মোদিকে ফের প্রত্যাখ্যান পাকিস্তানের, হতাশ ভারত
মোদিকে ফের প্রত্যাখ্যান পাকিস্তানের, হতাশ ভারত - ছবি : সংগৃহীত
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে পাকিস্তানের আকাশপথ ব্যবহার করতে দিতে আবারো অস্বীকার করল পাকিস্তান। তার ২৮-২৯ অক্টোবর সৌদি আরব সফরের জন্য ওই অনুমোদন চাওয়া হয়েছিল।
পাকিস্তানি সরকারি কর্মকর্তারা রোববার বলেন, সিদ্ধান্তটি ইসলামাবাদে ভারতীয় হাই কমিশনে পৌঁছে দেয়া হয়েছে।
এদিকে যেকোনো স্বাভাবিক দেশ নিয়মিতভাবে মঞ্জুর করা ভিআইপি বিশেষ ফ্লাইটের অনুমতি দিলেও পাকিস্তান তা আবারো প্রত্যাখ্যান করায় ভারত দুঃখপ্রকাশ করেছে বলে সরকারি সূত্র জানিয়েছে।
সূত্রটি জানায়, আমরা এ ধরনের প্রত্যাখ্যান করার বিষয়টি প্রাসঙ্গিক আন্তর্জাতিক বেসামরিক বিমান কর্তৃপক্ষের কাছে উত্থাপন করব। পাকিস্তানের উচিত হবে সুপ্রতিষ্ঠিত আন্তর্জাতিক রীতি অনুসরণ করা। তাদের একতরফাভাবে সিদ্ধান্ত গ্রহণের অভ্যাসও পুনঃবিবেচনা করা উচিত।
গত মাসেও মোদিকে পাকিস্তানের ওপর দিয়ে জাতিসঙ্ঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যোগ দিতে নিউ ইয়র্কে যাওয়ার ও ফিরে আসার অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করেছিল পাকিস্তান।
পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী শাহ মাহমুদ কোরেশি বলেন, কাশ্মির পরিস্থিতি এবং কাশ্মিরে ভারতের পরিচালিত বর্বরতা ও নৃশংসতা বিবেচনা করে পাকিস্তান ওই অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করে।
চলতি মাসের প্রথম দিকে একই কারণে ভারতের রাষ্ট্রপতি রাম নাথ কোবিন্দকেও পাকিস্তানের আকাশপথ ব্যবহার করতে দেয়নি ইসলামাবাদ।
বিরোধপূর্ণ জম্মু ও কাশ্মির নিয়ে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনার প্রেক্ষাপটে এসব ঘটনা ঘটছে।
৫ আগস্ট ভারত সরকার জম্মু ও কাশ্মিরের বিশেষ মর্যাদাসূচক সংবিধানের ৩৭০ অনুচ্ছেদ বাতিল করে।
ওই আইনের আওতায় জম্মু ও কাশ্মির স্বায়ত্তশাসন ভোগ করত। প্রতিরক্ষা, পররাষ্ট্র, যোগাযোগ ছাড়া সব সিদ্ধান্ত নয়া দিল্লি নিতে পারত। ভারত সরকার বর্তমানে জম্মু ও কাশ্মিরকে দুটি অঞ্চলে বিভক্ত করে দুটিকেই কেন্দ্র-শাসিত অঞ্চলে পরিণত করেছে।
পাকিস্তান এতে খুবই ক্রুদ্ধ হয়েছে। তারা এই পদক্ষেপকে অবৈধ হিসেবে অভিহিত করে কাশ্মিরিদের রক্ষা করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। ইসলামাবাদ ভারতীয় হাই কমিশনারকে বহিষ্কার করেছে, দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য বন্ধ রেখেছে, বিষয়টি আন্তর্জাতিক আদালতে উপস্থাপন করেছে।
কাশ্মির নিয়ে ভারত ও পাকিস্তান ১৯৪৭ সাল থেকেই বিরোধপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে।
স্পুটনিক
কাশ্মির পরিস্থিতির অগ্রগতি নিয়ে রোডম্যাপ চায় যুক্তরাষ্ট্র
এনডিটিভি
