সরকারের শুদ্ধি অভিযান : কী করবে বিএনপি?
সরকারের শুদ্ধি অভিযান : কী করবে বিএনপি? - ছবি : সংগ্রহ
দুর্নীতি, মাদক ও জুয়া ব্যবসার সাথে জড়িত আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের নেতাদের বিরুদ্ধে সরকারের হার্ডলাইন সূক্ষ্মভাবে পর্যবেক্ষণ করছে বিএনপি। হঠাৎ করেই নিজ দলে এই শুদ্ধি অভিযানের কারণ আসলেই কী দুর্নীতি কিংবা মাদক মূলোৎপাটন, না এর পেছনে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য আছে তা বোঝার চেষ্টা করছে বিএনপির হাইকমান্ড। দলটির সিনিয়র একাধিক নেতা আলাপকালে বলেছেন, এমনি এমনিই এই অভিযান শুরু হয়নি। এর পেছনে সুনির্দিষ্ট অভ্যন্তরীণ কোনো কারণ থাকতে পারে। আবার নানামুখী চাপেও সরকার এই অভিযান চালাতে বাধ্য হতে পারে।
দুর্নীতির দায় নিয়ে ইতোমধ্যে সরকারের পদত্যাগ দাবি করেছে বিএনপি। একইসাথে তারা দ্রুত সময়ের মধ্যে নতুন নির্বাচনের প্রসঙ্গও সামনে নিয়ে এসেছে।
বিএনপি নেতারা বলেছেন, দীর্ঘদিন ধরে সরকারের রন্ধ্রে রন্ধ্রে দুর্নীতির যে কথা তারা বলে আসছিলেন, নিজ দলের নেতাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের মধ্য দিয়ে সরকার সেটা কার্যত স্বীকার করে নিয়েছে।
চাঁদাবাজির অভিযোগে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে ছাত্রলীগের সভাপতি শোভন ও সাধারণ সম্পাদক রাব্বানীর পদ কেড়ে নেয়ার পর, গত চার দিন ধরে চলছে মাদক ও জুয়ার সাথে জড়িত আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠন বিশেষ করে যুবলীগের নেতাদের বিরুদ্ধে অভিযান। যুবলীগের শীর্ষ পদধারী একাধিক নেতাকে ইতোমধ্যে গ্রেফতার করা হয়েছে। অবৈধ উপায়ে অর্জিত টাকার খনি এদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। হঠাৎ করে শুরু হওয়া এই অভিযানই এখন দেশজুড়ে সাধারণ মানুষ ও রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচনার মূল ইস্যুতে পরিণত হয়েছে।
জানা গেছে, সরকারি দলের ভেতরের এই দুর্নীতির ইস্যুটিকে রাজনৈতিকভাবে কাজে লাগাতে চায় বিএনপি। দেশব্যাপী সভা-সমাবেশ-সেমিনারের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ নেতাদের মাদক ও জুয়ার সাথে সংশ্লিষ্টতা তুলে ধরে সরকারের বিরুদ্ধে তারা জনমত গঠন করবে। চলতি মাসে অনুষ্ঠেয় তিন বিভাগীয় সমাবেশে দুর্নীতির এসব বিষয়গুলো তুলে ধরে সরকারের পদত্যাগের জোরালো দাবি জানাবে বিএনপি। একইসাথে নতুন নির্বাচনের দাবিও করবে তারা। আগামীকাল ২৪ সেপ্টেম্বর সিলেটে, ২৬ সেপ্টেম্বর ময়মনসিংহ ও ২৯ সেপ্টেম্বর রাজশাহীতে সমাবেশের কর্মসূচি রয়েছে দলটির।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সিনিয়র সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন এই বিষয়ে বলেন, আমরা অনেক আগে থেকেই বলে আসছিলাম-এই সরকার আকণ্ঠ দুর্নীতিতে নিমজ্জিত। দুর্নীতির অভিযোগে নিজ দল-অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের মধ্য দিয়ে সরকার তা কার্যত স্বীকার করে নিয়েছে। সুতরাং এই সরকারের ক্ষমতায় থাকার কোনো নৈতিক অধিকার নেই। বিএনপির পক্ষ থেকে ইতোমধ্যে দুর্নীতির দায় নিয়ে সরকারকে অবিলম্বে পদত্যাগ করে নিরপেক্ষ সরকার ও নির্বাচন কমিশনের অধীনে নতুন নির্বাচন দেয়ার দাবি জানানো হয়েছে। তিনি বলেন, দেশে দুর্নীতি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে সরকার এটাকে আর লুকাতে পারছে না। সে জন্য দুর্নীতিবিরোধী অভিযান চালাতে তারা বাধ্য হয়েছে। তবে আমরা মনে করি, যাদের গ্রেফতার করা হয়েছে- শুধু তারাই নন, এর সাথে আরো অনেকে আছেন। যারা তাদেরকে মদদ দিয়েছে, সহযোগিতা করেছে, তারাও জড়িত। এই রকম অধরাদের যদি চিহ্নিত না করা হয়, তাহলে যে উদ্দেশ্যে সরকার এই অভিযান চালাচ্ছে তা পুরোপুরি সফল হবে না।
বিএনপির একজন নেতা বলেন, সরকার দুর্নীতির বিরুদ্ধে হঠাৎ করে কেন অভিযান চালাচ্ছে- এর পেছনে কোনো ঘটনা আছে কিনা, নাকি এটা শুধুই আইওয়াশ আমরা তা জানার ও বোঝার চেষ্টা করছি। ওই নেতা বলেন, এটা সরকারের অভ্যন্তরীণ সমস্যা হতে পারে অথবা বাইরে থেকে সরকারকে এই অভিযান চালাতে বাধ্য করা হচ্ছে- দু’টিই হতে পারে।
দলের সিনিয়র আরেক নেতা বলেন, এটা সরকারের অভ্যন্তরীণ সমস্যা হতে পারে। কোনো সংস্থা হয়তো সরকারকে জানিয়েছে, এসব মাফিয়ার কারণে তারা সঠিকভাবে কাজ করতে পারছে না। সুতরাং তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা জরুরি। এমনটা হতে পারে। আবার সরকারকে ব্যর্থ দেখাতে এটা কারোর দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনাও হতে পারে। তিনি বলেন, ওয়ান-ইলেভেনের সময় যখন ক্ষমতার পালাবাদল ঘটেছিল তখন মূল ক্যাম্পেইন ছিল দুর্নীতি। তখন বলা হয়েছিল, বিএনপি-জামায়াত দুর্নীতিতে দেশটাকে শেষ করে দিয়েছে।