৭ নভেম্বরের জিয়ার ভূমিকার মূল্যায়ন

সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম, বীর প্রতীক | Nov 05, 2019 08:39 pm
৭ নভেম্বরের জিয়ার ভূমিকার মূল্যায়ন

৭ নভেম্বরের জিয়ার ভূমিকার মূল্যায়ন - ছবি : সংগৃহীত

 


১৫ আগস্ট ১৯৭৫ শুরু হয়ে ২ নভেম্বর ১৯৭৫ পর্যন্ত ৮০ দিনের সময়টি প্রকাশ্যে নিশ্চুপ হলেও অভ্যন্তরীণভাবে থমথমে ও অনিশ্চিত ছিল। ৩ নভেম্বর থেকে ৭ নভেম্বরের ভোর পর্যন্ত নিশ্চিতভাবেই অস্থিতিশীল ও দুর্ঘটনাসম্ভবা (ভোলাটাইল অ্যান্ড পোটেনশিয়ালি এক্সপ্লোসিভ) ছিল। এরূপ সময়ের শেষে এক অগ্নিগর্ভ মুহূর্তে জিয়াউর রহমান বীর উত্তম সেনাবাহিনীর দায়িত্বের অতিরিক্ত, অবশ্যই পরোক্ষভাবে, পুরো দেশ ও জাতির নেতৃত্ব গ্রহণ করেছিলেন। যদি ‘বিপ্লবী সৈনিক সংস্থা’ তথা তৎকালীন জাসদ তাদের নেতিবাচক বিপ্লবাত্মক কর্মকাণ্ডে সফল হতো, তাহলে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অস্তিত্ব থাকত কি থাকত না, সেটি একটি বিরাট প্রশ্ন। কারণ তাদের স্লোগানই ছিল ‘অফিসারবিহীন সেনাবাহিনী’। যদি জাসদ সফল হতো, তাহলে ওই অস্থিতিশীল পরিস্থিতিতে, পাশের দেশ প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে হস্তক্ষেপ করত কি করত না, সেটিও একটি বিরাট প্রশ্ন। অর্থাৎ তিনটি মৌলিক বিষয় যথা : দেশের ভৌগোলিক অখণ্ডতা, রাজনৈতিক স্বাধীনতা এবং রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্ব হুমকির মুখে পড়ত; জাতি একাধিক ভাগে বিভক্ত হতো; গৃহযুদ্ধ শুরু হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা প্রচুর ও যথেষ্ট ছিল।

এমন একটি সময়েই জিয়া দেশের হাল ধরেছিলেন, ৭ নভেম্বর ১৯৭৫-এর ভোরে। তিনি বিভক্ত জাতিকে সংহত করার কঠিন প্রক্রিয়া শুরু করেন। ৭ নভেম্বরের বিকেল থেকেই পরবর্তী দেড়-দুই দিনের চ্যালেঞ্জ ছিল, সৈনিকদের হাতে হাতে ঘুরছিল যে অস্ত্র, সেই অস্ত্রকে অস্ত্রাগারে ফেরত আনা এবং পথে পথে ঘুরছিল যে সৈনিক, সেই সৈনিকদের নিজেদের ব্যারাকে ফেরত আনা। জিয়াউর রহমান অত্যন্ত শান্ত কিন্তু দৃঢ় মনোভাব ও বক্তব্যের মাধ্যমে, সৈনিকদের ওপর অফিসারদের নিয়ন্ত্রণ পুনঃস্থাপনের কাজটি শুরু করেন। সৈনিকগণ যেন অস্ত্র জমা দেয় সেটি নিশ্চিত করেন। সৈনিকদের মনে পুঞ্জীভূত কষ্টগুলো দূর করার জন্য তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ গ্রহণ করেন; এসব কথা একজন চাক্ষুষ বা অনুভূতিশীল সাক্ষী হিসেবেই বলছি। আমরা যদি ৭ নভেম্বর ১৯৭৫ তারিখের প্রশাসনের কথা চিন্তা করি তাহলে দেখব, মাত্র দুই দিন পুরনো একজন প্রেসিডেন্ট, অর্থাৎ ৫ নভেম্বর তারিখ সকালে নিযুক্ত প্রেসিডেন্ট আবু সাদাত মোহাম্মদ সায়েম বাংলাদেশের দায়িত্বে ছিলেন। কিন্তু ওই মহামান্য প্রেসিডেন্টের কোনো মন্ত্রিসভা ছিল না। সে মুহূর্তে প্রেসিডেন্ট সায়েম বাংলাদেশ কিভাবে পরিচালনা করতেন বা করছিলেন, সেটি একটি গবেষণার বিষয়।

সেই মুহূর্তে প্রেসিডেন্ট সায়েম, জিয়াউর রহমান এবং তিন বাহিনী প্রধানদের সহায়তা গ্রহণ করেন এবং বাস্তবসম্মত ও যৌক্তিক কারণেই বৃহত্তম বাহিনী তথা বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর যিনি প্রধান, সেই মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমানের সহায়তা তিনি সবচেয়ে বেশি গ্রহণ করেছেন। অনেক দিন ধরে, বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট তথা প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক সায়েম এবং মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমানসহ মোট তিনজন উপপ্রধান সামরিক আইন প্রশাসক মিলেই সরকারের নীতিনির্ধারণী দায়িত্ব পালন করেন। একটি কঠিন ও গভীর গভর্ন্যান্স ক্রাইসিস থেকে বাংলাদেশকে উদ্ধার করেছিলেন জিয়াউর রহমান ও তার সহকর্মীগণ। উদারভাবে মূল্যায়ন করলে বলাই যায় যে, দুর্ঘটনায় হারিয়ে যাওয়ার মুহূর্তে, বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বকে রক্ষা করেছিলেন জিয়া। তাই অভিনন্দন পাবেন জিয়াউর রহমান এবং বাংলাদেশ সেনাবাহিনী।