স্বাভাবিক এবং আরো উন্নতি হোক জম্মু ও কাশ্মিরের পরিস্থিতিতে, এমনটাই চাইছে যুক্তরাষ্ট্র। কাশ্মিরের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক পরিস্থিতি স্বাভাবিকের জন্য ভারতের কাছ থেকে একটি ‘রোডম্যাপ’ চেয়েছে তারা। পাশাপাশি সেখানকার রাজনৈতিক বন্দীদের মুক্তির ব্যাপারেও প্রশ্ন তুলেছে দেশটি। অন্য দিকে পাকিস্তানকে তাদের ভূখণ্ডে সন্ত্রাসবাদীদের বিরুদ্ধে ‘টেকসই ও অপরিবর্তনীয়’ পদক্ষেপ নেয়ার বার্তা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
জম্মু ও কাশ্মিরের শীর্ষ পর্যায়ের রাজনীতিবিদদের বেশির ভাগকেই প্রতিরোধমূলক হেফাজতে নেয়া হয়েছে। জম্মু ও কাশ্মিরের বিশেষ মর্যাদা প্রত্যাহার এবং রাজ্যকে দু’টি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে বিভক্ত করা সংক্রান্ত কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তের পরেই দুই সাবেক মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লাহ এবং মেহবুবা মুফতিসহ মূল ধারার নেতাদের হয় আটক না হয় গৃহবন্দী করা হয়।
দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়ার ভারপ্রাপ্ত সহকারী মার্কিন সচিব অ্যালিস জি ওয়েলস বলেছেন, ‘আমরা প্রতিদিনের পরিষেবাগুলোর পুরোপুরি পুনরুদ্ধারের জন্য সেখানকার রাজনৈতিক বন্দীদের মুক্তির জন্য চাপ অব্যাহত রেখেছি, তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক স্বাভাবিকতা পুনরুদ্ধারের জন্য একটি রোডম্যাপ তৈরি করা।’
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বলেছে, উপত্যকার পরিস্থিতি নিয়ে ডোনাল্ড ট্রাম্প গভীরভাবে উদ্বিগ্ন রয়েছেন, যেখানে জম্মু ও কাশ্মিরের বিশেষ মর্যাদা প্রত্যাখ্যান এবং রাজনৈতিক নেতাদের ‘বিনা অভিযোগে আটক রাখা’ এবং যোগাযোগ নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্তের পর থেকে প্রায় আট মিলিয়ন বাসিন্দার দৈনন্দিন জীবন মারাত্মকভাবে প্রভাবিত হয়েছে।
‘তবে আমরা পরিস্থিতির অগ্রগতি দেখেছি, উদাহরণস্বরূপ, চার মিলিয়ন পোস্টপেইড মোবাইল ফোন ব্যবহারকারীদের পরিষেবা পুনরুদ্ধার করা হয়েছে। তবে এখনো সেখানে এসএমএস ও ইন্টারনেট নিষিদ্ধ রয়েছে’, বলেন তিনি।
শ্রীনগরের মানবাধিকার কর্মীরা জানিয়েছেন, ৩৭০ ধারার অবলুপ্তি ঘটিয়ে জম্মু ও কাশ্মিরের বিশেষ মর্যাদা তুলে দেয়ার এবং রাজ্যটিকে দু’টি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলিতে বিভক্ত করার জন্য সিদ্ধান্ত ঘোষণার কয়েক ঘণ্টা আগে থেকেই অর্থাৎ ৪ আগস্ট রাতে উপত্যকায় ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ করে দেয়া হয়, বন্ধ করে দেয়া হয় মোবাইল ও ল্যান্ডলাইন টেলিফোন পরিষেবাগুলোও।
‘ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে আমরা যে গঠনমূলক সংলাপ দেখতে চাই তা অবশ্যই হতে পারে যদি পাকিস্তান তার ভূখণ্ডে উগ্রবাদী ও সন্ত্রাসবাদীদের বিরুদ্ধে টেকসই ও অপরিবর্তনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করে’, বলেন দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়ার ভারপ্রাপ্ত সহকারী মার্কিন সচিব অ্যালিস জি ওয়েলস।
ডোনাল্ড ট্রাম্প ও মার্কিন সচিব মাইক পম্পেও বারবার বলেছেন, কাশ্মিরের স্বাভাবিক পরিস্থিতি ফেরাতে সব পক্ষেরই দায়িত্ব রয়েছে, ভারত ও পাকিস্তান কথা বলুক, এমনটাই চায় যুক্তরাষ্ট্র।