ডিসেম্বরে কাউন্সিল : কী হতে পারে আ. লীগে?
শেখ হাসিনা ও ওবায়দুল কাদের - ছবি : সংগ্রহ
আওয়ামী লীগের সম্মেলনকে ঘিরে চলছে জল্পনা-কল্পনা, নতুন নেতৃত্ব নিয়ে চলছে নানা হিসাব নিকাশ। আগামী সম্মেলনে নবীণ-প্রবীণের সমন্বয়ে কমিটি গঠনের চিন্তা আছে আওয়ামী লীগের। গত ২০তম কাউন্সিলে যারা মূল্যায়িত হননি এমন নব্বই দশকের দুঃসময়ের ত্যাগী নেতা এবং ওয়ান ইলেভেনের সময়কালের পরীক্ষিত তরুণরা কমিটিতে অগ্রাধিকার পাচ্ছেন। আর গত কাউন্সিলে কমিটিতে ঠাঁই পাওয়া নতুন নেতাদের বিষয়ে জোরালোভাবে পর্যালোচনা চলছে। গত তিন বছরে দলের জন্য ওই সব নেতার কতটুকু ত্যাগ আছে সে বিষয়টি বিবেচনায় রেখে আগামী কমিটিতে তাদের রাখা-না-রাখার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে বলে দলটির নীতি নির্ধারণী পর্যায় সূত্রে এমনটি আভাস পাওয়া গেছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, আওয়ামী লীগের গত কাউন্সিলে নতুন কমিটিতে বড় ধরনের রদবদল লক্ষ করা গেছে। পুরনোদের অভিজ্ঞতার ঝুলিতে ভাগ বসিয়েছেন নব্বই দশকের তরুণ নেতারা। তৃণমূল থেকেও তুলে আনা হয় বেশকিছু নেতৃত্ব। কার্যনির্বাহী ৮১ সদস্যের মধ্যে নতুন মুখই ছিল ২৯ জন। নতুন কার্যনির্বাহী সংসদে ২৮ সদস্যের মধ্যে ১৮টিতেই নতুন মুখের সঞ্চার ঘটে। নতুন নেতৃত্বের মধ্যে অনেককেই তৃণমূল থেকেও তুলে আনা হয়েছে। কমিটিতে বড় ধরনের চমক আসে সাধারণ সম্পাদক পদে। প্রথমবারের স্থান করে নেন আশির দশকের ছাত্রনেতা ওবায়দুল কাদের। এবারো বড় ধরনের চমকের আভাস পাওয়া গেছে। তবে কোন পদে চমক আছে- এ নিয়ে দলটির শীর্ষ নেতাদের কেউই খোলাসা করতে রাজি হননি।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, নব্বই দশক ও ওয়ান ইলেভেনের ত্যাগী ও পরীক্ষিত নেতারা আগামী কাউন্সিল ঘিরে আশায় বুক বাঁধছেন। গত কাউন্সিলে বঞ্চিত হলেও আগামী কাউন্সিলে মূল্যায়ন করার আশা প্রবল হওয়ায় তাদের মধ্যে প্রাণচাঞ্চল্য দেখা দিয়েছে। প্রবীণ নেতাদের সম্মান দেয়ার ক্ষেত্রেও বঙ্গবন্ধুকন্যা কোনো কার্পণ্য করেন না। সব সময় জ্যেষ্ঠ নেতাদের যথাযথ মূল্যায়ন করেন বলেই শেখ হাসিনা আজ জননেত্রীতে পরিণত হয়েছেন। তবে গত কাউন্সিলে যেসব নতুন মুখ এসেছে তাদের ব্যাপারে পর্যালোচনা চলছে। পদ পেয়েও নিষ্ক্রিয় থাকা ও নানা কারণে বিতর্কিত এমন নেতাদের বিষয়ে দলীয় প্রধান নজর রাখছেন।
আওয়ামী লীগের একাধিক নেতার মতে, ভিশন ২০২১ বাস্তবায়ন ও ২০৪১ সালের মধ্যে দেশকে উন্নত রাষ্ট্র হিসেবে রূপান্তরিত করতে হলে আগামী সম্মেলনে তরুণদের অগ্রাধিকার দেয়া উচিত। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তৃণমূল নেতাকর্মীদের হৃদয়ের স্পন্দন খুব ভালো করেই বোঝেন। আর এ জন্যই আগামী কাউন্সিলে তথ্য-প্রযুক্তির এই যুগে নতুন কমিটিতে তরুণদের অগ্রাধিকার দিয়ে প্রবীণদের সমন্বয় ঘটালে বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়ার কাজ সহজ হবে।
এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের প্রভাবশালী সদস্য অ্যাডভোকেট ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন নয়া দিগন্তকে বলেন, গত কাউন্সিলে নবীণ-প্রবীণের উচ্ছ্বাস ঘটেছে। এবারো সব মিলিয়ে কমিটিতে নবীন-প্রবীণের সমন্বয় থাকবে। সর্বক্ষেত্রে নতুন আবহ সৃষ্টি হবে। নব্বই দশকের ছাত্র নেতৃত্ব ও সম্মিলিত পেশাজীবী পরীক্ষিতরা সুযোগ পাবেন।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, আওয়ামী লীগের সম্মেলন মানেই নেতৃত্বে কিছু পরিবর্তন আসবে, নতুন মুখ আসবে। পারফরম্যান্সের ভিত্তিতে এবার নির্বাহী কমিটি সাজানো হবে। নেত্রীর সাথে আলাপ করে যেটা বুঝেছি- ক্লিন ইমেজ, উজ্জ্বল ভাবমর্যাদা যাদের রয়েছে তারাই নির্বাহী কমিটিতে স্থান পাবেন এবং ভালো পদে যাবেন। তিনি বলেন, দলের দুঃসময়ে যারা আওয়ামী লীগের সংগ্রাম-আন্দোলনে ছিলেন সেসব লোকই আসবে, এদের মধ্যে নতুন মুখও আসবে। যারা বয়সে অপেক্ষাকৃত কম, কেন্দ্রীয় কমিটিতে আসেনি, এমন অনেকেই আসতে পারেন। আশা করছি, নবীন-প্রবীণ নেতাদের সমন্বয়ে পরীক্ষিত ও ত্যাগীদের মূল্যায়ন করে আওয়ামী লীগের নতুন কমিটি গঠিত হবে।