এক তরুণী মেয়ের শয্যা ভেজানোর গল্প

অন্য দিগন্ত ডেস্ক | Sep 07, 2019 02:26 pm
এক তরুণী মেয়ের শয্যা ভেজানোর গল্প

এক তরুণী মেয়ের শয্যা ভেজানোর গল্প - ছবি : সংগ্রহ

 

স্বাস্থ্য সমস্যা শিশু থেকে বৃদ্ধ-বৃদ্ধা সবারই হতে পারে। তবে ঘরের তরুণী বা যুবতী মেয়েদের অনেক স্বাস্থ্য সমস্যা পিতামাতাকে বিব্রতকর অবস্থায় ফেলে। অনেক সময় মেয়েরা এমন সমস্যায় নিপতিত হয় যে, পরিবারের কাউকে বলতেও পারে না, আবার সইতেও পারে না। মানসিক সমস্যায় ভোগে। তা ছাড়া, তরুণী-যুবতী মেয়েরা সাধারণত চাপা স্বভাবের হয়। ফলে মানসিক সমস্যায় ভোগে। এমন এক তরুণীর সমস্যার গল্প আপনাদের শোনাব।

মা বলেছেন তার কন্যাকে- তোর এ কী স্বভাব, প্রতিদিন বেলা করে ঘুম থেকে উঠিস। তার পর প্রতিদিন বিছানার চাদর ধুতে হয় কেন? সপ্তাহে এক দিন বিছানার চাদর ধুলেই তো হয়। মেয়ে মায়ের কথার কোনো জবাব দেয় না। প্রতিদিন বিছানার চাদর ধোয়। তোশক প্রতিদিন ছাদে নিয়ে রোদে শুকায়। ব্যাপার কী? একদিন মা আচ্ছামতো বকুনি দেয়। ওইদিন রাতে মাকে মেয়ে গোপনে বিষয়টি বলে। সে প্রতিদিন ঘুমের মধ্যে শয্যায় প্রস্রাব করে। টের পায় না কখন এ কাজ হয়।

কন্যার মা বিষয়টি তার বাবাকে জানায়। ওর বয়স এখন ২৭। ¯œাতকে পড়ে। বিবাহযোগ্য। বাবাও চিন্তিত। অবশেষে স্বামী-স্ত্রী সিদ্ধান্ত নেয়, কন্যাকে কোনো মনোচিকিৎসকের কাছে নিয়ে যেতে হবে।

যে কথা সেই কাজ। একজন মনোচিকিৎসকের কাছে নিয়ে যান। মেয়েটির মা চিকিৎসককে বিষয়টি অবহিত করেন। চিকিৎসক মায়ের সামনে মেয়েটিকে জিজ্ঞাসাবাদ করে কিছু ওষুধের ব্যবস্থাপত্র দেন। সেই সাথে কিছু আনুষঙ্গিক পরামর্শও দেন। দুই সপ্তাহ চিকিৎসা নেয়ার পরও অবস্থার কোনো পরিবর্তন দেখা যায় না।

অগত্যা এক ক্লিনিকে মহিলা চিকিৎসকের শরণাপন্ন হয়। তিনিও অনেক জিজ্ঞাসাবাদ করে ব্যবস্থাপত্র দেন। প্রদত্ত ওষুধপত্রে সামান্য উপকার হয়। যত দিন ওষুধ চলে শয্যা ভেজায় না। ওষুধ বন্ধ করলেই আগের অবস্থায় চলে আসে। চিকিৎসককে বিষয়টি জানালে তিনি ডোজ বাড়িয়ে দেন। ফলে এক সপ্তাহ সমস্যা রইল না। ওষুধ বন্ধ করলেই আগের অবস্থা হয়।

এভাবে চিকিৎসক পরিবর্তন করে দু-তিন বছর চিকিৎসা করানো হলো। ওষুধ খাওয়ানো হলো। কিন্তু ওষুধ বন্ধ করলেই বিছানা ভেজায়। মহাসমস্যা। আত্মীয়স্বজন কাউকে বলাও যায় না। সামাজিক সমস্যা।

এবার একজন ইউরোলজিস্টের সাথে পরামর্শ করা হলো। তিনি মেয়ের সারা শরীর স্ক্যানিং ও মূত্রথলি আল্ট্রাসাউন্ড করার পরামর্শ দেন। তার পরামর্শ মোতাবেক সব ব্যবস্থা নেয়া হলো। কিন্তু স্ক্যানিং ও আল্ট্রাসাউন্ডে রিপোর্ট নরমাল পাওয়া গেল। তিনি আবার মেয়েকে একজন মনোচিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে রাখার পরামর্শ দেন। দেড় বছর একজন অভিজ্ঞ মনোচিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে রেখে চিকিৎসা করানো হলো; কিন্তু অবস্থার কোনো পরিবর্তন হলো না।

এ দিকে বাবা প্রতিদিন ইন্টারনেট ব্রাউজ করে সমস্যার সমাধান খুঁজতে থাকেন। একদিন এই সমস্যার এক রিপোর্ট পাওয়া গেল। সেখানে বলা হয়েছে, ফুড অ্যালার্জি থেকেও এমন সমস্যা হতে পারে।

