আফগানিস্তান : হেরে যাচ্ছেন আশরাফ গনি

গানি ও আবদুল্লাহ - ছবি : সংগ্রহ
আফগানিস্তানের নির্বাচন কখনোই দ্রুত বা সহজ হয় না। ২৮ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত রাষ্ট্রপতি নির্বাচনটিও এর ব্যতিক্রম নয়। ২০০১ সালে তালেবানদের পতনের পরে ভোটাররা চতুর্থবারের মতো নেতা নির্বাচন করতে ভোট দিয়েছেন। দেশটির চতুর্থ রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে ৫ হাজার ৩৭৩টি ভোটকেন্দ্রে ভোট দিতে ৯৬ লাখ ভোটার নিবন্ধিত হয়েছেন, এর মধ্যে ৩৩ লাখ নারী। সুষ্ঠুভাবে ভোট শেষ করতে মোতায়েন করা হয়েছিল ৭২ হাজার নিরাপত্তাকর্মী।
তবে এবারের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রেজিস্ট্রার্ড ভোটারের মাত্র ২০ শতাংশ ভোট দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন, এক নির্বাচনী কর্মকর্তা। অতীতের নির্বাচনগুলোর তুলনায় এবারই ভোটার উপস্থিতি এত অস্বাভাবিক রকম কম ছিল। এবার মাত্র ২২ লাখের কিছু বেশি ভোট পড়েছে। অর্থাৎ প্রতি পাঁচজনে মাত্র একজন ভোট দিয়েছেন। অথচ ২০১৪ সালে সর্বশেষ প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ৭০ লাখ ভোট পড়েছিল।
দেশটিতে নিবন্ধিত ভোটার প্রায় ৯৬ লাখ ৭০ হাজার। আগামী ১৯ অক্টোবর আনুষ্ঠানিকভাবে ভোটের প্রাথমিক ফল ঘোষণা করার কথা। চূড়ান্ত ফল আসবে আগামী ৭ নভেম্বর। যদি ভোটে কোনো প্রার্থী ৫০ শতাংশের বেশি ভোট না পান তবে নভেম্বরে দ্বিতীয় দফা ভোট অনুষ্ঠিত হবে।
সহিংসতার হুমকি থাকায় এবার মোট ভোটকেন্দ্রের এক-তৃতীয়াংশ বন্ধ রাখা হয়েছে। ভোটগ্রহণের তারিখের আগে থেকেই ভোটকেন্দ্রে হামলার হুমকি দিয়ে আসছিল উগ্রপন্থীরা। ভোট জালিয়াতি নিয়ে উদ্বেগ থাকলেও নির্বাচন কমিশন বলছে, বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে ভোটারদের নিবন্ধন হওয়ায় জালিয়াতি ঠেকানো যাবে।
রাষ্ট্রপতি পদে নির্বাচনে অংশ নিতে ১৮ জন মনোনয়নপত্র দাখিল করেন। কিন্তু চারজনের প্রার্থিতা বাতিল হওয়ায় ভোটাররা ১৪ জনের মধ্য থেকে একজনকে বেছে নিতে ভোট দিচ্ছেন। তবে স্থানীয় গণমাধ্যগুলো বর্তমান রাষ্ট্রপতি আশরাফ গনি এবং তার প্রধান নির্বাহী আবদুল্লাহ আবদুল্লাহর মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের আভাস দিয়েছে। এরা দুজন তথাকথিত জাতীয় ঐকমত্যের সরকারের অংশ হিসেবে পাঁচ বছর ধরে দেশ পরিচালনা করছেন।
বিজয়ী হতে হলে কোনো প্রার্থীকে ৫০ শতাংশের বেশি ভোট পেতে হবে। তা না হলে সর্বোচ্চ ভোট পাওয়া দুই প্রার্থীর মধ্যে নভেম্বর মাসে আবারো নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ২০১৪ সালে সর্বশেষ রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে মুখোমুখি হয়েছিলেন আশরাফ গনি ও আবদুল্লাহ। ২০০৯ সালে হামিদ কারজাইর কাছে হেরে যান আবদুল্লাহ। ট্রান্সপারেন্ট ইলেকশন ফাউন্ডেশন অব আফগানিস্তান (টিএফএ) সাত হাজার মানুষের মধ্যে এক জরিপ চালিয়ে বলছে, রাষ্ট্রপতি হিসেবে আবদুল্লাহ জয়ী হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
যদিও আফগানিস্তানের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রধান দুই প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী পাল্টাপাল্টি বিজয় দাবি করেছেন। গত সোমবার দেশটির প্রধান নির্বাহী আবদুল্লাহ আবদুল্লাহ সরাসরি বিজয় লাভের কথা বলেছেন। আগের দিন জয়ের দাবি করেছেন ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্ট আশরাফ ঘানি। তবে কোনো পক্ষই নিজেদের দাবির স্বপক্ষে কোনো প্রমাণ উপস্থাপন করতে পারেনি। দেশটির নির্বাচন কমিশনের প্রধান নির্বাহী হাবিবুর রহমান নাং বলেছেন, আনুষ্ঠানিকভাবে ফল ঘোষিত হওয়ার আগে কেউই নিজেকে বিজয়ী ঘোষণা করতে পারেন না।
এই নির্বাচনে দেখা গেছে যে, আফগানিস্তানের রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো এখনো দুর্বল হয়ে আছে, সেখানে সাংগঠনিক কাঠামোর ঘাটতি রয়েছে এবং ব্যাপক দুর্নীতিতে সেগুলো জর্জরিত। আফগান রাজনীতিকে রূপান্তরের মতো সক্ষমতা তাদের নেই।
সাড়ে তিন কোটি মানুষের যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ আফগানিস্তানে তালেবানদের সাথে যুক্তরাষ্ট্রের দফায় দফায় শান্তি আলোচনা ব্যর্থ হওয়ায় প্রায়ই বোমা হামলার ঘটনা ঘটছে। গত ৭ সেপ্টেম্বর তালেবানের সাথে যুক্তরাষ্ট্রের শান্তি আলোচনা ভেঙে দেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ফলে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন প্রতিহত করার ঘোষণা দিয়েছিল তালেবান। ভোটারদের ভয়ভীতিও দেখানো হয়েছিল। তালেবান বলছে, তারা নির্বাচনের দিন ৫৩১টি হামলা করেছে। তবে সরকার বলছে হামলার সংখ্যা ছিল ৬৮। আর ‘আফগানিস্তান অ্যানালিস্টস নেটওয়ার্ক’ বলছে, নির্বাচনের দিন চার শ’র বেশি হামলা হয়েছে।
অনুষ্ঠিত এ নির্বাচনের ফলাফল কী হবে তা এখনো ধারণা করা যাচ্ছে না। তবে এটা এখনো অস্পষ্ট যে, এবারের নির্বাচনের ফলাফল যদি গত নির্বাচনের মতো বিতর্কিত হয় তবে আমেরিকা কী করবে। শান্তি আলোচনা ব্যর্থ হওয়ার পর আফগানিস্তানের অবস্থা দেশটিতে সর্বশেষ অনুষ্ঠিত নির্বাচনের মতোই টালমাটাল অবস্থায় রয়েছে।
নতুন আফগান সরকার কি শান্তি প্রক্রিয়ায় অবদান রাখতে পারবে এবং দেশকে অচলাবস্থা থেকে বের করে আনতে পারবে? এই প্রশ্নটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।