নববধূকে নববধূকে শ্বশুরের কুপ্রস্তাব, যা করলেন স্বামী
নববধূকে নববধূকে শ্বশুরের কুপ্রস্তাব, যা করলেন স্বামী - ছবি : সংগ্রহ
মা-বাবা মানুষের ক্ষেত-খামারে কাজ করেন। আবার কখনো মানুষের সামান্য কিছু জমি বর্গা চাষবাদ করে ৪ সদস্যর পরিবার নিয়ে কোনো রকম জীবিকা নির্বাহ করেন। তারা অনেক কষ্টে এক লাখ টাকা যৌতুক দিয়ে গত চার মাস আগে ধুমধাম করে কিশোরী মেয়ে সিমলা খাতুনকে (১৬) বিয়ে দেন। বিয়ের পর থেকে লম্পট শ্বশুর আরশাদ আলীর (৪৫) কু-নজর পড়ে নববধু ওপর। মাঝে মধ্যে সুযোগ পেলে শ্বশুর বিভিন্ন কাজের অজুহাত দেখিয়ে ঘরে ডেকে তার পুত্রবধূর শরীরের বিভিন্ন স্থানে হাত দেয়ার চেষ্টা করতো। পিতৃসমতুল্য শ্বশুরের এই আচারণ গুলো কিশোরী সিমলা খাতুন প্রথম প্রথম কোনো গুরুত্ব দিত না। কিন্তু গত ২৬ সেপ্টেম্বর সকালে বাড়িতে লোকজন বিভিন্ন কাজে বাহিরে যায়। ওই সুযোগে ফাঁকা বাড়িতে পুত্রবধূকে ঘরে ডেকে জোরপূর্বক ধর্ষণের চেষ্টা চালান। এ সময় সিমলা চিৎকার শুরু করলে তাকে ছেড়ে দিলেও এই বিষয়টি কাউকে না জানাতে হুমকি দেন শ্বশুর।
দুপুরে কাজ শেষে স্বামী ইমরান আলী বাড়িতে ফিরে এলে তাকে বিষয়টি খুলে বলেন সিমলা। এরপর শ্বশুর-শ্বাশুড়ির হুমকি-ধামকিতে তিনি কোনঠাসা হয়ে পড়েন। তার স্বামীও এর কোনো সুরাহা না করে ঘটনার পরের দিন সিমলাকে তার বাপের বাড়ি পাঠিয়ে দেন। এর দু’দিন পর লোক মারফৎ খবর পাঠানো হয় সিমলাকে তার স্বামী তালাক দিয়েছেন। এ খবর শোনার পর তাদের পরিবারে যেনো আকাশ ভেঙ্গে পড়েছে। এখন কিশোরীর অসহায় পরিবারটি ন্যায় বিচারের আশায় মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন।
ভুক্তভোগী মেয়েটি খাতুন রাজশাহীর পুঠিয়া উপজেলার ধোপাপাড়া গ্রামের । আর তার স্বামীর নাম ইমরান আলী। তিনি দুর্গাপুর উপজেলার সিংগা পূর্বপাড়া গ্রামের আরশাদ আলী ছেলে।
মেয়েটি বলেন, আমাদের সংসারে এক ছেলে এক মেয়ে। এটিই তাদের বড় মেয়ে। সে এ বছর ধোপাপাড়া বালিকা বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাশ করেছে। টানাটানির সংসারে মেয়ে বড় হলে যে কত দুরচিন্তা তা কেবল বাবা-মা জানেন। তাই পরীক্ষার পর মেয়ের সমন্ধ এলে গত ৪ মাস আগে তাকে এক লাখ টাকা যৌতুক দিয়ে বিয়ে দেয়া হয়।
বিয়ের পর থেকে মেয়ের কপালে সে সুখ আর হলো না। এখন মেয়েকে নিয়ে চোখে মুখে অন্ধকার দেখি। এ ঘটনায় গত ৬ অক্টোবর আমি নিজে মেয়ের শ্বশুরকে আসামি করে প্রথমে পুঠিয়া থানায় মামলা করতে গেলে তারা জানিয়ে দেন ঘটনা যেখানে ঘটেছে মামলা সেখানে করতে হবে। নিরুপায় হয়ে পরে দুর্গাপুর থানায় একটি নির্যাতন মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলা নং-৪ তারিখ- ০৬/১০/১৯ ইং।
পুলিশ লম্পট শ্বশুর আরশাদ আলীকে আটক করেছে। এ ঘটনায় জামাই ক্ষিপ্ত হয়ে আমাদেকে বিভিন্নভাবে হুমকি-ধামকি দিচ্ছে। সে গত সপ্তাহে আমার মেয়েকে তালাক দিয়েছে বলেও লোকমারফৎ জানিয়ে দিয়েছে। তারা তালাকের কাগজ নাকি ডাক যোগে পাঠিয়ে দিয়েছে।
এ বিষয়ে সিমলার স্বামী ইমরান আলীর মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
ব্র্যাক আইন সহয়তা কর্মসূচীর পুঠিয়া শাখার কর্মকর্তা নিলুফা ইয়াসমিন বলেন, সিমলার পরিবারটি খুবই অসহায়। ব্র্যাকের পক্ষ থেকে তাদের আইনিভাবে সার্বিক সহযোগিতা করা হচ্ছে। এছাড়া আইন অনুসারে সিমলার দেনমোহর ও খোরপোষ আদায় করতে আলাদাভাবে আদালতে একটি মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে বলে জানান তিনি।
এ ব্যাপারে দুর্গাপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খুরশিদা বানু কণা বলেন, সিমলার বিষয়টি অভিযোগ পাওয়ার পর তার শ্বশুরকে আটক করা হয়েছে। আর ভুক্তভোগী পরিবারকে হুমকি-ধামকির বিষয়টি আমার জানানেই। তবে এ বিষয়টি আমাদের নজরে থাকবে।