মানচিত্র নিয়ে আপত্তি : নেপালের ভূমিও ভারতের ভেতরে!
মানচিত্র নিয়ে আপত্তি : নেপালের ভূমিও ভারতের ভেতরে! - ছবি : সংগৃহীত
ভারত নতুন যে মানচিত্র প্রকাশ করেছে, তাতে আপত্তি জানিয়েছে নেপাল। ওই মানচিত্রে বিরোধপূর্ণ কালাপানি এলাকাকে দিল্লির সীমানার ভেতরে দেখানো হয়েছে। কাঠমান্ডু বলেছে, এই এলাকাটি নেপালের তা ‘স্পষ্ট’।
শনিবার ভারত নতুন মানচিত্র প্রকাশ করে। এর আগে দেশটি জম্মু ও কাশ্মির রাজ্যকে কেন্দ্রশাসিত দুটি প্রশাসনিক এলাকায় ভাগ করে।
মানচিত্রটিতে কালাপানিকে ভারত সীমান্তের ভেতরে নেয়া হয়েছে। এই এলাকাটি নিয়ে নেপাল ও ভারতের মধ্যে দীর্ঘ দিন ধরে বিরোধ চলছে। অর্ধ শতাধিক বছর আগে ওই এলাকায় ভারতীয় সৈন্য মোতায়েনের পর থেকেই আপত্তি করে আসছে নেপাল।
নেপালের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানায়, নেপাল তার আন্তর্জাতিক সীমান্ত রক্ষা করতে দৃঢ়প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
এতে বলা হয়, বন্ধুপ্রতীম দুই দেশের সাথে সম্পর্কিত যেকোনো সীমান্ত-সংশ্লিষ্ট ইস্যু ঐতিহাসিক দলিলপত্র ও প্রমাণের ভিত্তিতে কূটনৈতিক চ্যানেলের মাধ্যমে মীমাংসা করা উচিত।
এতে আরো বলা হয়, নেপাল সরকার একতরফা কোনো সিদ্ধান্তই গ্রহণ করবে না।
কালি নদীজুড়ে ভারতের সাথে নেপালের পশ্চিম সীমান্ত প্রতিষ্ঠিত হয় ১৮১৬ সালের চুক্তির বলে। তবে নদীটির উৎস কোথায় তা নিয়ে দুই দেশের মতবিরোধ থেকে সীমান্ত বিতর্কের সৃষ্টি হয়।
প্রধানমন্ত্রী কে পি শর্মা ওলির পররাষ্ট্রবিষয়ক উপদেষ্টা রাজন ভট্টাচার্য বলেছেন, আলোচনার মাধ্যমে এর সমাধান হওয়া উচিত।
তিনি এএফপিকে বলেন, মানচিত্রটির সত্যতা যাচাই করতে হবে আমাদেরকে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ও বিশেষজ্ঞদের কাছ থেকেও সীমান্ত রেখা পরীক্ষা করা দরকার। তারপর আমরা কূটনৈতিক চ্যানেলের মাধ্যমে আলোচনা শুরু করব।
এএফপি
অধিকৃত জম্মু-কাশ্মির ও লাদাখের নতুন মানচিত্র পাকিস্তানের প্রত্যাখ্যান
এনডিটিভি ও ডন
ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় দেশটির নতুন কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল জম্মু-কাশ্মির ও লাদাখের বিস্তৃৃত সীমানা চিহ্নিত করে একটি নির্দেশনা জারি করেছে। শনিবার প্রকাশিত ওই নির্দেশনার ফলে ভারতের একটি নতুন রাজনৈতিক মানচিত্র সৃষ্টি হয়েছে। ভারতের এই নতুন মানচিত্রকে অশুদ্ধ, বেআইনি ও জাতিসঙ্ঘ প্রস্তাবের সম্পূর্ণ লঙ্ঘন আখ্যায়িত করে এই নির্দেশনা প্রত্যাখ্যান করেছে পাকিস্তান।
জম্মু ও কাশ্মিরকে ভেঙে দু’টি আলাদা কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে পরিণত করার সিদ্ধান্ত আনুষ্ঠানিকভাবে কার্যকর এবং সেখানে দু’জন লেফটেন্যান্ট গভর্নর নিয়োগ দেয়ার দুই দিন পর এই নির্দেশনা দিল দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের সাবেক ব্যয় সচিব গিরিশ চন্দ্র মুর্মু জম্মু ও কাশ্মিরের নতুন লেফটেন্যান্ট গভর্নর হয়েছেন; লাদাখের দায়িত্ব পেয়েছেন কেন্দ্রীয় সরকারের সাবেক প্রতিরক্ষা সচিব রাধা কৃষ্ণ মাথুর।
