কলকাতায় ট্রেনে অভিনেত্রীকে যৌন হেনস্তা, উপস্থিত বুদ্ধিতে রক্ষা

অন্য দিগন্ত ডেস্ক | Sep 07, 2019 09:29 am

-

 

ভারতের পশ্চিমবঙ্গের এক অভিনেত্রী ট্রেনে যৌন হেনস্তার শিকার হয়েছেন। নামখানা থেকে শ্যুটিং সেরে শেষ ট্রেনে বাড়ি ফিরছিলেন এক মহিলা। রাতের ফাঁকা ট্রেনে তাকে মদ-সিগারেট খাওয়ানোর চেষ্টা করার পাশাপাশি যৌন হেনস্তার অভিযোগ উঠল যাত্রীদের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা আরপিএফের এক জওয়ানের বিরুদ্ধে। কিন্তু সেই মহিলার উপস্থিত বুদ্ধিতে এবং তার স্বামীর সক্রিয়তায় অভিযুক্ত জওয়ানকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয় সোনারপুর জিআরপি’র পুলিস। ধৃতকে শুক্রবার আদালতে পেশ করা হয়। সোনারপুর জিআরপি সূত্রে জানা গিয়েছে, ধৃতের নাম সমরেশ মণ্ডল। শিয়ালদহ রেল পুলিশের সুপার অশেষ বিশ্বাস জানিয়েছেন, শ্লীলতাহানির অভিযোগে ওই আরপিএফ জওয়ানকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে। এদিন ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে ওই তরুণীর গোপন জবানবন্দি রেকর্ড করা হয়েছে।

ঢাকুরিয়ার বাসিন্দা মহিলা পেশায় অভিনেত্রী। তিনি বৃহস্পতিবার রাতে সোনারপুর জিআরপি থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেন। সেখানে তিনি জানান, বৃহস্পতিবার বকখালিতে তার শ্যুটিংয়ের কাজ ছিল। শ্যুটিং তাড়াতাড়ি শেষ হয়ে যাওয়ায় ইউনিটের সঙ্গে সেখানে রাত না কাটিয়ে তিনি বাড়ি ফিরে আসার সিদ্ধান্ত নেন। ইউনিটের গাড়ি তাঁকে নামখানা স্টেশনে নামিয়ে দেয়। অভিযোগে ওই তরুণী জানিয়েছেন, রাত পৌনে ৯টা নাগাদ তিনি নামখানা স্টেশন থেকে শিয়ালদহগামী শেষ নামখানা লোকাল ট্রেনে ওঠেন।

তাঁর বয়ান অনুযায়ী, তিনি প্রথমে জেনারেল কামরাতেই উঠেছিলেন। সেই সময় আরপিএফের উর্দি পরা দু’জন ব্যক্তি তাঁর কাছে আসেন। তাঁকে ওই জওয়ানরা ট্রেনের সামনের দিকের মহিলা কামরায় চলে যেতে বলেন বলে ওই তরুণীর দাবি। শুক্রবার তিনি সংবাদমাধ্যমে বলেন, আমাকে ওই পুলিসকর্মীরা বলেন, রাতের ট্রেন। নিরাপত্তার কারণেই মহিলা কামরাতে যাওয়া ভাল।

এর পর তিনি ট্রেন ছাড়ার আগে সামনের মহিলা কামরায় ওঠেন। অভিযোগকারিণী বলেন, মহিলা কামরায় ওই দুই আরপিএফ কর্মী এসে ওঠেন। তাদের এক জন আমার সামনে এসে বসেন। আর এক জন কামরার অন্য প্রান্তে চলে যান। ওই তরুণীর বক্তব্য অনুযায়ী, তাদের নিয়ে গোটা কামরায় তখন মাত্র তিন জন ছিলেন। তখন যে ওই বগিতে ওঠার চেষ্টা করেছেন, তাকেই রীতিমতো ধমক দিয়ে নামিয়ে দিয়েছেন অভিযুক্ত জওয়ান।

তরুণীর কথায়, লক্ষ্মীকান্তপুর স্টেশনে ট্রেনটি প্রায় আধ ঘণ্টা দাঁড়িয়েছিল। ওই আরপিএফ কর্মী আমার সামনে বসেই মদ্যপান শুরু করেন। সঙ্গে সিগারেট। অস্বস্তি হলেও আমি কিছু বলতে পারছিলাম না। কারণ ওটা ছিল শেষ ট্রেন। বাইরে প্ল্যাটফর্মও ফাঁকা। ওই পুলিশকর্মী তাকেও মদ-সিগারেট খাওয়ার জন্য বলেন বলে অভিযোগ।

