বঙ্গোপসাগর কেন এত গুরুত্বপূর্ণ
বঙ্গোপসাগর কেন এত গুরুত্বপূর্ণ - ছবি : সংগ্রহ
বঙ্গোপসাগর ও তার গুরুত্ব
বাংলাদেশের দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর। বঙ্গোপসাগরের দক্ষিণে ভারত মহাসাগর। বঙ্গোপসাগরের পূর্ব তীরে বাংলাদেশ মিয়ানমার ও থাইল্যান্ড তথা তিনটি দেশের ভূখণ্ড অবস্থিত। বঙ্গোপসাগরের পশ্চিম তীরে দুইটি দেশের যথা ভারত ও শ্রীলঙ্কার ভূখণ্ড অবস্থিত। বঙ্গোপসাগরের উত্তর তীরে বাংলাদেশ ও ভারতের পশ্চিমবঙ্গের ভূখণ্ড অবস্থিত। এই বঙ্গোপসাগরের মাধ্যমে তীরবর্তী দেশগুলোর যেকোনো কিছু পৃথিবীর যেকোনো স্থানে সাগর পথে যেতে পারে। মিয়ানমার চাইবে বঙ্গোপসাগরে তার প্রাধান্য বিস্তৃত থাকুক। বাংলাদেশ চাইবে তার প্রাধান্য বিস্তৃত থাকুক। ভারত চাইবে তার প্রাধান্য বিস্তৃত থাকুক। প্রতিযোগিতায় কোন দেশটি জিতে, নাকি কোনো দেশই জিততে না পেরে একটি ভারসাম্য সৃষ্টি করে, সেটি নির্ভর করে দেশগুলোর পররাষ্ট্রনীতি ও সামরিক শক্তির ওপর। মিয়ানমারের সাথে কমন সীমান্তরেখা আছে চীন বা মহাচীন নামক বিরাট দেশটির।
বাংলাদেশের সাথে চীনের কমন সীমান্তরেখা নেই। চীন এত বড় একটি দেশ যে, এর পূর্ব-পশ্চিম দৈর্ঘ্য কল্পনা করাই কঠিন। চীনের দক্ষিণ-পশ্চিম অংশের কোনো মালামাল যদি সমুদ্র পথে কোথাও যেতে হয়, তাহলে সেই মালামালকে প্রথমে নিতে হবে চীনের পূর্ব অংশে অবস্থিত সমুদ্রের কাছে, অতঃপর সেটি যাবে পৃথিবীর বিভিন্ন জায়গায়। অনেক দীর্ঘ সময় ও খরচের ব্যাপার। অপর পক্ষে চীন যদি তার বন্ধুপ্রতীম কোনো রাষ্ট্রের ভূখণ্ড ব্যবহার করে এই সময় ও খরচ বাঁচাতে পারে, তাহলে চীনের অনেক লাভ। এই লাভ অর্জনের জন্য চীন চেষ্টা করবে এটাই স্বাভাবিক।
ভারত যেমন নিজের বাণিজ্যিক ও সামরিক স্বার্থে বাংলাদেশের ভূখণ্ডকে ব্যবহার করতে চায়, তেমনই চীনও নিজের বাণিজ্যিক ও সামরিক স্বার্থে বাংলাদেশের ভূখণ্ডকে ব্যবহার করতে চাইতেই পারে। কিন্তু চীন ও বাংলাদেশের মধ্যে কমন সীমান্ত নেই। অপর পক্ষে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে কমন সীমান্ত আছে। আবার মিয়ানমারের সাথে ভারতের যেমন কমন সীমান্ত আছে, তেমনই মিয়ানমার ও চীনের মধ্যেও কমন সীমান্ত আছে। তাহলে চীন যদি বঙ্গোপসাগরের পানি ব্যবহার করতে চায় বা বঙ্গোপসাগর থেকে কোনো উপকার পেতে চায়, তাহলে চীনকে অবশ্যই মিয়ানমারের সাথে বন্ধুত্ব রাখতে হবে।
শুধু মিয়ানমারের সাথে বন্ধুত্ব রাখলে হবে না, সাপ্লিমেন্টারি বন্ধুত্ব বা সহায়ক বন্ধুত্বও লাগবে বাংলাদেশের সাথে। আরো একটি কথা। চীন ও ভারত কোনো দিনই পরস্পরের আন্তরিক বন্ধু নয় বরং বলাই চলে যে, তারা পরস্পরের প্রতি বৈরী। চীন যেমন বিশাল দেশ, চীন থেকে ছোট হলেও, ভারতও একটি বিশাল দেশ। চীন চাচ্ছে পৃথিবীর বুকে নিজেকে অন্যতম সামরিক ও অর্থনৈতিক শক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে; প্রায় হয়েই গিয়েছে। ভারত চাচ্ছে পৃথিবীর একটি অংশের বুকে অন্যতম নয় বরং প্রধান সামরিক ও অর্থনৈতিক শক্তি হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে। অতএব বাংলাদেশ যেহেতু ভারতের প্রতিবেশী এবং বাংলাদেশ যেহেতু বঙ্গোপসাগরের গুরুত্বপূর্ণ তীরে অবস্থিত, সেহেতু বাংলাদেশের ভূখণ্ড ব্যবহার না হলেও, বাংলাদেশের অর্থনীতির প্রতি ও পররাষ্ট্রনীতির প্রতি চীনের আগ্রহ থাকবেই থাকবে। ভূখণ্ড ব্যবহার করার প্রয়োজনীয়তাটিও স্বীকৃত।
অতএব বাংলাদেশ, চীন ও ভারতের উভয়ের আগ্রহের মধ্যখানে আছে। এটা বাংলাদেশের ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে। এই কারণেই, চীন মোটামুটি উদারভাবে, বাংলাদেশকে সামরিক ও অর্থনৈতিক সহযোগিতা বা সাহায্য দিয়ে যাচ্ছে। সাবমেরিন দিয়েছে, সাবমেরিন বেইজ বানিয়ে দিবে বলে ঘোষণা দিয়েছে। কিন্তু, সচেতন নাগরিকরা বলছেন যে, এই সাবমেরিন সংক্রান্ত কারণেই, ভারত বাংলাদেশের দক্ষিণ উপকূলে সারভেইলেন্স-রাডার বসাবার জন্য আওয়ামী লীগ সরকার থেকে চুক্তি আদায় করে নিয়েছে।
(লেখাটি লেখকের সাম্প্রতিক ভূরাজনীতি ও বাংলাদেশ শীর্ষক প্রবন্ধের অংশবিশেষ)
লেখক : চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি
mgsmibrahim@gmail.com