গত শনিবারের নির্দেশনায় কারগিল ও লেহকে লাদাখের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। ১৯৪৭ এর মানচিত্রের বাকি অংশ থাকছে কাশ্মিরে। নির্দেশনায় ৭২ বছর আগে যে ১৪টি জেলা নিয়ে জম্মু ও কাশ্মির রাজ্যটি গঠিত হয়েছিল সেগুলোর নামও উল্লেখ করা হয়েছে। এগুলো হচ্ছেÑ কাঠুয়া, জম্মু, উধমপুর, রিয়াসি, অনন্তনাগ, বারমুল্লা, পুচ, মিরপুর, মুজাফফরাবাদ, লেহ অ্যান্ড লাদাখ, গিলগিট, গিলগিট ওয়াজারাত, চিলহাস ও ট্রাইবাল টেরিটরি।
এ দিকে ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এই নির্দেশনাকে অশুদ্ধ, আইনত অসমর্থনযোগ্য, অন্তঃসারশূন্য ও জাতিসঙ্ঘ নিরাপত্তা পরিষদের এ সম্পর্কিত প্রস্তাবের পুরোপুরি লঙ্ঘন বলে আখ্যায়িত করে এক বিবৃতি দিয়েছে পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এতে আরো বলা হয়, জাতিসঙ্ঘের মানচিত্রের সাথে সামঞ্জস্যহীন এই রাজনৈতিক মানচিত্র প্রত্যাখ্যান করছে পাকিস্তান। আমরা আবারো বলছি, বিরোধপূর্ণ জম্মু ও কাশ্মিরের জাতিসঙ্ঘ স্বীকৃত মর্যাদার পরিবর্তন ঘটাতে পারবে না ভারতের কোনো পদক্ষেপ। ভারত অধিকৃত জম্মু ও কাশ্মিরের জনগণের আত্মনিয়ন্ত্রাধিকারের অনিবার্য অধিকার ভারত সরকারের এসব পদক্ষেপে ক্ষুণœ হবে না। জাতিসঙ্ঘ নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাব অনুযায়ী অধিকৃত জম্মু ও কাশ্মিরের জনগণের আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার প্রতিষ্ঠার বৈধ সংগ্রামে, পাকিস্তান সমর্থন জানিয়ে যাবে বলেও বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়।
৫৬০টিরও বেশি ‘প্রিন্সলি স্টেট’কে ভারতের অন্তর্ভুক্ত করার দাবিদার সর্দার বল্লভভাই প্যাটেলের ১৪৪তম জন্মশতবার্ষিকীতে বৃহস্পতিবার জম্মু-কাশ্মির ও লাদাখে আনুষ্ঠানিকভাবে কেন্দ্রের শাসন শুরু হয়।
ভারতের পার্লামেন্ট জম্মু ও কাশ্মিরের রাজ্য মর্যাদা কেড়ে নেয়ায় দেশটিতে এখন রাজ্যের সংখ্যা কমে ২৮ এ দাঁড়িয়েছে; কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের সংখ্যা বেড়ে ৯টি হয়েছে।
টানা দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতাসীন নরেন্দ্র মোদির ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) সরকার চলতি বছরের ৫ আগস্ট সংবিধানের ৩৭০ অনুচ্ছেদে জম্মু ও কাশ্মিরকে দেয়া বিশেষ মর্যাদা তুলে নেয়ার পরই রাজ্যটিকে দ্বিখণ্ডিত করার প্রক্রিয়া শুরু হয়। মোদি সরকার সংবিধানের ৩৭০ ও ৩৫-এ অনুচ্ছেদকে ‘সংবেদনশীল’ ও বৈষম্যমূলক অ্যাখ্যা দিয়ে বলেছে, কাশ্মিরের এ বিশেষ মর্যাদাই সেখানকার উন্নয়নে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিল।
আগস্টে বিশেষ মর্যাদা তুলে নেয়ার আগে থেকেই কেন্দ্রীয় সরকার রাজ্যটির সাবেক মুখ্যমন্ত্রী ফারুক আবদুল্লাহ, মেহবুবা মুফতি ও ওমর আবদুল্লাহসহ কয়েক শ’ রাজনীতিককে আটক ও গৃহবন্দী করে। সরকার অবশ্য পরে বলেছে, জম্মু ও কাশ্মিরকে বিভক্ত করে দু’টি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে পরিণত করার এ সিদ্ধান্ত ‘সাময়িক’।
কাশ্মির উপত্যকায় ‘স্বাভাবিক অবস্থা’ ফিরে এলে ‘উপযুক্ত সময়ে’ তাকে ফের রাজ্যের মর্যাদা দেয়া হবে বলেও প্রতিশ্রুতি দিয়েছে তারা।