৯০০ বিলিয়ন ডলার ব্যয়, দেড় লাখ লোক নিহত : আফগানিস্তানে কী পেল যুক্তরাষ্ট্র!
জোহরা আতিফির (তার স্বামী তালেবান শাসনের সময় নিহত হয়েছিলেন) মতো অনেক আফগানের কাছে ২০০১ সালে আমেরিকান হামলা ছিল নির্যাতনকারী আমলে বসবাসের জন্য নতুন করে শুরুর স্মারক। - ছবি : সংগৃহীত
জোহরা আতিফির (তার স্বামী তালেবান শাসনের সময় নিহত হয়েছিলেন) মতো অনেক আফগানের কাছে ২০০১ সালে আমেরিকান হামলা ছিল নির্যাতনকারী আমলে বসবাসের জন্য নতুন করে শুরুর স্মারক।
কিন্তু ১৮ বছর পরও যুক্তরাষ্ট্র ৯০০ বিলিয়ন ডলার ব্যয় করা ও ১ লাখ ৪৭ হাজার লোক মারা যাওয়ার পরও তালেবান এখন ক্ষমতায় ফেরার ব্যাপারে আগের চেয়ে বেশি আত্মবিশ্বাসী। বিদ্রোহী দলটি দেশের অর্ধেকাংশ নিয়ন্ত্রণ করছে। ২০০১ সালে ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর এবারই তারা সবচেয়ে বেশি এলাকার ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করছে। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প হঠাৎ করে আলোচনা বাতিল করে দিলেও তারা আরো বেশি ক্ষমতা নিয়ে চুক্তি করার মতো অবস্থায় রয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্র ও এর মিত্রদের কাছে আরো খারাপ যে বিষয়টি হা হরো অনেক আফগান এখন ক্রমবর্ধমান হারে আমেরিকান সমর্থিত কাবুল সরকারের ওপর আস্থা হারিয়ে ফেলছে। কাবুল সরকার বা এর মিত্ররা কেবল তালেবানকে নয়, আরেকটি চরমপন্থী গ্রুপ আইএসকেও দমন করতে পারেনি। ফলে দুই বছর আগে আতিফির এক ছেলে আইএসের হামলায় নিহত হয়েছে।
আতিফি (৪৫) বলেন, তাদের নৃশংস শাসনের পতনের পর আমরা আশাবাদী হয়েছিলাম। কিন্তু যে স্বপ্ন আমরা দেখেছিলাম, তা কখনোই বাস্তব হয়নি।
যুদ্ধের উচ্চ মূল্য, যুদ্ধক্ষেত্রে সুস্পষ্ট কোনো সাফল্য না থাকার ফলে দাবি ওঠছে যুক্তরাষ্ট্রের বিদায়ের। ট্রাম্প নিজেও চাচ্ছেন, আমেরিকান সৈন্যদের দেশে ফিরিয়ে নিতে।
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইকেল পম্পেও রোববার বলেছেন, আমরা আফগানিস্তানে এখন বছরে ৩০ বিলিয়ন ডলার ব্যয় করছি।
বিপুল ব্যয়ের পরও আফগানিস্তানে শান্তি প্রতিষ্ঠিত না হওয়ায় সৈন্যদের ফিরিয়ে আনার দাবি জোরদার হচ্ছে। তবে অনেকে বলছেন, একটি চুক্তি হওয়া উচিত মার্কিন প্রত্যাহারের আগে।
উচ্চ মূল্য
তালেবানকে উৎখাতের পর ২০১৯ সালের মার্চ পর্যন্ত আফগানিস্তানে স্থিতিশীলতা, পুনর্গঠন, ও তালেবানের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য যুক্তরাষ্ট্র একাই ৮৭৭ বিলিয়ন ডলার ব্যয় করেছে। এই ব্যয় ও বিপুল প্রাণহানি সত্ত্বেও আফগানিস্তানের উন্নয়ন নিশ্চিত করতে পারেনি যুক্তরাষ্ট্র।
