জাতীয় সরকার নিয়ে আন্দোলন : সরব বিএনপি-ঐক্যফ্রন্ট
জাতীয় সরকার নিয়ে আন্দোলন : সরব বিএনপি-ঐক্যফ্রন্ট - ছবি : সংগ্রহ
‘শাসনতান্ত্রিক সঙ্কট’ নিরসনে হঠাৎ করেই দাবি উঠেছে জাতীয় সরকার গঠনের। রাজনীতিতে ক্রিয়াশীল বিরোধী দলগুলোর পক্ষ থেকেই মূলত এমন দাবি তোলা হয়েছে। ড. কামাল হোসেন নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ‘জাতীয় সরকার’ গঠন ইস্যুতে মাঠ গরমের পরিকল্পনা করছে। ইতোমধ্যে জাতীয় সরকারের রূপরেখা কেমন হবে তা নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে। মাঠের বিরোধী দল বিএনপি ঐক্যফ্রন্টের মূল দল হলেও এখনো পর্যন্ত তারা জাতীয় সরকারের বিষয়ে কিছু বলেনি। দলটির দাবি, একটি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে দ্রুত সময়ের মধ্যে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন। এক্ষেত্রে ‘জাতীয় সরকার’ একই ভূমিকা পালন করলে, বিএনপিও ইতিবাচকভাবে ফ্রন্টের কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে মূল ভূমিকা পালন করবে। জানা গেছে, সরকারের সমালোচনায় মুখর বেশ কয়েকটি বাম সংগঠনও জাতীয় সরকার গঠনের ইস্যুতে ফ্রন্টের পাশে থাকতে পারে।
সরকারি দলের নেতাদের দুর্নীতির বিরুদ্ধে চলমান অভিযানের মধ্যেই জাতীয় সরকারের দাবিকে কেউ কেউ তাৎপর্যপূর্ণ বলে উল্লেখ করেছেন।
বিদ্যমান রাজনীতি ও শাসনতান্ত্রিক সঙ্কট নিরসনে গত ২৮ সেপ্টেম্বর গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক ড. রেজা কিবরিয়া স্বাক্ষরিত একটি বিবৃতিতে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট তিনটি দাবি তুলে ধরে। দাবিগুলো হলোÑ বর্তমান ‘অবৈধ’ সরকারকে পদত্যাগ করে জাতীয় সরকার ঘোষণা করা; খালেদা জিয়াসহ সব রাজনৈতিক বন্দীর মুক্তিসহ সঙ্কট নিরসনে আন্দোলনরত রাজনৈতিক দল ও পেশাজীবী সংগঠনগুলোকে নিয়ে জাতীয় সংলাপের মাধ্যমে পথ নির্ধারণ এবং বর্তমান সরকারের ‘গুম-খুন’সহ ‘রাতের অন্ধকারে ভোট ডাকাতি’র ঘটনার পাশাপাশি দুর্নীতি-লুটপাট তদন্তে গ্রহণযোগ্য জাতীয় কমিশন গঠন।
জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের এই বিবৃতির ছয় দিন পর জাতীয় সরকারের বিষয়ে একটি বিস্তারিত রূপরেখা তুলে ধরেছে ফ্রন্টের অন্যতম শরিক জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি)। গত ৪ অক্টোবর ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে এক আলোচনা সভায় এই রূপরেখা তুলে ধরা হয়। ওই সভায় ফ্রন্টের আহ্বায়ক ড. কামাল হোসেন ও বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মনিরুলহক চৌধুরীসহ শীর্ষ নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
