আফগানিস্তানে পাকিস্তানের চূড়ান্ত জয়!

মাইকেল রুবিন | Sep 05, 2019 08:05 am
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান ও সেনাপ্রধান জেনারেল বাজওয়া

পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান ও সেনাপ্রধান জেনারেল বাজওয়া - ছবি : সংগৃহীত

 

আফগানিস্তানে মার্কিন যুদ্ধ শেষ হয়েছে, এবং পাকিস্তান তাতে জয়ী হয়েছে। মার্কিন বিশেষ প্রতিনিধি জালমি খালিলজাদের আলোচনার ফলে যে চুক্তির রূপরেখা প্রণীত হযেছে তা নতুন কিছু নয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তার বাহিনী প্রত্যাহার করবে এবং এর বিনিময়ে তালেবান প্রতিশ্রুতি দিয়েছে যে তারা সন্ত্রাসবাদের সাথে সম্পর্ক রাখবে না বা আফগানিস্তানকে সন্ত্রাসী গ্রুপগুলোর জন্য নিরাপদ আস্তানা হিসেবে ব্যবহৃত হতে দেবে না।

এই সমঝোতার মধ্যে অনেক সমস্যা আছে। কূটনীতির আশ্রয় নিয়ে তালেবান প্রায়ই বলত যে কূটনীতির মাধ্যমেই কেবল যুদ্ধ শেষ হতে পারে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন বলতেন, আপনি আপনার বন্ধুর সাথে শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে পারেন না। কোনো বিদ্রোহ অবসানের মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে চাইলে আপনার শত্রুর সাথে আপনাকে বসতে আগ্রহী হতে হবে। তবে খালিলজাদ যে সমঝোতার রূপরেখা দিয়েছেন তা ৯/১১-এর আগের বছরগুলোতে ক্লিনটন প্রশাসনের কর্মকর্তাদের তালেবানের সাথে করতে চাওয়া সমঝোতা থেকে সামান্যই পার্থক্য আছে। ওই সময় তালেবান সন্ত্রাসবাদ ত্যাগ ও আল কায়েদা নেতা ওসামা বিন লাদেনকে আলাদা করে রাখার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। হয়তো তালেবান বদলে গেছে। কিন্তু তাতে ভালো কিছু হয়নি। খালিলজাদের আলোচনার পুরো সময়ই তা দেখা গেছে। অনেক দিক থেকেই প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও খালিলজাদের গ্রহণ করা পথটি জন কেরি ঘরানার কূটনীতিরই অনুসরণ। ব্যর্থ হলে তাদের জন্য আরো খারাপ পরিণতি হবে- শত্রুকে বিশ্বাসযোগ্যভাবে এমনটা বুঝিয়ে চুক্তির ব্যবস্থা করাই এই নীতির মূলকথা।

আরো বড় মৌলিক সমস্যা হলো পাকিস্তান। পাকিস্তানি সমর্থন ছাড়া তালেবান টিকতে পারবে না। খালিলজাদ ও কূটনীতিকেরা আফগান গ্রুপগুলোর সাথে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য আলোচনায় যখন নিয়োজিত ছিলেন তখন তালেবান আলোচকেরা কারাতে অবস্থান করলেও তারা কোয়েটার নেতৃত্বের কাছে জবাবদিহি করতেন। আবার কোয়েটার নেতৃত্ব ইসলামাবাদে অবস্থিত পাকিস্তানের আন্তঃবাহিনী গোয়েন্দাদের কাছ থেকে নির্দেশনা পেত। একবার পররাষ্ট্রমন্ত্রী কলিন পাওয়েল ‘মধ্যপন্থী তালেবানের’ সাথে আলোচনার সম্ভাবনার কথা বলেছিলেন। ওই সময় তাকে প্রকাশ্যে বিদ্রূপ করা হয়েছিল। কিন্তু এখন তালেবানকে কাছে টানাই অগ্রাধিকার থাকলেও খালিলজাদ কিন্তু তালেবানের সাথে আলোচনা করছেন না, তিনি আলোচনা করছেন আরো কঠোর পাকিস্তান-নিয়ন্ত্রিত তাদের কাজিনদের সাথে। আরো সহজভাবে বলা যায়, ইরানের কাছে হিজবুল্লাহ যেমন, পাকিস্তানের কাছে তালেবান তেমন।

