কতটা বিষাক্ত চন্দ্রবোড়া!
চন্দ্রবোড়া! - ছবি : সংগৃহীত
পৃথিবীতে নানা প্রজাতির সাপ রয়েছে। খুব কম দেশই আছে যেখানে সাপ নেই। এরা যেমন ডিম পাড়ে, আবার অনেক প্রজাতির সাপ ডিম না পেড়ে বরং বাচ্চা দেয়। বাচ্চা প্রসব করা এমন এক প্রজাতির সাপ চন্দ্রবোড়া। অনেকে চন্দ্রবোড়া সাপকে উলুবোড়া সাপও বলে থাকেন। সাবধান, এরা কিন্তু খুবই বিষধর।
তবে এই সাপ সবচেয়ে বিষাক্ত নয়। এর বিষ দাঁতের জন্য মাঝে মধ্যেই অনেকে দংশিত হন। কামড় দিলে এর বিষক্রিয়ায় দংশিত মানুষের শরীরের রক্ত চলাচলে (স্বাভাবিক) সমস্যা দেখা দেয়। এ কারণে অনেক যন্ত্রণা অনুভূত হয়। পরে ব্যক্তির মৃত্যু পর্যন্ত ঘটতে পারে। এ সাপ এতটাই ভয়ঙ্কর যে, তা দেখা মাত্র কামড় খাওয়ার আগেই অনেকে ভয়ে হার্ট অ্যাটাকের মতো ঝুঁকিতে পড়ে যায়।
একটি স্ত্রী চন্দ্রবোড়া ২০ থেকে ৪০টি বাচ্চা দেয়।
শুনলে আরো অবাক হবে, অনেক সময় ৭০-৭৫টি বাচ্চাও দিয়ে থাকে। সদ্যপ্রসূত বাচ্চা ৮ থেকে ১০ ইঞ্চি লম্বা হয়। বেশ মোটাসোটা এদের দেহ। তবে লেজ ছোট ও অপেক্ষাকৃত সরু। প্রাপ্তবয়স্ক চন্দ্রবোড়ার দেহের দৈর্ঘ্য হয়ে থাকে এক মিটার বা তার চেয়েও কিছু বেশি। তবে লেজসহ সর্বোচ্চ সাড়ে ৫ ফুট লম্বাও হয়ে থাকে।
চন্দ্রবোড়া বাস করতে পছন্দ করে নিচু জমির ঘাসযুক্ত উন্মুক্ত পরিবেশে। কিছুটা শুকনো পরিবেশও পছন্দ করে। এরা নেশাচর হলেও মাঝে মধ্যে দিনেও দেখা যায়। কোনো এক জায়গায় ঘাপটি মেরে বসে থেকে কৌশলে ব্যাঙ, টিকটিকি, ইঁদুর, ছোট পাখি ইত্যাদি ধরে খায়।
চন্দ্রবোড়া বেশি দেখতে পাওয়া যায় ইন্দোনেশিয়া, বার্মা, থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা, ভুটান, নেপাল, পাকিস্তান, চীনের দক্ষিণাঞ্চলে। ভারতের পশ্চিমবঙ্গেও নাকি মাঝে মধ্যে চন্দ্রবোড়া দেখা যায়।
এ বিষাক্ত সাপ বাংলাদেশেও আছে। বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, বাংলাদেশের দুর্লভ আবাসিক সাপ এ চন্দ্রবোড়া। দেশের সব জেলাতেই কমবেশি আছে। কোনো কোনো স্থানে দেখা যায় ব্যাপকভাবে। সবচেয়ে বেশি দেখা যায় রাজশাহীতে।
বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, আমাদের দেশে এ সাপ মহাবিপন্ন। তবে বিশ্বের অন্যান্য দেশে তা মহাবিপন্ন নয়। আর সে কারণেই আমাদের বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইনে প্রজাতিটি সংরক্ষিত। এর বিষ দিয়ে মানুষের ওষুধ তৈরি করা হয়।
