কী হতে যাচ্ছে বাবরি মসজিদ নিয়ে

গৌতম দাস | Nov 02, 2019 05:03 pm
বাবরি মসজিদ

বাবরি মসজিদ - ছবি : সংগ্রহ

 

ভারতের প্রধান বিচারপতি চলতি মাসে অবসরে যাচ্ছেন। খুবসম্ভবত ১৭ নভেম্বরের মধ্যে। এদিকে বাবরি মসজিদ ভেঙে ফেলার ইস্যু আমাদের মনে কিছুটা আবছা হয়ে এলেও মুছে যায়নি। আবার উঠে আসবে এ মাসেই; আদালতের রায় প্রকাশিত হবে।
লাগাতার তিন বছর ধরে নানান তোড়জোড়ের পর আরএসএস-বিজেপি হিন্দুত্বের জিগির তুলে ১৯৯২ সালের উত্তরপ্রদেশের অযোধ্যায় বাবরি মসজিদ ভেঙে ফেলেছিল। আরএসএস-বিজেপির নানান অঙ্গসংগঠনসহ প্রধানত বিশ্ব হিন্দু পরিষদের নেতৃত্বে উন্মাদনার দাঙ্গা বাধিয়ে এই মসজিদ ভেঙে ফেলা হয়েছিল। তাদের অভিযোগ, এখানে আগে রামমন্দির ছিল, তারা পুনরায় সেই মন্দির স্থাপন করতে চায়।

মসজিদ ভেঙে ফেলার পরে ইস্যুটা এরপরে একপর্যায়ে সুপ্রিম কোর্টে আসে। তবে এই বলে যে, ওই মসজিদ ভাঙা স্থানে রামমন্দির গড়া আইনানুগ হবে কি না এরই বিচার হিসেবে। কিন্তু দীর্ঘ দিন নানা অছিলায় এটা ঘুরেফিরে বন্ধ থাকার পর এ বছর থেকে শুনানির তারিখ পড়তে শুরু করেছিল।

প্রায় ২৭ বছর আগের সেই ঘটনা এটা। এ ছাড়া বিজেপি এখন ক্ষমতায়। তাই বুক ফুলিয়েই বিজেপি বলছে, হিন্দুত্বের জোয়ার তুলে ভোটের বাক্স ভরানোর লক্ষ্যেই তারা বাবরি মসজিদ ভেঙেছিল। তাদের এই হিন্দুত্ববাদের জিগির তোলার ফায়দা ও মুনাফা কেউ নিতে পারবে না।

সম্প্রতি ‘শেষাদ্রি চারি’ নামে বিজেপি দলের জাতীয় নির্বাহী কমিটির এক সদস্য এক মতামত-কলাম লিখেছেন ভারতের ‘দ্য প্রিন্ট’ নামে এক অনলাইন পত্রিকায়। ‘দ্য প্রিন্ট’ ভারতের ঠিক মেইনস্ট্রিম না হলেও মেইনস্ট্রিম পত্রিকার কিছু সম্পাদক ও সিনিয়রদেরই নিজস্ব এক পত্রিকা, তাই একটু ব্যতিক্রমী ও আমলযোগ্য। কলাম লেখক শেষাদ্রি চারি আরো গুরুত্বপূর্ণ এ জন্য যে তিনি আবার ‘অরগানাইজার’ পত্রিকার প্রাক্তন সম্পাদক। কোন ‘অরগানাইজার’ পত্রিকা, এর বিখ্যাতিই বা কী? ১৯৪৭ সালের দেশভাগের কিছু আগে থেকে প্রকাশিত শুরু হওয়া আরএসএস-হিন্দু মহাসভার প্রধান মুখপাত্র ও প্রাচীন দলীয় সংগঠক পত্রিকা এটা।

