অস্ত্রবিরতি বাতিল মিয়ানমার সামরিক বাহিনীর
অস্ত্রবিরতি বাতিল মিয়ানমার সামরিক বাহিনীর - ছবি : সংগৃহীত
মিয়ানমার সামরিক বাহিনী কচিন ও শান রাজ্যে স্বঘোষিত অস্ত্রবিরতির মেয়াদ বাড়ায়নি। ওই অঞ্চলের জাতিগত সশস্ত্র গ্রুপগুলো, বিশেষ করে সাম্প্রতিক মাসগুলোতে ক্রমবর্ধমান হারে সঙ্ঘাতে নিয়োজিত তিনটি গ্রুপ দেশভিত্তিক যুদ্ধবিরতি চুক্তির (এনসিএ) প্রতি আগ্রহ প্রদর্শন না করায় এই পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে বলে সামরিক বাহিনী জানিয়েছে।
এই তিনটি গ্রুপ হচ্ছে আরাকান আর্মি (এএ), তাঙ ন্যাশনাল লিবারেশন আর্মি (টিএনএলএ) ্ মিয়ানমার ন্যাশনাল ডেমোক্র্যাটিক অ্যালায়েন্স আর্মি (এমএনডিএএ)। এই তিন গ্রুপই সরকারের বিরুদ্ধে লড়াই করছে, তারা এনসিএতে সই না করা নর্দার্ন অ্যালায়েন্সের সদস্য।
গ্রুপ তিনটি গত ২০ সেপ্টেম্বর তাদের নিজস্ব একতরফা যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে রাখাইন রাজ্যের বুথিদং টাউনশিপে সামরিক সদরদফতরে হামলা চালায়। মিয়ানমার সামরিক বাহিনী এর নিন্দা জানায়।
সামরিক বাহিনীর মুখপাত্র ব্রিগেডিয়ার জেনারেল জাও মিন তুন সোমবার দি ইরাবতীকে জানান, সামরিক বাহিনী রাষ্ট্রীয় কাজে নিয়োজিত একটি আইনসম্মত প্রতিষ্ঠান। আমরা এক কথা মুখে বলে অন্য কাজ করতে পারি না। আমরা না করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে সেটাই করতে পারি না। আমরা মিথ্যা বলতে পারি না।
তিনি বলেন, নর্দার্ন অ্যালায়েন্সের কাজ দেখে মনে হয়, তারা এনসিএ সই করতে আগ্রহী নয়।
মিয়ানমার সামরিক বাহিনী গত ডিসেম্বরে মিয়ানমারের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করেছিল। তবে রাখাইন রাজ্যে তারা এএর সাথে লড়াই করতে থাকায় এই স্থান তাতে অন্তর্ভুক্ত ছিল না। মিয়ানমার সেনাবাহিনীর এর কারণ হিসেবে আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মির হুমকির কথা বলেছিল।
গত ৩০ এপ্রিল মিয়ানমার সামরিক বাহিনী আরো দুই মাসের জন্য অস্ত্রবিরতি সম্প্রসারিত করেছিল। এর আগে তারা ওই এলাকার জাতিগত সশস্ত্র গ্রুপগুলোর সাথে আলোচনা করেছিল। এরপর দ্বিতীয় দফা আলোচনার পর ৩০ জুন তা বাড়ানো হয়। পরে তা আরো দুই মাস বাড়ানো হয়।
গত ৩১ আগস্ট কচিন ইন্ডিপেডেন্স আমি, টিএনএলএ, এমএনডিএএ, এএ ও সরকার ও সামরিক বাহিনীর প্রতিনিধিরা শান রাজ্যের কেঙতুংয়ে মিলিত হয়েছিল। এখানে সামরিক বাহিনী ২১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত একতরফা অস্ত্রবিরতির কথা ঘোষণা করেছিল।
আর ১৭ সেপ্টেম্বরের আলোচনার আগে সরকারি মুখপাত্র ইউ জাও হতেত জোর দিয়ে বলেছিলেন যে সঙ্ঘাত বন্ধে এই আলোচনা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তবে ওই আলোচনায় কোনো সাফল্য আসেনি।
সামরিক মুখপাত্র বলেন, কোনো ফলাফলই আসেনি। শান্তির জন্য উৎসাহজনক কিছুই পাওয়া যায়নি।
গত সপ্তাহে গ্রুপ তিনটি চলতি বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত একতরফা যুদ্ধবিরতির কথা ঘোষণা করেছিল। তারা আশা করেছিল, এই সময় পর্যন্ত শান্তি আলোচনা এগিয়ে নেয়া যাবে।
টিএনএলএ জানিয়েছে, মিয়ানমার সামরিক বাহিনী আগেও যুদ্ধবিরতি বাড়িয়েছিল। কিন্তু তাতে এই এলাকায় শান্তি প্রতিষ্ঠিত হয়নি।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক ইউ মঙ মঙ সো বলেন, যুদ্ধ বন্ধ করার জন্য সৈন্য মোতায়েন একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সৈন্য মোতায়েন নিয়ে কোনো সমঝোতা না হওয়া পর্যন্ত সঙ্ঘাত অব্যাহত থাকবে। তাছাড়া সংশয় ও অবিশ্বাসও বিরাজ করবে। কেবল আলোচনার মাধ্যমেই এসব অবসান করা সম্ভব।
দি ইরাবতী