এক পাকিস্তানি জেনারেল যেভাবে জয় করলেন আমেরিকা
জেনারেল ফয়েজ হামিদ - ছবি : সংগৃহীত
আফগান যুদ্ধ শেষ হতে চলেছে। এ নিয়ে তালেবানের সাথে যুক্তরাষ্ট্রের একটি খসড়া সমঝোতাও হয়েছে। এই সমঝোতা কে করল? তালেবান, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প, প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান, আফগান বিশেষ দূত জালমি খালিলজাদসহ অনেকের নাম আসছে। কিন্তু নেপথ্য নায়ক একজন। তিনি জেনারেল হলেন জেনারেল ফয়েজ হামিদ।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যথার্থভাবেই আফগানিস্তানে যুদ্ধ বন্ধে সহায়তা করার কৃতিত্ব গ্রহণ করছেন।
এই রক্তাক্ত, ব্যর্থ যুদ্ধ অবসান ঘটাতে অন্য যেকোনো আমেরিকান প্রেসিডেন্টের চেযে বেশি ভূমিকা রাখছেন। যুদ্ধটি শেষ করতে মার্কিন-পাকিস্তানি সম্পর্ক অবশ্যই জোরদার করতে হবে, দুই পক্ষকেই ব্যবধান ঘোচাতে হবে।
চার বছর আগে আমি ইসলামাবাদের এক পরিষ্কার ও সুন্দর সকালে এক প্রাণবন্ত ব্রিটিশ-শিক্ষিত পাকিস্তানি সিনিয়র অফিসারের বিপরীতে বসেছিলেন কিভাবে পাকিস্তানের উদ্দেশ্য ও পদক্ষেপ নিয়ে পাশ্চাত্যের ভুল ব্যাখ্যা (কিছু অজ্ঞতাপ্রসূত, কিছু পরিকল্পিত) অপনোদন করা যায় তা নিয়ে আলোচনা করতে।
আমি পরীক্ষামূলকভাবে পাকিস্তানের সামরিক কেন্দ্রে ওসামা বিন লাদেনকে আবিষ্কার করার মতো অনেক বড় বিষয়টির অবতারণা করলাম।
আমি বললাম যে নিশ্চিতভাবেই আইএসআই (আন্তঃবাহিনী গোয়েন্দা সংস্থা) বিষয়টি জানত এবং নিশ্চিতভাবেই তাকে আটকানোতে তাদের কিছু ভূমিকা ছিল, পাকিস্তানের মাটিতে সিলের পা ফেলাকে অপমান হিসেবে গ্রহণ করা ছিল পুরোপুরি কৃত্রিম কাজ এবং তা করা হয়েছিল তাদের নিজেদের স্থানীয় লোকদের একটি অশান্ত অংশকে শান্ত করার জন্য।
ওই জেনারেলের জবাব আমাকে টলিয়ে দিলো : অবশ্যই আমরা তাকে আমেরিকানদের দিয়েছিলাম, এখানকার সবাই জানে, তারা [যুক্তরাষ্ট্র] জানে তা।
এক মুহূর্তের জন্য আমার চোখ দুটি জ্বলে ওঠল। আমিার মনে হলো এখনই আমার উচিত হবে সৈন্য থেকে চাঞ্চল্যকর খবর অনুসন্ধানী সাংবাদিকে নিজেকে রূপান্তর করে একতরফা মার্কিন পদক্ষেপের ভ্রান্ত ভাষ্য জানা।
আমার উত্তেজনা ছিল স্পষ্ট এবং ওই জেনারেল দ্রুততার সাথে জেন অস্টিনের সবচেয়ে বিখ্যাত সূচনা লাইন বলে আমার আগুন নিভিয়ে দিলো : সত্য সার্বজনীনভাবে অগ্রহণযোগ্য। তা কখনো হবে না। তাদেরকে অবশ্যই তাদের লোকদের হাতে পাওয়া দেখতে হবে।
আমার কাছে এই ভাষ্যটি পুরোপুরি হতাশাজনক মনে হলো, বিষয়টি পাকিস্তানের গ্রহণ করাটাও প্রায় একই রকম।
এ কারণে ফক্স নিউজের সাথে এক সাক্ষাতকারে সম্প্রতি যখন প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান উসামা বিন লাদেনকে ধরায় পাকিস্তানে ভূমিকাই কেবল নয়, সেইসাথে আরো গুরুত্বপূর্ণভাবে এসব তথ্য নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের প্রতি আমেরিকান অভিযোগ না থাকায় রোমাঞ্চিত হয়েছিলাম।
