প্রতিবেশীদের সাথে ভারতের সম্পর্কের অন্তরালে

ঝাঙ জিয়াদং | Oct 04, 2019 09:08 am
প্রতিবেশীদের সাথে ভারতের সম্পর্কের অন্তরালে

প্রতিবেশীদের সাথে ভারতের সম্পর্কের অন্তরালে - ছবি : সংগৃহীত

 

যুক্তরাষ্ট্রে আন্তর্জাতিকবিষয়ক ম্যাগাজিন দি ন্যাশনাল ইন্টারেস্ট সম্প্রতি ‘ভারত যেভাবে প্রতিবেশীদেরকে চীনের প্রভাব থেকে মুক্ত রাখার পরিকল্পনা করছে’ শীর্ষক একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। এতে যুক্তি দেয়া হয়েছে যে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি প্রশাসনের ‘প্রতিবেশী প্রথম’ নীতিতে দেখাচ্ছে যে দক্ষিণ এশিয়ার দেশটি চীনা-প্রস্তাবিত বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভকে (বিআরআই) মোকাবিলা ও দৃঢ় আঞ্চলিক প্রভাব রক্ষা করার চেষ্টা করছে।

এই নীতি মোদির দ্বিতীয় মেয়াদের কৌশলগত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বিবেচিত হচ্ছে। পুনঃনির্বাচিত হওয়ার পরপরই মোদি তার প্রথম বিদেশী সফর হিসেবে দুই প্রতিবেশী দেশ, মালদ্বীপ ও শ্রীলঙ্কা সফর করেন। পরে তিনি ভুটান সফর করেন। এটা ছিল এই তিন দেশের সাথে আরো ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার প্রয়াস।
ভারতের ‘প্রতিবেশী প্রথম’ পররাষ্ট্রনীতি গ্রহণ করার বেশ কয়েকটি কারণ রয়েছে।
প্রথমত, ভারত হলো দক্ষিণ এশিয়ার ভৌগোলিক কেন্দ্র। এই অঞ্চলের প্রায় সব দেশের সাথে তার সীমান্ত রয়েছে। অন্য কোনো দেশ ভারতের মতো কোনো দক্ষিণ এশিয়ার দেশ ‘প্রতিবেশী প্রথম’ নীতি গ্রহণ করে তবে তা দক্ষিণ এশিয়ায় ভারতের কেন্দ্রীয় অবস্থানকে আরো শক্তিশালী করবে।

দ্বিতীয়ত, দক্ষিণ এশিয়ার সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ ছিল ব্রিটিশ উপনিবেশ। উপনিবেশ না থাকা কয়েকটি স্বাধীন দেশও কোনো না কোনোভাবে ব্রিটিশ প্রভাবে ছিল। স্বাধীন হওয়ার পর ব্রিটিশ ভূখণ্ডের বেশির ভাগ এলাকা করায়ত্ত করে ভারত। তারা ব্রিটিশ প্রভাব ও নেতৃত্বও অনেকাংশে আত্মস্ত করে নেয়। আজকের ভারতের মানচিত্র এখনো ব্রিটিশ লোকজনের নামে রয়েছে। এমনকি ভারতীয় সেনাবাহিনী পর্যন্ত প্রায়ই ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের মতো আচরণ করে।
তৃতীয়ত, সংস্কৃতি, ভাষা, ধর্ম ও প্রথার দিক থেকে ভারত দক্ষিণ এশিয়ার অনেক দেশের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। ভারত বিশ্বাস করে, সে কেবল ভৌগোলিক বা রাজনৈতিক কেন্দ্রই নয়, সে এই অঞ্চলের সাংস্কৃতিক কেন্দ্রও। ইসলাম ছাড়া অন্যান্য ধর্মের উৎসও ভারত।
এই প্রেক্ষাপটে ভারতের ‘প্রতিবেশী প্রথম’ নীতি তার কূটনৈতিক এজেন্ডার পরিভাষায় প্রতিবেশী দেশগুলোর সাথে সম্পর্ককে অগ্রাধিকারপূর্ণ করে না। এর বদলে অন্যান্য প্রতিবেশ দেশও ভারতের মতো প্রতিবেশী প্রথম নীতির কথা বলে।

