'সেফ জোন' : এরদোগান পরিকল্পনা কতটা সফল হবে?
'সেফ জোন' : এরদোগান পরিকল্পনা কতটা সফল হবে? - ছবি : সংগ্রহ
তুর্কি প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়েব এরদোগান সত্যি সত্যিই উত্তর সিরিয়া আক্রমণ করে ‘নিরাপদ অঞ্চল’ গঠনের জন্য এভাবে সামরিক বাহিনী পাঠাবেন, সেটি অনেকেই হিসাবের মধ্যে রাখেননি। অবশ্য তিনি এ ব্যাপারে অনেকটা চূড়ান্ত বার্তা দেয়ার মতো করে বক্তব্য রেখেছিলেন জাতিসঙ্ঘের সাম্প্রতিক সাধারণ অধিবেশনে। সেখানে তিনি নিরাপদ অঞ্চলের মানচিত্র এবং পরিকল্পনা প্রকাশ করেছিলেন, আর কেন সেটি তুরস্ককে নিতে হচ্ছে, তাও বিস্তারিতভাবে তুলে ধরেছিলেন। তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিরাপদ অঞ্চল গঠন করে সেখানে সিরীয় শরণার্থীদের পুনর্বাসন করা সম্ভব না হলে আশপাশের অঞ্চল, এমনকি ইউরোপেও শরণার্থীর ঢেউ কী সঙ্কট ডেকে আনতে পারে- তার চিত্র তুলে ধরেছেন।
এত কিছু করার পরও যেদিন ফ্রি সিরিয়ান আর্মিকে সমর্থন দিয়ে নিরাপদ অঞ্চল গঠনের জন্য তুর্কি সেনাবাহিনী উত্তর সিরিয়ায় প্রবেশ করে, সেদিন বিশ্বব্যাপী সমালোচনা শুরু হয়ে যায়। মৃতপ্রায় আরব লিগের বৈঠক ডেকে সেখানে এই অভিযানের বিরুদ্ধে প্রস্তাব পাস করা হলো। কাতার ও সোমালিয়ার বিরোধিতা আর কয়েকটি দেশের নীরবতা ছাড়া সেখানে তুরস্কের উল্লেখযোগ্য সমর্থন আসেনি। সিরিয়ায় অভিযান শুরু হওয়ার তিন দিন আগে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে এ ব্যাপারে অভিহিত করেছেন বলে উল্লেখ করেছেন তুর্কি প্রেসিডেন্ট এরদোগান স্বয়ং। অথচ অভিযান শুরুর দিন চিঠি লিখে ট্রাম্প সতর্ক করে দেন এই অভিযানের ব্যাপারে।
এর আগে থেকেই রাশিয়ার সাথে সম্পর্কের নতুন মেরুকরণের পথে সক্রিয়ভাবে এগোচ্ছে তুরস্ক। সে দেশও প্রথমে নীরব থেকে পরে এই অভিযানের সমালোচনা করেছে। এই সমালোচনায় যোগ দিয়েছে ইরান ও সৌদি আরবও। বড় দেশগুলোর মধ্যে কেবল পাকিস্তান আর মালয়েশিয়া এর পক্ষে কথা বলেছে এবং প্রকাশ্যে একাত্মতা প্রকাশ করেছে তুরস্কের নিরাপত্তাজনিত উদ্বেগের সাথে।
তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় হলো- বাইরের বিশ্বে এরদোগানের নিরাপদ অঞ্চলের ব্যাপারে যখন কট্টরভাবে সমালোচনা করা হচ্ছে, তখন তুরস্কের অভ্যন্তরে ক্ষমতাসীন ও বিরোধী দল নির্বিশেষে সবাই এ ব্যাপারে একসাথে দাঁড়িয়েছে সামরিক বাহিনীর সাফল্য কামনা করে। আর এই ঐক্যই পাল্টে দিয়েছে অনেক কিছুকে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তার ভাইস প্রেসিডেন্ট ও পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে