নিঃসন্তান দম্পতিদের জন্য নতুন স্বপ্ন : ভ্রূণ আবিষ্কারে চমক
নিঃসন্তান দম্পতিদের জন্য নতুন স্বপ্ন : ভ্রূণ আবিষ্কারে চমক - ছবি : সংগৃহীত
নিঃসন্তান দম্পতিদের জন্য আশার আলো জাগিয়েছেন বিজ্ঞানীরা। গবেষণাগারে ইঁদুরের জরায়ুতে সৃষ্টি করেছেন কৃত্রিম উপায়ে ভ্রূণ। এ ভ্রূণ সৃষ্টিতে পুরুষ ইঁদুরের শুক্রাণু অথবা মেয়ে ইঁদুরের ডিম্বাণু ব্যবহার করা হয়নি। এ গবেষণাটি আগের একটি বিতর্কিত গবেষণার পথ ধরেই করা হয়েছে বিধায় অনেক সমালোচক অবশ্য মনে করছেন এটা দিয়ে ‘মানব ক্লোন’ (হুবুহু একই রকম মানুষ) করা হতে পারে। অথবা এটা অন্যান্য প্রতারণামূলক গবেষণার মতো আরেকটি প্রতারণাও হতে পারে।
তবে গবেষণাগারে শুক্রাণু ও ডিম্বাণু ছাড়াই বিজ্ঞানীরা ভ্রূণ সৃষ্টি করে চমকে দিয়েছেন। বিজ্ঞানীরা কানের ত্বক থেকে কোষ নিয়ে মেয়ে ইঁদুরের গর্ভাশয়ে স্থাপন করেন এবং ইঁদুরটিকে গর্ভবতী করেন। যদিও এর আগে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক একদল বিজ্ঞানী একই রকমভাবে ইঁদুরের গর্ভে ভ্রƒণ তৈরি করতে পেরেছিলেন কিন্তু তারা ওই ভ্রূণ থেকে বাচ্চা তৈরি করতে পারেননি। বর্তমানের এ গবেষণার সফলতার জন্য আরো গবেষণা প্রয়োজন হবে। বায়োলজিস্টরা বলছেন, এটা একেবারেই প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। যদিও এ ধরনের গবেষণা মানুষের দেহে ব্যবহার করা হয়নি।
কিন্তু এই আবিষ্কার প্রতি সাতজনের মধ্যে একটি নিঃসন্তান দম্পতির জন্য ভবিষ্যতে আশার সৃষ্টি করতে পারে যেসব পুরুষের খুবই কম শুক্রাণু রয়েছে অথবা যে নারীরা পুরনো অথবা দুর্বল ডিম্বাণু সমস্যায় ভুগছেন। ত্বকের কোষ থেকে সন্তান সৃষ্টি করে গর্ভ না হওয়ার সমস্যাটাও চিহ্নিত করা যাবে এই আবিষ্কারের মাধ্যমে।
গর্ভ নষ্ট হয়ে যাওয়া অথবা না হওয়ার পেছনে অন্যতম কারণ হলো ভ্রূণ গর্ভে সঠিক স্থানে স্থাপিত না হওয়া। টেক্সাসের সল্ক ইনস্টিটিউট অ্যান্ড ইউনিভার্সিটির মেডিক্যাল সেন্টারের গবেষক দল বলেন, কিভাবে কোষ থেকে জীবন সৃষ্টি হয় তা জানার জন্য এটা একটি প্রাগ্রসর গবেষণা। ১০০ অথবা এর কাছাকাছি কোষের সমন্বয়ে কিভাবে আলঝেইমার রোগ হয়ে থাকে তাও জানা যাবে এই গবেষণা থেকে।
সল্ক ইনস্টিটিউটের জিন এক্সপ্রেশান ল্যাবরেটরির অধ্যাপক ইয়ান কার্লোস ইজপিসুয়া বেলমন্টে বলেন, এই গবেষণা প্রথম দিককার জীবন গঠনের প্রক্রিয়া সম্পর্কেও জানতে আমাদের সহায়তা করবে। সৃষ্টির শুরুর দিকে একটি একটি মাত্র কোষ থেকে কিভাবে কোটি কোষের সৃষ্টি হয়েছে তাও জানতে সহায়তা করবে এ গবেষণা। আবার এই কোষ কিভাবে মহাশূন্যে এবং সময়ে একত্র হয়ে জীবনের সৃষ্টি করেছে তাও জানতে সহায়তা করবে। গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি হলোÑ এ গবেষণায় স্বাভাবিক ভ্রূণ ব্যবহার থেকে বিরত থেকেছেন বিজ্ঞানীরা।
জাপানি বিজ্ঞানীরা ২০১৬ সালে মেয়ে ইঁদুর ছাড়াই ইঁদুরের বাচ্চা সৃষ্টি করতে পেরেছিলেন। জাপানি গবেষকেরা ইঁদুরের লেজ থেকে কোষ নিয়ে কৃত্রিম ডিম তৈরি করেন। কিন্তু তাদের সৃষ্ট ডিম নিষিক্ত করার জন্য শুক্রাণু ব্যবহার করেছিলেন। আবার গত বছর প্রথমবারের মতো ন্যাদারল্যান্ডের হুব্রেক্ট ইনস্টিটিউটে ইঁদুরের ভ্রূণ তৈরি করতে পেরেছিলেন ডিম্বাণু অথবা শুক্রাণুর ব্যবহার ছাড়াই। কিন্তু নতুন এই গবেষণা সফলভাবে শুক্রাণু ও ডিম্বাণু ছাড়াই ভ্রূণ তৈরি করতে পেরেছেন এবং এই ভ্রূণ গর্ভাশয়ে স্থাপন করে ইঁদুরকে গর্ভবতী করাতে সক্ষম হয়েছেন বিজ্ঞানীরা।
ভ্রূণ তৈরি করতে বিজ্ঞানীরা নির্দিষ্ট কিছু রাসায়নিকের মিশ্রণ এবং বেড়ে ওঠার জন্য আরো কিছু রাসায়নিক ব্যবহার করেছেন। লন্ডনের ইমপেরিয়াল কলেজের স্টেম সেল বায়োলজিস্ট ড. হেরি লেইচ বলেন, বর্তমান গবেষণা ব্যাখ্যা করার বিরুদ্ধে আমি সাবধান করে দিচ্ছি যে বয়স্ক কোষ থেকে ভ্রূণ তৈরি করা যায়। এতে নীতিবিরুদ্ধ একটি প্রশ্নের সৃষ্টি করবে। যে গঠনটা তৈরি করা হয়েছে এটা কোনো ভ্রূণ নয় এবং এ গবেষণাটি শুধু ইঁদুরের দেহে, কোনো মানুষের দেহে নয়।
ক্যামব্রিজ ইউনিভার্সিটির জেনেটিক অধ্যাপক আলফান্সো মার্টিনেজ এই গবেষণার ফলাফলে আশাবাদী। কিন্তু তিনি সেই সতর্কতার প্রতিধ্বনি করেছেন। তিনি বলেন, গবেষণাটির আরো ব্যাখার প্রয়োজন আছে। কিন্তু এটা একটি গুরুত্বপূর্ণ গবেষণা। এ বিষয়টির একটি রিপোর্ট ব্রিটেনের মেইল অন লাইনে গত ১৭ অক্টোবর ছাপা হয়েছে।