সার্জেন্ট তারিকুলের এক বিয়ের তিন কাবিননামা!
সার্জেন্ট তারিকুলের এক বিয়ের তিন কাবিননামা! - ছবি : সংগৃহীত
২০০৯ সালে দু’জনের পরিচয়। ২০১৪ সালে বিয়ে। দু’জনের সাথে যখন পরিচয়, তখন হোসনে আরা কলেজছাত্রী। আর তারিকুল পুলিশ কনস্টেবল। বিয়ের পর তারিকুলের ভাগ্য বদলে যায়। নতুন করে চাকরি পান পুলিশ সার্জেন্ট হিসেবে। আর সে থেকেই বিড়ন্বনার শিকার হন স্ত্রী হোসনে আরা। যে স্বামীকে সার্জেন্ট পদে চাকরি পেতে সহযোগিতা করেছিলেন ৮ লাখ টাকা দিয়ে। কিন্তু চাকরি লাভের পরই তার ভালোবাসার মানুষটি বদলে যায়। স্ত্রী নয়, নিত্যনতুন নারী সঙ্গের মোহ পেয়ে বসে তারিকুলকে। এমনই অভিযোগ করেছেন হোসনে আরা।
হোসনে আরা বলেন, তার স্বামী পুলিশের সার্জেন্ট (বিপি নম্বর ৮৪১৫০৬৬২৪০)। যিনি ঢাকার ট্রাফিক পূর্ব বিভাগ ডেমরা জোনে কর্মরত। তার স্বামীর এহেন কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে প্রথমে মৌখিকভাবে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের অবহিত করেন। কিন্তু তারিকুলের চরিত্রের পরিবর্তন না হলে বিষয়টি ডিএমপি পুলিশ কর্মকর্তাকে লিখিতভাবে অবহিত করেন। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বিয়ের তথ্য গোপন রেখে সার্জেন্ট পদে চাকরি নেন তারিকুল। ২০১৫ সালে সার্জেন্ট পদে নিয়োগ পান তিনি। অথচ ২০১৪ সালের ২ জানুয়ারি তার বিয়ে হয় হোসনে আরা খন্দকারের সাথে। বিয়ের তথ্য গোপন রাখতে তিনি নিয়েছেন প্রতারণার আশ্রয়।
তারিকুলের রয়েছে তিনটি কাবিননামা। প্রথম কাবিনটি দেখা যায়, ২০১৪ সালের ২ জানুয়ারির। আড়াই লাখ টাকা দেনমোহরে ওই বিয়ের পাত্রী হিসেবে হোসনে আরা খন্দকারের নাম দেখা যায়। পূর্ব রামপুরার বনশ্রী কাজী অফিসে (বালাম নং-৮৩, ক্রমিক নং-এ পৃষ্ঠা নং ৫৭) বিয়েটি রেজিস্ট্রি হয়। কাজী ছিলেন মাওলানা মো: শামছুদ্দীন। আবার ২০১৭ সালের ২৬ জানুয়ারি ঢাকার কোতোয়ালি থানাধীন ১৪ নং কোর্ট হাউজ স্ট্রিটের কাজী অফিসে বিয়ের একটি কাবিননামা দেখা যায় (বালাম নং-৮/১৭ (এন), পৃষ্ঠা ১, ক্রমিক নং-১)।
এই বিয়ের কাজী ছিলেন সাদেক উল্লাহ ভূঁইয়া। কনের নাম হোসনে আরা খন্দকার। তবে সার্জেন্ট তারিকুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, তিনি বিয়ে করছেন ২০১৭ সালের শেষ দিকে। যাত্রাবাড়ি কাজী অফিসে তার বিয়ে হয়। কনের নাম হোসনে আরা। প্রথম বিয়ে পরানো কাজী সামছুদ্দিন বলেন, ২০১৪ সালের ২ জানুয়ারি তার অফিসেই বিয়ে হয়েছে হোসনে আরা-তারিকুলের। পুলিশের তদন্ত শুরু হলে তারিকুল বাঁচার জন্য আমাকে দিয়ে মিথ্যা সাক্ষী দিতে কিছু বলার চেষ্টার করছিলেন। কিন্তু পুলিশের বিভিন্ন জোনের তদন্ত কর্মকর্তাদের কাছে মূল বালাম বইয়ের সত্যায়িত কপি দিয়েছি, যা সত্য তাই বলেছি। চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা থানাধীন কার্পাস ডাঙ্গা গ্রামের বাসিন্দা তারিকুল। ১৪ নং কোর্ট হাউজ স্ট্রিটের কাজী সাদেক উল্লাহর দাবি, ২০১৭ সালের ২৬ জানুয়ারি মিরপুর একটি চাইনিজে নিয়ে তারিকুল-হোসনে আরার বিয়ের কাবিননামায় স্বাক্ষর নেন তিনি। তদন্তের কারণে তাকেও পুলিশের বিভিন্ন বিভাগে কর্মকর্তাদের কাছে যেতে হয়েছে।
এ দিকে তারিকুলের বিরুদ্ধে নারী নির্যাতন-যৌতুক-মাদক সেবন ও পরকীয়ার অভিযোগ এনেছেন তার স্ত্রী হোসনে আরা। তিনি বলেন, বনশ্রীর কাজী অফিসে ২০১৪ সালে বিয়ে হয় তার। রামপুরায় বাসা নেন স্বামী-স্ত্রী। ওই সময় তার স্বামী ছিলেন পুলিশ কনস্টেবল। ১৫ সালে সার্জেন্টের চাকরি নিতে তিনি বাবার বাড়ি থেকে ৮ লাখ টাকা এনে দেন স্বামীকে। স্বামীর আচরণে পরিবর্তন না হলে ডিএমপি কমিশনারের কাছে লিখিত অভিযোগ করেন। তার অভিযোগের বিষয়টি ইতোমধ্যে দু’জন কর্মকর্তা তদন্ত করেছেন। এখন দায়িত্বে রয়েছেন একজন নারী পুলিশ অফিসার। সঠিক তদন্তে ন্যায়বিচার পাবো এমনটাই প্রত্যাশা করি।