ট্রাম্পের ডিগবাজি : মোদি আউট, ইমরান ইন
ট্রাম্পের ডিগবাজি : মোদি আউট, ইমরান ইন - ছবি : সংগৃহীত
মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিউস্টনের সভায় ভারতীয় প্রেসিডেন্ট নরেন্দ্র মোদির উচ্ছ্বসিত প্রশংসার এক দিন পর পালা আসে ইমরান খানকে বিপুলভাবে সাদরে গ্রহণ করার। ইমরান খানের পাশে বসে ডোনাল্ড ট্রাম্প পাকিস্তানের বিরুদ্ধে মোদির ‘খুবই আগ্রাসী’ অবস্থান নিয়ে তার বিস্ময় প্রকাশ করেন, পাকিস্তান সন্ত্রাসবাদের কেন্দ্রবিন্দু বলে ভারত জোর দিয়ে যে বক্তব্য দিয়ে যাচ্ছে, তা মেনে নিতে অস্বীকৃতি জানান।
রোববার সফররত ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী মোদির সম্মানে ৫০ হাজারের বেশি ভারতীয় আমেরিকান যে সভার আয়োজন করেছিল, তাতে যোগ দিতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিউস্টনে উড়ে যান। তিনি ‘চরমপন্থী ইসলামি মৌলবাদের’ বিরুদ্ধে লড়াই করার প্রতিশ্রুতির জন্য দর্শকদের কাছ থেকে স্ট্যান্ডিং ওভেশন লাভ করেন। ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীও দর্শকদের অনুরোধ করেন সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে তার যুদ্ধের জন্য দ্বিতীয় মেয়াদে তাকে সমর্থন দিতে।
প্রথম সারিতে ট্রাম্পকে বসিয়ে মোদি বলেন যে কিছু লোক আছে, যারা তাদের দেশ শাসন করতে পারে না, তারা কাশ্মিরেরর উন্নয়নে অসুখী, তারা সন্ত্রাসবাদ লালন করে। তিনি পাকিস্তানের নাম উল্লেখ করেননি। তবে তিনি পাকিস্তানের কথাই যে উল্লেখ করেছেন, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। যুক্তরাষ্ট্রের ৯/১১ বা মুম্বাইয়ের ২৬/১১- যাই হোক না কেন, ষড়যন্ত্রকারীরা কোথা থেকে এসেছে? সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে চূড়ান্ত যুদ্ধ করার সময় এখনই। মোদির হিন্দিতে দেয়া বক্তৃতা শুনতে ট্রাম্প অনুবাদ যন্ত্র ব্যবহার করছিলেন।
এক দিন পর নিউ ইয়র্কে জাতিসঙ্ঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের ফাঁকে ট্রাম্প বসেন ইমরানের পাশে, তিন মাসের মধ্যে দ্বিতীয়বারের মতো তার সাথে কথা বলেন। মঙ্গলবার মোদির সাথে ট্রাম্পের আনুষ্ঠানিক প্রতিনিধি পর্যায়ের বৈঠক করার কথা।
খুবই আগ্রাসী বক্তব্য
সাংবিধানিক মর্যাদা পরিবর্তনের পর ভারতের নিরাপত্তা বিধিনিষেধের কারণে কাশ্মিরেরর মানবাধিকার পরিস্থিতিতে তিনি উদ্বিগ্ন কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে ট্রাম্প ‘হাউডি মোদি’ অনুষ্ঠানে মোদির মন্তব্য উল্লেখ করেন।
তিনি বলেন, আমাকে এ ধরনের কথা শুনতে হবে তা আমি জানতাম না। আমি সেখানে বসেছিলাম, আমি গতকাল ভারতের প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে খুবই আগ্রাসী বক্তব্য শুনেছি। ওই কক্ষে তা খুবই ভালোভাবে গৃহীত হয়েছে।
হিউস্টন এনআরজি স্টেডিয়াম ছিল ওই কক্ষ। ৫৯ হাজার লোকে পরিপূর্ণ ছিল স্থানটি।
তিনি কয়েকবার বলেন যে মোদি ‘খুবই আগ্রাসী’ বক্তব্য দিয়েছেন।
তবে তিনি বলেন, তিনি আশা করছেন যে ভারত ও পাকিস্তান উভয়ের জন্য কল্যাণকর ও চমৎকার হবে এমন কিছু করবে দুই দেশ মিলে।
এর আগে কাশ্মিরেরর মানবাধিকার পরিস্থিতি সম্পর্কে এক প্রশ্নের জবাবে ট্রাম্প বলেন, তিনি আশাবাদী। তিনি সম্ভব সবকিছু করবেন বলেও জানান। তিনি বলেন, আমি চাই তা মানবিক হোক। আমি চাই প্রত্যেকের সাথেই ভালো আচরণ করা হোক।