২০১৯ সালের সঙ্গে সম্পর্ক কী?
বর্তমান বাংলাদেশের বিশাল সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষই ৭ নভেম্বর সম্পর্কে সম্যকভাবে জানেন না এবং যারা আগ্রহভরে জাতিকে জানানো উচিত, তারাও সেই কাজে পিছিয়ে ছিলেন এবং আজো আছেন। ৪৪ বছর পর, ওই ঘটনাবলি সম্বন্ধে ওপরের অনুচ্ছেদগুলোতে অতি সংক্ষিপ্ত মূল্যায়ন রাখলাম। উদ্দেশ্য, আমাদের জাতিকে সুসংহত করার কাজে অতীতের অভিজ্ঞতা যেন সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী উচ্চপদের ব্যক্তিত্বদের কাজে লাগে। এ মুহূর্তে বাংলাদেশের রাজনৈতিক নদীতে দু’টি স্রোত। একটি স্রোত সরকারের অনুকূলে, একটি স্রোত সরকারের প্রতিকূলে। প্রতিকূলের স্রোতে জনসম্পৃক্ততা বেশি। অনেকে মনে করেন, দৃশ্যমান স্রোতের নিচে অদৃশ্য যে স্রোত, সেই স্রোতটি সরকারের অনুকূলে নয়; সরকারের প্রতিকূলে। বঙ্গবন্ধুর আমলে বিদেশী রাষ্ট্রের মধ্যে বঙ্গবন্ধুর প্রতি শুভাকাক্সক্ষী যে রকম ছিল এবং বঙ্গবন্ধুর প্রতি বৈরী অশুভাকাক্সক্ষী যে রকম ছিল, তেমনি বর্তমান সরকারের ক্ষেত্রেও আছে। তবে বর্তমান আমলে, বন্ধু ভাবাপন্ন বিদেশী রাষ্ট্রগুলো এবং বৈরী ভাবাপন্ন বিদেশী রাষ্ট্রগুলো, প্রত্যেকেই নিজ নিজ নিয়মে অনেক বেশি সচেতন, সজাগ, সতর্ক এবং গোছানো। বঙ্গবন্ধুর আমলে রাজনৈতিক ময়দান ছিল সীমিত। বঙ্গবন্ধুর কন্যার আমলেও রাজনৈতিক ময়দান সীমিত। সীমিত খেলার মাঠের অসুবিধা অনেক।

লেখালেখি
৭ নভেম্বরের আগে-পরে পত্রপত্রিকায় লেখালেখি হতেই থাকবে এবং টেলিভিশনে টকশোগুলোতে আলোচনা হতেই থাকবে। সঠিক ইতিহাস জানার স্বার্থে এবং সেই ইতিহাস থেকে উপযুক্ত শিক্ষা আহরণের স্বার্থে আমাদেরকে ৭ নভেম্বর প্রসঙ্গে জানা প্রয়োজন। আমার লেখা বই ‘মিশ্র কথন’-এর পঞ্চম অধ্যায়টির নাম ‘১৯৭৫ : রাজনৈতিক ইতিহাসে বিভাজনরেখা’। পুস্তকের ১৪৬ থেকে ১৯৩ পৃষ্ঠায় নভেম্বরের ঘটনাবলি নিয়েই আলোচনা। পাঠকের জন্য প্রাপ্তির সুবিধার্থে উল্লেখ করছি, ঢাকা মহানগরের যেকোনো বড় পুস্তক বিক্রেতা দোকানে বা অনলাইন বই বিক্রেতাদের কাছে সন্ধান করলেও বইটি পাওয়া যাবে। বইটি ই-বুক হিসেবেও পাওয়া যায়। আজকের কলামটি পড়ে, আগামীকাল দিবসটি উদযাপনের আগে আগে, জাতীয়তাবাদী ঘরানার নিপীড়িত, নির্যাতিত, বঞ্চিত কোটি কোটি ভাইবোনের প্রস্তুতিতে দুই ফোঁটা শিশিরবিন্দু যোগ হবে বলে আমি মনে করি।

লেখক : মেজর জেনারেল (অব:); চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি
ই-মেইল : mgsmibrahim@gmail.com


 

ko cuce /div>

দৈনিক নয়াদিগন্তের মাসিক প্রকাশনা

সম্পাদক: আলমগীর মহিউদ্দিন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সালাহউদ্দিন বাবর
বার্তা সম্পাদক: মাসুমুর রহমান খলিলী


Email: online@dailynayadiganta.com

যোগাযোগ

১ আর. কে মিশন রোড, (মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন), ঢাকা-১২০৩।  ফোন: ৫৭১৬৫২৬১-৯

Follow Us