শ্রীলঙ্কায় মুসলিমবিরোধী মনোভাব উস্কে দিচ্ছে যারা

মো: বজলুর রশীদ | Oct 24, 2019 03:02 pm
শ্রীলঙ্কায় মুসলিমবিরোধী মনোভাব উস্কে দিচ্ছে যারা

শ্রীলঙ্কায় মুসলিমবিরোধী মনোভাব উস্কে দিচ্ছে যারা - ছবি : সংগ্রহ

 

বিশ্লেষকরা এখন মনে করছেন, শ্রীলঙ্কার ইস্টার সানডে বোমা হামলা ও হত্যাযজ্ঞের পুরো বিষয়টি একটা ষড়যন্ত্র। লঙ্কার অসহায় মুসলমানদের বিরুদ্ধে মাইথ্রি-রনিল জোট মাহিন্দা-গোটা বর্ণবাদী জোটকে সমর্থন দিচ্ছে। বারবার শক্তিশালী পক্ষ থেকে সতর্ক করা সত্ত্বেও প্রেসিডেন্ট সিরিসেনা ও প্রধানমন্ত্রী বিক্রমাসিংহ দুঃখজনক সে ঘটনা রোধ করতে পারেননি। ধারণা করা হচ্ছে পশ্চিমা কেনো গোষ্ঠীকে খুশি করার জন্য মুসলমান-খ্রিষ্টান ও মুসলমান-বৌদ্ধ ইস্যু তুলে ধরতে চেয়েছেন। তাই তারা বিষয়টি গা করেননি, রাষ্ট্রযন্ত্র ব্যবহার করেননি। তাদের বিরুদ্ধে এতবড় অভিযোগ আসার পর উভয়ে পদত্যাগ করা উচিত ছিল। কিন্তু তা করা হয়নি।

দিন দিন মানুষের নৈতিক মূল্যবোধের কত দ্রুত পতন হচ্ছে তাও ভেবে দেখার বিষয়। মুষ্টিমেয় যে ক’জন ঘটনা ঘটিয়েছে তাদের বিরুদ্ধে মুসলমানদের কি-ইবা করার আছে! অথচ ঘটনার পর পুরো মুসলমান জনগোষ্ঠীকে দায়ী করে মিডিয়া সংবাদ পরিবেশন করতে শুরু করে। মুসলমান ও ইসলাম ধর্মের বিরুদ্ধে প্রধান মিডিয়া স্ট্রিম প্রচারণা চালায়, যাকে ‘মিডিয়া সন্ত্রাস’ হিসেবে আখ্যায়িত করা যায়। এ ধারা তিন সপ্তাহ ধরে চলতে থাকে। তখন নিরাপত্তা বিভাগ মুসলমানদের ঘরবাড়ি থেকে বের করে দেয়। নিরাপত্তা বাহিনী রান্নাঘরের চাকু পর্যন্ত জব্দ করেছে। অথচ ঘটনার আগে বা পরে কোনো ঘটনায় রান্নাঘরের চাকু ব্যবহৃত হয়েছে মর্মে কোনো উল্লেখ পাওয়া যায়নি। স্থানীয় পত্রপত্রিকা কোনো অদৃশ্য কারণে যুক্তরাষ্ট্র-ইউরোপ-ইসরাইলের স্বার্থে আঘাত করেÑএমন ঘটনা প্রকাশ করতে চায়নি। মিডিয়া সন্ত্রাসের কারণে মুসলমানদের বিরুদ্ধে সিংহলী বৌদ্ধরা হিংসা ও ঘৃণা ছড়াতে শুরু করে। মুসলমানদের সম্পদ ও ব্যবসায় ব্যাপক হামলা চালিয়ে তাদের অর্থনীতি অনেকটা ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে।

মুসলিমবিরোধী সন্ত্রাস ছড়িয়ে পড়লে নিরাপত্তা বাহিনী ফাঁকা গুলি ছুড়তেও অস্বীকার করে। চিলওয়া, গামপাহা, কুরুনগালা ও অন্যান্য স্থানে এমন ঘটনা ঘটেছে। হেতিপোলা ও আওকানায় রমজানের সময় সেহরি না খেয়ে রোজাদার নারী-পুরুষ ধান ক্ষেতে লুকিয়ে থাকতে বাধ্য হয়েছে। মন্ত্রী দেশনায়কা বলেছেন, ‘মুসলমানদের বিরুদ্ধে সহিংসতা পূর্বপরিকল্পিত।’

