কিভাবে বুঝবেন কোন সাপে দংশন করেছে? কী করবেন

প্রফেসর ডা: দেওয়ান আব্দুর রহীম | Sep 07, 2019 02:32 pm
সাপ

সাপ - ছবি : সংগ্রহ

 

পৃথিবীতে প্রায় দুই হাজার ৭০০ ধরনের সাপ আছে, তবে সব সাপের কামড় বিষাক্ত নয়। বিষাক্ত সাপগুলো হলো- ১. গোখরা (Cobra) : গরুর খুরের চিহ্নযুক্ত ফণাধর স্নায়ুবিষাক্ত সাপ, ২. কেউটে (ফণাধর স্নায়ুবিষাক্ত সাপ), ৩. কালাজ (ফণাহীন স্নায়ুবিষাক্ত সাপ) ও ৪. চন্দ্রবোড়া (Krait) : রক্তকণিকা ধ্বংসকারী সাপ; এগুলো বাংলাদেশে আছে। এ ছাড়াও পৃথিবীর অন্যান্য দেশে বিষাক্ত শাখামুটি সাপ, সামুদ্রিক সাপ, আফ্রিকান সাপ, প্রবাল সাপ (Coral) ইত্যাদি আছে। সাপের কান নেই তবে এরা গন্ধ, স্বাদ, স্পর্শ, কম্পন জিহ্বা দ্বারা বুঝতে পারে।

বাংলাদেশে বর্ষাকালে সাপে কাটার ঘটনা বেশি ঘটে। দেশজুড়ে বন্যায় সাপে কাটা রোগী বাড়ছে। বর্ষাকালে ঝোপঝাড় ও জঙ্গলে সাবধানে হাঁটতে হবে। কোনো গর্তে হাত দেয়া যাবে না। মাত্র চারটি সাপের কামড়ে বিনা চিকিৎসায় আমাদের দেশে মানুষ মারা যায়। গবেষণা অনুযায়ী, দেশে বছরে প্রায় সাত লাখ মানুষকে সাপে কামড়ায়। তাদের মধ্যে ছয় হাজারের বেশি মানুষ মারা যায়। বিষধর সাপের কামড়ের হার ২০ শতাংশ। সম্প্রতি (২০১৬ সাল) বন্যাকবলিত ১৯ জেলায় এ পর্যন্ত ১২০ জনকে সাপে কাটে, এর মধ্যে ২৩ জন মারা যায় বলে পত্রিকায় প্রকাশিত। প্রকৃত সংখ্যা এর বেশি। বর্ষাকালে ও বন্যার সময় সাপের উপদ্রব বাড়ে। এ সময় সাপে কাটার ফলে মানুষের মৃত্যু বেশি হয়। দেশের একটি কোম্পানি সাপে কামড়ের অ্যান্টিভেনাম ওষুধ তৈরি করেছে, কিন্তু এটি দোকানে পাওয়া যায় না, শুধু তাদের ২০টি ডিপোতে পাওয়া যায়। ওই ওষুধের একটি ইনজেকশন ভায়ালের দাম এক হাজার টাকা। একজন রোগীর ১০টি ইনজেকশন ভায়ালের দরকার হয়। প্রতিটি উপজেলা সরকারি হাসপাতালে ওষুধটি সরবরাহের ব্যবস্থা করা দরকার। সরকারি কেন্দ্রীয় ওষুধাগারে যাতে পর্যাপ্ত সাপে কাটার অ্যান্টিভেনাম ইনজেকশন থাকে, সে ব্যবস্থাও করতে হবে। বাংলাদেশে অনেক মানুষ সাপে কামড়ালে সঠিক সময়ে হাসপাতালে না গিয়ে হাজির হন ওঝার কাছে।

সাপের কামড় এড়ানোর উপায় : ১. বাড়ির চারপাশ পরিষ্কার রাখা, ২. রাতে ঘুমানোর আগে বিছানাপত্র, বালিশ ঝেড়ে মশারি টানিয়ে ঘুমাতে হবে, ৩. ঘরে ধানের মাচা থেকে দূরে ঘুমানো উচিত। ৪. জুতা পরার সময় ঝেড়ে নিতে হবে, ৫. বাড়িতে ইঁদুর বা অন্য কোনো গর্ত থাকলে ভরাট করতে হবে, ৬. অন্ধকারে হাঁটাচলা করা ঠিক নয়, তবে দরকার হলে হাতে লাঠি দিয়ে ঠুকে পথ চলুন। কারণ, সাপের কান না থাকলেও কম্পন অনুভব করে, ৭. গ্রামের বাড়িতে কার্বলিক এসিড বোতলে ভরে নিরাপদ স্থানে শিশুদের নাগালের বাইরে রাখলে সাপ কার্বলিক এসিডের গন্ধে আসবে না।