পাঠিয়েছেন তুর্কি নেতাদের সাথে আলোচনা করে দুই ন্যাটো দেশের মধ্যে সৃষ্ট ভাঙনকে জোড়া লাগাতে। দুই আমেরিকান নেতা ধৈর্যের সাথে সে কাজটি করেছেন। একনাগাড়ে দুই ঘণ্টার বেশি সময় ধরে আলোচনার পর তারা একটি চুক্তি করতে একমত হয়েছেন নিরাপদ অঞ্চল গঠন এবং তুরস্কের ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়ার বিষয়ে।
আমেরিকার প্রতিনিধিদলে রিপাবলিকান ও ডেমোক্র্যাট উভয় দলের প্রতিনিধি থাকায় যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে এক ধরনের ঐকমত্য রয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। তবে প্রতিনিধি সভার ডেমোক্র্যাট স্পিকার এই চুক্তির সমালোচনা করেছেন। এই চুক্তির পর নিরাপদ অঞ্চল তৈরির ব্যাপারে সিরীয় কুর্দি মিলিশিয়া সংগঠন ওয়াইপিজি ওই অঞ্চল থেকে নিজেদের প্রত্যাহার শুরু করেছে বলে খবর পাওয়া যায়। আগের বিরোধিতা যে মাত্রায় থাকুক না কেন, চুক্তির পর মধ্যপ্রাচ্যে কেবল ইসরাইলই প্রকাশ্যে এর বিরোধিতা করছে এবং কুর্দিদের সহায়তা প্রদানের কথা জানিয়েছে। ’৬০-এর দশকের গোড়া থেকে ইসরাইলই কুর্দি মিলিশিয়াদের প্রশিক্ষণের আয়োজন শুরু করেছিল। ১৯৭৫ সালের পর ইসলামী বিপ্লব-পূর্ব রেজা শাহের ইরান সরকার এই দায়িত্ব নেয়ার আগ পর্যন্ত ইসরাইল সে কাজ অব্যাহত রাখে। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর ব্রিটিশ-ফ্রান্স কর্তৃক এ অঞ্চলকে ভাগ বিভাজনের সময় কুর্দি এলাকাকে ৫ ভাগ করে এই জনগোষ্ঠীকে এক অসহায় অবস্থায় ঠেলে দেয়া হয়। এই সুযোগ নিয়ে মধ্যপ্রাচ্যে তাদের ‘কৌশলগত মিত্রশক্তি’ হিসেবে বাছাই করে ইসরাইল। তুর্কি অভিযানের পর ইসরাইলি নেতা নেতানিয়াহুর আগ্রাসী বক্তব্যে স্পষ্ট যে, সেই কৌশল এখনো বহাল রয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্র ও তুরস্কের মধ্যে সম্পাদিত চুক্তি বিশ্লেষণ করলে মনে হবে, এই সমঝোতায় তুরস্কের বিজয় হয়েছে। তুর্কিদের মধ্যে এর প্রতিক্রিয়া বেশ ইতিবাচক বলে মনে হয়েছে। চুক্তিতে বলা হয়েছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও তুরস্ক ন্যাটো-এর সহযোগী সদস্য হিসেবে তাদের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রাখবে। যুক্তরাষ্ট্র দক্ষিণ সীমান্তে তুরস্কের বৈধ নিরাপত্তা উদ্বেগকে উপলব্ধি করে তুরস্কের সাথে একমত হয় যে, মাঠের বাস্তবতা, বিশেষত উত্তর-পূর্ব সিরিয়ার পরিস্থিতিতে অভিন্ন স্বার্থের ভিত্তিতে, ঘনিষ্ঠ সমন্বয় থাকা প্রয়োজন। তুরস্ক এবং যুক্তরাষ্ট্র ন্যাটো অঞ্চল এবং ন্যাটোর জনগণকে ‘প্রত্যেকে সকলের জন্য এবং সকলে প্রত্যেকের জন্য’ এই উপলব্ধির মাধ্যমে সব হুমকির বিরুদ্ধে সুরক্ষা তৈরি করতে প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করে।
