মেসেঞ্জারে আবরারকে নিয়ে সিক্রেট গ্রুপের যে কথা হয়েছিল
মেসেঞ্জারে আবরারকে নিয়ে সিক্রেট গ্রুপের যে কথা হয়েছিল - ছবি : সংগৃহীত
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ছাত্র আবরার ফাহাদকে হত্যা করার আগে হত্যাকারীদের সিক্রেট গ্রুপের মধ্যে মেসেঞ্জারে কথাবার্তা হয়েছিল। এখানে সেই কথাবার্তা তুলে ধরা হলো।
ছাত্রলীগের বুয়েট শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক মেহেদি হাসান রবিন তাদের সিক্রেট ফেসবুক গ্রুপে আবরারকে মারার নির্দেশ দেন। নির্দেশ অনুযায়ী পরদিন রোববার সন্ধ্যায় আবরার হলে ফিরলে রাত ৭টা ৫২ মিনিটে মনিরুজ্জামান সিক্রেট মেসেঞ্জারে সবাইকে নিচে নামতে বলেন। এরপর শেরেবাংলা হলের ২০১১ নম্বর রুমে নিয়ে শিবির সংশ্লিষ্টতার স্বীকারোক্তি আদায়ের জন্য আবরারকে বেধড়ক পেটানো হয়। পেটানোর একপর্যায়ে মারা যান আবরার। সারারাতই সিক্রেট গ্রুপে আবরারকে নির্যাতনের বর্ণনার আপডেট দিতে থাকেন বুয়েট ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এ হত্যাকাণ্ডের তদন্ত প্রসঙ্গে গত সোমবার দুপুরে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার ও কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ইউনিটের (সিটিটিসি) প্রধান মনিরুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, আবরার হত্যা অনেক বিষয়ের সমষ্টি। ঘটনার মোটিভ সম্পর্কে জানতে আমাদের আরো কয়েক দিন লাগবে।
এ দিকে সিক্রেট গ্রুপের কথোপকথনে দেখা যায় গত ৫ অক্টোবর শনিবার বেলা ১২টা ৪৭ মিনিটে মেহেদি হাসান রবিন মেসেঞ্জার গ্রুপে আবরারকে ‘মেরে হল থেকে বের করে’ দেয়ার নির্দেশ দেন। ম্যাসেঞ্জারে যেসব কথোপকথন হয়েছে, সেগুলো হুবহু নিচে তুলে ধরা হলো-
মেহেদী : ১৭ এর আবরার ফাহাদ। মেরে হল থেকে বের করে দিবি দ্রুত। এর আগেও বলছিলাম। তোদের তো কোনো বিকার নেই। শিবির চেক দিতে বলছিলাম।
মনিরুজ্জামান : ওকে ভাই। মেহেদী : বাল ওকে ভাই। দুই দিন টাইম দিলাম।
মনিরুজ্জামান : ওকে ভাই।
মেহেদী : দরকার হলে ১৬-এর মিজানের সঙ্গে কথা বলিস। ও আরো কিছু ইনফো দিবে শিবির ইনভলভমেন্টের। নির্দেশ অনুযায়ী পরদিন রোববার সন্ধ্যায় আবরার ফাহাদ গ্রামের বাড়ি কুষ্টিয়া থেকে হলে ফিরলে রাত ৭টা ৫২ মিনিটে ছাত্রলীগ নেতা মনিরুজ্জামান সিক্রেট মেসেঞ্জারে সবাইকে নিচে নামতে বলেন। রাত ৮টা ১৩ মিনিটে আবরারকে নিজ কক্ষ থেকে ডেকে করিডোর দিয়ে দোতলার সিঁড়ির দিকে নিয়ে যান সাদাত, তানিম, বিল্লাহসহ কয়েকজন।
ঘটনার রাত ১২টা ৩৮ মিনিটে সিক্রেট মেসেঞ্জার গ্রুপে অমিত সাহা জানতে চান, আবরার কী হলে আছে?
সাকিব : জী ভাই, ২০১১ তে আছে।
সামছুল : হ্যাঁ ভাই, ২০১১ তে।
রাত ১টা ২৬ মিনিটে মেহেদী মেসেঞ্জার গ্রুপে জিজ্ঞাসা করেন, তোরা আবরারকে ধরছিলি?
ইফতি : হ্যাঁ।
মেহেদী : বের করছোস নাকি?
ইফতি : কী? হল থেকে নাকি স্বীকারোক্তি?
মেহেদী : স্বীকার করলে তো বের করা উচিত।
ইফতি : মরে যাচ্ছে, মাইর বেশি হয়ে গেছে।’
ঢাকা মহানগর পুলিশের ডিসি (মিডিয়া) মাসুদুর রহমান বলেন, হত্যাকাণ্ডের পর থেকে সাদাত পলাতক ছিলেন। পরে গত সোমবার রাত সাড়ে ৩টার দিকে গোপন তথ্যের ভিত্তিতে ডিবির একটি দল দিনাজপুরের বিরামপুর থানার কাটলা বাজার এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করে। নাজমুস সাদাত বুয়েটের যন্ত্রকৌশল বিভাগের ১৭তম ব্যাচের শিক্ষার্থী। তিনি জয়পুরহাটের কালাই থানার কালাই উত্তর পাড়ার হাফিজুর রহমানের ছেলে। গ্রেফতার এড়ানোর জন্য তিনি দিনাজপুরের হিলি বর্ডার দিয়ে ভারতে পালানোর চেষ্টা করছিলেন বলে এই কর্মকর্তা জানান।