অবশেষে বাবা মেয়েকে বিদেশে নিয়ে চিকিৎসা করানোর সিদ্ধান্ত নেন। মেয়েকে যুক্তরাষ্ট্রে নিয়ে এক চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করেন। তিনি Bio-resonance করার পরামর্শ দেন। ওই পরীক্ষা করে দেখা গেল, ভাত-সয়াগ্লুটেন প্রভৃতি খেলে তার অ্যালার্জি হয়। ওই ক্লিনিক তার সব টেস্ট করতে পারেনি। তবে তারা রিপোর্টে বলল, বেসন, ময়দা, ঢেঁড়স-জাতীয় খাদ্যে তার অ্যালার্জি হয়। এসব খাওয়া বন্ধ করলে বিছানা ভেজায় না। আবার ভালো ঘুমও হয়। আমি চিকিৎসকের কাছে জানতে চাই, এই প্রকার অদ্ভুত সমস্যার কোনো ক্লিনিক বা হাসপাতাল আছে কি না। যেখানে জানা যাবে, কোন কোন খাবারে তার অ্যালার্জি হয়। আমি অত্যন্ত চিন্তিত। কারণ তার বয়স এখন ২৯।
তার বিবাহের কথা ভেবে আমরা উদ্বিগ্ন ও চিন্তিত।

চিকিৎসক একজন অ্যালার্জি বিশেষজ্ঞের কথা বললেন। আমরা তার শরণাপন্ন হই। তিনি সব ইতিহাস শুনে বলেন, দেখুন, শয্যা ভেজানোর সাথে খাদ্যের কোনো যোগসূত্র নেই। যাদের ফুড অ্যালার্জি থাকে, তারা বিছানায় প্রস্রাব করে না। আপনারা যে Bio-resonance Test করেছেন, এটা একটি বিকল্প বিতর্কিত চিকিৎসাব্যবস্থা।


শয্যা ভেজানো একটা চংপযব সম্পর্ক যুক্ত সমস্যা। নিজ সম্মান ও নিরাপত্তাহীনতার সাথে এই সমস্যা সম্পর্কিত। আপনার কন্যাকে আপনারা স্বাধীনভাবে চলাফেরা করতে দিন, যাতে সে তার নিজ গুণ, ক্ষমতা ও যোগ্যতা সম্পর্কে সজাগ ও সচেতন হয়। আত্মবিশ্বাসী হয়। তার বন্ধুবান্ধবের সাথে স্বাধীনভাবে মেলামেশার সুযোগ দিন। তার ভুলত্রুটি ধরে তাকে দুর্বল করে দেবেন না। তার স্বাধীন মতামতে হস্তক্ষেপ করবেন না।

তার ভালো গুণগুলোর প্রশংসা করুন। তার মেধা ও মননের স্বীকৃতি দিন। তার মধ্যে আত্মবিশ্বাস জাগিয়ে তুলুন। তাকে কোনো শিক্ষকের নিকট নিয়ে ণড়মধ বা ধ্যান করা শেখান। এতে তার ভেতর আত্মবিশ্বাস জাগ্রত হবে। মনেপ্রাণে প্রশান্তি আসবে। তাকে গানবাজনা শেখান। চিত্তবিনোদনের সুযোগ করে দিন। পাহাড়, নদ-নদী, কানন ও কুঞ্জে ঘোরান। খেলাধুলা দেখতে ও করার সুযোগ করে দিন। দেখবেন ধীরে ধীরে তার সব সমস্যা চলে গেছে; কোনো ওষুধ লাগবে না। রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে প্রস্রাব করে মূত্রথলি খালি করে ঘুমাতে বলুন। তার এ সমস্যা আত্মীয়স্বজন ও বন্ধুবান্ধবের মধ্যে প্রচার করবেন না। গোপন রাখবেন। মনে রাখবেন, এটা তার মানসিক সমস্যা, যা আপনা-আপনি চলে যাবে। অনর্থক উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছুই নেই। পিতা তার কন্যাকে দেশে ফিরিয়ে আনেন। প্রথম এক ইয়োগা বিশেষজ্ঞের কাছে নিয়ে যান। তিনি তাকে ইয়োগা শেখান এবং সে প্রতিদিন ইয়োগা করতে শুরু করে। দেখা গেল দু-এক দিনের মধ্যেই অদ্ভুত ফল। বিছানা ভেজানো অনিয়মিত হয়ে গেল। এরপর এক জিমে ভর্তি করানো হলো। ওই জিমের নির্দেশক একজন মহিলা। মেয়েটির মা তাকে সমস্যা জানাল। তিনি শুনে বললেন, এটা কোনো সমস্যাই নয়। এক সপ্তাহের মধ্যেই সমস্যা চলে যাবে। ওই জিমে ভর্তি হওয়ার তিন দিন পর থেকে বিছানা ভেজানো সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে গেল। মেয়েটি নিজে ও তার মা-বাবা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে। এর পর মেয়েটি একটি গানবাজনার প্রতিষ্ঠানে সেতার বাজনা শিখতে ভর্তি হলো। তার ভেতর আত্মবিশ্বাস ফিরে এলো। তার বিষণ্নতা দূর হলো। বন্ধুবান্ধবের সাথে হইচইতে মেতে উঠল। শরীর স্বাস্থ্যের উন্নতি হতে লাগল। মা-বাবা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললেন। এক শুভদিনে তার বিয়ের প্রস্তাব এলো।

বিদেশী পত্রিকা থেকে অনূদিত

অনুবাদ ও গ্রন্থনা : জোবেদ আলী


 

ko cuce /div>

দৈনিক নয়াদিগন্তের মাসিক প্রকাশনা

সম্পাদক: আলমগীর মহিউদ্দিন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সালাহউদ্দিন বাবর
বার্তা সম্পাদক: মাসুমুর রহমান খলিলী


Email: online@dailynayadiganta.com

যোগাযোগ

১ আর. কে মিশন রোড, (মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন), ঢাকা-১২০৩।  ফোন: ৫৭১৬৫২৬১-৯

Follow Us