চলছে অবিরাম গোলাবর্ষণ : যেকোনো সময় পাকিস্তান-ভারত লড়াই
যেকোনো সময় পাকিস্তান-ভারত লড়াই - ছবি : সংগৃহীত
ভারত ও পাকিস্তান তাদরে সীমান্ত সঙ্ঘাত প্রশমিত করতে বলতে গেলে কিছুই করছে না এবং বাস্তব পরিস্থিতি দৃশ্যত প্রতিনিয়ত আরো অবনতি ঘটছে।
কাশ্মিরকে বিভক্তকারী ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যকার কার্যত সীমান্ত নিয়ন্ত্রণ রেখা (এলওসি) বরাবর বিভিন্ন সেক্টরে বৃহস্পতিবার থেকে ভারী গোলাবর্ষণে অন্তত চার বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছে, বেশ কয়েকজন আহত হয়েছে।
দুই পক্ষ বেসামরিক এলাকায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির জন্য একে অপরকে দায়ী করেছে। পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় শুক্রবার ভারতের কূটনীতিককে তলব করেছে। গত আগস্টে ভারতীয় পার্লামেন্ট জম্মু ও কাশ্মিরের বিশেষ মর্যাদা বাতিল করার পর থেকে এটি সাপ্তাহিক কাজে পরিণত হয়েছে।
একে অপরের কূটনীতিকদের তলব, এ ধরনের যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন কৌশলগত ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি হতে পারে বলে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করা সত্ত্বেও ভারতীয় ও পাকিস্তানি সৈন্যরা নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর এক অপরের প্রতি গোলাবর্ষণ বন্ধ করছেন না।
একটি উদ্বেগজনক বিষয় হলো উভয় পক্ষের আর্টিলারির ব্যঅপক ব্যবহার। আগেকার সঙ্ঘাতে এর ব্যবহার ছিল সীমিত এবং সাধারণত পতাকা বৈঠকেই এর অবসান ঘটত। কিন্তু এবার পরিস্থিতি ভিন্ন।
শুক্রবার দিল্লিতে সেনাবাহিনীর এক অনুষ্ঠানে ভারতীয় সেনাপ্রধান জেনারেল বিপিন রাওয়াত সুস্পষ্টভাবে বলেন যে পাকিস্তান-অধিকৃত কাশ্মির হলো পাকিস্তানের অবৈধভাবে দখল করা এলাকা এবং তা নিয়ন্ত্রণ করছে সন্ত্রাসীরা।
জেনারেল রাওয়াত বলেন, আমরা যখন জম্মু ও কাশ্মিরের কথা বলি, তখন তা দিয়ে পাকিস্তানশাসিত কাশ্মির ও গিলগিট বাল্টিস্তানের কথাও বুঝাই। তিনি বলেন, পাকিস্তানের দখলে থাকা কাশ্মিরি পাকিস্তান এস্টাবলিশমেন্ট নয়, বরং সন্ত্রাসীরা নিয়ন্ত্রণ করছে।
জেনারেল রাওয়াতের এই বক্তব্য বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। কারণ এর মাত্র এক দিন আগে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর অফিসের জুনিয়র মন্ত্রী জিতেন্দ্র প্রাসাদ ঘোষণা করেছিলেন যে সে দিন আর বেশি দূরে নয়, যেদিন পাকিস্তান-শাসিত কাশ্মিরে ভারতের পতাকা উড়বে।
এসব বক্তব্য কেবল রাজনৈতিক সমাবেশে স্থানীয় শ্রোতাদের জন্যই বলা হচ্ছে না। ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী (তিনি অভিজ্ঞ কূটনীতিবিদ) এস জয়শঙ্করও কাশ্মিরকে ভারতের বলে দাবি করেছেন।
তিনি ২ অক্টোবর ওয়াশিংটন ডিসিতে রক্ষণশীল থিঙ্ক ট্যাঙ্ক হেরিটেজ ফাউন্ডেশনে বক্তব্য রাখার সময় বলেন, আমার সার্বভৌমত্ব আমার এখতিয়ার আমার মানচিত্রে প্রকাশিত। আমার মানচিত্রগুলো ৭০ বছর ধরে আছে। এখন ওটা আমার দাবি।
ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী দাবি করেন যে ভারত আশা করে, একদিন পাকিস্তানের নিয়ন্ত্রণে থাকা কাশ্মিরের অংশও ভারতের হাতে চলে আসবে।
দাবিতে সোচ্চার হলেও ভারতের কোনো মন্ত্রী বা ক্ষমতাসীন দল বিজেপির শীর্ষ পর্যায়ের কোনো সদস্য পাকিস্তানের হাতে থাকা কাশ্মিরকে ভারতের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করতে এখন পর্যন্ত সামরিক পদক্ষেপ গ্রহণ করার কথা উল্লেখ করেননি। তবে ২০ অক্টোবরের ভারতের আন্তঃসীমান্তে হামলা ও ওয়ার গেমে মনে হচ্ছে ভারত ওই দিকে যাওয়ার পরিকল্পনা করছে।
কাশ্মিরের বিশেষ মর্যাদা বিলুপ্ত করার পর থেকে ভারত পশ্চিম (পাকিস্তানের সাথে) ও পূর্ব (চীনের সাথে, কারণ দেশটির লাদাখের অংশবিশেষে মালিকানা দাবি রয়েছে) সীমান্তে উচ্চ মাত্রায় ওয়ার গেম চালাচ্ছে। পশ্চিম সীমান্তে ভারত তার বিমান ও স্থল বাহিনী পরীক্ষা করেছে। এসবের মধ্যে কে৯ স্বচালিত ১৫৫ হাউটজার ও পিনাকা মাল্টি ব্যারেল রকেট লাঞ্চারও রয়েছে।
এদিকে ভারতীয় নৌবাহিনীর ওয়েস্টার্ন নেভাল কমান্ডও সপ্তাহব্যাপী মহড়া শুরু করেছে আরব সাগরে। তারা তা করছে নৌ অভিযানে নতুন কৌশল ও ধারণা পরীক্ষা করার জন্য।
ভারতীয় বিমান বাহিনীও চলতি সপ্তাহের শুরুর দিকে অনেকগুলো ব্রাহ্ম সুপারসনিক ক্রুইজ ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা করেছে।
এই প্রেক্ষাপটে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান আন্তর্জাতিক মঞ্চে কড়া বক্তব্য রেখেছেন, চীনের নৈতিক সমর্থন চেয়েছেন।পাকিস্তানি সেনাবাহিনীও তার ভূখণ্ড রক্ষার সামর্থ্যের প্রমাণ দিচ্ছে।
এমন পরিস্থিতিতে পরমাণু অস্ত্রে সজ্জিত দুই প্রতিবেশী দেশ সম্ভবত খুব শিগগিরই স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরছে না। বিভিন্ন দেশে পাকিস্তানি প্রধানমন্ত্রীর কূটনৈতিক প্রয়াস সত্ত্বেও কোনো তৃতীয় দেশই এতে সম্পৃক্ত হতে চায় না বলে মনে হচ্ছে। আর পাকিস্তান বা ভারতের কেউও শান্তি আলোচনার জন্য টেবিলে বসতে আগ্রহী বলে মনে হচ্ছে না।
স্পুটনিক