ভারতবিরোধী স্ট্যাটাস : ২২ হাজার শেয়ার
ভারতবিরোধী স্ট্যাটাসই কাল হলো - ছবি : সংগৃহীত
ভারতবিরোধী একটি স্ট্যাটাস দিয়েছিলেন বুয়েট শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ (২১)। আর এ কারণেই ছাত্রলীগ বুয়েট শেরেবাংলা হল শাখা ছাত্রলীগের রোষানলে পড়েন তিনি। ছাত্রলীগের কিছু উচ্ছৃঙ্খল নেতাকর্মী আবরারকে রাতভর আটকে রেখে নির্মম নির্যাতন চালায়। শেষ রাতে তার দেহ নিথর ও শীতল হয়ে পড়লে খবর দেয়া হয় তার রুমমেটদের। তারা ডাক্তার ডেকে আনেন। ততক্ষণে সব শেষ।
আবরারের ওই স্ট্যাটাসটি গতকাল সোমবার বিকেল ৫টায় ২২ হাজার শেয়ার হয়েছে এবং তাতে ৭১ হাজার লাইক পড়েছে। আবরারের ওই স্ট্যাটাসটি ছিলো-
১. ৪৭ এ দেশভাগের পর দেশের পশ্চিমাংশে কোনো সমুদ্রবন্দর ছিল না। তৎকালীন সরকার ছয় মাসের জন্য কলকাতা বন্দর ব্যবহারের জন্য ভারতের কাছে অনুরোধ করল। কিন্তু দাদারা নিজেদের রাস্তা নিজেদের মাপার পরামর্শ দিয়েছিল। বাধ্য হয়ে দুর্ভিক্ষ দমনে উদ্বোধনের আগেই মংলা বন্দর খুলে দেয়া হয়েছিল। ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে আজ ইন্ডিয়াকে সে মংলা বন্দর ব্যবহারের জন্য হাত পাততে হচ্ছে।
২. কাবেরি নদীর পানি ছাড়াছাড়ি নিয়ে কানাড়ি আর তামিলদের কামড়াকামড়ি কয়েক বছর আগে শিরোনাম হয়েছিল। যে দেশের এক রাজ্যই অন্যকে পানি দিতে চায় না সেখানে আমরা বিনিময় ছাড়া দিনে দেড়লাখ কিউবিক মিটার পানি দেবো।
৩. কয়েক বছর আগে নিজেদের সম্পদ রক্ষার দোহাই দিয়ে উত্তর ভারত কয়লা-পাথর রফতানি বন্ধ করেছে অথচ আমরা তাদের গ্যাস দেবো। যেখানে গ্যাসের অভাবে নিজেদের কারখানা বন্ধ করা লাগে সেখানে নিজের সম্পদ দিয়ে বন্ধুর বাতি জ্বালাব।
হয়তো এ সুখের খোঁজেই কবি লিখেছেন-
‘পরের কারণে স্বার্থ দিয়া বলি
এ জীবন মন সকলি দাও,
তার মত সুখ কোথাও কি আছে
আপনার কথা ভুলিয়া যাও।’
৫ অক্টোবর বিকেল ৫টা ৩২ মিনিটে এই স্ট্যাটাসটি দেন আবরার। আর স্ট্যাটাসের একদিন পরে তাকে রুম থেকে ডেকে নিয়ে হত্যা করে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা। মারধরের সময় ওই কক্ষে উপস্থিত এক শিক্ষার্থী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, আবরারকে শিবির সন্দেহে রাত ৮টার দিকে হলের ২০১১ নম্বর কক্ষে ডেকে আনা হয়। সেখানে তার মোবাইলে ফেসবুক ও মেসেঞ্জার চেক করা হয়। ফেসবুকে বিতর্কিত কিছু লাইক দেয়ার কথা বলেন ছাত্রলীগ নেতারা। তার বিরুদ্ধে শিবির সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ আনা হয়। আবরারকে জিজ্ঞাসাবাদ করে বুয়েট ছাত্রলীগের উপ-দফতর সম্পাদক ও কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মুজতবা রাফিদ, উপ-সমাজসেবা সম্পাদক ইফতি মোশাররফ সকাল, উপ-আইন সম্পাদক অমিত সাহা। পরবর্তীতে বুয়েট ছাত্রলীগের ক্রীড়া সম্পাদক মেফতাহুল ইসলাম জিয়ন, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক অনিক সরকার সেখানে আসেন। তারা এবং তাদের আরো কিছু অনুসারী আবরারকে মারধর করেছে বলে জানা যায়। ৫ অক্টোবরের স্ট্যাটাসটিকে তারা সরকারবিরোধী স্ট্যাটাস বলে উল্লেখ করে বেদম প্রহার করে আবরারকে। এ সময় আবরার বাঁচার আকুতি জানালে মারধরের মাত্রা আরো বেড়ে যায়। বুয়েট সূত্র জানায়, গত বছরও ফেসবুক স্ট্যাটাসকে কেন্দ্র করে এক ছাত্রকে পিটিয়ে পুলিশে দেয় বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের কিছু উচ্ছৃঙ্খল নেতাকর্মী।