যেভাবে সরানো হয়েছিল স্ট্যালিনের লাশ

Sep 06, 2019 08:51 pm
স্ট্যালিন

স্ট্যালিন - ছবি : সংগৃহীত

 

তিনি মারা গেছেন অনেক আগে। কিন্তু তারপরও তিনি এখনো কিংবদন্তি। তার জীবনের মতো মৃত্যুর পরের ঘটনাগুলোও রোমাঞ্চকর।

সোভিয়েত ইউনিয়ন ৫০ বছর আগে জোসেফ স্ট্যালিনের লাশ রেড স্কোয়ারের স্মৃতিসৌধ থেকে গোপনে সরিয়ে ফেলে। হয়। ওই স্থানে তাকে মর্যাদার সঙ্গে সমাহিত করা হয়েছিল। তারপর অনেক সময় কেটে গেছে। কিন্তু এই একনায়ক রাশিয়ায় এখনো জনপ্রিয়।

১৯৬১ সালের ৩১ অক্টোবর রাতের অন্ধকারে স্ট্যালিনের লাশ বিপ্লবী নেতা ভ্লাদিমির লেনিনের লাশের পাশ থেকে সরিয়ে ফেলা হয়। তার উত্তরসূরী নিকিতা ক্রুশ্চেড তার (স্ট্যালিন) শাসনামলে নানা অপরাধের অভিযোগে এটি স্থানান্তর করেন।

ক্রুশ্চেভ ১৯৫৬ সালে কমিউনিস্ট পার্টির ২০তম কংগ্রেসে স্ট্যালিনের সন্ত্রাসের ব্যাপকতা সম্পর্কে প্রথম কথা বলেন। কিন্তু তার সেই বক্তৃতা দলীয় স্বার্থে গোপন রাখা হয়।
১৯৬১ সালের অক্টোবরে কমিউনিস্ট পার্টির ২২তম কংগ্রেসে ক্রুশ্চেভ খুবই নাটকীয়ভাবে এটা ঘোষণা করার সিদ্ধান্ত নেন যে স্ট্যালিনের আমল এখন শেষ।

তিনি আবারো স্ট্যালিন আমলের নির্যাতনের নিন্দা করেন। তবে এবার করেন প্রকাশ্যে। এরপর ৩০ অক্টোবর দলটি স্ট্যালিনের লাশ স্মৃতিসৌধ থেকে সরিয়ে ফেলতে সম্মত হয়। লেনিনের নীতির চরম লংঘন, ক্ষমতার অপব্যবহার এবং সৎ নাগরিকদের ওপর ব্যাপক নির্যাতনের কারণে দল ওই সিদ্ধান্ত নেয়।
এ ব্যাপারে স্ট্যালিনের সমর্থকদের বিরূপ প্রতিক্রিয়া ক্রুশ্চেভ আশঙ্কা করেছিলেন। এই আশঙ্কার কয়েক দিন পর লাশ সরানো হয়।

সন্ধ্যা ৬টায় পুলিশ রেড স্কোয়ার ঘিরে ফেলে। সামরিক কুচকাওয়াজের জন্য একটি মহড়া অনুষ্ঠানের অজুহাতে এটি ঘিরে ফেলা হয়। ৭ নভেম্বর বিপ্লব বার্ষিকী উদযাপনের নাম করে এই মহড়ার আয়োজন করা হয়।
মহড়ার বিষয়টি যেন কেউ সন্দেহ করতে পারে সে জন্য ক্রেমলিনের পাশ দিয়ে সামরিক যান সারি বেঁধে দাঁড় করিয়ে রাখা হয়।

ভেতরে কি হচ্ছে তা যাতে কেউ ঠিক না পায় সেজন্য স্মৃতিসৌধের চারপাশে উঁচু করে বেড়া নির্মাণ করা হয়।
তৎকালীন ক্রেমলিন গার্ড কমান্ডার ফেদর কোনেভ জানান, সৈন্যরা স্মৃতিসৌধের ঠিক পেছনে ক্রেমলিন ওয়ালের পাদদেশে একটি কবর খোঁড়ে।