শেষাদ্রির লেখা কলামের শিরোনাম হলো- “বিজেপি জানে, এক ব্যাংক চেক দু’বার ভাঙানো যায় না, অযোধ্যা এমনই এক ইস্যু।” বাবরি মসজিদ ভাঙার ইস্যুটা উত্তরপ্রদেশের অযোধ্যায় বলে একে অযোধ্যা ইস্যু বা কখনো সেই স্থানে রামমন্দির বানাতে চায় বলে রামমন্দির আন্দোলনের ইস্যু বলে অনেকে ডাকে। শেষাদ্রির এই লেখায় তিনি সেখানে স্পষ্ট করেই বলেছেন, আজকের (২০১৯) দ্বিতীয়বার বিজয়ী মোদি পর্যন্ত বিজেপির যে উত্থান এর শুরুটাই হয়েছিল সেই ১৯৯২ সালে বাবরি মসজিদ ভেঙে ফেলার লাভালাভ থেকেই। লাভালাভ বুঝাতে তিনি দু’টি শব্দ বা ধারণা ব্যবহার করেছেন-
এক. বলেছেন ‘পলিটিক্যাল ডিভিডেন্ট’ বা রাজনৈতিক লভ্যাংশ।
দুই. ‘নির্বাচনী ইস্যুতে একে ব্যবহার’ অর্থে এই ইস্যুর ব্যবহারযোগ্যতা। অর্থাৎ বাবরি মসজিদ ভেঙে দিয়ে ভারতের জনগণের হিন্দু ধর্মীয় আবেগকে উসকে তুলে সামাজিক বিভক্তি বা হিন্দু-অহিন্দু পোলারাইজেশন করে ফেলা আর এরপর সেই আবেগকে বিজেপির ভোটের বাক্সে ক্যাশ করে নেয়া- এই ছিল তাদের উদ্দেশ্য। আর এটা ব্যবহার করেই তারা ১৯৯২ সাল থেকে আজ পর্যন্ত বিস্তর লাভ তুলে চলেছে। এ পর্যন্ত ক্ষমতার শিখরে উঠে এসেছে।

তিনি ১৯৯২ সাল থেকে শুরু করে পরের প্রতিটি নির্বাচনে ১৯৯৮, ১৯৯৯, ২০০৪, ২০০৯, ২০১৪ ও ২০১৯ এভাবে বিজেপির নির্বাচনী মেনিফ্যাস্টোতে বারবার বাবরি মসজিদ ভাঙা স্থানে সেখানে রামমন্দির নির্মাণ করতে হবে- এই ইস্যু সব সময় কিভাবে হাজির ছিল বর্ণনায় সেটি উল্লেখ করছেন। আবার এটাও বলছেন, কিন্তু বিজেপির সরকার ১৯৯৮ সালের নির্বাচনের সময় থেকে নিজে জবরদস্তি মন্দির নির্মাণ না করে আইনি পথে (মানে আদালতের রায়-নির্দেশে) এর বাস্তবায়নের কথা বলে গেছে। কেন?

শেষাদ্রির ব্যাখ্যা হলো, তার লেখার শিরোনামে যা বলা হয়েছে- চেক দু’বার ভাঙানো যায় না। অর্থাৎ বিজেপি মন্দির নির্মাণ ইস্যু থেকে আবার দ্বিতীয়বার অর্থ বা ফয়দা তুলতে পারবে না। যদিও মন্দির নির্মাণ সে করবে, ‘আদালতে রায়ে যেভাবে বলবে’ সেভাবে। অর্থাৎ এতে দায় হবে আদালতের। আবার তিনি স্পষ্ট করে দিচ্ছেন, এই মন্দির নির্মাণ ইস্যু থেকে কংগ্রেস চাইলেও বিজেপিকে বাদ দিয়ে ইস্যুটাকে নিজের ভোটবাক্স ভরতে কাজে লাগাতে পারবে না।

কথা ঠিক বটে। কারণ বিজেপি যেমন ন্যাংটা হয়ে হিন্দুত্ববাদের পক্ষে ভারতীয়দের নাগরিক নয়, ‘হিন্দু’ হয়েই ভোট দিতে আহ্বান জানায়, এই সুযোগ তাদের মতো করে কংগ্রেস নিতে পারবে না। শুধু তাই নয়। বিজেপির প্রত্যক্ষ ইসলামবিদ্বেষী হিন্দুত্ববাদের ন্যূনতম কোনো সমালোচনা বা বিরোধিতা করে বিরোধী বক্তব্য দেয়ারও মুরোদ নেই কংগ্রেসের; বরং সে কাজ করলে হিন্দু পরিচয়ের ভোট আর তার বাক্সে না যাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হবে। এটাই স্পষ্ট ধরা পড়েছিল গত নির্বাচনে। কংগ্রেসের রাহুল গান্ধীও বিজেপির হিন্দুত্ববাদের ন্যূনতম কোনো সমালোচনা বা বিরোধিতা দূরে থাক নিজেই আরেক ব্র্যান্ডের হিন্দুত্ব নিয়ে ভোট চাইতে নেমেছিলেন। আবার ব্যাখ্যাও দিয়েছেন যে, তার এটা ‘সফট হিন্দুত্ব’। অর্থাৎ এটাও আর এক ব্র্যান্ডের হিন্দুত্বই। মানে হিন্দুত্বই ভারতের সব দলের বা প্রধান দুই দলের জন্য একমাত্র রাজনীতির বয়ান-কাঠামো।

