আফগানিস্তান : যুক্তরাষ্ট্র আউট, চীন ইন!
আফগানিস্তান : যুক্তরাষ্ট্র আউট, চীন ইন! - ছবি : সংগৃহীত
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প হঠাৎ করেই আফগানিস্তানের তালেবান বিদ্রোহীদের সাথে আলোচনা বাতিল করে দিয়েছেন। আমেরিকার সবচেয়ে ব্যয়বহুল ও সবচেয়ে দীর্ঘ যুদ্ধটি অবসানে শান্তি আলোচনাকে ঘিরে কয়েক সপ্তাহের অনিশ্চয়তার মধ্যে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ট্রাম্প।
যে দিন চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসলামাবাদে আফগান পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সাথে সাক্ষাত করলেন, সে দিনও তা ওই আলোচনা বাতিল করা হলো।
বুধবারের ৯/১১-এর সন্ত্রাসী হামলার বার্ষিকীকে সামনে রেখে ট্রাম্প তালেবান নেতৃবৃন্দ ও আফগানিস্তানে মার্কিন-সমর্থিত প্রেসিডেন্ট আশরাফ গানির মধ্যে রোববারের বৈঠকটি বাতিল করেন।
আফগানিস্তানে সর্বশেষ তালেবান হামলায় এক মার্কিন সৈন্যসহ ১২ জন নিহত হওয়ার প্রেক্ষাপটে ওই সিদ্ধান্ত নেন ট্রাম্প।
নাইন-ইলেভেনের হামলাটি আফগানিস্তান থেকে আল-কায়েদা নেতা ওসামা বিন লাদেন পরিচালনা করেছিলেন, তা জানার পর দেশটিতে হামলা চালিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র। বিন লাদেনকে ২০১১ সালে পাকিস্তানে তার গোপন আস্তানায় হত্যা করা হয়।
তালেবানের সামরিক সাফল্য বাড়তে থাকার প্রেক্ষাপটে যুক্তরাষ্ট্র-তালেবান আলোচনা এক বছর ধরেই চলছিল। পাকিস্তানের সিনিয়র সরকারি কর্মকর্তারা মনে করছেন, তালেবান এখন দেশটির প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ এলাকা নিয়ন্ত্রণ করে।
তালেবান ক্ষমতায় থাকার সময় আফগানিস্তানে নিযুক্ত পাকিস্তানের রাষ্ট্রদূত আজিজ খান নিক্কিইয়ের সাথে এক সাক্ষাতকারে বলেন, মনে হচ্ছে, শান্তি আলোচনার সময় ভূমি হাতছাড়া করেনি তালেবান। তিনি বলেন, তারা ব্যাপকভিত্তিক সরকারে যোগদানের বদলে আফগানিস্তানে একটি ইসলামি আমিরাত তথা ধর্মতাত্ত্বিক রাষ্ট্র গঠনের অপেক্ষা করছেন।
তালেবানের সাথে সম্পর্ক রক্ষাকারী আজিজ খান বলেন, যুক্তরাষ্ট্র ক্যাম্প ডেভিড সভা বাতিল করলেও তারা সম্ভবত শান্তি আলোচনা অব্যাহত রাখবে। শান্তি আলোচনা সফল করতে হলে তালেবানকে তাদের প্রত্যাশা হ্রাস করতে হবে।
এদিকে, বৈঠক বাতিল করার খবরের মধ্যেই চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ইয়ি ইসলামাবাদ সফর করেন পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সাথে আলোচনা করার জন্য।
পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় রোববার রাতে জানায়, চীন চায় যুদ্ধবিধ্বস্ত আফগানিস্তানকে পুনঃগঠন করতে। চীন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডোর শান্তিপূর্ণ আফগানিস্তানে প্রবেশ করা কামনা করে চীন।
পরিচয় না প্রকাশ করার শর্তে পাকিস্তান সরকারের এক সিনিয়র কর্মকর্তা বরেন আফগানিস্তানের অবকাঠামোর প্রয়োজন ব্যাপক, আর চীন তাতে সহায়তা করতে চায়।
আরো কয়েকজন সিনিয়র পাকিস্তানি কর্মকর্তা নিক্কিইকে বলেন, ২০১৭ সাল থেকে বেশ কয়েকবারই তালেবান প্রতিনিধিরা চীন সফর করেছেন। আমরা জানি যে আফগানিস্তানের সব পক্ষের সাথে কথা বলছে চীন। পাকিস্তানে পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের বৈঠকের আগে তালেবানের সাথেও কথা বলেছে চীন।
পাকিস্তানের প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তাবিষয়ক বিশ্লেষক আসকারি রিজভি নিক্কিইয়ের সাথে এক সাক্ষাতকারে বলেন, চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে দৃষ্টিভঙ্গিগত পার্থক্য রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র চায় আফগানিস্তানে সামরিক উপস্থিতি হ্রাস করতে। আর চীন চায় দীর্ঘ মেয়াদি সুযোগ।
অতীতে পাকিস্তানি ও পাশ্চাত্য কর্মকর্তারা নিক্কিইকে বলেছেন, মধ্য এশিয়ার তেল, গ্যাস ও অন্যান্য প্রাকৃতিক সম্পদে সমৃদ্ধি সাবেক সোভিয়েত প্রজাতন্ত্রগুলোর সাথে নতুন বাণিজ্য রুট নির্মাণের জন্য আফগানিস্তানে শান্তি চায় চীন।
ইসলামাবাদে আফগানিস্তানের ঘটনাপ্রবাহের ওপর নজর রাখা পাশ্চাত্যের এক কূটনীতিক পরিচয় প্রকাশ না করার শর্তে পৃথকভাবে নিক্কিইকে বলেন, ২০২০ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রচারণার উত্তাপ বাড়ছে। তালেবানের সাথে আমেরিকার সঙ্ঘাত বন্ধ করার জন্য ট্রাম্পকে আলোচনায় বসতে হবে। এক বছর ধরে আমরা শুনছি যে যুক্তরাষ্ট্র ও তালেবান কাজ করছে আফগানিস্তানে শান্তি প্রতিষ্ঠা করার। পররাষ্ট্রনীতিতে সাফল্য প্রদর্শনের জন্য মার্কিন প্রেসিডেন্টকে আফগানিস্তান থেকে কিছু সৈন্য প্রত্যাহারের বিষয়টি দেখাতেই হবে।
রিজভি বলেন, ট্রাম্পের সিদ্ধান্তে মনে হচ্ছে, এখনকার মতো শান্তি আলোচনা স্থগিত হয়ে গেছে। আমি মনে করি না যে যুক্তরাষ্ট্র এই প্রক্রিয়া পুরোপুরি শেষ করে দিতে চায়।
ডিফেন্স.পিকে।