মোগলদের সম্পর্কে চাঞ্চল্যকর তথ্য
মোগলদের সম্পর্কে চাঞ্চল্যকর তথ্য - ছবি : সংগৃহীত
মোগল বাদশাহরা এখন না থাকলেও তারা এখনো বিশ্বজুড়ে বিস্ময় সৃষ্টি করে চলেছেন। মোগল মানেই বিশাল কিছু, মোগল মানেই আভিজাত্য আর সমৃদ্ধির কথা। কিন্তু কথা হলো মোগল কারা? কেনই বা তাদের মোগল বলা হয়?
‘মোগল’ শব্দটি এসেছে ‘মঙ্গোল’ থেকে। ইরানিরা মোঙ্গলদের ‘মোঘল’ বলে অভিহিত করতো। সেই সূত্র ধরে প্রধানত ইউরোপীয়রাই তাদের ‘মোগল’ হিসেবে অভিহিত করতো। তারা নিজেরা কখনো উক্ত শব্দটি নিজেদের জন্য ব্যবহার করেনি। মোগলরা নিজেরা ‘আলোকের সন্তান’ চেঙ্গিজ খান এবং তৈমুর লং-এর বংশধর হিসেবে গর্ব অনুভব করতেন। বিশেষ করে তৈমুরের প্রতি মোগল সম্রাট এবং তাদের বংশধরগণ বিশেষভাবে উচ্ছ্বসিত ছিলেন।
তৈমুর ১৩৯৮ সালে দিল্লি জয় করেছিলেন। সম্রাট বাবর পিতা মির্জা উমর শেখের দিক দিয়ে ছিলেন তৈমুর লং এর ৫ম বংশধর এবং মাতা কুতলুফ নিগার খানমের দিক দিয়ে চেঙ্গিজ খানের ১৫তম বংশধর। তাই বলা যায়, সম্রাট বাবর অন্তত পৈত্রিক দিক থেকে চেঙ্গিস খানের সরাসরি বংশধর ছিলেন না। এজন্যই তারা নিজেদের ‘মোঘল’ বা ‘মঙ্গোল’ কিংবা ‘খান’ হিসেবে অভিহিত করতেন না। বাবর মধ্য এশিয়ায় ১৪৮৩ খৃস্টাব্দের ১৪ই ফেব্র“য়ারি (৬ই মুহররম, ৮৮৮ হিজরি) জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ছিলেন তার ৫ভাইয়ের মধ্যে জৈষ্ঠ্য। তিনি ছিলেন মধ্য এশিয়ার ফারগানা নামক রাজ্যের উত্তরাধিকারী। কিন্তু তার পিতার মৃত্যুর (১৪৯৪) পর তাকে সিংহাসন থেকে বঞ্চিত করা হয়। বলা যায়, এই বঞ্চনা তাকে আরো বড় সাফল্য এনে দেয়। বিশ্বের সর্বকালের সেরা শাসক গোষ্ঠীর একটি প্রতিষ্ঠার কৃতিত্ব লাভ করেন।
মোগল কাদের বলা হয়
মোগল সম্রাট মুসলমান হলেও ‘সুন্নি’ সম্প্রদায়ভুক্ত। তুর্কিদের মতন তারা বিশ্বাস করে যে ওসমান হলেন মোহাম্মদের উত্তরাধিকারী। সম্রাটের পরিষদ ও সভাসদরা, আমির ও ওমরাহ হলেন অধিকাংশই ‘শিয়া’ সম্প্রদায়ভুক্ত। তারা আলির উত্তরাধিকারে বিশ্বাসী, পারসীদের মতন। তাছাড়া মোগল সম্রাট হিন্দুস্থানে অনেকটা বিদেশীর মতন বলা চলে। তারা তৈমুরের বংশধর এবং পঞ্চদশ শতাব্দীর গোড়ায় তারা ভারতবর্ষ জয় করেন। সুতরাং মোগলরা হিন্দুস্থানে চারদিকেই শত্র“-পরিবেষ্টিত।
হিন্দুস্থানের একশজন ভারতীয়ের মধ্যে একজন ‘মোগল’ আছে কিনা সন্দেহ। শতকরা একজন মুসলমান আছে কিনা সে বিষয়েও যথেষ্ট সন্দেহ আছে। সুতরাং হিন্দুস্থানে নিরাপদে রাজত্ব করা ও বসবাস করা মোগলদের কাছে একটা সমস্যার ব্যাপার। ঘরে শত্র“, বাইরেও শত্র“। ঘরে দেশীয় রাজারা প্রবল শত্র“, বাইরে পারস্য থেকে আক্রমণের আশঙ্কাও আছে। ঘরে-বাইরে এইভাবে শত্র“-পরিবেষ্টিত হয়ে থাকার জন্য মোগল সম্রাটরা সর্বদা নিরাপত্তার ও আত্মরক্ষার দুশ্চিন্তাতেই ব্যস্ত থাকেন। এজন্য তাদের বিশাল সেনাবাহিনী সব সময় প্রস্তুত রাখতে হয়। সঙ্কটের সময় তো হয়ই, শান্তির সময়ও হয়। এদেশের লোকদের নিয়েই সেনাবাহিনী গঠন করা ছাড়া উপায় নেই। তার মধ্যে অধিকাংশই রাজপুত ও পাঠান, এবং বাকি হল মোগল সৈন্য। এখানে মোগল কথাটা অবশ্য একটা বিশেষ অর্থে ব্যবহার করা হয়। যেকোনো শ্বেতাঙ্গ বিদেশী ব্যক্তি মুসলমানধর্মী হলেই মোগল বলে পরিচিত হন। আসল মোগল কিন্তু মোগল বলে যারা পরিচিত তাদের মধ্যে খুব অল্পই আছে। রাজদরবারেও বিশেষ নেই। উজবেক, ফারসি, আরবি, তুর্কি, সকলেরই বংশধররা এখন মোগল নামে পরিচিত হন।
এ প্রসঙ্গে একথাও জেনে রাখা দরকার যে, এইসব তথাকথিত মোগলরা এদেশে কিছুদিন বসবাস করার পর আর তেমন মর্যাদা পান না। তাদের বংশধররা অনেকটা এদেশী হয়ে যান, সম্রাটের কাছে তাদের মোগলাই মর্যাদার জৌলুষও অনেকটা ম্লান হয়ে যায়। এবং নবাগত বিদেশী মুসলমানরা মোগলাই আভিজাত্যের তকমা এঁটে ঘুরে বেড়ান। দুতিন পুরুষের মধ্যে তথাকথিত মোগলদের বংশধররা এমন এক সাধারণ স্তরে নেমে আসেন যে তখন মোগল সেনাবাহিনীতে সামান্য পদাতিক বা অশ্বারোহী হতে পারলেই তারা কৃতার্থ বোধ করেন। এই হল মোগলদের পরিচয়।