অনড় মাহাথির নতি স্বীকার করবেন না মোদির কাছে
মাহাথির ও মোদি - ছবি : সংগৃহীত
কাশ্মির নিয়ে নয়া দিল্লির সাথে কুয়ালা লামপুরের টানাপোড়েনের মধ্যেই মালয়েশিয়া থেকে পাম তেল কিনতে সদস্যদের নিষেধ করেছে মুম্বাইয়ের একটি প্রভাবশালী তেল প্রক্রিয়াজাত গোষ্ঠী। তবুও নিজের অবস্থানে অনড় থাকবেন বলে জানিয়েছেন মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহাম্মাদ।
মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহাম্মদ গত মাসে জাতিসঙ্ঘে দেয়া এক বক্তৃতায় ভারত কাশ্মিরকে ‘আক্রমণ ও দখল’ করে রেখেছে বলে মন্তব্য করেছিলেন। এর প্রতিক্রিয়ায় ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার দেশটি থেকে এ উদ্ভিজ্জ তেল আমদানিতে লাগাম টানতে পারেন সন্দেহে ভারতীয় ক্রেতারা ইন্দোনেশিয়ার দিকে ঝুঁঁকতে শুরু করেন। তারই ধারাবাহিকতায় গত সোমবার এক বিবৃতিতে সলভেন্ট এক্সট্রাকটরস অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্ডিয়া তার সদস্যদের মালয়েশিয়া থেকে মুখ ফেরাতে নির্দেশনা দেয়। তারা বলেছে,
‘বিপুল পরিমাণ পাম ওয়েলের আমদানিকারক হিসেবে আমাদের দেশ ও মালয়েশিয়ার মধ্যে সাম্প্রতিক টানাপোড়েনের ক্ষেত্রে আমাদেরও দায়বদ্ধতা আছে। আপনাদের নিজস্ব স্বার্থ এবং দেশের সাথে সংহতির অংশ হিসেবে আমাদের উচিত কিছু সময়ের জন্য মালয়েশিয়া থেকে পণ্য ক্রয় এড়িয়ে যাওয়া।’
এদিকে এই বয়কটের ডাককে তিনি কীভাবে দেখছেন, সাংবাদিকদের এ প্রশ্নের জবাবে মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহাম্মদ এদিন মন্তব্য করেছেন "সব সময় সবাইকে খুশি করে চলা সম্ভব নয়।"
ড: মাহাথির বলেন, "মালয়েশিয়া একটি বাণিজ্যনির্ভর দেশ - ফলে আমাদের বাজার দরকার, সবার সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখা দরকার।"
"কিন্তু কখনও কখনো নির্যাতিত মানুষের হয়েও মুখ খুলতে হয় - সেটা কেউ পছন্দ করবে, কেউ আবার করবে না।"
কিন্তু কাশ্মির নিয়ে জাতিসঙ্ঘে করা মন্তব্যের জন্য তিনি কি এখন আফসোস করছেন? এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, "আমাদের যেটা মনে হয়েছে সেটাই বলেছি - সেটা থেকে পিছু হঠতে বা সেটা পাল্টাতে আমরা রাজি নই।"
"আমরা মনে করি জাতিসঙ্ঘের প্রস্তাব বাস্তবায়িত হলে কাশ্মিরিরা উপকৃত হবে।"
"এটা শুধু ভারত-পাকিস্তানের ব্যাপার নয়, আমেরিকাসহ গোটা বিশ্বেরই উচিত জাতিসঙ্ঘে গৃহীত প্রস্তাব মেনে চলা। নইলে জাতিসঙ্ঘ থেকে লাভটা কী?"
ঘাটতি মেটাতে ভারতীয় পাম তেল প্রক্রিয়াজাতক কোম্পানিগুলোকে ইন্দোনেশিয়া, ইউক্রেন ও আর্জেন্টিনার দিকে নজর দিতে পরামর্শ দিয়েছেন গোষ্ঠীটির নির্বাহী পরিচালক বি ভি মেহতা। মালয়েশিয়া বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম পাম তেল উৎপাদক দেশ; অন্য দিকে ভারত এ তেলের বৃহত্তম ক্রেতা।
দিল্লিতে আরএসএস-পন্থী বিশ্লেষক দেশরতন নিগম অবশ্য দাবি করছেন মালয়েশিয়ার জন্য এটাই ভারতের 'সঠিক দাওয়াই'।
আরো নানাভাবে ভারত তাদের স্বার্থকে আঘাত করতে পারে বলেও তিনি জানাচ্ছেন।
তিনি বিবিসিকে বলছিলেন, "পাম তেল আমদানি বন্ধ হলে অবশ্যই তাদের অর্থনীতি হোঁচট খাবে।"
"তা ছাড়া প্রতি বছর আট থেকে নয় লাখ ভারতীয় পর্যটক মালয়েশিয়া বেড়াতে যান, তারাও এখন এর বদলে থাইল্যান্ড-সিঙ্গাপুর-বালি-ভিয়েতনামও বেছে নিতে পারেন।"
"মালয়েশিয়ায় প্রায় দশ শতাংশ ভারতীয় বংশোদ্ভূত মানুষ আছেন - অর্থনীতিতে তাদের অবদান বিরাট - সেখানেও অস্থিরতা তৈরি হবে।"
"ড: মাহাথিরকে বুঝতে হবে এই দুনিয়াটা শুধু ইসলামিক জিহাদ নয় - এটা বিরাট একটা পরিবার যেখানে সবার সবাইকে দরকার।"
ইসলাম প্রচারক জাকির নায়েক গত কয়েক বছর ধরে মালয়েশিয়ার আশ্রয়ে আছেন।
মালয়েশিয়া তাকে ভারতের হাতে তুলে দিতে রাজি না-হওয়ায় দুদেশের সম্পর্কে একটা অস্বস্তি আগে থেকেই ছিল।
কিন্তু এখন কাশ্মিরিদের প্রতি মালয়েশিয়ার খোলাখুলি সমর্থন পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে, যার প্রভাব পড়ছে পাম তেলকে ঘিরে দুদেশের বাণিজ্য-যুদ্ধে।
সূত্র : রয়টার্স. বিবিসি ও এনডিটিভি