মার্কিন অবরোধ উপেক্ষা করে পাকিস্তান-ইরান-তুরস্কের নতুন অংশীদারিত্ব!

অন্য দিগন্ত ডেস্ক | Sep 17, 2019 07:17 am
মার্কিন অবরোধ উপেক্ষা করে পাকিস্তান-ইরান-তুরস্কের নতুন অংশীদারিত্ব!

মার্কিন অবরোধ উপেক্ষা করে পাকিস্তান-ইরান-তুরস্কের নতুন অংশীদারিত্ব! - ছবি : সংগৃহীত

 

পাকিস্তান ও ইরানি কর্মকর্তাদের মধ্যে সংশোধিত চুক্তিতে সই অনুষ্ঠান হবে আগামী সপ্তাহে তুরস্কের ইস্তাম্বুলে। পাকিস্তান অ্যাটর্নি জেনারেলের অফিস ফরাসি আইন প্রতিষ্ঠানের সাথে মিলে চুক্তিটি সংশোধন করেছে।

নথি অনুযায়ী, ইরান-পাকিস্তান গ্যাস পাইপলাইন প্রকল্পটি ২০১৪ সালের ২৬ আগস্ট পর্যন্ত সম্প্রসারিত হবে। পাকিস্তানের জ্বালানি ও পেট্রোলিয়ামবিষয়কমন্ত্রী ওমর আইয়ুব খান এ ব্যাপারে মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানিয়ে বলেন, এটি জাতীয় স্বার্থের বিষয়। ফলে তারা প্রকাশ্যে মন্তব্য করতে চান না।

প্রাথমিক চুক্তি অনুযায়ী, ২০১৫ সালের জানুয়ারি মাসে ইরান-পাকিস্তান গ্যাস পাইপলাইন প্রকল্পটি সমাপ্ত করার পর ইরানের পাকিস্তানে গ্যাস সরবরাহ করার কথা ছিল। ইরানের কাছ থেকে গ্যাস আনার জন্য পাকিস্তান ২০১৩ সালে ৭৮১ কিলোমিটার দীর্ঘ পাইপ লাইন নির্মাণকাজ শুরু করে। কিন্তু তেহরানের ওপর অর্থনৈতিক অবরোধের কারণে নির্মাণকাজ শেষ হয়নি। পাকিস্তান বলছে, আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর কাছ থেকে অর্থ না পাওয়ার কারণে কাজটি শেষ করা যায়নি। এতে ব্যয় হচ্ছে প্রায় ১.৬৫ বিলিয়ন ডলার।

ইরান জানিয়েছে, তারা পাকিস্তান সীমান্ত পর্যন্ত ৯০০ কিলোমিটার দীর্ঘ পাইপলাইন ইতোমধ্যেই বসিয়ে ফেলেছে। ওই চুক্তি সইয়ের সাথে জড়িত সাবেক পেট্রোলিয়ামসচিব জি এ সাবরি বলেন, পাকিস্তানের প্রতিটি সরকার আগের আমলে নেয়া প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন না করে নতুন নতুন প্রকল্প গ্রহণ করতে আগ্রহী।
ভয়েজ অব আমেরিকাকে জি এ সাবরি বলেন সরকারি নীতির ধারাবাহিকতার অভাব ও ইচ্ছা না থাকায় গ্যাস প্রকল্পটির কাজ শেষ হয়নি। ইরান গত ফেব্রুয়ারিতে মধ্যস্ততা আদালতে গিয়েছিল অব্যাহতভাবে প্রকল্পটি স্থগিত হয়ে থাকায়। পরে দুই পক্ষ আলোচনার মাধ্যমে বিরোধ নিষ্পত্তি করে।

গ্যাস পাইপলাইন চুক্তি
এখন সংশোধিত চুক্তির পর পাকিস্তানকে দেয়া আইনি নোটিশ প্রত্যাহার করবে ইরান। জি এ সাবরি বলেন, মেয়াদ বাড়ানো ইরান ও পাকিস্তান উভয়ের জন্যই কল্যাণকর হয়েছে। ইরানের কাছ থেকে প্রাকৃতিক গ্যাস কেনার আলোচনা শুরু হয় ১৯৯৫ সালে। ২০০৮ সালে ভারতকেও এতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। ফলে পাইপ লাইনের মোট দৈর্ঘ হয় ৬২৭ কিলোমিটার। ২০০৮ সালে এর ব্যয় ধরা হয ৭.৫ বিলিয়ন ডলার। তবে ২০০৯ সালে যুক্তরাষ্ট্রের সাথে পরমাণু চুক্তির পর ভারত এই চুক্তি থেকে বের হয়ে যায়। ভারত সরে যাওয়ার পর ২০১০ সালে আংকারায় এক বৈঠকে পাকিস্তান ও ইরান চুক্তিটি এগিয়ে নেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়।