আফগান আইনপ্রণেতা ব্রেসনা রাবি বলেন, আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে তালেবান অনেক বেশি শাক্তিশালী। তারা এখন দেশের যেকোনো স্থানে সহিংসতা ছড়িয়ে দিতে পারে।
তিনি বলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার গেছে দুর্নীতিতে। মার্কিন অর্থ গরিব মানুষের কাছে যায়নি, গরিব মানুষের অবস্থার কোনো উন্নতি হয়নি।
আফগানিস্তানে মোতায়েন ২২,৬৭৩ জন বিদেশী সৈন্যের মধ্যে মার্কিন সৈন্য মাত্র ১৪ হাজার। ২০১১ সালে ছিল সর্বোচ্চ এক লাখ। যুদ্ধে ২,৪০০ মার্কিন ও ১,১৪৪ ন্যাটো সৈন্য নিহত হয়েছে। এছাড়া ২০,৫০০ আমেরিকান সৈন্য আহত হয়েছে।
আর আফগানদের ভোগান্তি হয়েছে আরো বেশি। ২০০৯ সাল থেকে তালেবান হামলা, আফগান ও বিদেশী বিমান হামলায় ২১ হাজার আফগান বেসামরিক নাগরিক নিহত, ৬০ হাজার আহত হয়েছৈ। আর ব্রাউন বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সঙ্ঘাতে প্রায় ১ লাখ ৪০ হাজার আফগান নিহত হয়েছে।
আর ডাভোসে আফগান প্রেসিডেন্ট আশরাফ গনি বলেছেন, যুদ্ধে নিহতের সংখ্যা আরো বেশি। তার সরকারের হিসাব অনুযায়ী, ২০১৪ সালে তিনি দায়িত্ব গ্রহণের পর আফগান বাহিনীর ৪৫ হাজার সদস্য নিহত হয়েছে।
আশার ক্ষীণ রেখা
তালেবানের নৃশংস শাসনের পর অনেক সময় অতিবাহিত হয়েছে। এখন মিডিয়া খাতে উন্নতি এসেছে। ১,৮০০টি প্রিন্ট, ব্রডকাস্ট ও ডিজিটাল নিউজ আউটলেট কাজ করছে দেশটিতে। আর্ট ও মিউজিক বিকশিত হচ্ছে। ৩৫ লাখ আফগান মেয়ে স্কুলে যাচ্ছে, অনেক নারী রাজনীতিতে আসছে। ২৫০ আসনবিশিষ্ট পার্লামেন্টে নারীরা এক তৃতীয়াংশ। তালেবান আমলে এসব কার্যক্রম নিষিদ্ধ ছিল।
একজন জানান, আগের চেয়ে আফগান জনগণ ভালো আছে। কিন্তু যুদ্ধের কারণে অর্থনীতি সমৃদ্ধ হচ্ছে না। আফগানিস্তান থেকে মার্কিন প্রত্যাহার করা মাত্র সব শেষ হয়ে যাবে।
প্রাণঘাতী হামলা
তালেবানের সাথে চুক্তি হলে নিরাপত্তাগত অবস্থার উন্নতি হবে বলে অনেকেই মনে করেন না। তাছাড়া অর্থনৈতিক অবস্থা নিয়েও সংশয় রয়েছে।
আতিফির স্বামী নিহত হয়েছিলেন ১৯৯৮ সালে। তার দ্বিতীয় ছেলে নিহত হয় ২০১৭ াসলে। তিনি এখন সপ্তাহে ২৭ ডলার আয় দিয়ে সংসার চালান।
তিনি বলেন, তালেবান শাসন আর এখনকার অবস্থার মধ্যে কী পার্থক্য আছে? সবাই খুনে, তারা আমাদের প্রিয় ছেলেকে খুন করেছে।