চার্চের লোকজন দেখিয়েছেন, কিভাবে বিরাট জনতা ফ্রিস্টাইলে ওয়াম্বা ও মিনুওয়াংগোদা প্রদেশে মুসলমানদের বাড়িঘরে আক্রমণ চালিয়েছে। অথচ সরকার ও পুলিশ থেকেছে নির্লিপ্ত। জনতার উচ্ছৃঙ্খলতা থামানোর জন্য পুলিশ ফাঁকা গুলি বর্ষণও করেনি। মুষ্টিমেয় কয়েকজন উগ্রপন্থী বড় ঘটনা ঘটাল আর সিংহলী বৌদ্ধদের বড় বড় বেআইনি সমাবেশ থেকে মুসলমানদের ঘরবাড়ি ও সম্পত্তিতে চড়াও হলো। প্রথম ঘটনায় নিরাপত্তা বিভাগ সংবাদ পেয়েও কার্যক্রম নেয়নি, দ্বিতীয় ঘটনায় কর্তৃপক্ষ নির্লিপ্ত থেকেছে। মনে হচ্ছে শ্রীলঙ্কার সিংহলী ও তামিল ক্যাথলিক গোষ্ঠীর মুসলিম বিরোধী করাই যেন লক্ষ্য। প্রফেসর তিসা বিতারানা এই মত পোষণ করেন। মিয়ানমারের মতো এক শ্রেণীর বৌদ্ধ ভিক্ষু এ দেশেও মুসলিমবিরোধী মনোভাব উস্কে দেয়ার কাজ করছে বহু বছর ধরে। তারা এমন সব অভিযোগ তৈরি করেছে এবং হিংসা ও বিদ্বেষ ছড়ানোর এমন সব প্রস্তাব তুলেছে যা খুবই উদ্বেগের। যেমন :

১. ওয়াহাবিবাদের প্রচার : এরা হলেন মন্ত্রিসভার সদস্য রশিদ বাসিউদ্দিন, ওয়েস্টার্ন প্রভিন্সের গভর্নর আজাদ সালি ও ইস্টার্ন প্রভিন্সের গভর্নর এমএলএএম হিজবুল্লাহ। ভিক্ষু থেরো দাবি করছেন, এই তিন মুসলিম রাজনীতিবিদ কোনো না কোনোভাবে শ্রীলঙ্কার মুসলিমদের মধ্যে ‘ওয়াহাবিবাদ’ প্রচারের জন্য দায়ী।

২. নেতাদের সাথে বোমা হামলাকারীদের সম্পর্ক : হত্যাকারী ও আত্মঘাতী বোমারুদের নেতা জাহরান কাসিমের সাথে কিছু নেতার সম্পর্ক রয়েছে মর্মে ভিক্ষুরা অভিযোগ তুলেছেন। এর রেশ ধরে কিছু দিন আগে সব মুসলমান সংসদসদস্য পদত্যাগ করেছিলেন। ওয়েস্টার্ন প্রভিন্সের গভর্নর আজাদ সালির সাথে ইস্টার বিস্ফোরণে সংশ্লিষ্ট ন্যাশনাল তাওহিদ জামাতের সম্পর্ক রয়েছে বলেও উগ্রবাদী বৌদ্ধরা অভিযোগ করেছেন।
৩. শরিয়াহ বিশ্ববিদ্যালয় : দাবি করা হয় যে, ইস্টার্ন প্রভিন্সের গভর্নর হিজবুল্লাহ সৌদি আরবের তহবিলে ‘শরিয়াহ বিশ্ববিদ্যালয়’ প্রতিষ্ঠার জন্য চাপে রয়েছেন। হিজবুল্লাহর মতো কোনো স্থানীয় মুসলিমকে গভর্নর পদে নিয়োগ করার প্রেসিডেন্ট সিরিসেনার সিদ্ধান্ত প্রদেশটির তামিলরা মেনে নিতে পারেনি। তারা হিজবুল্লাহকে ‘সাম্প্রদায়িক’ রাজনীতিবিদ বলে প্রচার করতে থাকে। এ ছাড়া বাত্তিকালোয়া জেলায় এখন ‘শরিয়াহ বিশ্ববিদ্যালয়’ বিষয়ে তদন্ত করছে কমিটি অন পাবলিক এন্টারপ্রাইজ (সিওপিই)। পূর্বাঞ্চলীয় প্রদেশটির গভর্নর এম হিজবুল্লাহ এই বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যোক্তা। সৌদি আরবের অর্থে পরিচালিত এই বিশ্ববিদ্যালয়ে ওহাবি-সালাফি ধারার আদর্শ অনুসরণ করে ইসলামী শিক্ষা দেয়া হয় এবং মুসলিম দেশগুলোর শিক্ষার্থীদের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়টি উন্মুক্ত। এর কার্যক্রম বন্ধ রাখার জন্য সিংহলীসহ বিভিন্ন মহল দাবি তুলেছে।