পাকিস্তানকে ভালোবাসি বলেই নয়, যুক্তরাষ্ট্রকেও ভালোবাসি বলে আমার হৃদয় ছিল আনন্দঘন। আফগানিস্তান থেকে শৃঙ্খলাপূর্ণ ও দায়িত্বশীলভাবে প্রস্থান করার জন্য পাক্সিতানের সহযোগিতা ও সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আন্তরিক সম্পর্ক প্রয়োজন যুক্তরাষ্ট্রের। আর এই আন্তরিকতা থাকতে হবে বর্তমান, ভবিষ্যত ও অতীতজুড়ে।
আফগানিস্তান থেকে সরে আসার ট্রাম্পের পরিকল্পনা ফলপ্রসূ করতে হলে (এবং তা কেবল তিনি কিভাবে বের হয়ে এলেন তাই নয়, সেইসাথে পেছনে কী রেখে গেলেন, সেটাও গুরুত্বপূর্ণ) তাকে অবশ্যই পাকিস্তানের নিরাপত্তা বাহিনীর সাথে আন্তরিক ও বিশ্বস্ত সম্পর্ক গড়ে তুলতে হবে। এটি একটি অপরিহার্য শর্ত।
একই রকম গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, পাকিস্তানি নিরাপত্তা বাহিনীকে তাদের উত্তর-পশ্চিম সীমান্তে একই লক্ষ্যে কাজ করতে হবে। আর জেনারেল ফয়েজের উদ্যমী নেতৃত্বে আইএসআই মনে হচ্ছে ওই কাজটিই করবে। তাছাড়া অনেক সন্ত্রাসী ও ছদ্মবেশ সন্ত্রাসী গ্রুপ রয়েছে। তাদেরকে নির্মূল করার কাজও করতে হবে। পাকিস্তান ইতোমধ্যেই পাকিস্তান ও সেইসাথে আফগানিস্তানের দক্ষিণাঞ্চলকে এসব সন্ত্রাসীদের নির্মূল করার কাজ শুরু করলেও তা পুরোপুরি সফল হচ্ছিল না।
এখন জেনারেল ফয়েজের অধীনে পরিস্থিতি বদলে গেছে। জামাত দোয়া, দাউদ আজহার, হাফিজ সাইদদের পাকড়াও করা হয়েছে। আইএসআইয়ের দক্ষতা নতুন কিছু নয়। তবে এখন কাজ করা হচ্ছে স্বচ্ছতার সাথে এবং নতুন উদ্দীপনায়।
আমরা কিভাবে আফগানিস্তান ত্যাগ করব, তা আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এখানে অনেক মৃত বন্ধু আছে, অনেক ভালোবাসা আছে দেশটির জন্য। আমি ইউএস মেরিন কোরে হয়ে গর্বের সাথে এখানে কাজ করেছি। আমাদের ঘনিষ্ঠ মিত্র ব্রিটিশ ও আমেরিকানদের অবশ্যই বুঝতে হবে যে বৈশ্বিক নিরাপত্তার জন্র পাকিস্তান অনেক ভালো।
পরলোকগত সিনেটর জন ম্যাককেইন পাকিস্তানের পক্ষে অবস্থান নিয়ে বলেছিলেন যে তারা স্রোতের গতি ঘুরিয়ে দিয়েছে, তারা সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে পূর্ণ যুদ্ধ করছে।
সম্প্রতি সিনেটর লিন্ডসে গ্রাহামও একই কথা বলেছেন। তিনিই ট্রাম্প ও ইমরান খানের মধ্যে শীর্ষ বৈঠকের ব্যবস্থা করতে ভূমিকা রেখেছিলেন। আর হোয়াইট হাউসে ইমরানের সফরসঙ্গীদের মধ্যে জেনারেল ফয়েজ হামিদও ছিলেন।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প গত মাসে স্বীকার করেছেন যে ফয়েজের তত্ত্বাবধানে পাকিস্তানিরা এখন যুক্তরাষ্ট্রকে সহায়তা করছে দুই দশক ধরে চল আফগানিস্তান যুদ্ধ অবসানে। একইসাথে আমরা আফগানদের বলব, তারা যেন নিজেদেরকে তালেবানের করুণার কাছে নিক্ষেপ না করেন। মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী জেনারেল ম্যাটিস দায়িত্ব ত্যাগের আগে এর ওপর জোর দিয়েছিলেন। আর তা করার জন্য যুক্তরাষ্ট্র ও পাকিস্তানের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সমন্বয় প্রয়োজন। আর আমাদের জন্য প্রয়োজন পাকিস্তান ও যুক্তরাষ্ট্রকে ভালো রাখা। আর সম্মান প্রদর্শন ও একে অপরকে গ্রহণ করার কারণে আফগানিস্তানে ট্রাম্পের অবদান স্থায়িত্ব পাবে স্নো লিওপার্ড আর বল্ড ঈগলের নামের মতোই।
নিউজম্যাক্স