ইন্দো-প্যাসিফিক স্ট্র্যাটেজিতে হেরে যাবে যুক্তরাষ্ট্র!
ইন্দো-প্যাসিফিক স্ট্র্যাটেজিতে হেরে যাবে যুক্তরাষ্ট্র! - ছবি : সংগৃহীত
সদ্য সমাপ্ত ৩৫তম আসিয়ান সামিট অ্যান্ড রিলেটেড সামিটের সময় যুক্তরাষ্ট্র ব্যাংককে দ্বিতীয় বার্ষিক ইন্দো-প্যাসিফিক বিজনেস ফোরাম (আইপিবিএফ) আহ্বান করেছিল, যুক্তরাষ্ট্রের ইন্দো-প্যাসিফিক স্ট্র্যাটেজির অনুকূলে ‘এ ফ্রি অ্যান্ড ওপেন ইন্দো-প্যাসিফিক : অ্যাডভান্সিং এ শেয়ার্ড ভিশন’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদনও প্রকাশ করেছিল। প্রতিবেদনে চীনকে প্রবলভাবে আক্রমণ করে ঘোষণা করা হয়েছিল যে এই অঞ্চলের শান্তির প্রতি চীন একটি হুমকি। এতে ইন্দো-প্যাসিফিক স্ট্র্যাটেজি কাঠামোর আওতায় তাইওয়ান দ্বীপের সাথে সম্পর্ক স্থাপনের ওপর জোর দেয়া হয়েছিল।
অবশ্য আসিয়ান সামিট অ্যান্ড রিলেটেড সামিটের প্রধান বিষয় ছিল রিজিওন্যাল কম্প্রেহেনসিভ ইকোনমিক পার্টনারশিপ (আরসিইপি) প্রশ্নে হওয়া চুক্তি। এর দিকেই অংশগ্রহণকারী দেশ ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বেশি নজর ছিল। ইন্দো-প্যাসিফিক স্ট্র্যাটেজি প্রচার করার মার্কিন প্রয়াস আগ্রহ সৃষ্টি করতে পারেনি।
ভারত এখনই আরসিইপিতে যোগ না দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবে ইন্দো-প্যাসিফিক স্ট্র্যাটেজি নিয়ে তার করার কিছুই নেই, বরং ভারতের নিজস্ব অর্থনৈতিক স্বার্থের দিকেই তার নজর।
ইন্দো-প্যাসিফিক স্ট্র্যাটেজি সামনে আসার পর থেকে গত দুই বছরে যুক্তরাষ্ট্র এ নিয়ে অনেক প্রচারকাজ চালিয়েছে। সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার আমলে উপস্থাপিত এশিয়া-প্যাসিফিক স্ট্র্যাটেজির ভারসাম্যের পুনঃবিন্যাসের সাথে তুলনা করা ইন্দো-প্যাসিফিক স্ট্র্যাটেজি তুলনামূলকভাবে ফাঁকা জিনিস।
ওয়াশিংটন চায় নয়া দিল্লিকে সামনে এনে বেইজিংয়র সাথে সংঘাতে দেশটিকে ‘রনাঙ্গনে’ পরিণত করতে। কিন্তু মনে হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের চেয়ে চতুর ভারত। সে যুক্তরাষ্ট্রের দেয়া কূটনৈতিক সুবিধাগুলো থেকে উপকৃত হলেও চীনের সাথে বিকাশমান সম্পর্কের গুরুত্বও উপলব্ধি করছে। চীন ও ভারতের মধ্যে প্রাচীর গড়ার চেষ্টা করছে ওয়াশিংটন। কিন্তু মোদি ওই ফাঁদে পড়ছেন না।
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলো সাধারণভাবে ইন্দো-প্যাসিফিক স্ট্র্যাটেজি অনুসরণ করতে কিংবা চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে কোনো একটিকে বাছাই করতে অস্বীকৃতি জানিয়ে আসছে। তারা বড় শক্তিগুলোর মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করাকেই মূল পথ হিসেবে গ্রহণ করে নিয়েছে।
এই অঞ্চলের মাত্র একটি সত্ত্বাই সক্রিয়ভাবে যুক্তরাষ্ট্রের ইন্দো-প্যাসিফিক স্ট্র্যাটেজির পক্ষে সোচ্চারভাবে কাজ করছে এবং স্বেচ্ছায় ‘রনাঙ্গন’ হিসেবে ভূমিকা পালন করছে। এর নাম তাইওয়ান। তবে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বেশির ভাগ দেশই তাইওয়ান কর্তৃপক্ষের চেঁচামেচিতে আগ্রহ দেখাচ্ছে না, তাদের তথাকথিত গণতন্ত্র ও স্বাধীনতা রক্ষার আহ্বানের প্রতি কর্ণপাত করছে না। এই অঞ্চলের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উদ্বেগ হলো তাইওয়ান প্রণালীর স্থিতিশীলতা। তারা চায়, এই অঞ্চলে যেন বড় ধরনের কোনো গোলযোগ সৃষ্টি না হয়।
তাইওয়ার সমস্যার সমাধান কীভাবে হবে তা চীন ও তাইওয়ানের ব্যাপার। এই অঞ্চলের তৃতীয় কোনো পক্ষই এতে হস্তক্ষেপ করতে চায় না।
তবে হাজার হাজার মাইল দূরের যুক্তরাষ্ট্র এ নিয়ে সবচেয়ে বেশি ভাবে। বর্তমান যুক্তরাষ্ট্র সরকার ও তাইওয়ানের সাই ইঙওয়েন কর্তৃপক্ষ তাইওয়ান প্রণালীর শান্তি ক্ষতিগ্রস্ত করা ও এই অঞ্চলের স্থিতিশলিতা বিপদগ্রস্ত করার জন্য একসাথে কাজ করে যাচ্ছে। আর তা অন্যান্য আঞ্চলিক সদস্যদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট হচ্ছে না। ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে কৌশলগত স্বার্থের দিক থেকে যুক্তরাষ্ট্রের সেরা অস্ত্রে পরিণত হয়েছে তাইওয়ান। তবে যুক্তরাষ্ট্র ও তাইওয়ান দ্বীপটি খুব বেশি সতর্ক হতে পারছে না।
যুক্তরাষ্ট্র এশিয়ার অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নের মূলধারা থেকে বাইরে রয়েছে। সে চীনের উত্থানকে গ্রহণ করতে পারছে না, মনে করছে যে যুক্তরাষ্ট্র যেভাবে চায় এই অঞ্চলের দেশগুলোঠিক সেভাবেই চীনের (তাদের বৃহত্তম বাণিজ্যিক অংশীদার) সাথে তাদের সম্পর্কের সময় ভূরাজনীতিকে অগ্রাধিকার দেবে। ওই সব দেশের কাছে যুক্তরাষ্ট্রের আবদার হলো, তারা যেন তাদের নিজস্ব স্বার্থের চেয়ে বেশি গুরুত্ব দেয় ওয়াশিংটনের স্বার্থকে এবং সর্বাত্মকভাবে যুক্তরাষ্ট্রের পতাকাই সমুন্নত করে।
এটি এশিয়ার দেশগুলোর বুদ্ধিমত্তা ও মর্যাদার প্রতি অপমান। এভাবে ইন্দো-প্যাসিফিক স্ট্র্যাটেজি কার্যত আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ইতিহাসে লজ্জাজনক কাহিনী হিসেবেই লিপিবদ্ধ হবে।