৪. নির্বীর্যকরণের অভিযোগ : মুসলিমদের বিরুদ্ধে নির্বীর্যকরণের অভিযোগ কয়েক বছর ধরেই চলছে। ‘বিবিএস’ এই প্রচারণা শুরু করেছিল। মুসলিম গাইনোজলিস্ট ড. সেইগু সিয়াবুদ্দিন মোহাম্মদ সাফির বিরুদ্ধে প্রমাণ সংগ্রহ করার চেষ্টা চালানো হয়। অভিযোগ রয়েছে, এই চিকিৎসক সিজারিয়ান ডেলিভারির সময় অনুমতি না নিয়েই আট হাজার বৌদ্ধ মহিলার নির্বীর্যকরণ করেছেন। কট্টরপন্থী বৌদ্ধ সন্ন্যাসী ওরাম্পে সবিতা থেরো সব মুসলিম গাইনোজলিস্ট ও অবস্টেট্রেসিয়ানকে নিষিদ্ধ করার দাবি জানিয়েছেন। কারণ তিনি সন্দেহ করছেন, এসব চিকিৎসক পুরো সিংহলী জাতিকে নির্বীর্য করার জন্য ‘বড় ধরনের ষড়যন্ত্র’ করছেন। সংখ্যাগরিষ্ঠ সিংহলী সম্প্রদায় মনে করে, মুসলিমদের জন্মনিয়ন্ত্রণ গ্রহণের কোনো বাধ্যবাধকতা না থাকায় তারা সহজেই একদিন সংখ্যায় সিংহলীদের ছাড়িয়ে যাবে। দেশটিতে সিংহলীর সংখ্যা শতকরা ৭০ ভাগের বেশি, আর মুসলিমরা ১০ ভাগ মাত্র।

৫. পোশাকের বিরুদ্ধে অভিযোগ : চার্চে হামলার ঘটনার পর সরকার মুসলিম মহিলাদের বোরকা ও হিজাব নিষিদ্ধ করেছে। জাহাজের একটি চাকার সদৃশ ডিজাইনের পোশাক পরার কারণে এক মুসলিম নারীকে আটক করে পাঠানো হয়েছে কারাগারে। সিংহলী বৌদ্ধরা এটাকে বৌদ্ধ ধর্মচক্র হিসেবে অভিহিত করে বলেছে ওই মহিলা বৌদ্ধ ধর্মকে ‘অপমান’ করতে চেয়েছে। পুলিশ বলছে, জনসাধারণ ওই নারীর গ্রেফতার চেয়েছিল বলেই তারা তা করেছে। এসব অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে নতুন ‘গেরুয়া উত্থান’ দেখা দিচ্ছে।

একটা বিষয় লক্ষণীয়- মুসলিম মহিলারা অধুনা যেভাবে ইসলামী ড্রেসকোড মানছে, দু’দশক আগেও তেমনটি ছিল না। ইসলামী জ্ঞানের প্রসার ও আরব কালচার ড্রেসকোডে পরিবর্তন এনেছে। সিংহলী বৌদ্ধরা এটাকে সুনজরে দেখছে না। মুসলিম নেতা ও ইসলামী সংস্থাগুলো সিংহলীদের কাছে বিষয়টি সময়মতো তুলে ধরতে না পারায় বেশির ভাগ সিংহলী ইসলাম সম্পর্কে আঁধারে রয়েছেন।

৬. সম্পর্ক আন্তরিক নয় : মুসলমানরা বিভিন্ন আচার অনুষ্ঠানে বৌদ্ধ ভিক্ষুদের প্রধান অতিথি করে থাকেন। এতে আন্ত:ধর্ম সহমর্মিতা অর্জিত হয়েছে কিনা তা বিশ্লেষণের বিষয়। মুসলমানদের ভোট শ্রীলঙ্কার নির্বাচনে একটি গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু। সিংহলীরা সেটা ভালো করেই বোঝে। একসময় তামিলদের ‘সব অনিষ্টের গোড়া’ বলা হতো। এখন সে অপবাদ দেয়া হচ্ছে মুসলমানদের।