ইরানি প্রেসিডেন্ট ২০১৩ সালের মার্চে আনুষ্ঠানিকভাবে চুক্তিটি উদ্বোধন করেন। প্রকল্পটির নাম দেয়া হয় ‘পিস পাইপলাইন’। চুক্তিতে বলা হয়, পাকিস্তান যদি ২০১৪ সালের মধ্যে পাইপলাইন নির্মাণকাজ শেষ করতে না পারে এবং ২০১৫ সালের ১ জানুয়ারি থেকে সরবরাহ শুরু না হয়, তবে পাকিস্তানকে প্রতিদিন এক মিলিয়ন ডলার করে জরিমানা দিতে হবে।

প্রকল্পটি থেকে পাকিস্তানের প্রতি দিন ৭৫০ এমএমসিএফডি (৭৫ মিলিয়ন কিউবিক ফিট) গ্যাস পাওয়ার কথা। গোয়াদর বন্দর নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার পর তা বিলিয়ন কিউবিক ফিটে বাড়ার কথা। অতিরিক্ত ২৫ মিলিয়ন কিউবিক ফিট গ্যাস ব্যবহৃত হবে গোয়াদরে। পাকিস্তানের পেট্রোলিয়াম মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুযায়ী, দেশ বর্তমানে দুই বিলিয়ন কিউবিক গ্যাসের ঘাটতিতে রয়েছে। এই গ্যাস পাইপলাইনের মাধ্যমে তা পূরণ করা যেতে পারে। আগের সরকার পাইপলাইনটিকে চীন পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডোরের সাথে যুক্ত করেছিল। চীনা নির্মাণ কোম্পানিগুলোর সাথেও এ ব্যাপারে চুক্তি হয়েছিল। তবে তেহরানের ওপর আরোপিত নতুন অবরোধের ফলে নির্মাণকাজে বাধার সৃষ্টি হয়।
ইরান থেকে আমদানি করা প্রাকৃতিক গ্যাসের মূল্য ধরা হয় অপরিশোধিত তেলের ৭৮ ভাগ। অবশ্য ইরান ও পাকিস্তান তা পর্যালোচনা করতে সম্মত হয়। পাকিস্তানের অনেক বিশেষজ্ঞ মনে করেন, গ্যাসের মূল্য বেশ বেশি ধরা হয়েছে, এটি সংশোধন করা উচিত। গ্যাসের দাম অপরিশোধিত তেলের ৭০ ভাগ হওয়া উচিত বলে মনে করা হয়। এর ফলে ২৫ বছরে পাকিস্তানের বাঁচবে ১০০ বিলিয়ন ডলার।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই গ্যাস চুক্তি এনএনজি ও তাপি চুক্তির চেয়ে বেশি লাভজনক। জ্বালানির চাহিদা মেটাতে পাকিস্তান সরকার কাতার থেকে এলএনজি আমদানি করতে শুরু করেছে।

পাকিস্তান ও তুর্কমেনিস্তান ২০১১ সালের ১৪ নভেম্বর তাপি (তুর্কমেনিস্তান, আফগানিস্তান, পাকিস্তান ও ভারত) চুক্তি করে গ্যাস আমদানির চন্য। ২০১৮ সালে তুর্কমেনিস্তানের মারিতে প্রকল্পটি উদ্বোধন করা হয়।

পাকিস্তান, আফগানিস্তান, তুর্কমেনিস্তান ও ভারতের প্রধানমন্ত্রীরা এতে যোগ দেন। ১৭০০ কিলোমিটার দীর্ঘ গ্যাস পাইপলাইনটির আনুমানিক ব্যয় হবে ১০ বিলিয়ন ডলার। এটি আফগানিস্তান হয়ে পাকিস্তান দিয়ে ভারতে যাবে। তবে নানা কারণে প্রকল্পটির বাস্তবায়ন বিলম্বিত হচ্ছে। প্রকল্পটি শেষ হওয়ার কথা ২০২২ সালে। এই পাইপলাইন দিয়ে আফগানিস্তান দিনে ৫০০ মিলিয়ন কিউবিক ফিট এবং পাকিস্তান ও ভারত পাবে ১.৩২৫ বিলিয়ন কিউবিক ফিট গ্যাস।

সূত্র : এসএএম


 

ko cuce /div>

দৈনিক নয়াদিগন্তের মাসিক প্রকাশনা

সম্পাদক: আলমগীর মহিউদ্দিন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সালাহউদ্দিন বাবর
বার্তা সম্পাদক: মাসুমুর রহমান খলিলী


Email: online@dailynayadiganta.com

যোগাযোগ

১ আর. কে মিশন রোড, (মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন), ঢাকা-১২০৩।  ফোন: ৫৭১৬৫২৬১-৯

Follow Us