উভয় দেশের পক্ষ থেকে মানবজীবন, মানবাধিকার এবং ধর্মীয় ও জাতিগত সম্প্রদায়ের সুরক্ষার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করার কথা উল্লেখ করে চুক্তিতে বলা হয়, তুরস্ক ও আমেরিকা উত্তর-পূর্ব সিরিয়ার আইসিস বা দায়েশমুক্ত করার জন্য কাজ করবে। এর মধ্যে, অন্তরীণ রাখার সুবিধা এবং এর আগে আইসিস বা দায়েশ-নিয়ন্ত্রিত অঞ্চলগুলো থেকে অভ্যন্তরীণ বাস্তুচ্যুত ব্যক্তিদের যথাযথ সমন্বয়ও অন্তর্ভুক্ত থাকবে। একই সাথে, তুরস্ক ও আমেরিকা একমত হয়, সন্ত্রাসবাদবিরোধী অভিযানগুলোতে কেবল সন্ত্রাসবাদী এবং তাদের আস্তানা, আশ্রয়কেন্দ্র, বাসস্থান, অস্ত্র, যানবাহন ও সরঞ্জামগুলোকে লক্ষ্যবস্তু করা হবে।
চুক্তিতে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়, তুর্কি বাহিনী দ্বারা নিয়ন্ত্রিত নিরাপদ অঞ্চলে সব জনসংখ্যা কেন্দ্রের বাসিন্দাদের সুরক্ষা আর সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করার জন্য তুর্কি পক্ষ কাজ করবে এবং বেসামরিক ব্যক্তি ও বেসামরিক অবকাঠামোর ক্ষতি না করার প্রতি সর্বোচ্চ মাত্রায় নজর রাখবে। এ ছাড়া উভয় দেশ সিরিয়ার রাজনৈতিক ঐক্য ও আঞ্চলিক অখণ্ডতা এবং জাতিসঙ্ঘের নেতৃত্বাধীন রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ থাকবে। ইউএনএসসিআর ২২৫৪ অনুসারে এই প্রক্রিয়ার লক্ষ্য হলো সিরিয়ার বিরোধের অবসান ঘটানো।
চুক্তিতে উভয় পক্ষই নিরাপদ অঞ্চলের অব্যাহত গুরুত্ব ও কার্যকারিতা নিয়ে একমত হয়েছে এবং তুরস্কের জাতীয় নিরাপত্তা উদ্বেগ মোকাবেলায়, ওয়াইপিজি কর্তৃক ভারী অস্ত্রের পুনরায় সংগ্রহ, তাদের দুর্গে প্রত্যাবর্তন এবং অন্যান্য যুদ্ধ অবস্থানে ফিরতে না পারার ব্যাপারে একমত হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, নিরাপদ অঞ্চলটি মূলত তুর্কি সশস্ত্র বাহিনী দ্বারা বলবৎ করা হবে এবং উভয় পক্ষ এর বাস্তবায়নে পূর্ণমাত্রায় সহযোগিতা করবে। নিরাপদ অঞ্চল থেকে ওয়াইপিজিকে প্রত্যাহার করতে ১২০ ঘণ্টার জন্য তুরস্ক ‘অপারেশন পিস স্প্রিয়ে’ বিরতি দেবে। এ প্রত্যাহার শেষ হলে অপারেশন পিস স্প্রি বন্ধ করা হবে। আর তা বন্ধ হয়ে গেলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ১৪ অক্টোবর ২০১৯-এর নির্বাহী আদেশের অধীনে অভিযানের সাথে যুক্ত কিছু ব্যক্তির সম্পত্তি আটকে দেয়া এবং প্রবেশাধিকার স্থগিত করা-সংক্রান্ত বিধানের অধীনের নিষেধাজ্ঞাগুলো