নীলকণ্ঠ পাখি
নীলকণ্ঠ পাখি - ছবি : সংগ্রহ
পাখিটির বাংলা নাম ‘নীলকণ্ঠ’ বা ‘নীলকণ্ঠী’। ইংরেজিতে ‘ইন্ডিয়ান রোলার’ (Indian Roller)। বৈজ্ঞানিক নাম ‘কোরাসিয়াস বেংঘালেনসিস (Coracias Benghalensis)। ইউরোপে এ পাখিটি ‘ইউরোপিয়ান রোলার’ নামে পরিচিত। বিশ্বে মোট ১৭ প্রজাতির নীলকণ্ঠ পাখির সন্ধান পাওয়া গেছে। এর মধ্যে সৌন্দর্যের দিক থেকে সবচেয়ে আকর্ষণীয় হলো ‘ইউরোপিয়ান রোলার’। এ পাখিটির আকার ও আকৃতি একটু ছোট। কিন্তু সৌন্দর্যের দিক থেকে এটি অন্য পাখিদের তুলনায় একেবারে আলাদা। ‘নীলকণ্ঠ’ পাখির পুরুষ ও স্ত্রী একই রকমের। বিশ্বের অনেক দেশেই নীলকণ্ঠ পাখির দেখা মেলে।
বাংলাদেশের সিলেট ও চট্টগ্রাম অঞ্চলের পাহাড়ি এলাকায় এক সময় প্রচুর পরিমাণে এ পাখিটির দেখা পাওয়া যেত। এছাড়া ভারত, পাকিস্তান, ভুটান, আফগানিস্তান প্রভৃতি দেশে এখনো এ পাখিটির দেখা মেলে। গভীর বন, ঝোপঝাড় পাখিটির পছন্দ নয়।
তেলাপোকা, ফড়িং প্রভৃতি পোকামাকড় এদের প্রিয় খাবার। তাই এরা মুক্ত এবং খোলা মাঠে থাকতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে। পাখিটির দেহের তুলনায় মাথা একটু বড়। সৌন্দর্যের দিক থেকে অন্য পাখিরা এ পাখিটির ধারে কাছেও নেই। এ পাখির শরীরে গাঢ় ও কিছুটা হালকা নীল ধরনের পালক রয়েছে। গলা ও বুকে খয়েরি ও বাদামি রঙের মিশ্রিত পালক। পিঠ পোড়ামাটি রঙের। লেজ গাঢ় নীল। পা ইট রঙের। ঠোট কালো। পায়ের আঙুলগুলো কালো ও হলুদ। কণ্ঠে নীলের কোন অস্থিত্ব নেই। তারপরও পাখিটির নাম ‘নীলকণ্ঠ’ বা ‘নীলকণ্ঠী’। [তথ্যসহায়তা : ইন্টারনেট]
‘নীলকণ্ঠ’ পাখি সাধারণত লম্বায় ৩৫ থেকে ৩৭ সেন্টিমিটার পর্যন্ত হয়ে থাকে। পাখিটি ‘কোরাসিআইদি’ গোত্রের অন্তর্ভুক্ত। পোকামাকড় ফসলের প্রভুত ক্ষতি করে। আর ‘নীলকণ্ঠ’ পাখি পোকামাকড় ভক্ষণ করে। ফলে ইউরোপে ফসলের মাঠে নীলকণ্ঠ পাখি দেখলে কৃষকরা চরমভাবে পুলকিত হন। বাঙালি সনাতন বা হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের কাছে নীলকণ্ঠ পাখি পরম পূজনীয়। বাঙালি হিন্দুদের বিশ্বাস দুর্গাপূজার বিজয়া দশমীর দিনে মহাদেব নীলকণ্ঠ পাখির রূপ ধারণ করে ধরণীর বুকে বিচরণ করেন।
নীলকণ্ঠ পাখি দেখতে খুবই সুন্দর হলেও তাদের গানের গলা অনেকটা বিশ্রী। কোকিল পাখি কালো হলেও তাদের গানের গলা সুমিষ্ট। অপর দিকে, নীলকণ্ঠ আকর্ষণীয় দেহয়াবব হলেও গানের গলা কর্কশ। তারা ডাকে খাক, কাক, কাক শব্দ করে। ডাকলে মনে হয় চেচামেচি করছে। এ পাখিটির স্বভাব অনেকটাই হিংসুটে। নীলকণ্ঠ পাখির এক দম্পতির ঘরে অন্য দম্পতি প্রবেশ করলেই দু’পক্ষের ঝগড়া বেধে যায়। ফলে এক দলের কাছাকাছি অন্য দল ভুলেও যায় না।
নীলকণ্ঠ পাখির প্রজননকাল হলো বসন্তকাল। প্রতি বছর বসন্তকালে এরা ডিম পাড়ে। শুধুমাত্র ডিম পাড়ার সময় নীলকণ্ঠ পাখি জুটি বাধে। এরা পাহাড়ের গায়ে ছোট গর্তে বাসা বাঁধে। সামান্য খড়কুটো দিয়েই তৈরি করে তাদের বাসা। বাসা তৈরির পর নীলকণ্ঠ দম্পতি দুই-তিনদিন সময় নেয়। তারপর স্ত্রী নীলকণ্ঠ পাখি ডিম দেয়। সাধারণত একটি স্ত্রী নীলকণ্ঠ পাখি তিন থেকে চারটি ডিম পাড়ে। পুরুষ ও স্ত্রী উভয় পাখিই ডিমে তা পাড়ে। ডিম পাড়ার ১৮ থেকে ২০ দিনের মধ্যে ডিম ফুটে বাচ্চা বের হয়। বর্তমানে উপমহাদেশে নীলকণ্ঠ পাখির বিচরণ অনেকটা হ্রাস পেয়েছে।
বাংলাদেশে নীলকণ্ঠ পাখি দেখা চরম সৌভাগ্য বলে মনে করেন অনেকেই।