ভয়ঙ্কর বিপদে ভারতীয় মুসলিমরা!
ভয়ঙ্কর বিপদে ভারতীয় মুসলিমরা! - ছবি : সংগৃহীত
গত ৩১ আগস্ট ভারতের আসাম রাজ্যের নাগরিক তালিকা থেকে প্রায় ২০ লাখ লোককে বাদ দেয়া হয়েছে। আর ক্ষমতাসীন হিন্দু জাতীয়তাবাদী সরকার পুরো ভারতে এই প্রক্রিয়া বাস্তবায়ন করার পরিকল্পনা করায় মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে উদ্বেগের সৃষ্টি হয়েছে।
অ্যাক্টিভিস্টেরা সুপ্রিম কোর্টের তত্ত্বাবধানে হওয়া জাতীয় নাগরিকপঞ্জির সমালোচনা করে বলেছেন, ত্রুটিপূর্ণ এই প্রক্রিয়ার ফলে সাবেক সরকারি কর্মকর্তাসহ সত্যিকারের অনেক নাগরিক তালিকা থেকে বাদ পড়েছে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহসহ ক্ষমতাসীন বিজেপির অনেক নেতা সারা ভারতে এনআরসি বাস্তবায়নের দাবি জানিয়েছেন অবৈধ অভিবাসীদের শনাক্ত করে বহিষ্কার করার দাবিতে।
অনেক মুসলিম আলজাজিরাকে বলেন, মুসলিম সম্প্রদায়কে টার্গেট করতেই বিজেপি নাগরিকত্ব ইস্যুটি ব্যবহার করছে। উল্লেখ্য, ভারতের ১৩০ কোটি মানুষের মধ্যে মুসলিম ১৪ ভাগ।
দিল্লির জামিয়া মিল্লিয়া ইউনিভার্সিটির ছাত্র মোহাম্মদ ইয়াহিয়া বলেন, ক্রমবর্ধমান ভয়ের কারণে মুসলিম বিশেষজ্ঞ ও সমাজপতিরা নাগরিকত্ব সহায়ক সব নথিপত্র যথাযথভাবে সংরক্ষণের জন্য মুসলিমদের প্রতি পরামর্শ দিয়েছেন।
তিনি আল জাজিরাকে বলেন, মুসলিমদের মধ্যে ভয় রয়েছে যে বিজেপি হয়তো পুরো ভারতে এনআরসি পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করবে। এ কারণে আমাদের সতর্ক হতে হবে, সব সনদপত্র ও নথিপত্র তৈরি করতে হবে, যাতে আগামীকাল কেউ কোনো ধরনের সমস্যায় না পড়ে।
অভিবাসন ইস্যুতে বাগাড়ম্বড়তায় তাদের ভয় আরো বেড়েছে। রোববার অমিত শাত আবারো তার দলের অবস্থান ব্যক্ত করে বলেন, একজন অবৈধ অভিবাসীকেও এখানে থাকতে দেয়া হবে না।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ডান হাত বিবেচিত অমিত শাহ অতীতে বাংলাদেশী অভিবাসীদেরকে ‘উইপোকা’ হিসেবে অভিহিত করেছিলেন। আল জাজিরার সাথে এক সাক্ষাতকারে দলটির এক নেতা এই মন্তব্য সমর্থন করেছিলেন।
আসামের এনআরসি তালিকা থেকে বাদ পড়া হিন্দুদের রক্ষা করতে সংবিধানের নাগরিকত্ব বিধাননে পরিবর্তন আনার ঘোষণা দেয়ায় সমালোচকেরা আরো অভিযোগ করছেন যে বিজেপি ভারতের সেক্যুলার সংবিধানের চেতনা নস্যাৎ করছে।
দিল্লির জাকির নগর এলাকার মুদি দোকানি আরশিল জামাল (৩০) বলেন, বিজেপি যদি সারা দেশে এনআরসি বাস্তবায়ন করতে চায়, তবে তারা তা করতে পারে। কিন্তু তারা যখন বলে যে হিন্দু, শিখ, জৈন ও বৌদ্ধদের রক্ষা করা হবে, তখন এর অর্থ কী দাঁড়ায়? এতে স্পষ্টভাবে বোঝা যায় যে টার্গেট কেবল মুসলিমেরা।
