ভারত ও বাংলাদেশের নজরদারি চুক্তিতে কী আছে?
ভারত ও বাংলাদেশের নজরদারি চুক্তিতে কী আছে? - ছবি : সংগৃহীত
ভারত ও বাংলাদেশ শনিবার বেশ কয়েকটি সমঝোতা স্মারকে সই করেছে। এগুলোর একটি হলো উপকূলীয় এলাকায় যৌথ নজরদারি ব্যবস্থার প্রবর্তন। দুই দেশের কেউই এ ব্যাপারে বিস্তারিত তথ্য না দিলেও প্রাথমিকভাবে জানা গেছে যে ভারত চুক্তি অনুযায়ী বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় আধুনিক রাডারব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত করবে। একে বঙ্গোপসাগরের সামুদ্রিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার পদক্ষেপ হিসেবে অভিহিত করা হচ্ছে।
শনিবার দিল্লির হায়দরাবাদ হাউসে ভারত ও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীদের উপস্থিতিতে উপকূলীয় নজরদারিবিষয়ক দুই দেশের মধ্যকার সাতটি নজরদারি স্মারকের শেষটি হস্তান্তর করা হয়। নথিটির শিরোনাম ছিল ‘এমওইউ টু প্রভাইড এ কোস্টাল সারভেলেন্স সিস্টেম’ টু বাংলাদেশ।
এ ধরনের সিস্টেমের ফলে এক দশক আগে ভারতের বাণিজ্যিক রাজধানীতে হওয়া সাগরপথে সন্ত্রাসী হামলার আগাম খবর পাওয়া সম্ভব হবে। নরেন্দ্র মোদি ও শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে নথিটি বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রসচিব মোস্তফা কামাল উদ্দিনের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
ঢাকায় নিযুক্ত ভারতীয় হাই কমিশনার রিভা গাঙ্গুলি দাস ভারতের পক্ষ থেকে বাংলাদেশের কাছে নথিটি হস্তান্তর করেন। কিন্তু ২৪ ঘণ্টা পরও নথির বিস্তারিত বিবরণ ভারত বা বাংলাদেশ- কোনো পক্ষের কাছ থেকে প্রকাশ করা হয়নি। ভারতের সরকারি সূত্রগুলো বলছে, এটা বঙ্গোপসাগরের সামুদ্রিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।
সমঝোতা অনুযায়ী, ইতোমধ্যেই মরিশাস, সেশলস ও মালদ্বীপের মতো ভারত মহাসাগীয় দ্বীপগুলোতে স্থাপিত রাডারব্যবস্থার মতো কিছু স্থাপনা বাংলাদেশের উপকূলে বসাবে ভারত। এছাড়া ভারতীয় এলাকার কাছাকাছি মিয়ানমারেও এ ধরনের স্থাপনা প্রতিষ্ঠা নিয়ে আলোচনা চলছে। এ ধরনের চুক্তি ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে আগামী দিনে ‘হোয়াইট শিপিং এগ্রিমেন্ট’র পথ দেখাবে বলেও বলা হচ্ছে।
দুই দেশের নৌবাহিনীর মধ্যে সব ধরনের তথ্য আদানপ্রদানের যে চুক্তি আছে, তা কি বাণিজ্যিক জাহাজ চলাচলের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য করবে? ভারত কেন বাংলাদেশ উপকূলে আধুনিক রাডারব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করতে আগ্রহী, তার কোনো ব্যাখ্যা দেয়া হয়নি।
তবে কুয়ালামপুর মালয় বিশ্ববিদ্যালয়েল সৈয়দ মাহমুদ আলী মনে করেন, দুই দেশের মধ্যে সরকারি চু্ক্তি যাই হোক না কেন, আসলে চীনা নৌবাহিনীর চলাচলের ওপর নজরদারি করার জন্য ভারত মহাসাগরের বিভিন্ন দ্বীপে অত্যাধুনিক নজরদারি ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠাই এর উদ্দেশ্য। তিনি বলেন, চীনকে নিয়ে ভারতের উদ্বেগ, বাংলাদেশের সাথে চীনের গভীর সম্পর্কের কারণেই ভারত সরকারকে অবশ্যই সক্রিয় করেছে এটা প্রমাণ করতে যে বাংলাদেশের ওপর তাদের প্রভাবও কিছু আছে।
বাংলাদেশের ভারসাম্যের চ্যালেঞ্জ
বাংলাদেশ গত তিন বছর ধরে চীনের সাথে খুবই ঘনিষ্ঠ অর্থনৈতিক ও সামরিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করেছে। গত ছয় বছরে এই সম্পর্ক গভীরতা পেয়েছে। সশস্ত্র বাহিনীকে বিশেষ করে বিমান ও নৌবাহিনীকে আধুনিকায়ন করতে গত ২৭ বছর ধরে চীনের কাছ থেকে বিপুল সহায়তা ও সহযোগিতা পেয়েছে।
ভারতের সাবেক এক নৌবাহিনীপ্রধান বাংলাদেশকে খুবই রূঢ় ভাষায় গাল দিয়ে বলেন, এ নিয়ে ভারতের ক্রোধের শেষ নেই।
তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ভারতের সাংবাদিকদের বলেছেন যে তার দেশ নিজেদের উন্নয়নের জন্য এবং দেশের নিরাপত্তার স্বার্থে সব ধরনের সহায়তা গ্রহণ করবে। ভারতকে এ নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার কোনো কারণ নেই।
তিনি বলেন, ভারত, চীন ও যুক্তরাষ্ট্র ‘কৌশলগত ত্রিভূজ গাতিশীলতা’ সৃষ্টি করেছে, যা বৈশ্বিক গুরুত্বসম্পন্ন। ভারত ও চীন উভয়ের ঘনিষ্ঠ হওয়ায় বাংলাদেশের এর প্রভাব পড়তে বাধ্য।
কমিউনালনিউজ.কম