৭. খুতবা বিষবাষ্প ছড়ায় : জুমার নামাজের খুতবাকে বৌদ্ধরা ‘অন্য ধর্মের লোকদের বিরুদ্ধে জেহাদের প্রেরণা’ মনে করে। খুতবার অংশবিশেষ সেকুলারদের মাধ্যমে সিংহলী পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত হয়ে তাদের সেই অনুমানকে আরো শক্তি জোগিয়েছে। সিংহলীরা মনে করে, জুমার নামাজ সিংহলীদের বিরুদ্ধে শক্তি প্রদর্শনের নামান্তর। তারা মনে করে, এখান থেকেই মৌলবাদ ও ঘৃণা ছড়ানো হচ্ছে। মুসলমান ধর্মীয় নেতারা এত দিনেও খুতবার বিষয়টি সিংহলীদের কাছে সঠিকভাবে উপস্থাপন করতে পারেননি। এই অভিযোগের পর জুমার খুতবাসহ ধর্মীয় সমাবেশগুলোর সব ধরনের বক্তব্য রেকর্ড করে সরকারের কাছে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছে শ্রীলঙ্কার মুসলিমবিষয়ক মন্ত্রণালয়।

৮. নানাসারার কুরআন অবমাননা : কারাগার থেকে মুক্তি পেয়েই শ্রীলঙ্কায় মুসলিম উগ্রবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের ঘোষণা দিয়েছেন কট্টরপন্থী বৌদ্ধ ভিক্ষু গালাগোদা আত্থে নানাসারা। মুসলমানদের বিরুদ্ধে দাঙ্গা উসকে দেয়ার জন্য তাকে গ্রেফতার করে সাজা দেয়া হয়েছিল। এই ভিক্ষু কুরআনের বিরুদ্ধেও অবমাননাকর বক্তব্য দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, কুরআনে কি বক্তব্য আছে সে বিষয়ে আরো আলোচনা করা দরকার। তার উসকানিতে মুসলমানদের বাড়িতে ও দোকানপাটে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়েছিল। এক সাংবাদিকের স্ত্রীকেও হুমকি প্রদানের জন্য তার সাজা হয়েছিল। আদালতের শুনানিতে বাধা দেয়া এবং আদালত অবমাননার জন্য এই ভিক্ষু সাজা ভোগ করেছেন। মুসলিমবিরোধী এক মিছিলে নেতৃত্ব দেয়ার সময় তিনি পুলিশের সাথে বিতর্কে জড়িয়ে পড়েন। বার্মার উগ্রবাদী ভিক্ষু মা বা থা শ্রীলঙ্কায় এই উগ্রপন্থী বৌদ্ধ ভিক্ষুর সাথেই গোপন শলাপরামর্শ করতেন। অহিংসা পরম ধর্ম’ এখন তার কাছে পরম অধর্ম হয়ে গেছে।

৯. প্রকাশ্যে মুসলিম বিদ্বেষ : ২০১৪ সালেও আলুথগামায় মুসলমানদের ওপর সহিংস ঘটনা ঘটেছিল। ভাবতে অবাক লাগে কিভাবে ‘মহাসোহন বলকিয়া’ নামের চরম বর্ণবাদী দল কাণ্ডিতে অফিস প্রতিষ্ঠা করে বছরের পর বছর মুসলমানদের বিরুদ্ধে ঘৃণা ও অপবাদ ছড়িয়ে চলেছে। পুলিশ কোনো ব্যবস্থা না নেয়ায় আজ সবাইকে এর কুফল ভোগ করতে হচ্ছে।

১০. মুসলমানদের বিরুদ্ধে মহারাগামা ঘোষণা : সিংহলী চরমপন্থী ভিক্ষুরা সরকারের কাছে বিভিন্ন দাবি জানায়। যেমন, মধ্যপ্রাচ্যে শ্রীলঙ্কার মহিলাদের কাজ করতে অনুমতি না দেয়া, মধ্যপ্রাচ্যের আর্থিক সহায়তায় কোনো মসজিদ নির্মাণে অনুমতি না দেয়া, কাউকে ইসলাম ধর্মে দীক্ষিত না করা, বোরকা নিষিদ্ধ করা, সিলোন জামিয়াতুল উলামার খাদ্যসহ কোনো বিষয়ের ওপর হালাল সনদ প্রদানের নিয়ম বাতিল করা, ইত্যাদি দশটি বিষয়। সাম্প্রদায়িক সংগঠন ‘বুদু বালা’ এটিকে বলেছে, ‘মহারাগামা ঘোষণা’।