আবার শেষাদ্রি আর এই ইঙ্গিত দিয়ে বলছেন, রামমন্দির নির্মাণ ইস্যুতে সুপ্রিম কোর্টের আসন্ন রায় কোনো-না-কোনোভাবে, কোনো-না-কোনো শর্তে এক রামমন্দির নির্মাণ করার পক্ষেই যাবে বলে তিনি মনে করেন। সারা ভারতে এখন প্রবল হিন্দুত্বের জোয়ার বইছে, বিশেষ করে কাশ্মিরে ভারতের দখলদার হয়ে ওঠার পর থেকে যে পরিকল্পিত আবেগ জাগিয়ে মানুষের মাঝে ধ্বংসাত্মক জিগিরে পৌঁছানো হয়েছে। এটাই শেষাদ্রির অনুমান বা পরিস্থিতি নিয়ে রিডিং।

কয়েক বছর ধরে আদালত রামমন্দির নির্মাণ নিয়ে মামলা ফেলেই রেখেছিল, শুনানির কোনো তারিখও ফেলে নেই, বলা যায়। মনে হয়েছে চলতি বছরের মে মাসের কেন্দ্রীয় নির্বাচন শেষ হওয়ার আগে আদালত কোনো তারিখ ফেলতে চায়নি। তবে এর পর গত তিন মাসে একনাগাড়ে চল্লিশ কার্যদিবস ধরে শুনানি সাক্ষ্যপ্রমাণ হাজির করা ও শুনা চলেছিল। এসব প্রক্রিয়ার সমাপ্তিও ঘোষণা করা হয়েছে। এখন রায় দেয়ার অপেক্ষায়, তবে তারিখ ঘোষণা হয়নি। কিন্তু প্রধান বিচারপতির অবসরে যাওয়ার আগে শেষ কার্যদিবস ১৭ নভেম্বর বলে সবার অনুমান, এর আগেই রায় ঘোষণা তিনি করে যাবেন।

ভারতে এই রায় বাস্তবে শেষে কী আসে, তাতে ভারতে কী প্রতিক্রিয়া হয়, আর তাতে সীমান্ত উপচিয়ে বাংলাদেশে কী প্রতিক্রিয়া হয়- এ নিয়ে আমাদের স্থানীয় হিন্দু জনগোষ্ঠীর মধ্যে কানখাড়া উদ্বিগ্নতা আছে। এমনকি ভারতের মিডিয়ায়ও একটা কমন অনুমান আছে যে, রায় যাই আসুক অমিত শাহ তা থেকে নির্বাচনী ফয়দা ঘরে তোলার কিছু না কিছু পরিকল্পনা করে রেখেছেন- এমনটি তাদের অনুমান।

ভারতের অর্থনৈতিক অবস্থায় ধস নেমেছে, সে কথা আর ঢাকা থাকছে না। যদিও আমরা সেই ২০১৬ নোট বাতিলের সময় থেকেই শুনে আনছি। কিন্তু তথ্য লুকিয়ে রাখা বা হিন্দুত্বের নানা রকম জোয়ার তুলে ইত্যাদিতে খবর দাবিয়ে রেখে মোদি এ পর্যন্ত চলে এসেছেন। তাতে নির্বাচনে এর প্রভাব খুব কমই দেখা গেছে। কোথাও ভোটারেরা স্বীকারও করেছেন যে, অর্থনৈতিক হাল খারাপের খবর তারা জেনেও একে কম গুরুত্ব দিয়েই তারা মোদিকে আবার ভোট দিয়ে ফিরিয়ে এনেছেন। বলাই বাহুল্য, হিন্দুত্ববাদের রঙ এতই গাঢ়। তবু গত মাসে এই প্রথম দুই রাজ্যের নির্বাচনে সম্ভবত অর্থনৈতিক হাল খারাপের খবর প্রভাব ফেলেছে। বিজেপি সে কারণে ফল খারাপ করেছে বলে মানে করা হচ্ছে। যদিও শতভাগ নিশ্চিত কেউ নয়, কারণ পরবর্তীকালে আরো দেখতে হবে।

সবচেয়ে বড় কথা বিজেপি ছাড়া সমাজের রাজনৈতিক-সামাজিক সব শক্তি তবুও হিন্দুত্ববাদের চাপে উল্টো নিজেরাই কোণঠাসা হয়ে আছে। এ দিন সহসাই কাটছে কি না, কাটবে কি না বা কবে? কেউ বলতে পারে না। কিন্তু খেয়ে-না খেয়ে হিন্দুত্ববাদ, হিন্দুইজম বা হিন্দুগিরি এভাবে সারা ভারতের কোনায় ছড়িয়ে পড়ল কেন?