বৈধতার আরো মৌলিক সমস্যা রয়ে গেছে। তালেবান তাদের বিদ্রোহ ও সন্ত্রাসবাদ এমনভাবে যৌক্তিক করছে যে প্রেসিডেন্ট আশরাফ গানির প্রশাসন নয়, বরং তারাই আফগানিস্তানের বৈধ শাসক। গনির নির্বাচিত সরকারকে আলোচনা থেকে সরিয়ে দিয়ে খালিলদজাদ আত্মাভিমানী করেছেন তালেবানকে। তবে এই যুক্তি মেনে নিতে সমস্যাও আছে। তারা যদি আফগান জনগণের দৃষ্টিতে বৈধ শাসকই হবে তবে কেন তারা তাদের অস্ত্র ফেলে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে না? জবাব সহজ : বেশির ভাগ আফগান তালেবানকে বিদেশী পুতুল মনে করে, তারা কখনো তাদের পক্ষে ভোট দেবে না। নিশ্চিতভাবেই বলা যায়, বেশির ভাগ নারী তা করবে না, বেশির ভাগ আফগান জাতিগত গ্রুপও ভোট দেবে না। আমেরিকানরা তালেবানকে আফগানই মনে করতে পারে, কিন্তু আফগানিস্তান হলো একটি জাতিগত দাবার কোর্ট। বেশির ভাগ আফগানই মনে করে তালেবান হলো পশতু শ্রেষ্ঠত্ববাদী ও ধর্ষক। তারা নারীদের ধর্ষণ করতে চায়, সংখ্যালঘুদের খুন করতে চায়।

ট্রাম্প প্রতি বছর ৩০ বিলিয়ন ডলার ব্যয় হতে থাকা যুদ্ধটির অবসান চান। এটা প্রশংসনীয় উদ্যোগ। কিন্তু ব্যয় ৩০ বিলিয়ন থেকে শূন্যে নামিয়ে আনার এই হিসাবে মৌলিক ভুল আছে। ট্রাম্পের মতের অনুসারীসহ অনেকেই মনে করে যে তালেবানের সাথে চুক্তির ফলে আমেরিকার প্রস্থান ঘটলেও শান্তি আসবে না। বরং ব্যয় আরো বেড়ে যেতে পারে। তালেবান অব্যাহতভাবে আল কায়েদার দর্শন ও সদস্যদের গ্রহণ করতে থাকবে। তালেবানের নিরাপদ আস্তানা বহাল থাকবে, এমনকি তা সম্প্রসারিতও হতে পারে। নতুন করে গৃহযুদ্ধ শুরু হলে উদ্বাস্তুর প্রবাহ হবে এবং তাতে প্রতিবেশী দেশগুলো অস্থিতিশীল হবে। তাছাড়া সন্ত্রাসবাদ বলতে কী বোঝায় তা নিয়ে আন্তর্জাতিক কোনো সমঝোতা নেই। তালেবান এই সুযোগটি নেবে। খুবই সম্ভাবনা আছে যে বর্তমানের সঞ্চয় আমেরিকান জনগণের জন্য ব্যয় আরো বাড়িয়ে দেবে। কারণ পাকিস্তানি কর্তৃপক্ষ ও তাদের তালেবান প্রক্সিগুলো বিজয়ে আত্মবিশ্বাসী হয়ে তাদের লড়াই বাড়িয়ে দেবে।

আফগানিস্তানে যা ঘটছে, তা আফগানিস্তানেই সীমিত থাকবে তা নয়। চলতি বছরের প্রথম দিকে সোমালিল্যান্ডের হারগেইসা বিশ্ববিদ্যালয়ে বক্তৃতার সময় ছাত্র ও ফ্যাকাল্টি বারবার প্রশ্ন করতে থাকে, তালেবানের সাথে আলোচনার মানে কি এ যে এরপর আল কায়েদার সহযোগী সংস্থা সোমালিয়ার আল-শাবাবের সাথে আলোচনা শুরু করা? এমন কোনো পরিকল্পনা না থাকলেও প্রতিটি বিদ্রোহী গ্রুপই এখন বুঝতে পারছে যে তাদের স্বার্থ এগিয়ে নেয়ার পথ ব্যালট বাক্স নয়, বরং সহিংসতা ও সন্ত্রাসবাদ। তালেবানের সাথে চুক্তির ফল এটাই। আর তা থেকে সহজে নিস্তার পাওয়া যাবে না।
লেখক : রেসিডেন্ট স্কলার, আমেরিকান এন্টারপ্রাইজ ইনস্টিউট
দি ন্যাশনাল ইন্টারেস্ট


 

ko cuce /div>

দৈনিক নয়াদিগন্তের মাসিক প্রকাশনা

সম্পাদক: আলমগীর মহিউদ্দিন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সালাহউদ্দিন বাবর
বার্তা সম্পাদক: মাসুমুর রহমান খলিলী


Email: online@dailynayadiganta.com

যোগাযোগ

১ আর. কে মিশন রোড, (মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন), ঢাকা-১২০৩।  ফোন: ৫৭১৬৫২৬১-৯

Follow Us