জাতীয় সরকারের রূপরেখা হিসেবে বলা হয়েছে- ‘অবৈধ’ সরকারের পদত্যাগের পর সাংবিধানিক শূন্যতা ও সঙ্কট পূরণ করবে জাতীয় সরকার। জাতীয় সরকার গঠন করা হবে রাজনৈতিক দল, পেশাজীবী সমাজ ও বুদ্ধিজীবী শক্তিগুলোর সংলাপের মাধ্যমে। জাতীয় সরকার রাষ্ট্রের ধ্বংসপ্রাপ্ত তিনটি মৌলিক স্তম্ভকে পুনরুদ্ধার-পুনর্গঠন করার উপায় নির্ধারণ করবে। জাতীয় সরকার গণতান্ত্রিক-শাসনতান্ত্রিক রাষ্ট্র বিনির্মাণের লক্ষ্যে সাংবিধানিক সংস্কারের প্রস্তাবনা উত্থাপন করবে। জাতীয় সরকার জাতীয় স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব সুরক্ষার জন্যে অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে জাতীয় ঐক্য এবং আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে ‘মর্যাদাপূর্ণ অংশীদারিত্বের’ নীতি অনুসরণ করবে।
জেএসডির সভাপতি আ স ম রব এই প্রসঙ্গে বলেন, একটি সমাজ ও রাষ্ট্রে সত্যের অনুপস্থিতি, নৈতিকতার অনুপস্থিতি, গণতান্ত্রিক চেতনার অনুপস্থিতিতে কী ধরনের ভয়ঙ্কর পরিস্থিতির উদ্ভব ঘটবে, তা আমাদের গভীরভাবে উপলব্ধি করতে হবে। এ বিবেচনায় ‘জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট’, ‘জাতীয় সরকার’-এর দাবি জাতির সামনে উপস্থাপন করেছে।
বিএনপির শীর্ষ পর্যায়ের একাধিক নেতা বলেন, নির্বাচনকালীন সরকার কিংবা জাতীয় সরকার যেটিই হোক না কেন, সুষ্ঠু নির্বাচনের মধ্য দিয়ে একটি কার্যকর গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থায় ফিরে যেতে হবে। এক্ষেত্রে শিগগিরই একটি শক্তিশালী প্লাটফর্ম গড়ে উঠবে।
বিএনপি মনে করছে, সরকারের নানামাত্রিক অপরাধের বিরুদ্ধে খালেদা জিয়ার মুক্তির বিষয়টিকে সামনে রেখে সরকারবিরোধী সব দলকেই জাতীয় সরকারের রূপরেখার সাথে যুক্ত করার চেষ্টা করবে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট।
বিএনপির এক নেতা বলেন, ‘রাষ্ট্রের সব কম্পিউটার হ্যাং হয়ে গেছে। এগুলো এখন রি-স্টার্ট দিলেও আর চালু হবে না। তাই মাদারবোর্ড পাল্টে ফেলতে হবে।’
বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মনিরুল হক চৌধুরী এ বিষয়ে নয়া দিগন্তকে বলেন, জাতীয় সরকার হোক কিংবা নির্বাচনকালীন সরকার হোক তাতে বিএনপির কোনো আপত্তি নেই। কিন্তু এই মুহূর্তে তাদের কাছে মূল ইস্যু বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি। বেগম জিয়া মুক্ত হলেই তার নেতৃত্বে গড়ে উঠবে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের সংগ্রাম।
ফ্রন্টের বাইরে একাধিক বাম দলের নেতারা জানিয়েছেন, জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ব্যানারে জাতীয় সরকারের রূপরেখা দিলেও এর মূলশক্তি বিএনপির কোনো অবস্থান এখনো তারা জানতে পারেননি। বিশেষ করে, পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে বিএনপি আগামী দিনে রাজনৈতিকভাবে ঠিক কী ধরনের অবস্থান নেবে, এ বিষয়টি এখনো পরিষ্কার করা হয়নি।
জাতীয় সরকারের রূপরেখা নিয়ে জানতে চাইলে বাম মোর্চার এক নেতা বলেন, এই সরকার ভোটের অধিকার কেড়ে নিয়েছে। এর বিরুদ্ধে গণসংগ্রামের কোনো বিকল্প নেই। নিশ্চিতভাবেই আমরা এই দুঃশাসনকে সরিয়ে আরেক দুঃশাসন আনতে চাই না। সেজন্যই জাতীয় সরকারের রূপরেখা নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। আমরা পর্যবেক্ষণ করছি।