আরোপ না করার বিষয়ে সম্মতি জানিয়েছে। আমেরিকান প্রশাসন কংগ্রেসের সাথে এ ব্যাপারে যথাযথভাবে কাজ এবং পরামর্শ করবে আর ইউএনএসসিআর ২২৫৪ অনুসারে সিরিয়ায় শান্তি ও নিরাপত্তা অর্জনের জন্য অগ্রগতি পর্যবেক্ষণ করে অপারেশন পিস ¯িপ্রং বন্ধ হয়ে গেলে পূর্বোক্ত কার্যনির্বাহী আদেশের অধীনে নিষেধাজ্ঞা পুরোপুরি প্রত্যাহার করবে বলে উল্লেখ করা হয়। উভয়পক্ষই এই চুক্তিতে বর্ণিত সব লক্ষ্য বাস্তবায়নে ‘একসাথে কাজ করবে’ বলে উল্লেখ করা হয়।
এখন প্রশ্ন হলো- যুক্তরাষ্ট্র আর তুরস্ক ইচ্ছা করলে বা সিদ্ধান্ত নিলেই কি সিরিয়ায় কোনো উদ্যোগ বাস্তবায়ন করতে পারবে? সিরিয়ায় বাশার আল আসাদের সরকার ছাড়াও রাশিয়া ও ইরান সেখানকার দুই প্রধান পক্ষ। বিশেষত রাশিয়ার প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ সম্মতির বাইরে সিরিয়ায় কোনো উদ্যোগের টেকসই বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। এ বিষয়ে তুর্কি প্রেসিডেন্ট এরদোগান বেশ সচেতন বলেই মনে হয়। চুক্তি স্বাক্ষরের পরদিন তিনি বলেছেন, সন্ত্রাসী গোষ্ঠী পিকেকে’র সিরিয়ান শাখার ওয়াইপিজি আঙ্কারা-ওয়াশিংটন চুক্তির পরে তুরস্কের সীমান্ত থেকে সরে যেতে শুরু করেছে। তুরস্ক এ অঞ্চলে একটি সম্মত নিরাপদ অঞ্চলের বাস্তবায়ন পর্যবেক্ষণ করবে। তুরস্কের নিরাপত্তা বাহিনী সেখানে থাকবে। এর আগে তিনি বলেছিলেন, ‘যদি প্রতিশ্রুতি মঙ্গলবার সন্ধ্যা অবধি রাখা হয়, তবে সেফ জোন ইস্যুর সমাধান হয়ে যাবে। যদি এটি ব্যর্থ হয়, তবে অভিযানটি শুরু হবে ১২০ ঘণ্টা শেষ হওয়ার পরবর্তী মিনিট থেকে।
এরদোগান ভালো করেই জানেন, রাশিয়ার সাথে এ ব্যাপারে আলোচনা করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তিনি উল্লেখ করেছেন, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সাথে তার বৈঠক নিরাপদ অঞ্চল পরিকল্পনার দ্বিতীয় ধাপের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। তিনি আরো বলেন, রাশিয়ার উচিত এ অঞ্চলে নিরাপত্তা বিধানে নেতৃত্ব দেয়া। এরদোগান হয়তো চাইছেন, নিরাপদ অঞ্চল পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হোক। আর সেটি দুই প্রধান বিশ্বশক্তির সমর্থনে হলেই টেকসই হবে।
সম্মত নিরাপদ অঞ্চলের অবস্থান সম্পর্কে এরদোগান স্পষ্ট করে বলেছিলেন, এটি সিরিয়ার ভেতরে ৩২ কিলোমিটার প্রশস্ত হবে এবং সিরিয়ার আইন আল-আরব বা কোবনে থেকে ইরাকের সীমান্ত পর্যন্ত ৪৪৪ কিলোমিটার প্রসারিত হবে।
