ভয়ঙ্কর নারী : সম্পদ আর পরকীয়ায় একের পর এক খুন
ভয়ঙ্কর নারী : সম্পদ আর পরকীয়ায় একের পর এক খুন - ছবি : সংগৃহীত
একই পরিবারে ছয় খুনের রহস্য উৎঘাটন হয়েছে শেষ পর্যন্ত হয়েছে। আর বের হয়ে এসেছে রোমহর্ষক ঘটনা। সম্পদ আর পরকীয়ায় হয়েছে এসব খুন। ২০০২ থেকে ২০১৬ সালের মধ্যে ভারতের কেরল রাজ্যের কোঝিকোডের এক ক্যাথলিক পরিবারে এই খুনের ঘটনাগুলো ঘটে। তদন্তের অঙ্গ হিসেবে পুলিশ ৪ অক্টোবর পরিবারের ছটি সমাধি খুঁড়ে দেখে। যাদের সবারই মৃত্যু হয়েছিল রহস্যজনক পরিস্থিতিতে। দুঃখজনক ঘটনা ১৪ বছর ধরে তাড়া করে বেরিয়েছে পোনামাট্টাম পরিবারের সদস্যদের।
সায়ানাইড খেয়ে স্বামীর মৃত্যুর আট বছর পর এক মহিলা এবং অন্য তিনজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। পুলিশ জানিয়েছে, পরিবারের বাকি ৫ সদস্যের মৃত্যুর ঘটনার তদন্ত চলছে। কেরল পুলিশ পরিবারের বধূ জলি, তার দ্বিতীয় স্বামী সাজু এবং অন্য এক আত্মীয়কে গ্রেফতার করেছে। পুলিশ জানিয়েছে, সাবধানী পরিকল্পনার মাধ্যমে একের পর এক খুনের ঘটনা ঘটিয়ে গিয়েছে অভিযুক্ত। কেসটা অন্যতম চ্যালেঞ্জের ছিল বলেও জানিয়েছে পুলিশ।
পরপর মৃত্যু ২০০২ সালে অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক আনাম্মা টমাসের(৫৭) মৃত্যু দিয়ে শুরু। পরিবার এই মৃত্যুকে স্বাভাবিক বলেই মনে নিয়েছিল। ছয় বছর পর তার স্বামী টম টমাস(৬৬) হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। ২০১১ সালে তাদের সন্তান রয় টমাস (৪০)-এর মৃত্যু হয় একইভাবে।
ময়না তদন্তের রিপোর্ট থেকে জানা যায়, মৃত্যুর আগে বিষ প্রয়োগ করা হয়েছিল। ২০১৪ সালে আনাম্মার ভাই ম্যাথু (৬৭) মৃত্যু হয়েছিল একইভাবে। ওপরের চারজনকেই একই জায়গায় করব দেয়া হয়েছিল। ২০১৬ সালে তাদের আত্মীয়ের কন্যা আলফোনসা (২) হার্ট অ্যাটাকে মারা যায়। এর কয়েক মাসের মধ্যে শিশুটির মা সিলি (২৭) মারা যায়।
বিধবা বিয়ে করে আত্মীয়কে এরই মধ্যে রয় টমাসের স্ত্রী জলি বিয়ে করে সিলির স্বামী সাজুকে। পরিবারের সমস্ত সম্পত্তি দাবি করে তারা। জলি এর স্বপক্ষে রেখেছিল শ্বশুর টমের উইল। কিন্তু টমের আমেরিকাবাসী ছেলে মোজো সেই উইলকে চ্যালেঞ্জ করে। তিনিই ক্রাইম ব্রাঞ্চে অভিযোগ দায়ের করেন সিরিয়াল মৃত্যু নিয়ে।
রহস্য উদঘাটন পুলিশের তবে রহস্য উদঘাটন করে ফেলে পুলিশ। পুলিশের তরফ থেকে জানানো হয়েছে, সাবধানী পরিকল্পনার মাধ্যমে একের পর এক খুনের ঘটনা ঘটিয়ে গেছে অভিযুক্ত। সব রেকর্ড তারা সংগ্রহ করেছেন। এবার অপেক্ষা করছেন সায়েন্টিফিক এভিডেন্সের জন্য। পাশাপাশি কবর খুঁড়ে লাশ পরীক্ষা করা হয়েছে। পুলিশ ইতিমধ্যেই জলি এবং সাজুকে জিজ্ঞাসাবাদ করে বক্তব্যে তফাত খুঁজে পেয়েছে।
পুলিশ তদন্তে দেখেছে, ছটি মৃত্যুক স্থলেই জলি উপস্থিত ছিল। পুলিশের তরফে জলিকে পলিগ্রাফ টেস্ট দিতে বলা হলে স্বাস্থের কারণে সে তা দিতে অস্বীকার করে। পুলিশ জানিয়েছে, জলি আদতে কমার্স গ্রাজুয়েট। কিন্তু সে নিজেকে ইঞ্জিনিয়ারিং গ্রাজুয়েট বলে দাবি করেছে। এনআইটিতে সে লেকচারারের কাজ করত বলেও পুলিশের কাছে দাবি করেছে। কিন্তু কল ডিটেলস পরীক্ষা করে পুলিশ দেখেছে জলি এবং সাজু অবসর সময়ে একে অপরের কাছে থেকেছে।
লাশগুলো কবর থেকে তোলার সময় ফরেনসিক এক্সপার্টরা সায়ানাইডের উপস্থিতি টের পেয়েছেন। পুলিশ রয় টমাসের কবর খুঁড়ে সায়ানাইডের হদিশ পেলেও স্ত্রী জলি দাবি করেছিলেন তার মৃত্যু হয়েছে হার্ট অ্যাটাকে। এই ঘটনায় পুলিশ আরো ২ ব্যক্তিকে গ্রেফতার করেছে। তারা হলো এমএস ম্যাথুউ এবং প্রাজিকুমার। ম্যাথুই একটি অলংকারের দোকানের কর্মী আর প্রাজিকুমার অলংকারের দোকানের জন্য অলংকার তৈরি করে। জলি দুজনকেই বহুদিন ধরে চেনে। পুলিশের দাবি এই প্রাজিকুমারই জলিকে সায়ানাইড সরবরাহ করেছিল।