তিনি রাজি না হলে শুরু হয় চূড়ান্ত অসভ্যতা। তার গায়ে বার বার হাত দেয়ার চেষ্টা করেন। তার কথায়, চলন্ত ট্রেনে আমাকে জড়িয়ে ধরারও চেষ্টা করে বেশ কয়েক বার। প্রতিবাদ করে আমি পরের স্টেশনেই নেমে যেতে যাই। কিন্তু নামার চেষ্টা করতেই বাধা দেওয়া হয়। অন্য পুলিসকর্মীটি কোনো যাত্রীকে কামরায় উঠতেও দিচ্ছিল না। ইতিমধ্যে ট্রেন এসে পৌঁছয় জয়নগর স্টেশনে। ওই পুলিশকর্মীর নজর এড়িয়ে তার স্বামীকে ফোন করেন তরুণী। তার স্বামী একটি বেসরকারি সংস্থায় কাজ করেন। তিনি বলেন, আমি গড়িয়াতে ছিলাম। ফোন পেয়েই বিষয়টি গড়িয়া স্টেশনের এক রেলকর্মীকে জানাই। তিনি আমাকে সোনারপুর জিআরপি থানায় দ্রুত যেতে বলেন।

এদিকে, ওই তরুণীর স্বামী রেলের হেল্পলাইন নম্বরে ফোন করেন। কিন্তু কোনো ভাবেই যোগাযোগ করতে পারেননি। তার কথায়, স্ত্রীকে ভিডিও কল করতে বলি আমি। লুকিয়ে ও হোয়াটসঅ্যাপে ভিডিও কল করে ওই পুলিশ কর্মীকে দেখায়। সঙ্গে সঙ্গে আমি স্ক্রিন শট নিয়ে রাখি। সেখানে লোকটিকে দেখা যাচ্ছিল। তবে তরুণীর দাবি, ভিডিও কলটি বুঝতে পেরে অভিযুক্ত পুলিশকর্মী আমার মোবাইল কেড়ে নেন। অনেক অনুরোধ করে ফোনটি ফেরত পান বলেই জানান ওই তরুণী। তিনি বলেন, আমার কাছ থেকে জোর করে ফোন নম্বর নেয় ওই পুলিশকর্মী। আমার ছবি তোলে। আমাকে বিভিন্ন রকম কুপ্রস্তাব দিতে থাকে অনবরত।

এ সবের মধ্যেই ওই তরুণী তার স্বামীকে ফের ফোন করে সেটি সিটের উপর উল্টে রেখে দেন। ট্রেনে ওই পুলিশকর্মীর সঙ্গে সমস্ত কথোপকথন শুনতে পাচ্ছিলেন তার স্বামী। কথোপকথন রেকর্ড করার পাশাপাশি তিনি সেটা শোনান জিআরপি-র কর্মীদের। রাত সাড়ে ১১টা নাগাদ সোনারপুর স্টেশনে ট্রেন ঢুকতেই মহিলা কামরায় উঠে ওই তরুণীকে উদ্ধার করে পুলিশ। ওই পুলিশকর্মীকে পাকড়াও করতে গেলে তিনি চলন্ত ট্রেনে উঠে পালানোর চেষ্টা করেন। তার সঙ্গী পুলিশকর্মী ততক্ষণে ট্রেন থেকে নেমে পালিয়ে যান বলে অভিযোগ।

তরুণীর স্বামীর অভিযোগ, চলন্ত ট্রেনে অভিযুক্ত পালানোর চেষ্টা করে। আমি ওই ট্রেনে উঠে যাই। পরের স্টেশন নরেন্দ্রপুরে তাকে নামিয়ে পুলিশের হাতে তুলে দিই।


 

ko cuce /div>

দৈনিক নয়াদিগন্তের মাসিক প্রকাশনা

সম্পাদক: আলমগীর মহিউদ্দিন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সালাহউদ্দিন বাবর
বার্তা সম্পাদক: মাসুমুর রহমান খলিলী


Email: online@dailynayadiganta.com

যোগাযোগ

১ আর. কে মিশন রোড, (মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন), ঢাকা-১২০৩।  ফোন: ৫৭১৬৫২৬১-৯

Follow Us