কাশ্মিরিদের আপেল বিদ্রোহ
কাশ্মিরিদের আপেল বিদ্রোহ - ছবি : সংগৃহীত
কাশ্মিরের কৃষকেরা ইচ্ছাকৃতভাবেই তাদের আপেল পচিয়ে ফেলছেন। ভারত সরকারের প্রতি ক্রমবর্ধমান তিক্ততার রেশ ধরে বিক্ষুব্ধ অঞ্চলের সবচেয়ে আকর্ষণীয় রফতানি পণ্যটি তারা এভাবেই নষ্ট করছেন।
কাশ্মিরের স্বায়ত্তশাসন বাতিল করার প্রেক্ষাপটে নয়া দিল্লি আগস্ট থেকে আরো হাজার হাজার সৈন্য মোতায়েন করেছে। এছাড়া যোগাযোগ পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন করে ফেলা হয়েছে। ফলে কাশ্মিরিরা এখন বাইরের দুনিয়া থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন।
রাজনৈতিক নেতা ও হাজার হাজার বেসামরিক লোককে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদের ওপর নির্যাতন চালানো হচ্ছে বলেও অভিযোগ রয়েছে। কর্তৃপক্ষ অবশ্য এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছে। তবে কাশ্মির ফুঁসে ওঠছে।
ক্রোধে কিংবা স্থানীয় বিদ্রোহীদের আহবানে সাড়া দিয়ে- যেভাবেই হোক না কেন, কাশ্মিরের বিশেষ মর্যাদা বাতিল করার ভারতীয় পদক্ষেপের নিন্দা করে কৃষকেরা ইচ্ছাকৃতভাবে স্থানীয় অর্থনীতির প্রধান উপাদান আপেলই ধ্বংস করে দিচ্ছে।
উর্বর হিমালয় অঞ্চলে সাধারণত প্রতি বছর কোটি কোটি ডলারের আপেল উৎপাদিত হয়। প্রায় অর্ধেক কাশ্মিরি পরোক্ষ বা প্রত্যক্ষভাবে আপেল চাষের সাথে যুক্ত।
মধ্য সোফিয়ান জেলার আপেলচাষি গোলাম নবি মালিক ও তার ভাই সাধারণ বছরে ৭,০০০ বাক্স আপেল বিক্রি করেন। সারা ভারতে ছড়িয়ে পড়ে তাদের আপেল। এ থেকে তাদের আয় হয় প্রায় এক লাখ মার্কিন ডলার।
তাদের বাগান এখন অলস পড়ে আছে। আপেলের ভারে গাছগুলো নয়ে আছে। মালিক বলেন, গাছেই নষ্ট হোক আপেল।
সর্বশেষ বিক্ষোভের মধ্যে মালিক বলেন, আপেল তোলা হলে ভারত সরকার সারা বিশ্বকে বলতে পারবে যে কাশ্মিরের সবকিছু ঠিক আছে। তিনি বলেন, বাস্তবে কোনো কিছুই ভালো নেই।
বিদ্রোহীরা চিঠি বিতরণ করেছে, মসজিদের বাইরে পোস্টার লাগিয়েছে যেন আপেল বাগান মালিকেরা ফসল না তোলেন। তারা প্রতিরোধ আন্দোলনে যোগ দিতে তাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
এ ধরনের একটি নোটিশে বলা হয়েছে, আপেল উৎপাদনকারী ও ছাত্ররা চলতি বছর কোরবানি দিতে প্রস্তুত। তারা শহিদদের রক্তের সাথে বেইমানি করবে না।
স্থানীয় এক বিদ্রোহী কমান্ডারের সই করা নোটিশটি একটি কাঠের পোস্টে গেঁথে দেয়া হয়েছে।
অনেক চাষি জানিয়েছেন, তারা এই আন্দোলনে যোগদানে ইচ্ছুক। অবশ্য তারা এর বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির দলের হামলার মুখেও রয়েছেন বলে জানান।
এক গ্রামে বিদ্রোহীদের সাথে যোগ দেয়া সাবেক এক পুলিশ অফিসার আপেল পাড়ার জন্য তার নিজের পরিবার খালি বাক্স নিয়ে এলে তিনি সেগুলোতে আগুন ধরিয়ে দেন। বিদ্রোহীরা জ্বালানি স্টেশনগুলোর ওপরও চাপ সৃষ্টি করে আপেল পরিবহনে ব্যবহৃত ট্রাকে জ্বালানি না দিতে বাধ্য করছে।
তবে স্থানীয়রা জোর দিয়ে বলছে, কেবল বিদ্রোহীদের কারণেই তারা চলতি বছরের বাম্পার ফলনের সুবিধা গ্রহণ করছেন না, বিষয়টি এমন নয। মালিক বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে আমরা কেবল আপেল না তুলেই আমাদের প্রতিবাদ জানাতে পারি।
লোকজন জানান, তারা ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনীকেই সবচেয়ে বেশি ভয় পান। এসব বাহিনী প্রায়ই রাতের বেলায় এসে তরুণদের তুলে নিয়ে যাচ্ছে।
এক গ্রামবাসী বলেন, বিদ্রোহীদের নিয়ে ভয় আছে। কিন্তু রাষ্ট্রীয় বাহিনীর ভয় আরো বেশি। তিনি প্রতিশোধের ভয় নাম পর্যন্ত প্রকাশ করতে রাজি হননি।
মোদি বলছেন, গত ৩০ বছরে ভারতবিরোধী আন্দোলনে হাজার হাজার লোক নিহত হওয়ার প্রেক্ষাপটে তিনি সন্ত্রাবাদ, সহিংসতা, বিচ্ছিন্নতাবাদ ও দুর্নীতির দুষ্টচক্র অবসানের জন্য এই পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন।
নয়া দিল্লি বলছে, বেশির ভাগ কাশ্মিরি তাদের পদক্ষেপকে সমর্থন করে। তবে তারা পাকিস্তানের মদতপুষ্ট সন্ত্রাসীদের ভয়ে দূরে রয়েছে। সরকার বলছে, তাদের গৃহীত পদক্ষেপগুলো কাজ করতে শুরু করছে।
নয়া দিল্লির মথেরাম কৃপালনি বলেন, আপেল বাজারে সরবরাহ কমেছে মাত্র ২৫ ভাগ। ক্রেতাদের কাছে সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো ফোন না থাকা।
তবে অনেক বড় উৎপাদনকারী সরকারি সহায়তা গ্রহণ করতে অস্বীকার করেছেন। সোফিয়ান ও কাশ্মিরের অন্যান্য স্থানের আপেল বাজারগুলো খালি পড়ে আছে।
স্থানীয় ফল উৎপাদনকারী সমিতির প্রধান বশির আহমদ বাশার বলেন, দোকানপাট না খুললে সেগুলো গুঁড়িয়ে দেয়া হবে বলে কর্তৃপক্ষ হুমকি দেয়া সত্ত্বেও বাজার এখনো ফাঁকা পড়ে আছে।
এএফপি