পাথরের শবাধার থেকে তারা স্ট্যালিনের মরদেহ তুলে এনে একটি বন্ধ কফিনে রাখে এবং ৮ জন অফিসার তা মাটিতে সমাহিত করে। ১৯৫৩ সাল থেকে স্ট্যালিনের মরদেহ ওই স্মৃতিসৌধে সমাহিত ছিল।
স্ট্যালিনের মেয়ে ভেতলানা আলিলুয়েভাকে এতে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। কেজিবি ও সেনাবাহিনীর কিছু অফিসার এবং যারা এ কাজে নিযুক্ত ছিল তারাই এসময় উপস্থিত ছিলেন।

পরদিন সকালে মস্কোর অধিবাসীরা দেখলেন স্মৃতিসৌধের সামনে থেকে একনায়কের নাম উধাও হয়ে গেছে।
রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমে একটি ছোট্ট বিবৃতিতে বলা হয়, ‘কমিউনিস্ট পার্টির ২২তম কংগ্রেসের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী স্ট্যালিনের কফিন লেনিনের স্মৃতিসৌধ থেকে তুলে নেয়া হয়েছে এবং তা ক্রেমলিনের দেয়ালের পাশে স্থানান্তর করা হয়েছে।
ক্রুশ্চেভ প্রথমদিকে মস্কোর নভোদেভিসি কনভেন্ট-এর সমাধিস্থলে স্ট্যালিনকে সমাহিত করতে চেয়েছিলেন। এখানে সোভিয়েত ও রাশিয়ার অনেক বিশিষ্ট ব্যক্তির কবর রয়েছে।

এরপর তিনি তার ইচ্ছার পরিবর্তন করেন। কারণ তিনি আশংকা করছিলেন যে স্ট্যালিনের জন্মভূমি জর্জিয়ার গোড়া সমর্থকরা তার লাশ চুরি করে নিয়ে যেতে পারে। স্মৃতিসৌধের নিরাপত্তা প্রধান কনস্টান্টিন মসকোভ একথা জানান।
কিন্তু ক্রেমলিনের এলাকার মধ্যে এ ধরনের চিন্তা করা সম্ভব নয়। কারণ সেখানে দিন-রাত প্রহরা দেয়া হয়।
১৯৬১ সালের ৩১ অক্টোবর রাতে খুব তড়িঘড়ি করে স্ট্যালিনের সর্বশেষ কবরটি খোঁড়া হয়।

গত ২৬ এপ্রিল পরিচালিত এক জরিপে দেখা যায়, রাশিয়ার ২৬ ভাগ লোক মনে করে স্ট্যালিনের ভূমিকা ব্যাপকভাবে ইতিবাচক ছিল। ২০০৭ সালে এ সংখ্যা ছিল ১৫।

গত এপ্রিলে ২৪ ভাগ রুশ মনে করেন তার ভূমিকা ছিল নেতিবাচক। আর ২০০৭ সালে এ সংখ্যা ছিল ৩৩।
দেশের বিভিন্ন বইয়ের দোকানে স্ট্যালিনের সাহিত্যের বই প্রচুর চলছে এবং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের বিজয়ের জন্য স্ট্যালিনের প্রশংসা করা হচ্ছে।

সূত্র : এএফপি


 

ko cuce /div>

দৈনিক নয়াদিগন্তের মাসিক প্রকাশনা

সম্পাদক: আলমগীর মহিউদ্দিন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সালাহউদ্দিন বাবর
বার্তা সম্পাদক: মাসুমুর রহমান খলিলী


Email: online@dailynayadiganta.com

যোগাযোগ

১ আর. কে মিশন রোড, (মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন), ঢাকা-১২০৩।  ফোন: ৫৭১৬৫২৬১-৯

Follow Us