জামাল বলেন, আইন সবার জন্য একই হওয়া উচিত।
গভীরে থাকা পক্ষপাত
অ্যাক্টিভিস্টরা অভিযোগ করেছেন, মুসলিম সংখ্যালঘু সম্প্রদায়টির বিরুদ্ধে ক্ষমতাসীন ডানপন্থী দলটির গভীর পক্ষপাতিত্ব রয়েছে।
দিল্লিভিত্তিক অ্যাক্টিভিস্ট হর্ষ মান্দর আল জাজিরাকে বলেন, দেশব্যাপী এনআরসি একটি বিপর্যয়ে পরিণত হতে পারে। কারণ গ্রাম এলাকার লোকজনের জন্য তাদের পরিচিতি প্রমাণ করা খুবই কঠিন হবে।
তিনি বলেন, বিজেপির উদ্দেশ্য বিশেষভাবে মুসলিমদের টার্গেট করা। তারা নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলটি পাস করাতে পারলে এনআরসিও করবে।
নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলটি পাস হলে হিন্দু, শিখ, বৌদ্ধরা সহজেই নাগরিকত্ব পেয়ে যাবে। কিন্তু মুসলিমরা পাবে না।
হায়দরাবাদ থেকে নির্বাচিত মুসলিম এমপি আসাদুদ্দিন ওয়াইসি বরেন, বিজেপি যদি নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল আনে, তবে তা হবে সংবিধানের ভয়াবহ লঙ্ঘন।
মুসলিম সম্প্রদায়ের শীর্ষস্থানীয় কণ্ঠস্বর হিসেবে আবির্ভূত ওয়াইসি বলেন, এ নিয়ে মুসলিমদের মধ্যে মহা উদ্বেগ রয়েছে। তিনি বলেন, আমরা সম্প্রদায়টিকে পথনির্দেশিকা দেব, প্রয়োজন পড়লে আইনগত সুবিধাও দেব।
ভারতের ২.৮ ট্রিলিয়ন ডলারের অর্থনীতি বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অভিবাসীদের আকৃষ্ট করেছে। তারা বড় বড় নগরীতে স্বল্প আয়ের কাজে নিয়োজিত। তবে তাদের সংখ্যাটা রাজনীতিবিদেরা ব্যাপকভাবে বাড়িয়ে দেখান। এমনকি এনআরসির সময় সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত একটি ভুয়া তথ্যের উদ্ধৃতি দিয়েছে।
ক্ষমতাসীন দলটি তাদের মুসলিমবিরোধী বাগাড়ম্বড়তা অব্যাহত রেখেছে। অবৈধ অভিবাসীদের আটকে রাখার জন্য বিজেপি-শাসিত অন্তত দুটি রাজ্যে আটক কেন্দ্র নির্মাণের পরিকল্পনা করছে।
দক্ষিণ দিল্লির তৈমুর নগরে একটি ছোট দোকান পরিচালনায় নিয়োজিত বাবুল খান বলেন, তিনি ভারতে এসেছিলেন ১৯৭১ সালের বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময়। তিনি ভারতকে নিজের দেশ মনে করেন।
বাবুল (৬০) বলেন, আমি ৪৮ বছর আগে ভারতে এসেছিলাম। আমার মা-বাবা ভারতে মারা গেছেন। আমি এখানে বিয়ে করেছি। এখন আমি দাদাও।
তিনি বলেন, ভারত আমাদের দেশ। আমাদের তিন প্রজন্ম এখন ভারতে বাস করছে। আমরা বাংলাদেশ সম্পর্কে কিছুই জানি না। সরকার যদি আমাদের বহিষ্কার করার সিদ্ধান্ত নেয়, তবে তা হবে আমাদের প্রতি অবিচার।
আল জাজিরা