চন্দ্রবোড়া রেপটাইল শ্রেণীর সাপ। আর ভাইপেরিডা পরিবারের অন্তর্ভুক্ত। এর প্রজাতি হচ্ছে ডি. রুসেরিল। বৈজ্ঞানিক নাম ডাবোইয়া রাসেলি।
আরো পড়ুন
প্রাণী-মাতা কী করে শাবক চেনে
শ্রাবণী মুকুল
আমরা মানুষেরা পরস্পরকে চিনে নিই নাম দিয়ে। পার্থক্য খুঁজি আকার-আকৃতি, রঙ ও চেহারা দেখে। যমজদের ক্ষেত্রে অন্যরা পার্থক্য তেমন খুঁজেই পায় না, কিন্তু তাদের মা! তিনি অবশ্যই দু’জনের ক্ষেত্রে বিস্তর পার্থক্য খুঁজে পান। আমাদের এ পৃথিবীতে ১০ লাখের বেশি বিভিন্ন জাতির ও প্রকৃতির প্রাণী আছে। প্রত্যেক প্রাণীরই আছে প্রাণী মাতা-পিতা ও তাদের শাবক। আমাদের কাছে প্রাণী-শাবকদের একই রকম দেখতে মনে হলেও প্রাণী-মাতারা কিন্তু তাদের শাবকদের চিনে নেয় নিজস্ব কৌশলে।
অন্যের শাবককে কখনো নিজের বলে মেনে নেয় না স্তন্যপায়ী প্রাণী-মাতারা। তাহলে জানতে হবে, কিভাবে নিজেদের শাবকদের চিনে নেয় প্রাণী-মাতারা?
যেসব প্রাণীর মধ্যে মাতা-পিতার যতœ প্রচলিত আছে, তাদের ক্ষেত্রে পরস্পরকে চেনার কিছু প্রক্রিয়া বা কৌশলের কথা বলছি। প্রাণী-মাতারা তাদের এ কৌশলকে কাজে লাগায় শুধু শাবকদের সাথে যোগাযোগ অক্ষুণœ রাখার জন্য। অনেক শাবকের মধ্যে মিশে গেলে কিংবা মাতা-পিতা থেকে একটু বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়লে প্রাণীদের ইন্দ্রিয়ের বোধশক্তি যেমন- ঘ্রাণ, স্বাদ, শব্দ, দৃষ্টি ও স্পর্শ- এই পাঁচটির মধ্যে যেকোনো একটি দিয়ে তারা পরস্পরের সাথে পরিচিত থাকে। প্রায় সব স্তন্যপায়ী প্রাণী-মাতা ঘ্রাণশক্তির সাহায্যে তাদের শাবকদের চিনতে পারে। হরিণ, ভেড়া, ঘোড়া ও সিলদের মধ্যে এটি সাধারণ ব্যবস্থা। এরা সবাই তাদের শাবকদের জন্মকালীন ঘ্রাণ নিয়ে নেয় এবং সেই ঘ্রাণটি স্মরণ রাখে। এরপর প্রয়োজনে প্রাণী-মাতা যখনই তার শাবককে খুঁজতে যায় তখনই পালের সব শাবকের ঘ্রাণ নেয় যতক্ষণ পর্যন্ত না সে নিজের শাবককে খুঁজে পায়। পাখিরা বিশেষভাবে শব্দের সাহায্যে পরস্পরকে চিনতে পারে। প্রত্যেক মাতা-পাখির নিজস্ব ‘মাতৃ-আহ্বান’ আছে, যা কিনা ছানা-পাখিরা জন্মানোর সময় থেকেই বুঝতে পারে। ডিম ফুটে ছানা বের হওয়ার সাথে সাথেই মা-পাখি ‘মাতৃ-আহ্বান’ দেয়।
ফলে ছানাগুলো মা-পাখিকে অনুসরণ করতে থাকে।