চীনকে ভয় শ্রীলঙ্কায়!
চীনকে ভয় শ্রীলঙ্কায়! - ছবি : সংগৃহীত
গত দশকে চীন ছিল শ্রীলঙ্কার সবচেয়ে বড় ঋণ দাতা। কিন্তু দ্বীপদেশটির বৃহত্তম উন্নয়ন প্রকল্পগুলোতে চীনের বিতর্কিত ভূমিকা থাকলেও নির্বাচনী সমাবেশগুলোতে দেশটির নাম বলতে গেলে উচ্চারিতই হচ্ছে না।
শ্রীলঙ্কায় নির্বাচন হবে ১৮ নভেম্বর। ক্ষমতাসীন ইউনাইটেড ন্যাশনাল পার্টির সজিথ প্রেমাদাসা পরবর্তী প্রেসিডেন্ট হওয়ার লড়াইয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন সাবেক প্রেসিডেন্ট মাহিন্দা রাজাপাকসার ভাই গোতাবায়া রাজাপাকসার বিরুদ্ধে।
অথচ মাত্র ৫ বছর আগে বিষয়টি ছিল সম্পূর্ণ ভিন্ন। ওই সময় মহিন্দা রাজাপাকসা তৃতীয় বারের মতো প্রেসিডেন্ট হতে লড়ছিলেন। কিন্তু মৈত্রিপালা সিরিসেনার কাছে তিনি হেরে যান।
তাকে চীনাদের অনুকূল বলে প্রচার করা হয়েছিল। তিনি বিশাল বিশাল উন্নয়ন প্রকল্পকে সামনে রেখে প্রচারণা চালাচ্ছিলেন। এসবের মধ্যে ছিল ১ বিলিয়ন ডলারের সাগর থেকে ভূমি উদ্ধারের কলম্বো বন্দর নগরী সৃষ্টি। এছাড়া একটি বিমানবন্দর, একটি বন্দর, বেশ কয়েকটি হোটেল ইত্যাদি নির্মাণ করা হয় চীনা অর্থে।
কিন্তু সিরিসেনা গ্রুপ চীনা ঋণকে দেশের দীর্ঘ মেয়াদি অর্থনৈতিক স্বার্থের জন্য ক্ষতিকর বলে প্রচার করার চেষ্টা চালায়। তারা বিশেষ করে কলম্বোর পোর্ট সিটির উন্নয়ন, মাত্তালা মাহিন্দা রাজাপাকসা বিমানবন্দরের ওপর আক্রমণ চালায়।
সিরিসেনা প্রশাসন দায়িত্ব গ্রহণের পর পোর্ট সিটির উন্নয়নকাজ বন্ধ করে দেয়া হয়। আর আন্তর্জাতিক বিমান সংস্থাগুলো মাত্তালায় আসা থামিয়ে দিলে কিছু সময়ের জন্য এটি চাল মজুত করার কাজে ব্যবহৃত হয়। তবে চীনা তৎপরতা অল্প সময়ের মধ্যেই আবার দৃশ্যমান হয়। এর অন্যতম কারণ হলো, চীনা অর্থের ওপর শ্রীলঙ্কার নির্ভরশীলতা। পোর্ট সিটির কাজ আবার শুরু হয়। ২০১৭ সালে শ্রীলঙ্কার অর্থ সঙ্কট আরো প্রকট হয়ে পড়লে হাম্বানতোতা বন্দরটিকে চীনা কোম্পানির কাছে ৯৯ বছরের জন্য লিজ দিতে বাধ্য হয় দেশটি।
কলম্বোতে পর্যবেক্ষকেরা বলছেন, শ্রীলঙ্কায় চীনা প্রভাব হ্রাস পায়নি। কলম্বোভিত্তিক অর্থনীতিবিদ ও সাবেক সরকারি উপদেষ্ট অনুষ্কা বিজেসিনহা বলেন, চীনা প্রভাব বাড়ছে বা কমছে, জানি না। তবে তা বদলে গেছে। চীনা ঋণের মাধ্যমেই সরকারি অনেক অবকাঠামো প্রকল্পে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পারন করছে বেইজিং।
তিনি বলেন, বাণিজ্যিক ভিত্তিতে বেসরকারি নির্মাণ প্রকল্পে বিনিয়োগের মাধ্যমে শ্রীলঙ্কায় চীনা অবস্থান জোরদার হচ্ছে।
তিনি বলেন, প্রেসিডেন্ট প্রার্থীরা রাজনৈতিক স্বার্থসিদ্ধির জন্য চীনকে হামলা করতে চায় না। তারা চীন বা ভারতেরমতো বড় আঞ্চলিক খেলোয়াড়দেরকে এই নির্বাচনে চটাতে চায় না।
ধারণা করা হচ্ছে, ২০০৯-২০১৫ পর্যন্ত শ্রীলঙ্কার মোট আন্তর্জাতিক ঋণের অর্ধেকের বেশি রয়েছে চীনের কাছে। এর পরিমাণ ৫ বিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি। তবে এই নির্বাচনে যিনিই জয়ী হন না কেন, তাকে আগের আমলে নেয়া ঋণ পরিশোধ নিয়ে ভাবতে হবে।
গত সপ্তাহে শ্রীলঙ্কায় নিযু্কত চীনা রাষ্ট্রদূত চেঙ জিইয়ুন সাংবাদিক ও শিক্ষাবিদদের এক অনুষ্ঠানে চীনা ঋণের পক্ষে কথা বলেন। তিনি বলেন, চীন থেকে নেয়া স্বল্প সুদে ঋণ শ্রীলঙ্কার জন্য লাভজনক। তিনি বলেন, পাশ্চাত্যের দেশগুলো থেকে ঋণ গ্রহণ করলে তার জন্য বেশি হারে সুদ দিতে হয়। চীন আরো সূক্ষ্ম কূটনীতির আশ্রয় গ্রহণ করেছে। ২০১৫ সালের নির্বাচনের পর কলম্বোতে চীনা মিশন শ্রীলঙ্কার মিডিয়ায় মধ্যে আনুকূল্য ছড়িয়ে দিচ্ছে। বেশ কয়েকজন শ্রীলঙ্কান সাংবাদিককে চীনা মূল ভূখণ্ডে বিশেষ ব্যবস্থায় সফর করানো হয়। উচ্চতর শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের জন্যও স্কলারশিপ দিচ্ছে চীন।
এক অংশগ্রহণকারী বলেন, তারা আসলে রাজনীতি নিয়ে কিছুই বলে না। তবে তারা আশা করে, আপনি তাদের পক্ষে থাকুন।
মিডিয়া ও নির্বাচনী প্রচারণায় চীন প্রশ্নে গুঞ্জন না থাকাটা অবাক করা কিছু নয়।
দি থার্ড পোল