সাপে কাটলে করণীয় : ১. রোগীকে সাহস দেয়া। কেননা আতঙ্ক মৃত্যু ডেকে আনতে পারে, ২. রোগীকে নড়াচড়া করতে বারণ করা। কারণ নড়াচড়া করলে বিষ সারা দেহে ছড়াবে, ৩. সাপে কাটার জায়গাটি পরিষ্কার কাপড় ভিজিয়ে মুছে ব্যান্ডেজ করে রাখতে হবে, ৪. বাঁশের টুকরাসহ হাতে কিংবা পায়ে কামড়ের স্থানে কাপড় বা গামছা অথবা ওড়না দিয়ে হালকা করে বেঁধে এবং কামড়ের ওপর দিকে পরপর তিনটি গিট বেঁধে নিকটতম হাসপাতালে নিয়ে সাপে কামড়ের কথা দ্রুত বলা, ৫. সাপে দংশনের স্থানে ব্লেড দিয়ে কাটা বা সুচ ফোটানো যাবে না, ৬. সাপে কামড়ানো ১০০ মিনিটের মধ্যে হাসপাতালে ১০০ মি.লি. অ্যান্টিভেনাম ইনজেকশন দেহে প্রবেশ করালে রোগীর বেঁচে যাওয়ার সম্ভাবনা শতভাগ।

সাপের কামড় ডাক্তার কিভাবে বুঝবেন : সিরিঞ্জের মাধ্যমে রোগীর ভেইন থেকে ২ এম.এল রক্ত বের করে টেস্টটিউবে ভরে ২০ মিনিট খাড়া করে রেখে দেখতে হবে রক্ত জমাট বাঁধে কি না। রক্ত জমাট না বাঁধলে চন্দ্রবোড়া (Krait) সাপের কামড় নিশ্চিত।

সাপের বিষক্রিয়ার লক্ষণ : ১. উভয় চোখের পাতা নেমে আসা, ২. কামড়ের স্থানে জ্বালা-যন্ত্রণা করা এবং ফুলে যাওয়া, ৩. ঢোক গিলতে অসুবিধা হওয়া, ৪.ঝাপসা দেখা, ৫. জিহ্বা জড়িয়ে আসা, ৬. ঝিমিয়ে পড়া, ৭.চন্দ্রবোড়া সাপের কামড়ের ক্ষেত্রে দেহের নানা স্থান থেকে রক্ত বেরিয়ে আসা, ৮. শ্বাসকষ্ট, ৯.চিকিৎসায় দেরি হলে শ্বাসক্রিয়া বন্ধ হয়ে মৃত্যু হওয়া।

চন্দ্রবোড়া সাপের কামড়ের চিকিৎসা দেরি হলে ডায়ালাইসিস লাগবে। কেননা এতে একিউট কিডনি ফেইলিউর ঘটে। আসুন, আমরা সবাই মিলে সাপের কামড় এড়ানোর জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করি। সাপে কাটলে প্রাথমিক ব্যবস্থাপনাসহ নিকটস্থ বড় হাসপাতালে নিয়ে যাই। সাপে কাটার ওষুধ, ‘অ্যান্টিস্নেক ভেনাম’ বিনামূল্যে মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, জেলা ও উপজেলা হাসপাতালে পাওয়া যায়। বিষধর সাপের কামড়ের চিকিৎসা আছে। তাই ঝাড়ফুঁক, তাবিজ-কবজ বা কবিরাজি চিকিৎসার ওপর নির্ভর না করে নিকটস্থ হাসপাতালে যেতে হবে।


 

ko cuce /div>

দৈনিক নয়াদিগন্তের মাসিক প্রকাশনা

সম্পাদক: আলমগীর মহিউদ্দিন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সালাহউদ্দিন বাবর
বার্তা সম্পাদক: মাসুমুর রহমান খলিলী


Email: online@dailynayadiganta.com

যোগাযোগ

১ আর. কে মিশন রোড, (মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন), ঢাকা-১২০৩।  ফোন: ৫৭১৬৫২৬১-৯

Follow Us