যে সর্বনাশের পথে যাচ্ছে ভারত
যে সর্বনাশের পথে যাচ্ছে ভারত - ছবি : সংগৃহীত
আর কয়েক সপ্তাহ পর পার্লামেন্টে ভারতের নাগরিকত্ব আইনে গুরুত্বপূর্ণ সংশোধনী নিয়ে বিতর্ক হবে এবং সম্ভবত পাসও হবে। পাস হয়ে গেলে এবং সেইসাথে সম্ভাব্য দেশজুড়ে জাতীয় নাগরিকত্ব নিবন্ধন (এনআরসি) মিলে তা ভারত থেকে ‘অনুপ্রবেশকারী’ ও ‘উইপোকা’ বের করতে দিতে ভারতয়ি জনতা পার্টির (বিজেপি) নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের আরো কাছে নিয়ে যাবে। তবে এই নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়িত হবে সংবিধানে থাকা সেক্যুলার নীতিমালাকে খর্ব করে এবং ভারতীয় হওয়া বলতে কী বোঝায় তা বদলে দিয়ে। গুরুত্বের কারণে প্রস্তাবিত নাগরিকত্ব বিল ২০১৬ (সংশোধিত) ব্যাপক গণ নিরীক্ষা ও বিতর্কের বিষয় হওয়া উচিত।
পার্লামেন্টে ২০১৬ সালে উপস্থাপিত ও ২০১৯ সালের জানুয়ারিতে লোকসভায় পাস হওয়া বিলটিতে পাকিস্তান বাংলাদেশ ও আফগানিস্তান থেকে আসা হিন্দু, শিখ, জৈন, পারসি ও খ্রিস্টানদের দ্রুততার সাথে নাগরিকত্ব প্রদানের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। এই বিলে বলা হয়েছে, ওই দেশগুলোর ওই নির্দিষ্ট সম্প্রদায়গুলোর লোকজন ১১ বছরের বদলে ছয় বছর ভারতে বসবাস করলেই ভারতের নাগরিকত্ব পাওয়ার উপযুক্ত বলে বিবেচিত হবে। এই বিলে আরেকটি বিষয় আছে, যা নিয়ে তেমন বিতর্কই হয়নি। তা হলো, দেশের আইন লঙ্ঘন করার ক্ষেত্রে ভারতের বিদেশী নাগরিক (ওসিআই) কার্ডধারীদের নিবন্ধন বাতিল হবে। ১৬তম লোকসভার রাজ্যসভার মাধ্যমে সিএবি আসেনি। বরং বিজেপির গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচনী ইস্যু ছিল নাগরিকত্ব বিষয়টি। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বিষয়টি আরো জোরালো করেছেন এই বলে যে বৌদ্ধ, হিন্দু ও শিখদের বাদ দিয়ে এই দেশ থেকে প্রতিটি অনুপ্রবেশকারীকে অপসারণ করা হবে।
সিএবি এই প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের হাতিয়ার হিসেবে কাজ করবে এই কারণে যে এটি স্পষ্টভাবেই নাগরিকত্ব নির্ধারণে ধর্মীয় ভিত্তি প্রদান করবে। এখানে উল্লেখ্য যে সুনির্দিষ্ট সংখ্যালঘু সম্প্রদায়গুলোর তালিক থেকে মুসলিমদেরকে বাদ রাখা হয়েছে। বিলে এর উদ্দেশ্য ও যুক্তি প্রকাশ করার সময় কিছু সংখ্যালঘু সম্প্রদায় ও দেশকে অন্যদের বিপরীতে বিশেষ সুবিধা দেয়ার কারণও বলা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, ধর্মীয় নির্যাতন থেকে সুরক্ষা দিতেই এসব ধর্মীয় সম্প্রদায়কে বিশেষ সুবিধা দেয়া হচ্ছে।
ধর্মীয় নির্যাতনের যুক্তিটি যৌথ পার্লামেন্টারি কমিটির প্রতিবেদনে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে বলা হয়েছে। এর মাধ্যমে নাগরিকত্ব নির্ধারণের সেক্যুলার ধারণাটি প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে।
মুসলিমদের কেন এই সুবিধা থেকে বাদ দেয়া হয়েছে? সেটা বুঝতে খুব বেশি কিছু করতে হয় না। ২০১৯ সালের নির্বাচনী প্রচরণার সময় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি যেসব কথা বলেছেন, তাতেই তা পরিষ্কার হয়ে গেছে। তিনি নাগরিকত্ব বিল সম্পর্কে বলেছেন যে এটি হলো ভারতের বিভক্তির সময়কার পাপ থেকে শাপমুক্তি। এর মাধ্যমে বোঝানো হচ্ছে যে ভারত হলো হিন্দুদের সহজাত আবাসভূমি। তাদের ভারতে ফিরে আসার সহজাত অধিকার রয়েছে বলেই বিলে বলা হচ্ছে। আবার সংবিধানে রাষ্ট্রের ধর্ম-নিরপেক্ষ থাকা, সার্বজনীন হওয়ার যে ধারণাটি দেয়া হয়েছিল, এর মাধ্যমে সেটিরও অবসান ঘটানো হচ্ছে।
অনেক বিশেষজ্ঞ বলেছেন, প্রস্তাবিত বিলটি সংবিধানের ১৪ অনুচ্ছেদের সরাসরি বরখেলাফ। এতে আইনের সামনে সব নাগরিকের সমান অধিকারের কথা বলা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, রাষ্ট্র বিশেষ কোনো ধর্ম প্রচার করবে না।
কিন্তু বিরোধী দল এসব লঙ্ঘনকে চ্যালেঞ্জ করছে না। রাজনৈতিক প্রতিরোধ হতে পারত খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। সংখ্যাগরিষ্ঠ জনমত বিরোধিতা করতে পারে, এই ভয়ে বিরোধী দল সংবিধানের সেক্যুলার বৈশিষ্ট্য লঙ্ঘনের এই আয়োজনের বিরুদ্ধে সোচ্চার হচ্ছে না। আর এটিই গণতন্ত্রের জন্য আসল বিপদ হিসেবে দেখা দিয়েছে।
হিন্দুস্তান টাইমস