লক্ষণীয় যে এমন কোনো বিরোধী দল বলে কেউ নেই যে, হিন্দুত্ববাদের বিরুদ্ধে সরাসরি কিছু বলে বা এই বয়ানের পাল্টা কোনো বয়ান হাজির করতে গিয়েছে বা পেরেছে। সবার ভয় ও ধারণা যে, তাতে তাদের আরো ভোট হারানোর সম্ভাবনা। সে কারণে তারা কেউ মুখ খোলে না। হিন্দুত্ববাদের এতই দাপট! তাই আবার সেই প্রশ্ন কেন এমন হলো?

এককথায় জবাব রামমোহন রায় থেকে নেহরু গান্ধী পর্যন্ত সবাই স্বাধীন ভারত বলতে একটা ধর্মীয় জাতীয়তাবাদ, একটা হিন্দু জাতীয়তাবাদী ভারতই বুঝেছে, আর এরই বাস্তবায়নে কাজ করে গেছে আজীবন, এমন রাষ্ট্রের ভিত্তি গড়ে চলেছে। আরো সোজা করে বললে, ধর্মীয় জাতীয়তাবাদের বাইরে কোনো স্বাধীন ভারত হতে পারে, এটা তাদের চিন্তা-কল্পনার অতীত ছিল। আর বলা বাহুল্য, এখানে ধর্মীয় বলতে হিন্দু জাতীয়তাবাদই তারা বুঝেছিলেন। ভারতের ন্যাশনাল আর্কাইভে গান্ধী রচনাবলিতে ‘হিন্দুইজম কী’ এই শিরোনামে আসলে ‘গান্ধীর হিন্দু জাতীয়তাবাদ কী’- এমন লেখাগুলোর একটা আলাদা সঙ্কলন আছে। ভারতে ন্যাশনাল বুক ট্রাস্ট ইন্ডিয়া নামে কেন্দ্রীয় সরকারি স্বায়ত্তশাসিত প্রকাশনা সংস্থা আছে। তারা এটা প্রকাশ করেছে। এর আবার অনলাইন পিডিএফ ভার্সনও পাওয়া যায়। বাংলাদেশের এক প্রকাশনা সংস্থাও এরই এক প্রিন্টেড বই প্রকাশ করেছে গান্ধীর ‘হিন্দু ও হিন্দুধর্ম কী’ নামে। গান্ধীর রাজনীতি যে গান্ধীর হিন্দু জাতীয়তাবাদÑ এরই প্রমাণ ছড়িয়ে আছে এর লেখাগুলো।

অথচ ভাবসাবে সবাই মনে করে, নেহরু-গান্ধীরা এক আধুনিক রিপাবলিক ভারতই গড়ে গিয়েছেন। আসলে কঠিন সত্যিটা হলো, এ ধারণার রিভিউ বা পুনর্পাঠ মূল্যায়ন করে দেখার সময় পার হয়ে গেছে। যেমন গান্ধীর কোনো নাগরিক ধারণা নেই, পাওয়া যায় না। অধিকারভিত্তিক রাষ্ট্রের ধারণা বা নাগরিকের মানবিক মৌলিক অধিকারের ধারণাও নেই। তবে হিন্দুইজমের ধারণা আছে। কথিত হিন্দু-মুসলমানের মিলন কিভাবে হবে এ নিয়ে তার ব্যাপক কথা, চর্চা তৎপরতা বা বাণী আছে।

এখন কথা হলো, আপনি গান্ধী যদি ‘হিন্দু জাতীয়তাবাদই’ করবেন তাহলে আবার হিন্দু-মুসলমানের ঐক্য খুঁজতে যাচ্ছেন কেন? হিন্দু-মুসলমানের ঐক্যের দূত হওয়ার খায়েশ কেন? আর কেমনেই বা হবেন? কারণ, আপনার হিন্দু জাতীয়তাবাদের ভারত বানাতে হবে- এই খায়েশেটাই তো সব দ্বন্দ্ব-সঙ্ঘাতের উৎস! আবার হিন্দু-মুসলমানের দু’টি ধর্মকে এক বানাবেন? এটা কি আদৌ সম্ভব? আর এর চেয়েও বড় কথা এটা কি আদৌ দরকারি? কেন? এটা কেমনে একটা রাষ্ট্র নির্মাণের পূর্বশর্ত হতে পারে? এই ধারণা তিনি কোথায় পেয়েছেন?