১১. নানারত্ন থেরোর জ্বালাময়ী ভাষণ : ইস্টার সানডে ঘটনার পর শ্রীলঙ্কার জাতীয় টেলিভিশন চ্যানেলে সম্প্রচারিত হয় শ্রীলঙ্কার বৌদ্ধ ধর্মগুরু ওয়ারাকাগোদা শ্রী নানারত্ন থেরোর ভাষণ। তিনি এক মুসলিম চিকিৎসকের বিরুদ্ধে চার হাজার বৌদ্ধ নারীকে বন্ধ্যা করে দেয়ার অভিযোগ আনেন। এ সময় মুসলিম মালিকানাধীন দোকান ও রেস্তোরাঁগুলো বর্জনেরও আহ্বান জানান।

তার দাবি, এসব রেস্তোরাঁ বছরের পর বছর ধরে বৌদ্ধ ক্রেতাদের খাবারের সাথে বন্ধ্যাকরণের ওষুধ মিশিয়ে বিক্রি করছে। মুসলিম টেক্সটাইল ও ফ্যাশন হাউজগুলোতে গোপনে ‘জন্মনিরোধ রাসায়নিক’ বিক্রি করা হচ্ছে। তিনি বলেছেন, মুসলিমদের পাথর মারা উচিত।’ অথচ তদন্তের পর কর্তৃপক্ষ এ ধরনের অভিযোগকে ভিত্তিহীন হিসেবে নাকচ করে দিয়েছেন। নানারত্নের ওই ভাষণের পর থেকে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় দিন কাটছে মুসলিম জনগোষ্ঠীর।

ইস্টার সানডে ঘটনার পর মুসলিম সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে যে ‘ঘৃণামূলক অপপ্রচার’ ছড়ানো শুরু হয়েছে, জরুরি ভিত্তিতে সেটা বন্ধ করার ব্যবস্থা নিতে শ্রীলঙ্কার প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন জাতিসঙ্ঘের মানবাধিকার-বিষয়ক বিশেষজ্ঞ। বৌদ্ধ-সংখ্যাগরিষ্ঠ দ্বীপরাষ্ট্রটিতে ১২ দিনের মিশন শেষে এ আহ্বান জানান জাতিসঙ্ঘের ধর্ম ও বিশ্বাসের স্বাধীনতাবিষয়ক বিশেষ দূত আহমদ শাহিদ। তিনি বলেন, সম্প্রদায়গুলোর মধ্যে আস্থার মারাত্মক সঙ্কট সৃষ্টি হয়েছে। তিনি আরো বলেন, ‘বোমা হামলার পর সরকার যদিও দ্রুততার সাথে পরিস্থিতি কম-বেশি নিয়ন্ত্রণে এনেছে, কিছু ধর্মীয় চরমপন্থীর সহিংসতার পরিপ্রেক্ষিতে বেশ কিছু ধর্মীয় সম্প্রদায় সেখানে অনেকটাই উদ্বেগের মধ্যে রয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘শ্রীলঙ্কা সরকারকে অবশ্যই মুসলিম সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে ঘৃণামূলক অপপ্রচার ছড়ানো বন্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। যে বক্তৃতাগুলো অনিয়ন্ত্রিত মিডিয়ার মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে জাতি-ধর্মগত উত্তেজনা বাড়াচ্ছে সেগুলো অনতিবিলম্বে বন্ধ করতে হবে।’ তিনি আরো বলেন, এটা করতে ব্যর্থ হলে চরমপন্থা বাড়বে এবং শান্তি প্রতিষ্ঠার পথে মারাত্মক চ্যালেঞ্জের সৃষ্টি হবে।’

লেখক : অবসরপ্রাপ্ত যুগ্ম সচিব,
বাংলাদেশ সরকার ও গ্রন্থকার

 


 

ko cuce /div>

দৈনিক নয়াদিগন্তের মাসিক প্রকাশনা

সম্পাদক: আলমগীর মহিউদ্দিন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সালাহউদ্দিন বাবর
বার্তা সম্পাদক: মাসুমুর রহমান খলিলী


Email: online@dailynayadiganta.com

যোগাযোগ

১ আর. কে মিশন রোড, (মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন), ঢাকা-১২০৩।  ফোন: ৫৭১৬৫২৬১-৯

Follow Us