ভারত অনেক দিন ধরেই প্রতিবেশী প্রথম নীতি অনুসরণ করলেও এতে ধারাবাহিকতার অভাব দেখা যাচ্ছে। ভারতকে প্রায়ই ভয় দেখানোর কৌশল অবলম্বন করতে দেখা যায়। ছোট ও মাঝারি আকারের দেশগুলোতে প্রায়ই হস্তক্ষেপ করে ভারত।

উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে চীনের সাথে অবাধ বাণিজ্যচুক্তির পর ভারতের পররাষ্ট্রবিষয়ক মুখপাত্র রাভিশ কুমার বলেন, ঘনিষ্ঠ ও বন্ধুত্বপূর্ণ প্রতিবেশী হিসেবে মালদ্বীপ ভারতের প্রথম নীতিবিষয়ক উদ্বেগের প্রতি স্পর্শকাতর থাকবে। ২০১৮ সালের জুলাই মাসে শ্রীলঙ্কা যখন ৯৯ বছরের জন্য হাম্বানতোতা বন্দরটি চীনের কাছে হস্তান্তর করে, তখন কুমার বলেছিলেন, এই অঞ্চলের নিরাপত্তাবিষয়ক সমস্যা নিয়ে আমরা অব্যাহতভাবে শ্রীলঙ্কার সাথে কথা বলছি এবং আশা করছি, শ্রীলঙ্কা আমাদের নিরাপত্তা উদ্বেগ ও স্পর্শকাতরতাগুলোর প্রতি নজর রাখবে।
ভারতও তার আশপাশের প্রতিবেশীদেরকে সহায়তার অনেক প্রস্তাব দিয়েছে। ২০১৯ সালেও ভুটান ছিল ভারতের বৃহত্তম সহায়তাপ্রাপ্ত দেশ। ভারতের আর্থিক সহায়তা পেয়েছে বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা, নেপাল ও মালদ্বীপ।

স্বাধীনতার পর থেকে এশিয়ার দেশগুলো প্রতিবেশী দেশগুলোর সাথে দৃঢ় সম্পর্ক রক্ষা করতে চেয়েছে ভারত। একুশ শতকে চীনের বিশেষ করে বিআরআইসহ নতুন নতুন পদক্ষেপের ফলে ভারত তার ‘প্রতিবেশী প্রথম’ নীতি নতুন করে শুরু করেছে। প্রতিবেশীদের মধ্যে চীনা প্রভাব হ্রাসই এর মূল লক্ষ্য।

ভারত পরিমণ্ডলে থাকা আঞ্চলিক পরাশক্তিগুলো এবং ছোট ও মাঝারি আকারের দেশগুলোর মধ্যকার সম্পর্ক জটিল। একদিকে এসব ছোট ও মাঝারি আকারের দেশগুলো পরাশক্তিগুলোর কাছ থেকে অর্থনৈতিক স্বার্থ হাসিল করতে চায়। অন্যদিকে এসব ছোট দেশ কোনো পরাশক্তির প্রভাবে থাকতে নারাজ। ফলে দক্ষিণ এশিয়া থেকে বইরের শক্তিগুলোর প্রভাব দূর করার ভারতের উদ্দেশ্য যত বেশি হবে ছোট ও মাঝারি দেশগুলোর এই অঞ্চলের বাইরের দেশগুলোর সাথে আরো ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করে ভারতের বিপরীতে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠার আগ্রহ তত বৃদ্ধি পাবে। সীমিত অর্থনৈতিক সামর্থ্য নিয়ে এই সাঙ্ঘর্ষিক অবস্থা দূর করা ভারতের জন্য কঠিন হবে। সেইসাথে প্রতিবেশীদের সাথে নিয়মিত সম্পর্কে চড়াই-উৎড়াই এড়ানোও ভারতের জন্য জটিল কাজ হবে।
গ্লোবাল টাইমস


 

ko cuce /div>

দৈনিক নয়াদিগন্তের মাসিক প্রকাশনা

সম্পাদক: আলমগীর মহিউদ্দিন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সালাহউদ্দিন বাবর
বার্তা সম্পাদক: মাসুমুর রহমান খলিলী


Email: online@dailynayadiganta.com

যোগাযোগ

১ আর. কে মিশন রোড, (মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন), ঢাকা-১২০৩।  ফোন: ৫৭১৬৫২৬১-৯

Follow Us