অথচ এক ‘হিন্দু জাতীয়তাবাদের ভারত হইতে হইবে’- গোঁ-ধরা এই না-বুঝ, অবুঝের চিন্তা- এটাই তো সব সমস্যার গোড়া। আবার দেখেন যারা হিন্দু নয় অথবা যারা হিন্দু হয়েও ‘হিন্দু জাতীয়তাবাদের রাষ্ট্র চায় না তাদেরকে কেন হিন্দু জাতীয়তাবাদের ভারত তাদেরকেও কাম্য বলে মানতে হবে?

আবার কথা হলো, গান্ধীর হিন্দু জাতীয়তাবাদের ভারত বানাইলে পরে সেটাকে উগ্র হিটলারি ব্যাখ্যার আর একটা হিন্দু জাতীয়তাবাদ মোদি-আরএসএসের হিন্দুত্ববাদ সেটাও তো আসবেই। হিন্দুত্বের পোলারাইজেশন বিভক্তি তুলে নিজের ভোটের বাক্স মোদি-অমিতরা তো ভর্তি করতে আসবেই- তাদের ঠেকাবেন কী দিয়ে? গান্ধী নিজের জীবদ্দশায়ই তা পারেননি। ব্যর্থ হয়ে এদের হাতেই তিনি গুলি খেয়ে মরেছেন।

আরএসএস সংগঠন এ পর্যন্ত চারবার নিষিদ্ধ হয়েছিল। এর দ্বিতীয়বারেরটা হয়েছিল নাথুরাম গডসের হাতে গান্ধীর গুলিতে মৃত্যুর পরবর্তীকালে বা পরিণতিতে। আর সর্বশেষ নিষিদ্ধ হয়েছিল ১৯৯২ সালে বাবরি মসজিদ ভাঙার সংশ্লিষ্টতায়। আর এখন আবার সেই আরএসএস খুবসম্ভবত ভারতের সবচেয়ে ভাইব্রেন্ট তৎপর। আর ভারতের রাজনীতির অবস্থা হলো, হিন্দুত্বের জোয়ার উচ্ছ্বাস উন্মাদনার সামনে সেই গান্ধীর কংগ্রেস বা নেতা রাহুল গান্ধী কোণঠাসা- তারা বিজেপির হিন্দুত্ববাদের সমালোচনা করতে পারে না। উল্টো নিজেরাই নিজেদের তৎপরতাকে সফট হিন্দুত্ববাদ বলে ডাকে।

তবু সেই নেহরু-গান্ধীরাই সৌভাগ্যবান। কারণ, হিন্দু জাতীয়তাবাদী হওয়ার পরও তারাই কমিউনিস্ট প্রগতিবাদী চোখে প্রগতিশীলতার প্রতীক। আর দোষী হলো জিন্নাহ ও পাকিস্তান। তারাই নাকি ধর্মের ভিত্তিতে পাকিস্তান বানিয়েছে, দেশভাগ করেছে। আচ্ছা, গান্ধী যদি হিন্দু জাতীয়তাবাদের ভারত বানাতে চান তাহলে এই অ্যাক্ট, এটাই জিন্নাহ ও পাকিস্তানকে মুসলমান জাতীয়তাবাদ করার দিকে ঠেলে দেয়া আর কি? আর তা থেকেই ধর্মের ভিত্তিতে রাষ্ট্র গড়ার অপরাধে অপরাধী তারা! বুঝাই যাচ্ছে এই প্রগতিবাদীরা গান্ধী সম্পর্কে কিছুই পড়ে দেখেনি। এটা আর তাদের অন্ধবিদ্বেষ ও হিন্দু জাতীয়তাবাদ প্রীতি। তবে মূল সমস্যা সম্ভবত এখানে যে, রাষ্ট্র চিনতে বুঝতে হয় কিভাবেÑ এটাই তাদের কখনই জানা হয়নি!

লেখক : রাজনৈতিক বিশ্লেষক
goutamdas1958@hotmail.com


 

ko cuce /div>

দৈনিক নয়াদিগন্তের মাসিক প্রকাশনা

সম্পাদক: আলমগীর মহিউদ্দিন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সালাহউদ্দিন বাবর
বার্তা সম্পাদক: মাসুমুর রহমান খলিলী


Email: online@dailynayadiganta.com

যোগাযোগ

১ আর. কে মিশন রোড, (মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন), ঢাকা-১২০৩।  ফোন: ৫৭১৬৫২৬১-৯

Follow Us