভয় পান নিঃসঙ্গতা কিংবা একাকিত্বকে। তাই প্রিয়তমা স্ত্রীকে তিনি অনুরোধ করে রেখেছেন, তার মৃত্যু যদি আগে হয় তবে প্রিয়তমা যেন সন্ধ্যার সময় এসে স্বামীর কবরটি জিয়ারত করে যান এবং স্ত্রীর মৃত্যুর পর তাকে যেন রবিনহুডের পাশে কবর দেয়া হয়। মিসেস রবিন হুড যখন এসব কথা বলছিলেন, তখন আমাদের আজকের নিবন্ধের ভয়ঙ্কর আসামি ওরফে বাংলাদেশের কিংবদন্তিতুল্য, সফল শিক্ষামন্ত্রী এহসানুল হক মিলন একদৃষ্টিতে উদাস নয়নে মেঘনার নীল জলের দিকে তাকিয়ে কী যেন লুকানোর চেষ্টা করছিলেন।
লেখক : সাবেক সংসদ সদস্য