নাগারা কেন পতাকা ছাড়তে চায় না
নাগারা কেন পতাকা ছাড়তে চায় না - ছবি : সংগৃহীত
দুই পক্ষই শান্তি আলোচনা অব্যাহত রাখার ঘোষণা দেয়ার মধ্য দিয়ে নাগা শান্তি চুক্তি সই করার চূড়ান্ত সময়সীমা বৃহস্পতিবার শেষ হয়ে গেছে। বিরোধপূর্ণ ইস্যুগুলোর মধ্যে রয়েছে পৃথক নাগা সংবিধান ও নাগা পতাকার ব্যবহার।
নাগা ও ভারত
সাইমন কমিশনের কাছে ১৯২৯ সালের দাখিল করা স্মারকে নাগা উপজাতীয় প্রতিনিধিরা স্বাধীনতার পর ভারতীয় ইউনিয়নের মধ্যে অন্তর্ভু্কত না করে নাগাদের মুক্ত রাখার দাবি জানায়। স্বাধনিতার আগ দিয়ে ভারত সরকার ও নাগা ন্যাশনাল কাউন্সিলের মধ্যে ৯ দফা চুক্তি হয়। এতে ১০ বছরের জন্য ভারতের সাথে পরীক্ষামূলকভাবে সহাবস্থানের বিষয়টিও ছিল।
নাগারা এই ব্যবস্থাকে সাময়িক মনে করে ১০ বছর পর আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকারের অধিকার তাদের রয়েছে বলে দাবি করে থাকে। নাগা ইতিহাসবিদেরা বলছেন যে ভারত সরকার সাময়িক মেয়াদকে ভারতীয় ইউনিয়নের সাথে একীভূত হওয়া বলে ব্যাখ্যা করে থাকে।
নাগা ইতিহাসবিদদের মতে, নাগা সংগ্রামের সবচেয়ে লম্বা নেতা ড. এ জেড ফিজো ১৯৪৭ সালের ১৯ জুলাই দিল্লিতে এম কে গান্ধীর সাথে সাক্ষাতের সময় গান্ধী একমত হন যে ভারতের এক দিন আগে তথা ১৯৪৭ সলের ১৪ আগস্ট নাগারা তাদের স্বাধীনতা উদযাপন করতে পারে। এখন পর্যন্ত নাগাল্যান্ড, মনিপুর, আসাম ও অরুনাচলপ্রদেশজুড়ে থাকা নাগারা ১৪ আগস্টকে স্বাধীনতা দিবস হিসেবে উদযাপন করে।
নাগা পতাকার ইতিহাস
নাগা শান্তি আলোচনার প্রেক্ষাপটে চলতি বছর নাগা জাতীয়তাবাদের নতুন বিস্ফোরণ দেখা যায় বিশাল সমাবেশে নাগা পতাকা উত্তোলনে ও শোভাযাত্রায় একে বহন করায়, বিশেষ করে নাগা-অধ্যুষিত মনিপুরের উখরুল জেলায় (এখানেই এনএসসিএন (আই-এম) প্রধান থ মুইভার গ্রামটি অবস্থিত)।
প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে নাগা ভাষ্যে বলা হচ্ছে যে নাগা পতাকা কোনো মানুষ নয়, বরং ঐশী শক্তির ডিজাইনে তৈরী। ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনীর বিরুদ্ধে নাগা গ্রুপগুলোর যুদ্ধের সময় ফিজো ও তার ঘনিষ্ঠতম সহকমীরা স্বপ্ন দর্শন করেন ঝড়ের পর আবির্ভূত তারকাখচিত নীল আকাশে একটি রংধনু।
এক এনএসসিএন (আইএম) নেতা বলেন, নাগা পতাকা হলো ঈশ্বরের কাছ থেকে আসা উপহার।
রেঙ্গমা উপজাতীয়ের (নাগাদের একটি গ্রুপ) এক নারীকে দেয়া হয়েছিল পতাকাটি বুননের দায়িত্ব। ১৯৫৬ সালের ২২ মার্চ রেঙ্গমার পারাশেনে প্রথমবারের মতো একটি উত্তোলন করা হয়। পতাকাটির ব্যাকগ্রাউন্ডে থাকা নীল প্রতিনিধিত্ব করে আকাশের। কেন্দ্রে রাখা হয় লাল, হলুদ ও সবুজ রংধনু। নাগারা প্রধানত খ্রিস্টান হওয়ায় বা দিকে শোভা পায় স্টার অব বেথলেহেম।
বর্তমানের নাগা পতাকা
৬০ বছর ধরে ভারতীয় ইউনিয়নের বিরুদ্ধে নাগাদের সংগ্রাম, তাদের খ্রিস্টান ধর্মবিশ্বাস, নাগা জনগণের আকাঙ্ক্ষা, তাদের পরিচিতির প্রতীক হিসেবে বিরাজ করছে পতাকাটি। এটিই বিভিন্ন নাগা উপজাতীয়কে একত্রিত করতে সহায়তা করছে। বিশেষ করে নাগাল্যান্ডের বাইরে থাকা নাগারা এই পতাকায় গভীর আবেগ অনুভব করে।
কোনো কোনো অংশ মনে করে যে ভারতীয় ইউনিয়ন থেকে আলাদা হয়ে যাওয়ার আর কোনো সম্ভাবনা না থাকায় নাগা পতাকা তার প্রাসঙ্গিকতা অনেকটাই হারিয়ে ফেলেছে। উন্নয়ন প্রকল্প ও অবকাঠামো, স্বাস্থ্য পরিচর্যা ও শিক্ষা সুবিধার জন্য মধ্যপন্থীরা ভারতীয় ইউনিয়নের মধ্যে পুরোপুরি অন্তর্ভুক্তির কথা বলেন। কিন্তু নাগাদের বড় অংশই এখনো নাগা পরিচিতি, তাদের উপজাতীয় শিকড়ের ধারণায় এখনো বিশ্বাসী।
সার্বভৌম নাগা জাতির আইডিয়া নিয়ে কয়েক দশকে নাগা সংগ্রামে হাজার হাজার জীবনের হানি হয়েছে, অগণিত বাড়িঘর বিধ্বস্ত হয়েছে। এনএসসিএন (আই-এম) যদি আলাদা পতাকা ও সংবিধান ছাড়া কেবল অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক প্যাকেজ গ্রহণ করেই ভারতে অন্তর্ভুক্ত হয়ে যায়, তবে এটি একটি সমাধান না একটি পরাজয়- কোনটি বিবেচিত হবে তা দেখার জন্য অপেক্ষা করতে হবে।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস