আফগানিস্তানে কী চায় চীন?
আফগানিস্তানে কী চায় চীন? - আফগানিস্তানে কী চায় চীন?
অভ্যন্তরীণ সশস্ত্র সঙ্ঘাত ব্যবস্থাপনা সমীক্ষায় প্রধান শক্তিগুলোর মধ্যে সহযোগিতামূলক শাসন একটি গুরুত্বপূর্ণ গবেষণা বিষয়। এটি সঙ্ঘাত হ্রাস করে শান্তি ছড়িয়ে দিতে পারে। কর্তৃত্ববাদের প্রতি ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের বদ্ধমূল ধারণা আফগানিস্তানে শান্তি প্রতিষ্ঠায় ব্যর্থ হয়েছে। এতে প্রমাণিত হয়েছে, সহযোগিতামূলক শাসনব্যবস্থা কতটা গুরুত্বপূর্ণ।
দায়িত্ব গ্রহণের পর ট্রাম্প আফগানিস্তান থেকে সৈন্য প্রত্যাহারে তার নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি পূরণে কাজ শুরু করেছিলেন। ২০১৭ সালের আগস্টে তিনি প্রকাশ্যে আফগানিস্তান ও দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক নতুন মার্কিন কৌশল ঘোষণা করেন। এতে আঞ্চলিক ব্যবস্থা পুনর্গঠনের ইঙ্গিত ছিল। ২০১৮ সালের জুলাই মাসে ট্রাম্প প্রশাসন তালেবানের সাথে সরাসরি আলোচনার সিদ্ধান্ত নেয়। আফগানিস্তানবিষয়ক সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রদূত জালমি খালিলজাদকে নিয়োগ করা হয় আফগানিস্তান সমস্যা সমাধান করার জন্য। তালেবানের সাথে আলোচনার দায়িত্ব দেয়া হয় তাকে। আলোচনার পর যুক্তরাষ্ট্র ও তালেবান কিছু অগ্রগতি হাসিল করেছিল। ১২ মার্চ খালিলজাদ ঘোষণা করেন যে যুক্তরাষ্ট্র ও তালেবান একটি খসড়া চুক্তিতে উপনীত হয়েছে।
তবে খালিলজাদের খসড়া চুক্তিটি ট্রাম্প প্রশাসনের কাছে ব্যাপকভাবে স্বীকৃতি পায়নি। মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জন বোল্টন যুক্তি দেন যে তালেবান তাদের প্রতিশ্রুতি পূরণ করবে, এমনটা ভরসা করা যায় না। ২ সেপ্টেম্বর কাবুলে একটি বিশাল ট্রাক্টর বিস্ফেরণ তার দাবির যৌক্তিকতা প্রমাণ করে। ৮ সেপ্টেম্বর ট্রাম্প টুইটে জানান যে তিনি আফগান প্রেসিডেন্ট আশরাফ গানি ও সিনিয়র তালেবান নেতাদরে মধ্যে অনুষ্ঠেয় গোপন সভা বাতিল করেছেন। তিনি বলেন, তারা যদি খুবই গুরুত্বপূর্ণ শান্তি আলোচনার সময় যুদ্ধবিরতিতে না সম্মত হয়, তবে সম্ভবত কোনো অর্থপূর্ণ চুক্তিতে পৌঁছার ক্ষমতাও তাদের নেই।
আফগান শান্তিপ্রক্রিয়ায় সময় তালেবান দুটি গ্রুপে বিভক্ত হয়ে পড়েছে। একটি হলো কট্টরপন্থী, অপরটি উদার। কট্টরপন্থীরা শক্তিবলে বিজয় চায়। আর উদারপন্থীরা চায় সংলাপ। ট্রাম্প প্রশাসনের সাথে আলোচনা ভণ্ডুল হয়ে যাওয়ার পর তালেবান প্রতিনিধিদল রাশিয়া ও চীন সফর করে ইঙ্গিত দিয়েছে যে তারা এখনো শান্তির আকাঙ্ক্ষা ছেড়ে দেয়নি। আফগানিস্তানবিষয়ক বিশেষ রুশ দূত জমির কাবুলভের সাথে আলোচনার পর তালেবান প্রতিনিধিদল আফগানিস্তানবিষয়ক বিশেষ চীনা দূত দেং জিযুনের সাথে বৈঠক করেন। কাতারে আফগান তালেবানের মুখপাত্র সোহাইল শাহিন বলেন, চীনা বিশেষ প্রতিনিধি বলেছেন যে আফগান ইস্যুর শান্তিপূর্ণ সমাধানে যুক্তরাষ্ট্র-তালেবান চুক্তি একটি ভালো কাঠামো এবং তারা একে সমর্থন করে। বস্তুত এমন মন্তব্য করে ট্রাম্প প্রশাসনের প্রতি শুভেচ্ছা প্রকাশ করেছে তালেবান, আশাপ্রকাশ করেছে যে যুক্তরাষ্ট্রের সাথে আলোচনা আবার শুরু হবে।
আফগান শান্তিপ্রক্রিয়ায় চীন আন্তর্জাতিক সহযোগিতার মাধ্যমে শান্তি প্রতিষ্ঠাকে অগ্রাধিকার দেয়। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, আফগান কূটনীতিবিদদের প্রশিক্ষণ দিতে যুক্তরাষ্ট্রের সাথে সহযোগিতা করছে চীন, জুলাইতে আফগান শান্তিপ্রক্রিয়া নিয়ে চীন, রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের সাথে যৌথ বিবৃতিতে দিতে পাকিস্তানকে উৎসাহিত করেছে, আফগানিস্তানে সহযোগিতা বাড়াতে সাংহাই সহযোগিতা সংস্থাকে সমর্থন করছে।
আফগানিস্তানের শান্তি চীনের জাতীয় স্বার্থের সাথে সংশ্লিষ্ট। তবে শান্তিপ্রক্রিয়া বাতিল হয়ে যায়, তবে একটি সীমা পর্যন্ত আফগান সশস্ত্র সঙ্ঘাত নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা চীনের রয়েছে। আঞ্চলিক প্রতিরক্ষা দুর্বলতা দূর করার জন্য পাকিস্তান ও তাজিকিস্তানের সাথে সামরিক ও প্রযুক্তিগত সহযোগিতা বাড়াচ্ছে চীন। সীমান্ত ব্যবস্থাপনায় চীন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, মুখায়ব চিহ্নিতকরণ, ড্রোন ও অন্যান্য উচ্চপ্রযুক্তি প্রবর্তন করেছে।
সাধারণভাবে আফগানিস্তানে শান্তি প্রতিষ্ঠায় সহযোগিতামূলক শাসনের বিপুল গুরুত্ব রয়েছে। বিশেষ করে আফগান শান্তিপ্রক্রিয়ায় সহযোগিতা বাড়াতে চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের উচিত তাদের সুবিধাগুলো কাজে লাগানো। এটা কেবল আফগানিস্তানের শান্তির জন্য কল্যাণকর হবে না, সেইসাথে তা হবে চীন ও যুক্তরাষ্ট্র উভয়ের স্বার্থের সাথেও সামঞ্জস্যপূর্ণ।