উল্লেখ্য, ‘অপারেশন পিস স্প্রিং'-এর সময় চার তুর্কি সেনা এবং ফ্রি সিরিয়ান আর্মির ৭৪ সদস্য নিহত হয়েছে বলে জানিয়েছেন এরদোগান। তিনি আরো জানান, তুরস্কের নিরাপত্তা বাহিনী অভিযানে এ পর্যন্ত প্রায় ৭৫০ ওয়াইপিজি বা পিকেকে সন্ত্রাসীকে নিউট্রাল (নিরপেক্ষ) করেছে। তুর্কি কর্তৃপক্ষ প্রায়ই ‘নিরপেক্ষ’ শব্দটি ব্যবহার করে থাকে ‘সন্ত্রাসীরা’ আত্মসমর্পণ করলে, তাদের হত্যা করা হলে অথবা আটক করা হলে। তুরস্ক এই অভিযানের মাধ্যমে দেশটির সিরিয়া সীমান্তকে কুর্দি মিলিশিয়ামুক্ত করে সেখানে তুরস্কে আশ্রয় নেয়া সাড়ে ৩৬ লাখ শরণার্থীর বেশির ভাগকে পুনর্বাসিত করতে চায়।
তুরস্কের নিরাপদ অঞ্চলের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন শুরু হওয়ার পর মানবিজ, আইন আল-আরব এবং কামিশ্লি শহরে সিরিয়ার সরকারি বাহিনীও প্রবেশ করেছে। এরদোগান সোচিতে রাশিয়ার নেতা ভ্লাদিমির পুতিনের সাথে আলোচনা করে যে চুক্তি করতে চান তার মাধ্যমে বিষয়টি নিষ্পত্তি হতে পারে।
এরদোগান ইঙ্গিত দিয়েছেন, ‘আমরা এমন একটি চুক্তিতে পৌঁছানোর লক্ষ্য রেখেছি যা সব পক্ষের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে। তবে আমাদের কেবল একটি শর্ত রয়েছে, সেখানে ওয়াইপিজির উপস্থিতি থাকবে না। এরদোগান আরো বলেছিলেন, রাশিয়ার সমর্থিত সিরীয় সরকারি বাহিনী কুর্দি ওয়াইপিজিমুক্ত অঞ্চলে প্রবেশ করলে তুরস্কের পক্ষে সেটি সমস্যা হবে না। উত্তর সিরিয়ার নিয়ন্ত্রণাধীন অঞ্চলগুলোতে স্থায়ীভাবে থাকার ব্যাপারে আঙ্কারার কোনো ইচ্ছা নেই।
বলার অপেক্ষা রাখে না যে, তুরস্কের সাথে যুক্তরাষ্ট্রের চুক্তি আঙ্কারার জন্য সাফল্যের একটি পর্যায় মাত্র। এই সমঝোতা না হলে দেশটিকে আমেরিকার নিষেধাজ্ঞাসহ আরো জটিল অনেক পরিস্থিতির মোকাবেলা করতে হতো। এখন দ্বিতীয় সাফল্য আসতে পারে তুর্কি স্বার্থ রক্ষা করে রাশিয়ার সাথে সমঝোতা সম্ভব করার মাধ্যমে। সেটি আমেরিকার সাথে সমঝোতার তুলনায় কম জটিল নয়।
বাশার আল আসাদ আর ইরান সিরিয়ার অভ্যন্তরে তুর্কি অবস্থানকে মেনে নিতে চান না। তবে তাদের পক্ষে রাশিয়ার মনোভাবকে আগ্রাহ্য করা সম্ভব নয়। এরদোগানের ইঙ্গিত অনুসারে, পরিকল্পিত নিরাপদ অঞ্চলে তুর্কি সেনাদের স্থায়ী অবস্থানের প্রয়োজন নেই। সেখানে রাশিয়ার নেতৃত্বে নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকলে সেটি আঙ্কারা গ্রহণ করতে পারে। তবে সিরীয় উদ্বাস্তুদের পুনর্বাসন এবং নিরাপদ অঞ্চল থেকে ওয়াইপিজির সম্পূর্ণ প্রত্যাহার ছাড়া অন্য কোনো ব্যবস্থা তুরস্ক মানবে বলে মনে হয় না। এ কারণে নিরাপদ অঞ্চল নিয়ে তুরস্কের চূড়ান্ত সাফল্য মূল্যায়নে পুতিন-এরদোগান বৈঠকের বিশেষ ভূমিকা থাকবে।
mrkmmb@gmail.com