কিভাবে বুঝবেন অর্শ্ব বা পাইলস
কিভাবে বুঝবেন অর্শ্ব বা পাইলস - ছবি : সংগ্রহ
মলাদ্বারের নিম্নাংশ বা মলদ্বারের শিরাগুলো ফুলে গেলে সেগুলোকে সাধারণত অর্শ্ব বা পাইলস বলে। এই অর্শ্ব মলদ্বারের অভ্যন্তরেও হতে পারে আবার বাইরেও হতে পারে।
আক্রান্ত ব্যক্তির পায়খানের সাথে রক্ত বের হয়। কখনো কখনো একদিন রক্ত দেখা দিলে আবার ছয় মাস পর রক্তের দেখা মেলে। দীর্ঘ মেয়াদি কোষ্ঠকাঠিন্য বা ডায়রিয়া শাকসবজি ও অন্যান্য আঁশযুক্ত খাবার এবং পানি কম খাওয়াসহ বিভিন্ন কারণে অর্শ্ব বা পাইলস দেখা দিতে পারে।
সচেতনতা ও সঠিক সময়ে চিকিৎসা নিলে এ রোগ থেকে মুক্তি দিতে পারে।
পাইলসের উপসর্গগুলো কী
পাইলস আক্রান্ত হলে পায়খানার সঙ্গে তাজা রক্ত যায়। মুরগি জবাই করলে যেমন তাজা রক্ত দেখা যায় তেমন রক্ত পায়খানার সাথে ঝড়তে দেখা যায়। ফোঁটা ফোঁটা রক্ত বের হতে দেখা যায়।
এ রোগে আক্রান্ত হলে বিভিন্ন রকম উপসর্গ দেখা দিতে পারে। একদিন রক্ত বের হলে ৬ মাস পর আবার বের হতে থাকে। দিনে দিনে এটা ৬ মাস থেকে তিন মাস, ১ মাস, ১৫ দিন,৭ দিন এভাবে আক্রান্ত হওয়ার সময় যত বাড়ে রক্ত বেশি ঝড়তে থাকে।
অনেক সময় মলদ্বারের ভেতর থেকে মাংসপিণ্ড বাইরে বের হয়ে আসে। এটি আবার অনেকেই আঙুল দিয়ে ভেতরে ঢুকিয়ে দেয়। এমন অবস্থা হলে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ দিতে হবে।
অনেক সময় রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে দেওয়ালে পোস্টারে দেখা যায়, অর্শ্ব বা পাইলসের সু চিকিৎসার দেয়া হয়। এছাড়া কবিরাজি চিকিৎসার মাধ্যমে পাইলসের শতাভাগ ভালো হয় বলেও প্রতিশ্রুতি আছে।
আমাদের দেশে শিক্ষার হার তুলনামূলক কম। সচেতন মানুষের সংখ্যাও কম। এ মানুষগুলো এমন পোস্টার দেখে করিবাজি চিকিৎসা নিয়ে থাকে।
করিরাজ পাইলসের চিকিৎসার নামে মলদ্বারে এসিড দেয়। যা স্বাস্থ্যে জন্য অনেক ক্ষতি। এমন এসিড দেয়া অনেক রোগী আমার চিকিৎসা করতে হয়েছে। এটাকে অপচিকিৎসা বলে থাকি।
এছাড়া, চিকিৎসার নামে অনেকে মলদ্বারে পাউডার দেয়। ফলে মলদ্বারের আশপাশে পচন ধরে। এটাকে অপচিকিৎসা বলে। এমন চিকিৎসা জীবনের জন্য হুমকি। সবার উদ্দেশে বলছি, পাইলস রোগীদের জন্য আমাদের দেশে অনেক ভালো চিকিৎসা আছে।
পাইলসের প্রাথমিক চিকিৎসা কী
রোগীর অবস্থা কেমন আছে সেটা আগে আমরা পরীক্ষা করে নিই। প্রথমে আমাদের কাছে চিকিৎসা নিতে আসলে কোলনস্কপি করে থাকি। এরপর সেই অনুযায়ী চিকিৎসা দিয়ে থাকি।
রোগটি প্রাথমিক পর্যায়ে থাকলে আমরা নিয়মিত বেশি করে শাক-সবজি খেতে বলি। সেটি অনুস্মরণ করলে ঠিক হয়ে যায়। এছাড়া বেশি করে পানি খাওয়া ও ফলমূল খেলেও প্রাথমিক পাইলস ভালো হয়ে যায়।
পাইলস রোগে আক্রান্ত হলে করণীয় কী
কোষ্ঠকাঠিন্য যেন না হয় সে বিষয়ে সতর্ক থাকা এবং নিয়মিত মলত্যাগ করা। পর্যাপ্ত পরিমাণে শাকসবজি ও অন্যান্য আঁশযুক্ত খাবার খাওয়া এবং পানি (প্রতিদিন ৮-১০ গ্লাস) পান করা।
সহনীয় মাত্রার অধিক পরিশ্রম না করা। রোজ ৬-৮ ঘণ্টা ঘুমানো। টয়লেটে অধিক সময় ব্যয় না করা ইত্যাদি।
পাইলস কখন অপারেশন করাতে হয়
বেশির ভাগ দেখা যায় ১০ থেকে ১২ বছর পাইলস আক্রান্ত রোগী আমাদের কাছে চিকিৎসা নিতে আসে। তখন বেশির ভাগ রোগীকে অপারেশন করতে হয়। অপারেশনের বেশির ভাগ রোগী ভালো হয়ে যায়। সঠিক সময় চিকিৎসা নিলে অপারেশন ছাড়াই পাইলস ভালো হয়।
লেখক : বৃহদন্ত্র ও পায়ুপথ বিশেষজ্ঞ, প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান, (অব) কলোরেকটাল সার্জারী বিভাগ, বিএসএমএমইউ, ঢাকা।
চেম্বার : ইডেন মাল্টি-কেয়ার হসপিটাল, ৭৫৩, সাতমসজিদ রোড, (ষ্টার কাবাব সংলগ্ন) ধানমন্ডি, ঢাকা। ফোন : ০১৭৫৫৬৯৭১৭৩-৬