পাকিস্তান সন্ত্রাসবাদের কেন্দ্রভূমি বলে মোদি যে বক্তব্য দিয়েছেন, তার সাথে দ্বিমত পোষণ করেন কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে ট্রাম্প আপত্তি জানান। তিনি ইঙ্গিত দেন যে তিনি এই মর্যাদা ইরানকে দিতেই চান। তিনি বলেন, আমি ইরানের দিকেই ইঙ্গিত করছিলাম। আমি বলতে চাইছিলাম যে এই দেশই হলো বিশ্বের এক নম্বর সন্ত্রাসী দেশ। আমরা যে পরমাণু চুক্তি করেছিলাম, তাতে তাতে কাজ হয়ীন।
ইমরান খানকে ‘মহান নেতা’, ‘ভালো মানুষ’ ও ‘ভালো অ্যাথলেট’ হিসেবেও প্রশংসা করেন ট্রাম্প। তিনি বলেন, আমি শুনেছি যে তারা সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে তারা দারুণ অগ্রগতি লাভ করেছে। আর এই নেতা, তিনি মহান নেতা, আমি মনে করি তিনি বিপুল অগ্রগতি চান। অন্য কোনো সমাধান নেই।
পাকিস্তানের সাথে তেমন সদাচরণ করা হয়নি, এমন মন্তব্যের সাথে একমত প্রকাশ করেন ট্রাম্প। তিনি আরো বলেন, তার পূর্বসূরীরা ইসলামাবাদের সাথে ভালো আচরণ করেনি। এই প্রথম আপনারা এ ধরনের ভালো আচরণ পাচ্ছেন। আমি একমত। অনেক অসততা ছিল। তারা পাকিস্তানের সাথে খুবই খারাপ আচরণ করেছে। আমার অবস্থানের লোকজন পাকিস্তানের সাথে খুবই খারাপ আচরণ করেছে।
তিনি উল্লেখ করেন যে পাকিস্তানও যুক্তরাষ্ট্রের সাথে খুব ভালো আচরণ করেনি। তবে এর জন্য যুক্তিও হয়তো রয়েছে। আমি মনে করি, পাকিস্তানের একটি যুক্তি ছিল। আমার কাছে আসা লোকজন বলেনি যে তারা কী করছে।
ট্রাম্প যখন ২০১৭ সালে নতুন সাউথ এশিয়া স্ট্র্যাটেজি প্রকাশ করেন, তখন আফগানিস্তানকে টার্গেট করা সন্ত্রাসী গ্রুপগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বলে পাকিস্তানকে। তবে পাকিস্তানের কঠোর অবস্থান পরিস্থিতিতে নমনীয় করতে থাকে। কারণ তালেবানকে আলোচনার টেবিলে নিয়ে আসার জন্য পাকিস্তানের প্রয়োজন হয়ে পড়ে যুক্তরাষ্ট্রের।
চলতি মাসের প্রথম দিকে যুক্তরাষ্ট্র-তালেবান শান্তি আলোচনা ভেঙে গেলেও এজন্য ট্রাম্পের টুইটে ইমরান খানকে দায়ী করা হয়।
তবে এবার তিনি পাকিস্তানি মিডিয়ার লোকজনের উদ্দেশে বলেন, আমার মনে হয় না যে অতীতের কোনো প্রেসিডেন্ট আমার মতো করে পাকিস্তানের প্রতি ইতিবাচক ছিল।
তিনি আরো বলেন, ভারতের সাথেও তার খুব ভালো সম্পর্ক রয়েছে। রোববার তিনি ইন্ডিয়ান আমেরিকানদের উদ্দেশে বলেছিলেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের চেয়ে ভালো বন্ধু ভারত আর কখনো পায়নি।
আর ইমরান খানের দিকে তাকিয়ে ট্রাম্প বলেন, তিনি ‘এই ভদ্রলোককে বিশ্বাস করেন। আমি পাকিস্তানকে বিশ্বাস করি। নিউ ইয়র্কে বসবাসকারী অনেক পাকিস্তানি বন্ধু আছে আমার।
ট্রাম্প বারবার বলেন, ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে মধ্যস্ততা করতে তিনি প্রস্তুত। মজার ব্যাপার হলো, তিনি তার নির্বাচনী প্রচারণায়ও এ কথা বলেছিলেন।
গত জুলাই মাসে ইমরান খানের সাথে আগের বৈঠকে ট্রাম্প এমন দাবিও করেছিলেন যে মোদিই তাকে কাশ্মির প্রশ্নে মধ্যস্ততা করতে বলেছেন। ভারত সাথে সাথে তা খারিজ করে দেয়।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেন যে মধ্যস্ততা করার তার প্রস্তাবটি এখনো বহাল আছে। তবে ভারত রাজি না হলে কোনোই অগ্রগতি হবে না।