ছাত্রলীগ নেতা মুজাহিদের আনা দড়ি দিয়েই নির্যাতন চালানো হয়েছিল আবরারকে
- ছবি : সংগৃহীত
বুয়েট শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ হত্যায় জড়িত থাকার ঘটনায় রিমান্ডে থাকা ছাত্রলীগের বহিষ্কৃত নেতা মুজাহিদুর রহমান মুজাহিদ আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।
রবিবার মুজাহিদকে ঢাকার আদালতে হাজির করা হলে মহানগর হাকিম নিভানা খায়ের জেসি তার জবানবন্দি রেকর্ড করেন।
ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেক্ট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের (ইইউ) তৃতীয় বর্ষের ছাত্র মুজাহিদ বুয়েট ছাত্রলীগের সদস্য ছিলেন। নিহত আবরারও এ বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন।
সূত্র জানায়, যে দড়ি দিয়ে আবরারকে নির্যাতন করা হয়েছিল, বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মেহেদী হাসান রবিনের নির্দেশনায় সেই দড়ির ব্যবস্থা করেছিলেন মুজাহিদ।
এর আগে মুজাহিদ স্বীকারোক্তি দিতে রাজি থাকায় মামলার তদন্ত কর্মকর্তা গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) পরিদর্শক মো. ওয়াহিদুজ্জামান তাকে আদালতের সামনে হাজির করেন।
নৃশংস হত্যাকাণ্ডের এ ঘটনায় গত ৯ অক্টোবর নয়জন ছাত্রলীগ নেতার সাথে মুজাহিদকেও পাঁচ দিনের রিমান্ডে নেয় পুলিশ। এর আগের দিন সিসিটিভির ভুটেজ দেখে শনাক্ত করে তাদের আটক করা হয়।
গত ১০ অক্টোবর বুয়েট ছাত্রলীগের বহিষ্কৃত সমাজসেবা বিষয়ক উপসম্পাদক ইফতি মোশাররফ সকাল হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার ব্যাপারে আদালতের সামনে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়।
প্রসঙ্গত, ছাত্রলীগের নৃশংস নির্যাতনের শিকার হয়ে গত ৬ অক্টোবর দিবাগত রাতে বুয়েট শিক্ষার্থী আবরার (২১) নিহত হন। এ ঘটনায় তার বাবা ১৯ জনকে আসামি করে চকবাজার থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। মামলাটি পরে ডিবিতে স্থানান্তর করা হয়।
মামলায় এ পর্যন্ত এজাহারভুক্ত ১৫ জনসহ ১৯ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের মধ্যে কয়েকজন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।
সূত্র : ইউএনবি
কারাগারে অনিকের সাথে বন্ধুর ৮ মিনিটের সাক্ষাৎ
নিজস্ব প্রতিবেদক
কেরানীগঞ্জের ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে আটক বুয়েট ছাত্র আবরার ফাহাদ হত্যায় আদালতে স্বীকারোক্তি দেয়া অনিক সরকারের সাথে তার বন্ধু এবং নিকটাত্মীয় সাক্ষাৎ করেছেন। গতকাল রোববার দুপুরে সাধারণ দর্শনার্থীদের কক্ষে নজরদারির মধ্যে তাদের মধ্যে কয়েক মিনিটের সাক্ষাৎ হয়।
কারাগার সূত্রে জানা গেছে, বেলা ১২টা ২০ মিনিটে আবরার ফাহাদের হত্যাকারীদের অন্যতম বুয়েট ছাত্রলীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক অনিক সরকারের সাথে কারাগারের প্রধান গেট সংলগ্ন সাধারণ দর্শনার্থীদের কক্ষের দ্বিতীয় তলায় সাক্ষাৎ করতে যান তার বন্ধু অবন্য শ্রাবন ও চাচাতো ভাই হারুনুর রশীদ। লোহার শিকের ফাঁক দিয়ে তাদের মধ্যে ৮ মিনিট আলাপ হয়। এরপরই ১২টা ২৮ মিনিটে তারা বেরিয়ে যান। পারিবারিক আলাপ ছাড়াও কারাগারে প্রবেশের সময় তাকে কিছু ‘কয়েদিদের’ আচমকা মারধরের বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হওয়ার বিষয়টিও অল্প সময়ের সাক্ষাতে আলাপ হয়।
তবে গতকাল ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের দায়িত্বশীল একজন কর্মকর্তা নয়া দিগন্তকে জানান, কারাগারে অনিকের ওপর হামলা হওয়ার যে তথ্য প্রচারিত হয়েছে তার কোনো ভিত্তি নেই। কারণ কারাগারের ভেতরে কোনো কয়েদি বা বন্দী এমন ঘটনা ঘটানোর সাহসই পাবে না। এটা সম্পূর্ণ মিথ্যা তথ্য। হতে পারে অনিক যখন কারাগারে প্রবেশ করে আমদানি সেলের দিকে যাচ্ছিল তখন তাকে দেখে ক্ষুব্ধ বন্দীরা ছি ছি অথবা খারাপ কোনো মন্তব্য করতে পারে। কিন্তু হাত তোলার প্রশ্নই উঠে না? এক প্রশ্নের উত্তরে ওই সূত্রটি জানিয়েছে, শনিবার সন্ধ্যার পর অনিক কারাগারে আসার পর তাকে বকুল সেলে (টাওয়ার) নিয়ে যাওয়া হয়। সাধারণ বন্দীরা যে খাবার খাচ্ছে তাকেও সেই খাবার দেয়া হচ্ছে। অনিকের সাথে বন্ধু ও চাচাতো ভাইয়ের সাক্ষাতের সময় কী কী আলাপ হয়েছে- জানতে চাইলে এক কর্মকর্তা শুধু বলেন, ৮ মিনিটের সাক্ষাতে তাদের মধ্যে তেমন কোনো কথা হয়নি।
তবে অনিকের ওপর কারাগারে ঢোকার সময় কয়েদিদের হামলার প্রসঙ্গে বন্ধু অবন্য অনিকের কাছে জানতে চেয়ে বলেছে, ‘কারাগারে ঢোকার সময় তোর ওপর কি কয়েদিরা হামলা করেছিল’। এই বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ অন্য মাধ্যমে বাইরে প্রচার হয়েছে। তখন অনিক এ নিয়ে কোনো প্রতিক্রিয়া না দেখিয়ে অন্য প্রসঙ্গে চলে যায়।